হযরত আলী (কা.)

0 375

আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-ই সর্বপ্রথম ইমামতিনি মহানবী (সা.) এর চাচা এবং বনি হাশেম গোত্রের নেতা জনাব আবু তালিবের সন্তান ছিলেন

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এই চাচাই শৈশবেও তাঁর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছিলেনতিনি নিজের ঘরে মহানবী (সা.)-কে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং লালন পালনের মাধ্যমে তাঁকে বড় করেছিলেনমহানবী (সা.)এর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘোষণার পর থেকে নিয়ে যত দিন তিনি (আবু তালিব) জীবিত ছিলেন, মহানবী (সা.)-কে সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন করেছিলেনতিনি সবসময়ই মহানবী (সা.)-কে কাফেরদের, বিশেষ করে কুরাইশদের সার্বিক অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছেনহযরত ইমাম আলী (আ.) (প্রশিদ্ধ মতানুযায়ী) মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘোষণার প্রায় দশ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেনহযরত ইমাম আলী (আ.)-এর জন্মের প্রায় ছবছর পর মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলমহানবী (সা.)-এর আবেদনক্রমে ঐসময় হযরত আলী (আ.) বাবার বাড়ী থেকে মহানবী (সা.)-এর বাড়ীতে স্থানান্তরিত হনতারপর থেকে হযরত ইমাম আলী (আ.) সরাসরি মহানবী (সা.)-এর অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধানে তাঁর কাছে লালিত পালিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হনমহানবী (সা.) হেরা গুহায় অবস্থানকালে তাঁর কাছে সর্বপ্রথম আল্লাহর পক্ষ থেকেওহীবা ঐশীবাণী অবর্তীণ হয়যার ফলে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হনএরপর হেরা গুহা থেকে বের হয়ে মহানবী (সা.) নিজ গৃহে যাওয়ার পথে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত ঘটে এবং তিনি তাঁর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেনহযরত ইমাম আলী (আ.) সাথে সাথেই মহানবী (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনঅতঃপর নিকট আত্মীয়দেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্‌বান জানানোর উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) তাদের সবাইকে নিজ বাড়ীতে খাওয়ার আমন্ত্রন জানিয়ে সমবেত করেনঐ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সবার প্রতি লক্ষ্য করে মহানবী (সা.) বলেছিলেন যে, ‘আপনাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম আমার আহ্‌বানে (ইসলাম গ্রহণে) সাড়া দেবে, সেই হবে আমার খলিফা, উত্তরাধিকারী এবং প্রতিনিধিকিন্তু উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে একমাত্র যে ব্যক্তিটি সর্বপ্রথম উঠে দাঁড়িয়ে সেদিন বিশ্বনবী (সা.)-এর আহ্‌বানে সাড়া দিয়েছিল এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল তিনিই হচ্ছেন হযরত ইমাম আলী (আ.) আর বিশ্বনবী (সা.) সেদিন (তাঁর প্রতি) হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর ঈমানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং স্বঘোষিত প্রতিশ্রুতিও তিনি তার ব্যাপারে পালন করেছিলেন এভাবে হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই ছিলেন সর্বপ্রথম মুসলিমআর তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি কখনই মূর্তিপুজা করেননিমক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় গমনের পূর্ব পর্যন্ত হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই ছিলেন মহানবী (সা.)-এর নিত্যসঙ্গীমক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা গমনের রাতে হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই মহানবী (সা.) এর বিছানায় শুয়ে ছিলেনঐ রাতেই কাফেররা মহানবী (সা.) এর বাড়ী ঘেরাও করে শেষরাতের অন্ধকারে মহানবী (সা.)-কে বিছানায় শায়িত অবস্থায় হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল মহানবী (সা.) কাফেরদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হবার পূর্বেই গৃহত্যাগ করে মদীনার পথে পাড়ি দিয়েছিলেনএরপর হযরত ইমাম আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর কাছে গচ্ছিত জনগণের আমানতের মালা-মাল তাদের মালিকদের কাছে পৌঁছে দেনতারপর তিনিও নিজের মা, নবী কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.) ও অন্য দুজন স্ত্রীলোক সহ মদীনার পথে পাড়ি দেনএমনকি মদীনাতেও হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই ছিলেন মহানবী (সা.)-এর নিত্যসঙ্গীনির্জনে অথবা জনসমক্ষে তথা কোন অবস্থাতেই মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখেননি তিনি স্বীয় কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.)-কেও হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর কাছেই বিয়ে দেনসাহাবীদের উপস্থিতিতে মহানবী (সা.), হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপনের ঘোষণা দেনএকমাত্রতাবুকেরযুদ্ধ ছাড়া বিশ্ব নবী (সা.) (স্বীয় জীবদ্দশায়) যত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, হযরত ইমাম আলী (আ.)-ও সেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনতাবুকের যুদ্ধে যাওয়ার সময় বিশ্বনবী (সা.) হযরত ইমাম আলী (আ.)-কে মদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নিযুক্ত করে গিয়েছিলেনএ ছাড়াও হযরত ইমাম আলী (আ.) কোন যুদ্ধেই আদৌ পিছপা হননিজীবনে কোন শত্রুর মোকাবিলায় তিনি পৃষ্ঠ প্রর্দশন করেননিতিনি জীবনে কখনোই মহানবী (সা.)-এর আদেশের অবাধ্যতা করেননিতাই তাঁর সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন যে, “আলী কখনই সত্য থেকে অথবা সত্য আলী থেকে বিচ্ছিন্ন হবে নাবিশ্ব নবী (সা.)-এর মৃত্যুর সময় হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বয়স ছিল প্রায় তেত্রিশ বছরবিশ্বনবী (সা.)-এর সকল সাহাবীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ইসলামের সকল মহত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন তিনিইসাহাবীদের মধ্যে হযরত ইমাম আলী (আ.) বয়সের দিক থেকে ছিলেন অপেক্ষাকৃত তরুণআর ইতিপূর্বে বিশ্বনবী (আ.)-এর পাশাপাশি অংশগ্রহণকৃত যুদ্ধসমূহে যে রক্তপাত ঘটেছিল, সে কারণে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর প্রতি অনেকেই শত্রুতা পোষণ করতএসব কারণেই বিশ্ব নবী (সা.)-এর পরলোক গমনের পর হযরত আলী (আ.)-কে খেলাফতের পদাধিকার লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিলআর এর মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রীয় কাজ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েনতাই বাধ্য হয়ে তখন তিনি নিরালায় জীবন যাপন করতে শুরু করেন এবং ব্যক্তি প্রশিক্ষণের কাজে নিজেকে ব্যপৃত করেনমহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর প্রায় ২৫ বছর পর তিনজন খলিফার শাসনামল শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি এভাবেই জীবন যাপন করতে থাকেনতারপর তৃতীয় খলিফা নিহত হবার পর জনগণ হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর কাছেবাইয়াত’ (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন এবং তাঁকে খেলাফতের পদে অধিষ্ঠিত করেনহযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফতকাল ছিল প্রায় ৪ বছর ৯ মাসতিনি তাঁর এই খেলাফতের শাসন আমলে সম্পূর্ণরূপে মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করেনতিনি তাঁর খেলাফতকে আন্দোলনমুখী এক বিপ্লবীরূপ প্রদান করে ছিলেনতিনি তাঁর শাসন আমলে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেনঅবশ্য ইমাম আলী (আ.)-এর ঐসব সংস্কারমূলক কর্মসূচী বেশকিছু সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির ক্ষতির কারণ ঘটিয়ে ছিলএ কারণে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা, তালহা, যুবাইর ও মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে বেশকিছু সংখ্যক সাহাবী হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেনতৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের দাবীর শ্লোগানকে তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে একটি মোক্ষম রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেআর তারা ইসলামী রাজ্যের সর্বত্র বিদ্রোহের আগুন প্রজ্জ্বলিত করার মাধ্যমে এক ব্যাপক রাজনৈতিক অরাজকতার সৃষ্টি করে যার ফলে উদ্ভুত ফিনা ও অরাজকতা দমনের জন্যে বস্‌রার সন্নিকটে ইমাম আলী (আ.) নবীপত্নি আয়েশা, তালহা, ও যুবায়েরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবর্তীণ হতে বাধ্য হনইসলামী ইতিহাসের ঐ যুদ্ধিটিইজঙ্গে জামালনামে পরিচিতএ ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়া সীমানে- অনুরূপ কারণে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে হযরত ইমাম আলী (আ.)সিফফিননামক আরও একটি যুদ্ধে অবর্তীণ হতে বাধ্য হনসিফফিননামক ঐ যুদ্ধ দীর্ঘ দেড় বছর যাব অব্যাহত ছিলঐ যুদ্ধ শেষ না হতেইনাহ্‌রাওয়াননামক স্থানেখাওয়ারেজ’ (ইসলাম থেকে বহিস্কৃত) নামক বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়ঐ যুদ্ধিটি ইতিহাসেনাহ্‌রাওয়ানেরযুদ্ধ নামে পরিচিতএভাবে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সমগ্র খেলাফতকালই আভ্যন্তরীণ মতভেদ জনিত সমস্যা সমাধানের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়এর কিছুদিন পরই ৪০ হিজরীর রমযান মাসের ১৯ তারীখে কুফার মসজিদে ফজরের নামাযের ইমামতি করার সময় জনৈকখারেজিরতলোয়ারের আঘাতে তিনি আহত হনঅতঃপর ২০শে রমযান দিবাগত রাতে তিনি শাহাদত বরণ করেনইতিহাসের সাক্ষ্য এবং শত্রু ও মিত্র, উভয়পক্ষের স্বীকারোক্তি অনুসারে মানবীয় গুণাবলীর দিক থেকে আমিরুল মুমিনীন হযরত ইমাম আলী (আ.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এ ব্যাপারে সামান্যতম ক্রটির অস্তিত্বও তাঁর চরিত্রে ছিল নাআর ইসলামে মহত গুণাবলীর দিক থেকে তিনি ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শের এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিভুইমাম আলী (আ.)-এর মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এ যাব যত আলোচনা হয়েছে এবং শীয়া, সুন্নী, জ্ঞানী গুণী ও গবেষকগণ যে পরিমাণ গ্রন্থাবলী তাঁর সম্পর্কে আজ পর্যন্ত রচনা করেছেন, ইতিহাসে এমনটি আর অন্য কারও ক্ষেত্রেই ঘটেনিহযরত ইমাম আলী (আ.) ছিলেন সকল মুসলমান এবং বিশ্বনবী (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানীব্যক্তি ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি তাঁর অগাধ জ্ঞানগর্ভ বর্ণনার মাধ্যমে ইসলামে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেনএভাবে তিনিই সর্ব প্রথম ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারে দর্শন চর্চার মাত্রা যোগ করেনতিনিই কুরআনের জটিল ও রহস্যপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করেনকুরআনের বাহ্যিক শব্দাবলীকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষার জন্যে তিনি আরবী ভাষার ব্যাকরণ শাস্ত্র রচনা করেনবীরত্বের ক্ষেত্রেও হযরত আলী (আ.) ছিলেন মানবজাতির জন্য প্রতীক স্বরূপবিশ্ব নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় এবং তাঁর পরেও জীবনে যত যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেছেন, কখনোই তাঁকে ভীত-সন্ত্রস্ত হতে বা মানসিক অস্থিরতায় ভূগতে দেখা যায়নিএমনকি ওহুদ, হুনাইন, খান্দাক এবং খাইবারের মত কঠিন যুদ্ধগুলো যখন মহানবী (সা.)-এর সাহাবীদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং সাহাবীরা যুদ্ধক্ষেত্রে ছত্রভঙ্গ হয়ে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই কঠিন মূহুর্তগুলোতেও হযরত ইমাম আলী (আ.) কখনোই শত্রুদের সম্মুখে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননিইতিহাসে এমন একটি ঘটনাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোন খ্যাতিমান বীর যোদ্ধা ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিরাপদে নিজের প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছেতিনি এমন মহাবীর হওয়া সত্ত্বেও কখনও কোন দূর্বল লোককে হত্যা করেননি এবং তাঁর নিকট থেকে পালিয়ে যাওয়া (প্রাণ ভয়ে) ব্যক্তির পিছু ধাওয়া করেননিতিনি কখনোই রাতের আঁধারে শত্রুর উপর অতর্কিত আক্রমন চালাননিশত্রুপক্ষের জন্য পানি সরবরাহ কখনোই তিনি বন্ধ করেননি এটা ইতিহাসের একটি সর্বজন স্বীকৃত ঘটনা যে, ইমাম আলী (আ.) খাইবারের যুদ্ধে শত্রুপক্ষের দূর্গম দূর্গের বিশাল লৌহ ত্বোরণটি তাঁর হাতের সামান্য ধাক্কার মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে উপড়ে ফেলেছিলেন একইভাবে মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে ইমাম আলী (আ.) কাবা ঘরের মূর্তিগুলো ধ্বংস করেনআকিকপাথরের তৈরীহাবলনামক মক্কার সর্ববৃহ মূর্তিটি কাবা ঘরের ছাদে স্থাপিত ছিলইমাম আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর কাঁধে পা রেখে কাবা ঘরের ছাদে উঠে একাই বৃহাদাকার মূর্তিটির মূলোপাটন করে নীচে নিক্ষেপ করেনখোদাভীতি ও আল্লাহ্‌র ইবাদতের ক্ষেত্রে ইমাম আলী (আ.) ছিলেন অনন্যজনৈক ব্যক্তির প্রতি ইমাম আলী (আ.)-এর রূঢ় ব্যবহারের অভিযোগের উত্তরে মহানবী (সা.) তাকে বলেছিলেন যে, “আলীকে তিরস্কার করো নাকেননা সে তো আল্লাহ‌ প্রেমিক একবার রাসুল (সা.)-এর সাহাবী হযরত আবু দার্‌দা (রা.) কোন এক খেজুর বাগানে ইমাম আলী (আ.)-এর দেহকে শুষ্ক ও নিষপ্রাণ কাঠের মত পড়ে থাকতে দেখেনতাই সাথে সাথে নবীকন্যা হযরত ফাতিমা (আ.)-এর কাছে তাঁর স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছালেন এবং নিজের পক্ষ থেকে শোকও জ্ঞাপন করেনকিন্তু ঐ সংবাদ শুনে হযরত ফাতিমা (আ.) বললেন ঃনা, আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেননিবরং ইবাদত করার সময় আল্লাহ্‌র ভয়ে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছেনআর এ অবস্থা তাঁর ক্ষেত্রে বহু বারই ঘটেছেঅধীনস্থদের প্রতি দয়াশীলতা, অসহায় ও নিঃস্বদের প্রতি ব্যথিত হওয়া এবং দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি পরম উদারতার ব্যাপার ইমাম আলী (আ.)-এর জীবনে অসংখ্য ঘটনার অস্তিত্ব বিদ্যমানইমাম আলী (আ.) যা-ই উপার্জন করতেন, তাই অসহায় ও দরিদ্রদেরকে সাহায্যের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র পথে দান করতেনআর তিনি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সহজ সরল ও কষ্টপূর্ণ জীবন যাপন করতেনইমাম আলী (আ.) কৃষি কাজকে পছন্দ করতেনতিনি সাধারণতঃ পানির নালা কেটে সেচের ব্যবস্থা করতেনবৃক্ষ রোপণ করতেনচাষের মাধ্যমে মৃত জমি আবাদ করতেন কিন্তু পানি সেচের নালা ও আবাদকৃত সব জমিই তিনি দরিদ্রদের জন্যেওয়াকফ’ (দান) করতেনহযরত ইমাম আলী (আ.)-এর পক্ষ থেকে দরিদ্রদের জন্যেওয়াকফকৃত ঐসব সম্পত্তির বার্ষিক গড় আয়ের পরিমাণ ২৪ হাজার সোনার দিনারের সমতুল্য ছিলতাঁর ঐসবওয়াকফ্‌কৃত সম্পত্তিআলী (আ.)-এর সাদ্‌কানামে খ্যাত ছিল

Leave A Reply

Your email address will not be published.