তাকলীদ

0 688

প্রঃ তাকলীদ কাকে বলে?
উঃ তাকলীদ-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অনুসরণ করা। সুতরাং কোন মুজতাহীদের নির্দেশাবলীর অনুসরণ করাই হচ্ছে তাকলীদ। (মাসয়ালা নং২)
তাকলীদ সংক্রান্ত বিস্তারিত মাসায়েল
প্রঃ ১ তাকলীদ কার জন্য করা কর্তব্য
?

উঃ মানুষ সাধারণভাবে ৩ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত ঃ
(১) মুজতাহীদ
,

অথবা (২) মুজতাহীদের কাছাকাছি পর্যায়ের মান সম্পন্ন ব্যক্তি।
অথবা (৩) সাধারণ মানুষ
,
যিনি উপরোক্ত দুই শ্রেণীরই বাইরে।

এখানে উপরের উল্লেখিত ৩য় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত সকল সাধারণ মানুষের জন্যই কোন মুজতাহীদের তাকলীদ বা অনুসরণ করা একান্ত বা অপরিহার্য্য কর্তব্য অর্থাৎ ওয়াজিব। (মাস্লা নং-১)
প্রঃ ২ কাকে তাকলীদ বা অনুসরণ করা উচিত?

উঃ নিম্নোল্লেখিত সকল শর্তাবলী বা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মুজতাহীদকেই তাকলীদ বা অনুসরণ করা উচিত-
এখানে প্রথমেই যে প্রশ্নটি সবার মনে আসে তা হ
ল মুজতাহীদ কে এবং কাকে বলা হয়?

উঃ- মুজতাহীদ- মুজতাহীদ হচ্ছেন ইসলামের জ্ঞানে জ্ঞানী এবং কোরান ও হাদীস থেকে নিজের অর্জিত জ্ঞান
, পাণ্ডিত্ব ও প্রজ্ঞার সাহায্যে মানুষের জীবনের সাথে জড়িত সকল ধরনের আইন ও নীতি মালা প্রমাণ সহকারে প্রণয়ন করার মত ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখেন। অর্থাৎ এক কথায় তাকে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ ও বলা যেতে পারে। অবশ্য এখানে উল্লেখ করা দরকার যে সকল মুজতাহীদই আলেম,
কিন্তু সকল আলেমই মুজতাহীদ নন।
একজন অনুসরণ যোগ্য মুজতাহীদের যোগ্যতার শর্তাবলী ঃ-
তাঁকে অবশ্যই ১. পুরুষ হতে হবে।
২. সাবালক হতে হবে।
৩. আকেল বা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হতে হবে।
৪. ১২ ইমামের অনুসারী শীয়া হতে হবে।
৫. পিতা-মাতার বৈধ সন্তান হতে হবে (যারজ নয় এমন)
,

৬. জীবত হতে হবে।
৭. ন্যায় পরায়ণ হতে হবে।
৮. সমসাময়িক বাকী সকল (জীবিত) মুজতাহীদের তুলনায় অধিকতর জ্ঞানী হতে হবে। এবং
৯. ইহ্তিয়াতে-ওয়াজীব (সর্তকতামূলক-ওয়াজীব) হচ্ছে
,
তিনি অবশ্যই দুনিয়া লোভী হতে পারবেন না। (মাসয়ালা নং-২)

প্রঃ ৩ কোন্ কোন্ ব্যাপারে মুজতাহীদের তাকলীদ করা ওয়াজীব?
উঃ ১- উসুলেদ্বীন অর্থাৎ দ্বীন-ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগত (ইমান সংক্রান্ত) ব্যাপারে কারও তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না।
এবং দ্বীন ইসলামের ফুরুয়ে-দ্বীন অর্থাৎ ব্যবহারিক-আইনগত অংশের অতি জরুরী বা ……. ব্যাপারগুলোর বিষয়েও কারও তাকলীদ করা যাবে না। যেমনঃ নামায ও রোজার ওয়াজীব হবার ব্যাপারে
, যা কিনা মৌলিকভাবে একটি স্বতঃ সিদ্ধ ও প্রমাণিত ব্যাপার,
এক্ষেত্রে কোন মুজতাহীদের মতামত গ্রহণের মুখাপেক্ষি হওয়া যাবে না।

২- শুধুমাত্র ফুরুয়ে দ্বীন বা আইনগত অংশের সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয় গুলোর ব্যাপারেই মুজতাহীদের অনুসরণ করতে হবে।
প্রঃ ৪ সমগ্র মানব জীবনের জন্য ইসলাম প্রণীত প্রয়োজনীয় সকল আইন মালা বা ইসলামী আহ্কাম/নির্দেশাবলী মোট কত প্রকার?

উঃ এই সকল ইসলামী আহকাম বা নির্দেশাবলী মোট মোট ৫ ভাগে বিভক্তঃ
১- ওয়াজীব- যে ইসলামী নির্দেশ বা হুকুমটি পালন করা অবশ্যই কর্তব্য এবং যা পালন না করলে একজন সাবালক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা “মুকাল্লাফ” (পরে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হবে) গুণাহগার বা পাপী হিসাবে সাব্যস্ত হবে
,
সে সব ইসলামী আহকাম বা নির্দেশাবলীকেই ওয়াজীব বলা হয়।
২- মুস্তাহাব- যে সকল ইসলামী-আহকাম্ বা নির্দেশাবলী পালন করা বাঞ্চনীয় বা অত্যন্ত পছন্দনীয় ব্যাপার এবং তা পালন করলে অনেক সওয়াব বা পুন্যের অধিকারী হওয়া যায়
, কিন্তু কেউ তা পালন না করলে দোষী বা পাপী সাব্যস্ত হবে না,
সে গুলোকেই মুস্তাহাব বলা হয়ে থাকে।
৩- মুবাহ্- যে সকল কাজ করা এবং না করা দু
টোই ইসলামের দৃষ্টিতে সমান। অর্থাৎ,যা করলেও কোন সওয়াব বা পূন্য নেই, আবার না করলেও কোন গুণাহ নেই। যেমন খাওয়া,পান করা ইত্যাদি।
৪- হারাম- যে সকল কাজ করার প্রতি ইসলাম নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে এবং যা করার কারণে গুণাহগার বা পাপী বলে সাব্যস্ত হতে হবে
,
তাই হারাম বা অবৈধ হিসাবে পরিচিত।
৫- মাকরুহ্- যে সকল কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে অবাঞ্চনীয় বা অপছন্দনীয়
,
কিন্তু কেহ তা করলেও পাপী বা গুণাহগার হবে না তাকেই মাকরুহ বলে।

একজন মানুষের সারা জীবনের সমগ্র কাজ কর্মগুলোকেই আমরা উপরোক্ত ৫ ভাগের অন্তর্ভূক্ত করতে পারি। অর্থাৎ হয় তা ওয়াজীব হবে অথবা তা হারাম হবে, অথবা তা মুবাহ্ বা মাকরুহ্ বা মুস্তাহাব হবে এবং অবশ্যই এর বাহিরে অন্য কিছুই হবে না।

প্রঃ ৫ তাকলীফ কি জিনিষ?
উঃ তাকলীফ একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে দায়িত্ব বা কর্তব্য। আমাদের বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্রে যখন তাকলীফ শব্দটি ব্যবহৃত হবে
,
তার অর্থ হবে আমাদের উপর ন্যাস্ত ইসলামী শরিয়াতী দায়িত্ব।

প্রঃ ৬ মুকাল্লাফ্ কাকে বলে?
উঃ মুকাল্লাফ্ অর্থ দায়িত্বশীল। অর্থাৎ যাঁর উপর কোন ইসলামী তাকলীফ্ বা দায়িত্ব ন্যাস্ত হয়েছে
,
এক কথায় যার উপর ইসলামী শরিয়তের সকল বিধান ন্যাস্ত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর জন্য ইসলামী শরিয়তের বিধান গুলো সম্পূর্ণ রূপে মেনে চলা ওয়াজীব।

প্রঃ ৭ একজন ব্যক্তির মুকাল্লাফ্ হওয়ার শর্তাবলী কি?
উঃ একজন ব্যক্তিকে মুকাল্লাফ্ হতে হলে তাঁকে-
সাবালক হতে হবে। এবং
সম্পূর্ণ সুস্থ্য মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।

প্রঃ ৮ একজন ব্যক্তির সাবালক হওয়ার লক্ষণ বা শর্তাবলী কি কি?
উঃ নিম্নোল্লেখিত ৩টি লক্ষণের যে কোন একটি লক্ষণ পাওয়া গেলেই আমরা তাঁকে সাবালক হিসাবে গণ্য করতে পারি ঃ
১। তলপেটের নিম্ন দেশে কিছু শক্ত লোম গজানো। বা
২। বীর্য্যপাত ঘটা/স্বপ্ন দোষ হওয়া। বা
৩। ১৫ বৎসর (চন্দ্রবর্ষ/আরবী বছর হিসেবে) পূর্ণ হওয়া পুরুষের জন্য।
৯ বৎসর (চন্দ্রবর্ষ/আরবী বছর হিসেবে) পূর্ণ হওয়া মেয়েদের জন্য।

Leave A Reply

Your email address will not be published.