গোসল

0 459

প্রঃ ওয়াজীব গোসলসমূহ কি কি?
উঃ ১। জানাবাত বা যৌন অপবিত্রাবস্থা জনিত গোসল।
(যেমনঃ স্বপ্নদোষ
,স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলন বা যে কোন কারণেই বীর্য্য নির্গমন হলে মানুষের যৌন অপবিত্রাবস্থা সৃষ্টি হয়,
যা থেকে পবিত্র হবার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী গোসল বা স্নান করতে হবে)।
২। মাসিকের গোসল।
৩। প্রসবের পরবর্তী গোসল।
৪। ইস্তেহাযা বা মহিলাদের প্রদরস্রাব জনিত গোসল।
৫। মৃতদেহ স্পর্শ জনিত গোসল।
৬। জানাযা বা মৃতের গোসল।
৭। যে গোসল নাযর বা মানতের বা কসমের কারণে ওয়াজীব হয়।

প্রঃ জানাবাতের লক্ষণ কি কি?
উঃ যদি কারো মূত্রনালী দিয়ে কোন জলীয় পদার্থ বের হয় এবং সে বুঝতে না পারে যে তার ঐ জলীয় পদার্থ কি বীর্য্য না মূত্র
,বা অন্য কোন জলীয় পদার্থ? তখন তাকে লক্ষ্য করতে হবে যে,যদি নিম্ন লিখিত ৩টি লক্ষণ পাওয়া যায়,তাহলে ঐ জলীয় পদার্থকে বীর্য্য বলেই ধরে নিতে হবে এবং তাকে ওয়াজীব গোসল করতে হবে। (অবশ্য কোন মহিলা বা অসুস্থ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে এসব লক্ষনের সবগুলো না থাকলেও চলবে এবং শুধুমাত্র উত্তেজনার সাথে যদি তার জলীয় পদার্থ নির্গমন হয়,
তাহলে তাকেই বীর্য্য বলে ধরে নিতে হবে এবং জুনুব বা যৌন অপবিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার উপর গোসল ওয়াজীব হবে।)
জানাবতের লক্ষণ
১। মূত্রনালী দিয়ে নির্গত ঐ জলীয় পদার্থ যৌন উত্তেজনা সহকারে বের হবে।
২। মূত্রনালী দিয়ে নির্গত ঐ জলীয় পদার্থ যদি সবেগে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বের হয়।
৩। মূত্রনালী দিয়ে নির্গত ঐ জলীয় পদার্থ (বীর্য্য) নির্গত হবার পর যদি কিছুটা ক্লান্তি বোধ করে।
গোসলের প্রকারভেদ
১। তারতীবি অর্থাৎ ধারাবাহিক পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে প্রথমে গোসল করার উদ্দেশ্যে সমগ্র মাথা ও ঘাড় ধুতে হবে। অতঃপর সারা দেহের সম্পূর্ণ ডান অংশ এবং তেমনিভাবেই বাম অংশও ধুয়ে নিতে হবে।
কেউ যদি ইচ্ছাপূর্বক অথবা ভূলবশতঃ অথবা মাসলা বা নিয়ম না জানার কারণে উপরোক্ত নিয়মে গোসল না করে থাকে তা
হলে তার ঐ ওয়াজীব গোসল বাতিল বা নষ্ট হয়ে যাবে। তখন তাকে পুনরায় উপরোক্ত নিয়মেই নতুন করে ওয়াজীব গোসল সেরে নিতে হবে।
২। ইরতেমাছি বা অবগাহন অর্থাৎ ডুব দিয়ে গোসল করার পদ্ধতি ঃ
যদি কেউ এ পদ্ধতিতে তার ওয়াজীব গোসল সারার নিয়তে ধীরে ধীরে পানিতে এমনভাবে ডুব দেয় যাতে তার সমগ্র দেহই পানির ভেতর চলে যায়
,
তাহলে তার ওয়াজীব গোসল শুদ্ধ হবে। তবে ইহতিয়াত্ বা সর্তকতা হচ্ছে একসাথে অর্থাৎ এক দফায় পানিতে ডুব দেওয়া।
ক্স ওয়াজীব গোসলের জন্য নিয়ত করাও ওয়াজীব অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে।
ক্স এখানে উল্লেখযোগ্য যে
,
ওয়াজীব গোসল উপরে বর্ণিত দুটো পদ্ধতির যে কোন পদ্ধতিতে করলেই চলবে।

প্রঃ যে ব্যক্তি ওয়াজীব গোসল করেছে তাকে কি নামায পড়ার জন্য পুনরায় অযু করতে হবে?
উঃ যে ব্যক্তি জানাবাত অর্থাৎ যৌন অপবিত্রতা দূরীকরণের জন্য গোসল করেছে তাকে নামাযের জন্য নতুন করে অযু করার প্রয়োজন নেই। তবে জানাবাত্ ছাড়া অন্য ওয়াজীব গোসল করলে তাঁকে নামাযের জন্য নতুন করে অযু করে নিতে হবে।

যে সব কাজ একজন জুনুব অর্থাৎ যৌন অপবিত্র ব্যক্তির জন্য হারামঃ
১। পবিত্র কোরানের লেখ্য স্পর্শ করা,
তেমনি আল্লাহর নাম এবং ইহতিয়াতে ওয়াজীব বা সতর্কতামূলক ওয়াজীব হচ্ছে রসুল (সা:) সহ যে কোন নবীর নাম ও পবিত্র ইমাম (আ:) গণের নামও অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা হারাম বা নিষিদ্ধ।
২। পবিত্র কাবা ঘর এবং মদীনার মসজিদে নববী (দঃ) তে প্রবেশ করা হারাম যদি ঐ দুই মসজিদের এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় তবুও তা অপবিত্র ব্যক্তির জন্য জায়েয বা বৈধ নয়।
৩। উপরে বর্ণিত দুই মসজিদ ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদেও অপবিত্র ব্যক্তির অবস্থান নিষিদ্ধ বা হারাম। এমনকি ইহতিয়াতে ওয়াজীব বা সতর্কতামূলক ওয়াজীব হচ্ছে পবিত্র ইমাম (আঃ) গণের হারামেও অপবিত্র ব্যক্তির অবস্থান না করা।
তবে কেউ উপরোক্ত দুই মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে অতিক্রম করার জন্য এক দরজা দিয়ে ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেলে
,
বিশেষ প্রয়োজনের কারণে তাতে কোন অসুবিধা নেই। অথবা মসজিদের ভিতরের কোন জিনিষ বের করে আনার জন্য প্রয়োজনবোধে প্রবেশ করাও কোন বাধা নেই।
৪। মসজিদের ভেতরে কিছু রেখে আসার জন্য মসজিদে প্রবেশ করা অপবিত্র ব্যক্তির জন্য হারাম।
৫। যে সুরার মধ্যে ওয়াজীব সিজদা রয়েছে সে সব সুরা পাঠ করাও অপবিত্র ব্যক্তির জন্য হারাম।
ওয়াজীব-সিজদা সম্পন্ন সুরা সমূহঃ
১। সুরা সিজদাহ্ (৩২ নং সুরা)
২। সুরা হামিম- সিজদাহ্ (৪১ নং সুরা)
৩। সুরা নাজম(৫৩ নং সুরা)
৪। সুরা আলাক্ (৯৬ নং সুরা)

গোসল সংক্রান্ত বিস্তারিত আহ্কাম বা নির্দেশাবলীঃ
যে সব কারণে গোসল বাতিল বা নষ্ট হয়ে যায়ঃ
১। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে যাবার ফলে অথবা মাসলা না জানার কারণে যদি তারতীবি বা ধারাবাহিক গোসলের ধারাবাহিকতায় নিয়ম রক্ষা না করে,
তাহলে তার ওয়াজীব গোসল নষ্ট বা বাতিল হয়ে যাবে।
২। যদি কেউ ইরতিমাছি বা ডুব দেয়া পদ্ধতির গোসল সারার পর বুঝতে পারে যে তার দেহের কোন অংশ ভিজতে বাকী রয়ে গেছে অথবা যদি সে নাও জানতে পারে যে
,তার দেহের কোন অংশ ভেজিনি,
তাহলেও তাঁর গোসল বাতিল হয়ে যাবে এবং তাঁকে পুনরায় গোসল করতে হবে।
৩। পূর্বে বর্ণিত দু
প্রকারের যে কোন প্রকারেরই গোসল সারা হোক না কেন,
গোসলের পর দেহের এক চুল পরিমাণ অংশও যদি ভিজতে বাকী থাকে তাহলে তার ওয়াজীব গোসল বাতিল হয়ে যাবে ও তাকে আবার গোসল করতে হবে।

পূর্বে বর্ণিত দু-প্রকার গোসলের পার্থক্যঃ
১। ইরতিমাছি বা ডুব দিয়ে গোসলের পূর্বেই দেহে লেগে থাকা কোন অপবিত্র জিনিষ প্রথমে ধুয়ে পবিত্র করে নিতে হবে। কিন্তু তারতীবি বা ধারাবাহিক গোসলের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র অপবিত্র অংগ পানি ঢালার পূর্বে তা পবিত্র করে নিলেই হবে।
২। ইরতিমাছি বা ডুব দেয়া পদ্ধতির গোসলে ধীরে ধীরে বা বিরতি দিয়ে গোসল করলে তা শুদ্ধ হবে না। কিন্তু ধারাবাহিক পদ্ধতির গোসলে বিরতি দিয়ে গোসল করায় কোন অসুবিধা নেই।
ক্স যদি কেউ সন্দেহ করে যে,সে তার ওয়াজীব গোসল সম্পন্ন করেছে কি না?
তাহলে তাঁকে নতুন করে গোসল করতে হবে।
ক্স যদি কারও সন্দেহ হয় যে
,ওয়াজীব গোসল সে সম্পন্ন করেছে,তা ঠিক মত শুদ্ধ হয়েছে কি না,সে ক্ষেত্রে তার গোসল শুদ্ধ হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে এবং নতুন করে তার গোসল করা লাগবে না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.