ইসলাম ও শীয়া মাযহাব-১

0 656

 

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

 

medina

 

আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হুসাইন তাবাতাবাঈ

 

লেখক পরিচিতি

আল্লামা মুহাম্মদ হুসাইন তাবাতাবাঈ একটি অতীব সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। যে পরিবারের চৌদ্দ পুরুষ বংশ পরম্পরায় তাব্রীজের আলেম হিসাবে প্রখ্যাত ছিলেন। তিনি হিজরী ১৩২১ সনের ২৯ শে জিলক্বদ জন্ম গ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা তিনি নিজের এলাকেতেই অর্জন করেন।

অতঃপর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি হিজরী ১৩৪৪ সনে ইরাকের ‘নাজাফে আশরাফ’ নামক শহরে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে যান। শীয়াদের সর্ববৃহ এই জ্ঞান কেন্দ্রে তিনি ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পরিপূর্ণরূপে জ্ঞান অর্জনে মশগুল হন। তিনি ফিকহ্‌ ও উসুল শাস্ত্রদ্বয়কে ‘আয়াতুল্লাহ্‌ শায়খ মুহাম্মদ হুসাইন নায়েনী’ ও আয়াতুল্লাহ্‌ শায়খ মুহাম্মদ হুসাইন গারাবী ইস্পাহানী ‘কোম্পানী’ নামক প্রসিদ্ধ শিক্ষকদ্বয়ের নিকট এবং দর্শন শাস্ত্র ‘আয়াতুল্লাহ্‌ সাইয়্যেদ হুসাইন বদকুবী’ ও গণিতশাস্ত্র ‘আয়াতুল্লাহ্‌ সাইয়্যেদ আবুল কাসিম খুনসারী’ নামক প্রসিদ্ধ শিক্ষকের নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করেন। অন্যদিকে আধ্যাত্ম বা নিজেকে নৈতিক ভাবে গড়ে তোলার জন্যে হাজী মির্জা আলী ক্বাজীর শিষ্যত্ব বরণ করেন। এই মহান ব্যক্তি প্রজ্ঞাশাস্ত্রের তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক শাখায় উচ্চ পর্যায়ের মানুষ ছিলেন।

উল্লেক্ষ্য যে ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী (রহঃ) ও আত্মগঠনের ক্ষেত্রে জনাব ক্বাজী (রহঃ)-এর শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন। অতঃপর তিনি হিজরী ১৩৫৪ সনে নিজের জন্ম স্থান তাব্রিজে ফিরে আসেন। আল্লামা তাবাতাবাঈর শিক্ষা কেবল মাত্র ফেকাহ্‌ শাস্ত্রের সাধারণ পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং তিনি আরবী ব্যাকারণ, অলংকার শাস্ত্র ও সাহিত্য এবং ফেকহ্‌ ও উসুল শাস্ত্রে গভীর ভাবে জ্ঞান অর্জন করেন। একই ভাবে তিনি প্রাচীন গণিত ইউক্লিডের মুলনীতি থেকে টলেমীর লেখা জ্যোর্তি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ (The Almagest) টালেমী পদ্ধতি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছেন। অন্য দিকে তাফসির, দর্শন শাস্ত্র, তর্কবিদ্য ও ইরফান শাস্ত্রে এত গভীর ভাবে জ্ঞান অর্জন করেন যে, ইজতিহাদের পর্যায়ে উপনীত হন।

জনাব আল্লামা হিজরী ১৩৬৫ সনে আপন জন্মভূমি ত্যাগ করে কোমে এসে অবস্থান নেন। কোমে তিনি নীরবে কোন হৈ চৈ ছাড়াই তাফসির ও দর্শনের ক্লাশ নেয়া শুরু করেন। এ সময়ে তিনি তেহরান সহ আরো বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শন বা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানপ্রিয় লোকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যাদের মধ্যে অবশ্যই ওস্তাদ হেনরী র্কাবনের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। জনাব আল্লামা কয়েক বছর যাব জ্ঞানী-গুনী-পন্ডিত ও ছাত্রদের উপস্থিতিতে হেনরী র্কাবনের সাথে বৈঠক অব্যাহত রাখেন। উক্ত আলোচনায় ধর্ম, দর্শন ও আধুনিক বিশ্বের পেক্ষাপটে একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ও বাস্তবতা অনুসন্ধানীর করণীয় দায়িত্ব সম্পর্কে অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করা হত। ঐ জাতীয় উচ্চ মার্গীয় উন্মুক্ত চিন্তার আলোচনা বর্তমান মুসলিম বিশ্বে অতি বিরল। এই আলোচনা সমষ্টি পরবর্তীতে দু’খন্ডে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়। কোমের ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রে আল্লামার সবচেয়ে বড় অবদান হল বুদ্ধিবৃত্তিক ও কুরআনের তাফসির সংক্রান্ত জ্ঞান চর্চায় পুনরুজ্জীবন সঞ্চার করা। তাঁরই একান্ত প্রচেষ্টায় দর্শন শাস্ত্রের মৌলিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের গ্রন্থ ‘আশ্‌ শাফা’ ও ‘আসফার’ এই গ্রন্থদ্বয়ের শিক্ষার প্রসার ঘটে।

আল্লামার বিশ্বাস ও আচার-আচারণ ছিল অতীব আর্কষনীয়, একজন পরিশুদ্ধ মানবের ন্যায়। তাই জ্ঞান প্রিয় ব্যক্তিরা অতি সহজে তার আলোচনা সভার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তেন। আল্লামা বিশ্বাস করতেন জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক গঠন একান্ত প্রয়োজন। এ জন্যেই তিনি আপন ছাত্রদের আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করতেন। প্রকৃত পক্ষে নৈতিকতা ও জ্ঞানের সময়ে ব্যক্তি গঠনের এক সুনিপুন আদর্শ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।

 


 

ভূমিকা

 

‘ইসলাম ও শীয়া মাযহাব’ নামক এ গ্রন্থে ইসলামের দু’টি বৃহ উপদলের (শীয়া ও সুন্নী) অন্যতম শীয়া মাযহাবের প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। শীয়া মাযহাবের উপত্তি, বিকাশ ও চিন্তাধারার প্রকৃতি এবং ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে শীয়া মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গী এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে।

 

ধর্মঃ এখানে কোন সন্দেহ নেই যে, মানুষ তার স্বজাতীয় লোকদের সাথে সমাজবদ্ধ হয়ে একসংগে জীবন যাপন করে। মানুষ তার জীবনে সামাজিক পরিবেশে যে সব কাজ করে, সে সকল কাজ পরষ্পর সম্পর্কহীন নয়। যেমনঃ মানুষের খাওয়া, পড়া, পান করা, চলা, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া, পরষ্পরের সাথে মেলা মেশা ইত্যাদি কাজ বাহ্যতঃ পরষ্পর সম্পর্কহীন বলে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এগুলো সম্পূর্ণ রূপে পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত। যে কোন কাজই ইচ্ছেমত যত্র-তত্র ও যখন ইচ্ছে তখন করা যায় না। বরঞ্চ যে কোন কাজের জন্যেই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। তাই মানুষ তার জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম গুলো সুনির্দির্ষ্ট একটি নিয়মতান্র্তিকতার অধীনে সম্পন্ন করে, যা কখনই ঐ নিয়ম থেকে বিচ্যুত হয় না। আর মানব জীবনে সম্পাদিত সকল কাজের উদ্দেশ্যই বিশেষ একটি বিন্দু থেকে উসারিত। আর সেই কেন্দ্র বিন্দুটি হল, মানব জীবনের সাফল্য ও সৌভাগ্য লাভের আকাংখা, অর্থা মানুষ তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যে তার অভাব ও প্রয়োজন গুলোকে যথাসম্ভব পূর্ণ করার আকাংখা পোষণ করে।

এ কারণেই মানুষ তার জীবনের সকল কাজকর্মকে তার স্বরচিত নিজের ইচ্ছেমত রচিত আইন বা অন্যের কাছ থেকে গৃহীত আইনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে। এ ভাবে সে আপন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করে। তাই জীবন যাপনের স্বার্থে সে প্রয়োজনীয় জীবন উপকরণ সংগ্রহের জন্যে আত্ম নিয়োগ করে। কেননা, সে বিশ্বাস করে জীবন উপকরণ সংগ্রহ জীবন যাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় একটি বিধান। সে রসনার তৃপ্তি সাধন এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে খাদ্য ও পানি পান করে থাকে। কেননা, সৌভাগ্যপূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকার জন্যে খাওয়া ও পান করাকে সে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করে। ঠিক এভাবেই সে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের লক্ষ্যে পূর্বনির্ধারিত কিছু নিয়ম মেনে চলে।

মানব জীবনের উপর প্রভুত্ব বিস্তারকারী উল্লিখিত বিধি বিধানের ভিত্তিমূল একটি বিশেষ মৌলিক বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তার উপরই মানব জীবন নির্ভরশীল।

মানুষ এই সৃষ্টি জগতেরই একটি অংশ বিশেষ এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতের অস্তিত্বের মূলরহস্য সম্পর্কে প্রতিটি মানুষেরই একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা বা বিশ্বাস রয়েছে। সৃষ্টি জগতের রহস্য সম্পর্কে মানুষের চিন্তা-ভাবনা বা ধারণার প্রকৃতি কেমন হতে পারে, একটু চিন্তা করলেই তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন-যারা এ সৃষ্টি জগতকে শুধুমাত্র জড় বা বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে এবং মানুষকেও সস্পূর্ণরূপে (১০০%) জড় অস্তিত্ব (জন্মের মাধ্যমে জীবনের সূচণা এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তার ধ্বংস) বলে বিশ্বাস করে, তাদের অনুসৃত জীবন পদ্ধতিও জড়বাদের উপর ভিত্তি করেই রচিত। অর্থা স্বল্পকালীন এ পার্থিব জীবনের স্বাদ উপভোগই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আর এ জন্যেই সমগ্র বিশ্বজগ ও প্রকৃতিকে বশে আনার জন্যে তারা তাদের জীবনের সকল প্রচেষ্টা ও সাধনা বিনিয়োগ করে।

আবার অনেকেই (মূর্তি উপাসকরা) এ বিশ্ব জগ ও প্রকৃতিকে তার চেয়ে উচ্চতর ও মহান এক অস্তিত্বের (আল্লাহ্‌) সৃষ্টিকর্ম বলে বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহ্‌ মানুষকে তাঁর অসংখ্য অনুগ্রহ মূলক দান ও নেয়ামতের মাঝে নিমজ্জিত রেখেছেন, যাতে মানুষ আল্লাহ্‌ প্রদত্ত অসীম অনুগ্রহ উপভোগ করে উপকৃত হতে পারে। সৃষ্টি জগতের অস্তিত্বের রহস্য সস্পর্কে এ ধরণের বিশ্বাসের অধিকারী ব্যক্তিগণ এমন এক জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করেন, যার মাধ্যমে সর্বস্রষ্টা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং তাঁর ক্রোধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা, যদি তারা মহান আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভ করতে সর্মথ হন, তাহলে তিনি তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন এবং তাদেরকে অসীম ও চিরন্তন অনুগ্রহ বা নেয়ামতের অধিকারীও করবেন। আর মানুষ যদি তার কৃতকর্মের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার ক্রোধের সঞ্চার করে, তাহলে তারা আল্লাহ্‌‌ প্রদত্ত অনুগ্রহ বা নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে।

অন্য দিকে যারা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস ছাড়াও মানুষের জন্যে এক অনন্ত জীবনে বিশ্বাসী, এবং মানুষকে তার পার্থিব জীবনের কৃত সকল ভাল ও মন্দ কাজের জন্যে দায়ী বলে বিশ্বাস করে। ফলে তারা কেয়ামত দিনের প্রতিও বিশ্বাসী, যে দিন মানুষকে তার ভাল মন্দ সব কাজের জবাবদিহি করতে হবে এবং ভাল কাজের জন্যে পুরস্কৃত করা হবে; এই কেয়ামতের দিনকে ইহুদী, খৃষ্টান, মাজুসী এবং মুসলমানরাও বিশ্বাস করে। এ ধরণের বিশ্বাসের অধিকারী ব্যক্তিরা এমন এক জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করে যা ঐ মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জশ্যপূর্ণ এবং মানুষের ইহকাল ও পরকালীন উভয় জীবনেই সৌভাগ্যবান হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে। এ বিশ্ব জগতের সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কিত মৌলিক বিশ্বাসসমূহ এবং তার ভিত্তিতে রচিত অনুকরণীয় জীবন পদ্ধতির নীতিমালা সমষ্টির অপর নামই ‘দ্বীন’। ‘দ্বীনের’ মধ্যে সৃষ্ট শাখা সমূহকে ‘মাযহাব’ বলা হয়। উদাহরণ স্বরুপ যেমনঃ আহ্‌লুস্‌ সুন্নাহ্‌ ও আহ্‌লুশ্‌ তাশাইয়ূ ইসলামের অন্যতম দু’টি মাযহাব এবং খৃষ্টান ধর্মের মালেকানী ও নাসতুরী মাযহাবদ্বয়।

ইতিপূর্বের আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, মানুষ দ্বীনের (এক শ্রেণীর মৌলিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে রচিত জীবন পদ্ধতি) প্রতি নির্ভরশীলতা থেকে (যদি সে আল্লাহ্‌তে বিশ্বাসী নাও হয়) আদৌ মুক্ত নয়। সুতরাং ‘দ্বীন’ মানুষের জন্যে প্রয়োজনীয় এমন এক জীবন পদ্ধতি, যা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ স্বরুপ| পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী ‘দ্বীন’ কে এড়িয়ে যাওয়া মানুষের জন্যে অসম্ভব। এটা এমন এক পথ যা স্বয়ং মহান আল্লাহ্‌ মানব জাতির প্রতি প্রসারিত করেছেন এবং মহান আল্লাহতে গিয়েই এ পথের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অর্থা সত্য ‘দ্বীন’ (ইসলাম) গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের পথেই ধাবিত হয়। আর যারা সত্য ‘দ্বীন’কে গ্রহণ করেনি প্রকৃতপক্ষে তারা ভ্রান্ত পথই অনুসরণ করেছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে।[1]

 

ইসলামঃ আত্মসর্মপণ ও মাথানত করাই ‘ইসলাম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ। পবিত্র কুরআনে যে ‘দ্বীন’ অনুসরণের প্রতি মানব জাতিকে আহ্‌বান করা হয়েছে, তা হচ্ছে ‘ইসলাম’। ইসলাম নাম করণের মূল কারণ হচ্ছে, সমগ্র বিশ্ববাসী একমাত্র মহান আল্লাহ্‌র কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসর্মপণ করবে। এই আত্মসর্মপণের ফলশ্রুতিতে সে এক আল্লাহ্‌র নির্দেশ ব্যতীত অন্য কারো নির্দেশের আনুগত্য করবে না এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করবে না। আর এটাই হল ইসলামের মূল কর্মসূচী[2]। পবিত্র কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি এই ‘দ্বীন’ কে ‘ইসলাম’ ও এর অনুসারীদেরকে ‘মুসলমান’ হিসেবে নাম করণ করেন, তিনি হলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.)।

 

শীয়াঃ ‘শীয়া’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল অনুসারী। যারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারকে তাঁর প্রকৃত ও একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য করেন, তারাই ‘শীয়া’ নামে পরিচিত। তারা ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পবিত্র আহলে বাইত (আ.)-এর আর্দশের অনুসারী।[3]


 

শীয়া মাযহাবের উপত্তি ও তার বিকাশ প্রক্রিয়া

 

সর্বপ্রথম যারা ‘শীয়াতু-আলী’ বা হযরত আলী (আ.) [পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) ইমামদের প্রথম ইমাম]-এর অনুসারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল, তাদের আর্বিভাব মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই ঘটেছিল। মহানবী (সা.)-এর দীর্ঘ ২৩ বছর যাব নবুয়ত কালে ইসলামের আবির্ভাব, প্রচার ও অগ্রগতির ঘটনা অনেক উপলক্ষ্য বা হেতুর সৃষ্টি করেছিল। ঐসব উপলক্ষ্য বা হেতুগুলোই রাসুল (সা.)-এর সাহাবীদের মাঝে এ ধরণের একটি সমপ্রদায়ের (শীয়া) আবির্ভাব ঘটিয়ে ছিল।[4]

 

১. নবুয়ত প্রাপ্তির প্রথম দিনগুলোতে মহানবী (সা.) পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে সর্ব প্রথম নিকটআত্মীয়দের কাছে ইসলাম প্রচারের জন্যে আদিষ্ট হয়েছিলেন।[5] তখন তিনি স্পষ্ট ভাবে তাদেরকে আহ্‌বান জানিয়ে বলেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব প্রথম আমার আহ্‌বানে সাড়া দিবে, সেই হবে আমার প্রতিনিধি এবং স্থলাভিষিক্ত ও উত্তরাধিকারী।” তখন একমাত্র হযরত আলী (আ.)-ই সবার আগে মহানবী (সা.)-এর আহ্‌বানে সাড়া দিয়েছিলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মহানবী (সা.) ও হযরত আলী (আ.)-এর ঈমান আনয়নের বিষয়টিকে স্বাগত জানান এবং তাঁর ব্যাপারে স্বীয় প্রতিশ্রুতিকেও তিনি রক্ষা করেছিলেন।[6] এটা কখনই সম্ভব নয় যে, কোন একটি আন্দোলনের নেতা, আন্দোলনের সূচনা লগ্নে কোন একজন সহযোগীকে তাঁর প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী হিসেবে অন্য সবার কাছে পরিচিত করাবেন, অথচ তাঁর একনিষ্ঠ ও আত্মত্যাগী সহযোগীদের কাছে তাকে তিনি পরিচিত করাবেন না। অথবা তাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচিত করাবেন, কিন্তু তাঁর সমগ্র জীবদ্দশায় তাকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করবেন, তাঁর স্থলাভিষিক্তের পদমর্যাদাকে উপেক্ষা করবেন এবং অন্যান্যদের সাথে কোন পার্থক্যই রাখবেন না।

 

১. শীয়া ও সুন্নী উভয় সুত্রে বর্ণিত অসংখ্য ‘মুতাওয়াতির’
‘মুস্তাফিজ’  হাদীসে মহানবী (সা.) স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আলী (আ.) তাঁর কথায় ও কাজে ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত।[7]  তিনি যা কিছু বলেন এবং করেন, সবই ইসলামের প্রচার কাজের সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শরীয়তের ক্ষেত্রে তিনিই সর্ব াধিক জ্ঞানী ব্যক্তি।[8]

 

২. হযরত আলী (আ.) ইসলামের জন্যে অতীব মূল্যবান সেবামুলক কাজ করেছেন। ইসলামের পথে তিনি আশ্চর্যজনক আত্মত্যাগের প্রমাণ রেখেছেন। উদাহরণ স্বরুপ মদীনায় হিজরতের রাতে মহানবী (আ.)-এর বিছানায় শয়ন,[9] বদর, ওহুদ, খন্দক ও খায়বারের যুদ্ধে তাঁর দ্বারা অর্জিত বিজয়সমূহ উল্লেখযোগ্য। এ সব ঘটনার কোন একটিতেও যদি তিনি উপস্থিত না থাকতেন তাহলে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্‌ সেদিন আল্লাহ্‌র শত্রুদের হাতে ধ্বংস হয়ে যেত।[10]

 

৩. ‘গাদিরে খুমের ঘটনা’, এ ঘটনায় মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে জনসাধরণের মাঝে তাদের গণনেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত ও পরিচিত করিয়ে দেন। তিনি আলী (আ.)-কে নিজের মতই জনগণের অভিভাবকের পদে প্রতিষ্ঠিত করেন।

 

৪ হযরত আলী (আ.)-এর এধরণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মহত্বের অধিকারী হওয়ার বিষয়টি ছিল একটি সর্বসম্মত ব্যাপার[11]। এ ছাড়াও তাঁর প্রতি আল্লাহ্‌র রাসুল (সা.)-এর ভালবাসা ছিল অপরিসীম।[12] সব মিলিয়ে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যে, সত্য ও মহত্বের অনুরাগী রাসুল (সা.)-এর বেশ কিছুসংখ্যক সাহাবী আলী (আ.)-এর প্রেমে অনুরক্ত ও তাঁর অনুসারীতে পরিণত হবেন। একইভাবে এ বিষয়টি বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবীর ঈর্ষা ও বিদ্বেষের কারণও ঘটিয়ে ছিল, যা তাদেরকে আলী (আ.)-এর প্রতি শত্রুতায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। এ সকল বিষয় ছাড়াও ¯^qs আল্লাহ্‌র রাসুল (সা.)-এর পবিত্র বাণীসমূহে “শীয়াতু আলী” [আলী (আ.)-এর অনুসারী] এবং ‘শীয়াতু আহ্‌লুল্‌ বাইত্‌’ (পবিত্র আহলে বাইতের অনুসারী) নামক শব্দগুলোর বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।[13]

 

সুন্নী জনগোষ্ঠী থেকে শীয়া জনগোষ্ঠীর

পৃথক হওয়ার কারণ

 

রাসুল (সা.) সাহাবাবৃন্দ এবং মুসলমানদের কাছে হযরত আলী (আ.) উচ্চমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই হযরত আলী (আ.)-এর ভক্ত ও অনুসারীদের এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব ও খেলাফতের অধিকার একমাত্র হযরত আলী (আ.)-এর-ই রয়েছে। আর রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুপূর্ব অসুস্থ অবস্থার সময়ে সংঘটিত কিছু ঘটনা ছাড়া অন্য সকল ঘটনা প্রবাহ তাদের এ ধারণারই সাক্ষ্য দিচ্ছিল।[14]

কিন্তু পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে তাদের ধারণার বিপক্ষে বইতে শুরু করল। আর এটা তখনই ঘটল, যখন বিশ্বনবী (সা.) সবেমাত্র শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর পবিত্র দেহ এখনও দাফন হয়নি। রাসুল (সা.)-এর শোকগ্রস্ত পবিত্র আহলে বাইত (আ.) ও কিছু সংখ্যক সাহাবী যখন রাসুল (সা.)-এর দাফন কাফনের আয়োজনে ব্যস্ত, ঠিক তখনই খবর এল, কিছু সংখ্যক সাহাবী খলিফা নির্বাচন করে ফেলেছেন। খলিফা নির্বাচনের ঘটনা এত দ্রুত ও তাড়াহুড়ার মধ্যে ঘটানো হয়েছিল যে, এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) এর পবিত্র আহলে বাইত (রাসুলের পরিবার), আত্মীয় ¯^Rb এবং ভক্ত ও অনুসারীদেরকে পরামর্শের জন্যেও কোন প্রকারেই সংবাদ দেয়া হয়নি। এ ঘটনার মূল ব্যক্তিরা পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও প্রথম অবস্থায় এদের সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য। অথচ তারা বাহ্যত মুসলমানদের কল্যাণকামীতার দাবিদার ছিল। এ ভাবেই হযরত আলী (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখী হলেন।[15]

হযরত সালমান ফারসী, হযরত মিকদাদ, হযরত আবুযার, হযরত আব্বাস, হযরত যুবাইর, হযরত আম্মারসহ হযরত আলী (আ.) ও তাঁর অন্যান্য অনুসারীরা রাসুল (সা.)-এর দাফন কাফনের অনুষ্ঠান শেষ করা এবং খলিফা নির্বাচনের ঘটনা সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত হওয়ার পর এ ব্যাপারে তাঁরা কঠোর সমালোচনা করেন। এ ছাড়াও তথাকথিত নির্বাচিত খলিফা এবং এ ঘটনার মূল ব্যক্তিদের কাছে এ ব্যাপারে তাঁরা ব্যাপক প্রতিবাদ জানান। এমন কি এ ব্যাপারে তাঁরা কিছু গণজমায়েতও করেন। কিন্তু এর উত্তরে তাদেরকে বলা হয়, এ ঘটনাকে মেনে নেয়ার মাঝেই মুসলমানদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।[16]

প্রতিষ্ঠিত খলিফার প্রতি সমালোচনা ও বিরূদ্ধাচারণই হযরত আলী (আ.) ও তাঁর অনুসারীদেরকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে পৃথক ও সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ে পরিণত হওয়ার কারণ ঘটিয়ে ছিল। আর তখন থেকেই হযরত আলী (আ.)-এর অনুসারীরা ‘শীয়াতু আলী’ (আলীর অনুসারী) নামে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। অবশ্য খলিফার প্রশাসনিক অঙ্গনে এমন এক সর্তকপূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল যে, আলী (আ.)-এর অনুসারীরা এভাবে বিশেষ একটি নামে সমাজে প্রসিদ্ধি লাভ না করুক। মুসলিম সমাজ এভাবে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দু’টি দলে বিভক্ত না হোক। বরং তাদের প্রচেষ্টা ছিল খেলাফতকে একটি সর্বসম্মত বিষয় হিসেবে সমাজের কাছে তুলে ধরা। তাই খেলাফতের বিরোধীদেরকে তারা ‘বাইয়াতের’ বিরোধী ও মুসলিম উম্মার বিরোধী হিসেবে সমাজে পরিচিতি করাতে থাকলেন। কখনও বা খেলাফতের বিরোধীদেরকে এর চেয়ে জঘণ্য ভাষায় সম্বোধন করা হত।[17]

অবশ্য শীয়াদেরকে সেদিন তাঁদের জন্ম লগ্নেই প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা পদদলিত হতে হয়েছিল। শুধুমাত্র মৌখিক প্রতিবাদ-কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা একপাও অগ্রসর হতে পারেনি। আর হযরত ইমাম আলী (আ.) ইসলাম ও মুসলমানদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা এবং প্রয়োজনীয় শক্তি সামর্থ্যের অভাবে একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লব থেকে বিরত রইলেন। কিন্তু খেলাফত বিরোধী পক্ষ তাদের মতাদর্শের ব্যাপারে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে আত্মসর্মপণ করেনি। রাসুল (সা.)-এর উত্তরাধিকার ও জ্ঞানগত নেতৃত্বের ব্যাপারে তারা একমাত্র হযরত ইমাম আলী (আ.)-কেই যোগ্য বলে বিশ্বাস করতেন।[18] তারা জ্ঞানগত ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের গুণাবলী একমাত্র হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর মধ্যেই দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তারা তাঁর দিকেই মুসলমানদেরকে আহ্‌বান জানাতেন।[19]

 

রাসুল (সা.)-এর উত্তরাধিকার ও

জ্ঞানগত নেতৃত্বের বিষয়

 

ইসলামের শিক্ষা থেকে শীয়ারা যে জ্ঞান লাভ করেছিল, তাতে শীয়ারা বিশ্বাস করত যে, যে বিষয়টি সমাজের জন্যে সর্বপ্রথম জরুরী তা হল, ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সবার সুস্পষ্ট ধারণার অধিকারী হওয়া।[20] আর পরবর্তী পর্যায়ে সেই ইসলামী শিক্ষা সমূহকে পূর্ণ ভাবে সমাজে প্রয়োগ করা। অন্য কথায়,

 

প্রথমতঃ সমাজের প্রত্যেককেই এ পৃথিবী ও মানব জাতিকে বাস্তব দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে একজন মানুষ হিসেবে নিজ দায়িত্ব সমন্ধে অবগত এবং তা পালনে ব্রত হওয়া উচিত। এমন কি তা যদি তার ইচ্ছার বিরোধীও হয় তবুও তা পালন করা উচিত।

 

দ্বিতীয়তঃ একটি ইসলামী শাসন ব্যবস্থাই সমাজে ইসলামের প্রকৃত বিধি বিধান সমূহকে সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করবে। যাতে করে ঐ সমাজের কেউই যেন আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা না করে এবং সবাই পূর্ণ স্বাধীনতাসহ ব্যক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভোগ করতে পারে। আর এদু’টি মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে এমন এক ব্যক্তির প্রয়োজন, যে সরাসরি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নিস্পাপ হওয়ার মত গুণের অধিকারী হবে। অন্যথায় হয়ত এমন কোন লোক সেই শাসন ব্যবস্থা ও জ্ঞানগত নেতৃত্বের আসনের অধিকারী হয়ে বসবে, যে তার ঐ গুরুদায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চিন্তাগত পথভ্রষ্টতা বা বিশ্বাসঘাতকতার সম্ভবনা থেকে মুক্ত নয়। এর ফলে তখন ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা ব্যহত হবে ও ইসলামী শাসন ব্যবস্থা একটি অত্যাচারী একনায়ক বা রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে। তখন ইসলামের পবিত্র জ্ঞানভান্ডার পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মতই স্বেচ্ছাচারী ও স্বার্থান্বেষী পন্ডিত মহলের দ্বারা বিকৃতির স্বীকার হবে। বিশ্বনবী (সা.)-এর সাক্ষ্য অনুযায়ী একমাত্র যে ব্যক্তি কথায় ও কাজে এ পদের জন্যে উপযুক্ত ছিল এবং যার পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্‌র পবিত্র কুরআন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতের অনুরূপ ছিল, তিনি হচ্ছেন হযরত আলী (আ.)।[21]

যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠদের বক্তব্য ছিল এই যে, ‘কুরাইশরা’ খেলাফতের ব্যাপারে হযরত আলী (আ.)-এর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির বিরোধী। তারপরও তাদের উচিত ছিল বিরোধীদেরকে সত্যের দিকে ফিরে আসতে বাধ্য করা এবং বিদ্রোহীদেরকে দমন করা। ঠিক যেমনটি যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের সাথে করা হয়েছিল। এমনকি তাদের সাথে যুদ্ধও করা হয়েছিল। তবুও যাকাত আদায় থেকে তারা বিরত হয়নি। তাই কুরাইশদের বিরোধীতার ভয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার কাজ থেকে হাত গুটিয়ে সত্যকে হত্যা করা তাদের কখনও উচিত হয়নি। নির্বাচিত খেলাফতকে সম্মতি প্রদান থেকে যে কারণটি শীয়াদের বিরত রেখে ছিল, তা হচ্ছে এ ঘটনার অনাকাংখিত পরিণতি, যা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার জন্যে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসত এবং ইসলামের সুমহান শিক্ষার ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিত। বাস্তবিকই পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে ক্রমেই এ ধারণার সত্যতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। এর ফলে শীয়াদের এ সংক্রান্ত বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হতে থাকে। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে শীয়ারা বাহ্যত হাতে গোনা অল্প কয়েক জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যা বৃহত্তর জনসমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল, তথাপি পবিত্র আহলে বাইতগণ (আ.) গোপনে ইসলামের শিক্ষাদান কর্মসূচী এবং নিজস্ব পদ্ধতিতে ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যান। অন্যদিকে এর পাশাপাশি ইসলামী শক্তির উন্নতি ও সংরক্ষণের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁরা শাসক গোষ্ঠীর সাথে প্রকাশ্য বিরোধীতা থেকে বিরত থাকেন। এমন কি শীয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল জিহাদেও অংশ গ্রহণ করতেন এবং গণ-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপও করতেন। স্বয়ং হযরত আলী (আ.) ইসলামের স্বার্থে সংখ্যাগরিষ্ঠদের পথ নির্দেশনা দিতেন।[22]

 

 

নির্বাচিত খেলাফতের রাজনীতি ও

শীয়াদের দৃষ্টিভঙ্গী

 

শীয়া মাযহাবের অনুসারীরা বিশ্বাস করতেন যে, ইসলামের ঐশী আইন বা শরীয়ত, যার উ পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবী (সা.)-এর সুন্নাত তা কেয়ামত পর্যন্ত সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন ও অপরিবর্তীত অবস্থায় এবং স্বীয় মর্যাদায় টিকে থাকবে।[23] ইসলামী আইনসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যাপারে এতটুকু টাল-বাহানা করার অধিকার ইসলামী সরকারের নেই। ইসলামী সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে পরামর্শ সভার পরামর্শ ও সমসামায়িক পরিস্থিতি অনুযায়ী ইসলামী শরীয়তের (আইন) ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুপূর্ব অসুস্থ অবস্থার সময়ে সেই ঐতিহাসিক ‘কাগজ কলম আনার ঘটনা’ খলিফা নির্বাচন ও রাজনৈতিক বাইয়াত গ্রহণসহ ইত্যাদি ঘটনা তদানিন্তন খেলাফতের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তোলে। এ ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, নির্বাচিত খেলাফতের মূল ব্যক্তিবর্গ ও সমর্থকগণ পবিত্র কুরআনকে কেবল মাত্র একটি সংবিধান হিসাবে সংরক্ষণে বিশ্বাসী। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত ও আদর্শকে তারা অপরিবর্তনীয় বলে মনে করত না। বরং তাদের ধারণা ছিল ইসলামী সরকার নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত বাস্তবায়ন থেকেও বিরত থাকতে পারে। তদানিন্তন খেলাফততন্ত্রের এ দৃষ্টি ভঙ্গীর প্রমাণ পরবর্তীতে রাসুল (সা.)-এর বহু সাহাবীদের কথা ও কাজে পরিলক্ষিত হয় (সাহাবীরা মুজতাহিদ। ইজতিহাদ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যদি সত্যে উপনীত হন, পুরস্কৃত হবেন। আর যদি ভুল করেন, ক্ষমা প্রাপ্ত হবেন)। এর স্পষ্ট উদাহরণ জনৈক সাহাবী ও সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের ঐতিহাসিক ঘটনায় পাওয়া যায়। কোন এক রাতে খালিদ বিন ওয়ালিদ জনাব মালিক বিন নুওয়াইরা নামক জনৈক গণ্যমান্য মুসলমানের বাড়ীতে আকস্মিকভাবে অতিথি হন। খালিদ বিন ওয়ালিদ তাঁকে অপ্রত্যাশিতভাবে হত্যা করেন এবং তাঁর কর্তিত মাথা চুলোর আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন।

অতঃপর ঐ রাতেই নিহতের স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। কিন্তু, সামরিক বাহিনীর জন্যে খালিদ বিন ওয়ালিদের মত সুযোগ্য সেনাপতির প্রয়োজন। এই স্বার্থে খলিফা এ ধরণের জঘণ্য ও নৃশংস হত্যা কান্ডের বিচার ও প্রয়োজনীয় শাস্তি, খালিদ বিন ওয়ালিদের উপর প্রয়োগ থেকে বিরত থাকলেন।[24] একইভাবে খলিফার প্রশাসন মহানবী (সা.)-এর আত্মীয়-স্বজন ও পবিত্র আহলে বাইতগণের (আ.) প্রতি নিয়মিত প্রদত্ত খুমস্‌ বন্ধ করে দেন।[25]  রাসুল (সা.)-এর হাদীস লেখা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যদি কখনও লিপিবদ্ধ কোন হাদীস কোথাও কারো কাছে পাওয়া যেত তাহলে সাথে সাথেই তা বাজেয়াপ্ত করা হত এবং পুড়িয়ে ফেলা হত।[26]  হাদীস লিপিবদ্ধকরণ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সমগ্র ‘খোলাফায়ে রাশেদীনের’ যুগে অব্যাহত ছিল। আর তা উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজের শাসন আমলে (হিঃ ৯৯ – ১০২ হিঃ) পর্যন্ত বলব থাকে।[27] দ্বিতীয় খলিফা ওমরের সময় (হিঃ ১৩ – ২৫ হিঃ) খেলাফত প্রশাসনের এ রাজনৈতিক পদক্ষেপটি আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময় দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইসলামী শরীয়তের বেশ কিছু আইনের পরিবর্তন সাধন করেন। যেমনঃ ‘হজ্জে তামাত্তু’ ‘মুতাহ্‌ বিবাহ্‌ এবং আযান’ এ ‘হাইয়্যা আলা খায়রিল আমাল’ বাক্যটির ব্যবহার তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।[28]  তিনিই একই বৈঠাকে তিন তালাকসহ এজাতীয় আরো অনেক নীতির প্রচলন শুরু করেন।[29]

দ্বিতীয় খলিফা ওমর সর্ব প্রথম বাইতুল মালের অর্থ জনগণের মধ্যে বন্টনের সময় বৈষম্যের সৃষ্টি করেন।[30] এ বিষয়টি পরবর্তীতে মুসলমানদের মাঝে আশ্চর্যজনক শ্রেণীবৈষম্য এবং ভয়ংকর ও রক্তাক্ত সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়। দ্বিতীয় খলিফা ওমরের খেলাফতের সময়েই মুয়াবিয়া সিরিয়ায় রাজপ্রাসাদে বসে শাসনকার্য পরিচালনার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের সূচনা করেন। দ্বিতীয় খলিফা ওমর তাকে আরবের ‘কাসরা’ (জনৈক বিখ্যাত পারস্য সম্রাটের উপাধি) বা বাদশাহ্‌ বলে ডাকতেন। তিনি কখনো মুয়াবিয়ার এধরণের কাজের প্রতিবাদ করেননি।

দ্বিতীয় খলিফা ওমর হিজরী ২৩ সনে জনৈক পারসিক ক্রীতদাসের হাতে নিহত হন। মৃত্যুর পূর্বে খলিফা ওমরের নির্দেশে ৬ সদস্য বিশিষ্ট খলিফা নির্বাচন কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে তৃতীয় খলিফা র্নিবাচিত হন ও তার শাসনভার গ্রহণ করেন। তৃতীয় খলিফা ওসমান তার শাসন আমলে উমাইয়া বংশীয় আপন আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপক হারে প্রশাসনে নিযুক্ত করার মাধ্যমে উমাইয়াদেরকে জনগণের উপর প্রভুত্ব বিস্তারে সহায়তা করেন। হিজাজ (বর্তমান সৌদি আরব) ইরাক ও মিশরসহ অন্যান্য ইসলামী প্রদেশগুলোর শাসনভার তিনি উমাইয়া বংশের লোকজনের উপর অর্পণ করেন।[31] এরা সবাই প্রকাশ্যভাবে অন্যায়-অত্যাচার, দূর্নীতি, ইসলামী নীতিমালা লংঘন ও পাপাচার প্রচলনের মাধ্যমে ইসলামী প্রশাসনে চরম অরাজকতার সূত্রপাত ঘটায়।[32]কালীন ইসলামী বিশ্বের চর্তুদিক থেকে জনগণের অভিযোগ ওসমানের কাছে পৌঁছতে লাগল। কিন্তু খলিফা ওসমান উমাইয়া বংশীয় ক্রীতদাসী এবং বিশেষ করে জনাব মারওয়ান বিন হাকামের (খলিফার চাচাতো ভাই এবং প্রধানমন্ত্রী) দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবান্বিত ছিলেন। ফলে জনগণের অভিযোগকে তিনি কখনই গুরুত্ব দিতেন না।

শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে তিনি অভিযোগকারীদের শায়েস্তা করার নির্দেশ জারী করতেন।[33] অবশেষে হিজরী ৩৫ সনে জনগণ খলিফার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। খলিফা ওসমানের বাড়ী বেশ ’দিন ঘেরাও রাখা হয় এবং কিছু সংর্ঘষের পর তারা খলিফাকে হত্যা করে। সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া বংশের লোক এবং তৃতীয় খলিফা ওসমানের ঘনিষ্ট আত্মীয়। ওসমান তার শাসন আমলে সিরিয়ার প্রশাসনকে অধিক শক্তিশালী করেন। প্রকৃতপক্ষে খেলাফতের গুরুভার ক্রমেই সিরিয়ায় কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। যদিও রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামোগত কেন্দ্র ছিল মদীনা। তবে তা একটি বাহ্যিকরূপ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।[34]

ইসলামের প্রথম খলিফা সাহাবীদের দ্বারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন। দ্বিতীয় খলিফা, প্রথম খলিফার ওসিয়াত নামার মাধ্যমে মনোনয়ন লাভ করে ক্ষমতায় আসেন। আর তৃতীয় খলিফা, দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা মনোনিত ছয় সদশ্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে মনোনীত হন। কমিটির র্নিবাচনের নীতিমালাও পূর্ব থেকেই দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা র্নিধারিত হয়েছিল। যাই হোক, ইসলামের প্রথম তিন খলিফা, যাদের শাসনকাল প্রায় পঁচিশ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাদের গৃহীত রাজনীতির স্বরুপ এটাই ছিল যে, তারা নিজস্ব ‘ইজতিহাদ’(গবেষণা) অনুসারে প্রয়োজনীয় যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন এবং সমাজে তা প্রয়োগ করবেন। ইসলামী জ্ঞান সংস্কৃতি প্রসারের ব্যাপারে তাদের নীতি ছিল এই যে, পবিত্র কুরআন, তাফসির (ব্যাখ্যা) বা গবেষণা ছাড়াই পঠিত হবে। আর রাসুল (সা.) এর হাদীস অলিখিত ভাবে প্রচারিত হবে এবং অবশ্যই তা মৌখিক বর্ণনা শ্রবণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পবিত্র কুরআনের অনুলিপি তৈরী করণ অত্যন্ত সীমিত সুনিয়ন্ত্রিত ছিল। আর হাদীস লিখন ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।[35] হিজরী ১২ সনে সংঘটিত ‘ইয়ামামা’র যুদ্ধ পর্যন্ত অবস্থা বলব ছিল। ঐ যুদ্ধে বেশ কিছু সাহাবী নিহত হন যারা কুরআনের ক্বারী ও হাফেজ ছিলেন। তখন দ্বিতীয় খলিফা ওমর, প্রথম খলিফা আবুবকরকে সমগ্র কুরআনকে গ্রন্থবদ্ধ আকারে এক যায়গায় সংগৃহীত করার জন্য প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাব বলেন, ভবিষ্যতে যদি এ ভাবে কুরআনের আরও হাফিজ নিহত হন, তাহলে অদুর ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যে আর কুরআনের অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং কুরআনের সব আয়াত গুলো এক যায়গায় সংগ্রহ করে পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন।[36]

এ সিদ্ধান্ত শুধু কুরআনের ক্ষেত্রেই গৃহীত হয়। অথচ রাসুল (সা.)-এর হাদীস, কুরআনের পরই যার অবস্থান, তাও একই বিপদের সম্মুখীন ছিল। কারণ, রাসুল (সা.)-এর হাদিসের ভাবার্থ মুলক বর্ণনা তার পরির্বতন, পরির্বধন সংকোচন, বিস্মৃতি, বিকৃতি ও জালকৃত হওয়ার হাত থেকে আদৌ নিরাপদ ছিল না। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর হাদীস সংরক্ষণের ব্যাপারে আদৌ কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এমন কি যেখানেই লিপিবদ্ধ কোন হাদীস পাওয়া যেত, সাথে সাথেই তা পুড়িয়ে ফেলা হত। পরিণতিতে অবস্থা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছালো যে, খুব অল্প দিনের মধ্যেই নামায, রোযা…. ইত্যাদির মত ইসলামের অতীব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারেও পরস্পর বিরোধী মতামতের সৃষ্টি হল। একইভাবে এ যুগে ইসলামী জ্ঞানবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলোর উন্নয়নের ব্যাপারেও আদৌ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ, পবিত্র কুরআনে ও হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদীসে, জ্ঞান অর্জন ও তার প্রসারের ব্যাপারে যে প্রশংসা, অনুপ্রেরণা ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, খেলাফতের যুগে এসে তা সস্পূর্ণ নিস্ক্রীয় ও স্থবির হয়ে পড়ে। অধিকাংশ মুসলমানই তখন একের পর এক রাজনৈতিক বিজয় নিয়ে মেতে ছিল। আর তখন তাদের যুদ্ধলব্ধ গণিমতের সীমাহীন সম্পদের স্রোত সমগ্র আরব সাম্রাজ্যের দিকে ধাবিত হয়েছিল। যার ফলে নবীবংশের পবিত্র জ্ঞানের ঝর্ণাধারা থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে মুসলমানরা আদৌ কোন গুরুত্ব দেয়নি। ঐ পবিত্র জ্ঞানধারার উসমুখ ছিলেন হযরত ইমাম আলী (আ.) তাঁর ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন যে, হযরত আলী (আ.)-ই ইসলাম এবং পবিত্র কুরআন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি। এমন কি কুরআন সংগ্রহের সময়ও খেলাফত প্রশাসন হযরত আলী (আ.)-কে সে ব্যাপারে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করার অধিকার দেয়নি। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে তাঁর নামটাও তারা উচ্চারণ করেনি সেদিন। অথচ খেলাফত প্রশাসন এটা ভাল করেই জানতেন যে, রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (আ.) বহুদিন পর্যন্ত নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখেন। আর ঐ সময়ে তিনি কুরআনের সমগ্র লিপিসমূহকে একত্রিত ভাবে সংগ্রহ করে ছিলেন।[37] খেলাফত প্রশাসনের এমনই ধরণের আরও অনেক কর্মকান্ড হযরত আলী (আ.) এর ভক্ত ও অনুসারীদের বিশ্বাসকে অধিকতর সূদৃঢ় এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্তক হতে সাহায্য করেছিল। এর ফলে দিনের পর দিন তাদের কার্যক্রমের গতিও বহু গুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওদিকে ব্যাপক ভাবে গণ-প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় হযরত আলী (আ.) ব্যক্তিগত পর্যায়ে লোক তৈরীর কাজ চালিয়ে যান। এই দীর্ঘ ২৫ বছরের মধ্যে হযরত আলী (আ.)-এর অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ চারজন শিষ্য ও আপ্রাণ সহযোগীর তিনজনই পরলোক গমন করেন। যারা ছিলেন হযরত সালমান ফারসী (রা.), হযরত আবুযার গিফারী (রা.) এবং হযরত মিকদাদ (রা.)। কিন্তু ইতিমধ্যেই আরও বহু সংখ্যক সাহাবী এবং হেজাজ (বর্তমান সৌদি আরব), ইয়ামান, ইরাক সহ বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য তাবেয়ীন (যারা রাসুলের সাহাবীদের সাক্ষাত লাভ করেছেন) হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারীতে পরিণত হন। যার ফলে তৃতীয় খলিফা নিহত হওয়ার পর প্রশাসন রাজ্যের চর্তুদিক থেকে গণসমর্থনের জোয়ার হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দিকে ধাবিত হয়। সকলে গণভাবে হযরত আলী (আ.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং তিনি খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন।

 

হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফত ও

তার প্রশাসনিক পদ্ধতি

 

হিজরী ৩৫ সনের শেষ ভাগে হজরত আলী (আ.)-এর খেলাফত কাল শুরু হয়। প্রায় ৪ বছর ৫মাস পর্যন্ত এই খেলাফত স্থায়ী ছিল। হযরত আলী (আ.) খেলাফত পরিচালনার ব্যাপারে হযরত রাসুল (সা.)-এর নীতির অনুসরণ করেন।[38] তাঁর পূর্ববর্তী খলিফাদের যুগে যেসব (ইসলামী নীতি মালার) পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল, তিনি সেগুলোকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। খেলাফত প্রশাসনে নিযুক্ত অযোগ্য লোকদের তিনি দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন।[39] তাঁর এসব পদক্ষেপে প্রকৃতপক্ষে এক বৈপ্লবিক আন্দেলন ছিল, যা পরবর্তিতে প্রচুর সমস্যারও সৃষ্টি করেছে। হযরত ইমাম আলী (আ.) খেলাফতের প্রথম দিনে জনগণের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন সেখানে তিনি বলেন ঃ “হে জনগণ! জেনে রেখো নবুয়াতের যুগে যে সমস্যায় তোমরা ভুগেছিলে আজ আবার সেই সমস্যাতেই জড়িয়ে পড়লে। তোমাদের মধ্যে একটা ব্যাপক পরির্বতন ঘটবে। যে সকল মহ ব্যক্তিরা এতদিন পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা এখন সামনের সারিতে চলে আসবেন। একইভাবে যেসব অযোগ্য লোক এতদিন সামনের সারিতে অবস্থান নিয়েছিল আজ তারা পিছনে চলে যাবে। (সত্য ও মিথ্যা বিদ্যমান এবং এতদুভয়ের প্রত্যেকেরই অনুসারীও রয়েছে। তবে সবারই উচিত সত্যকে অনুসরণ করা) মিথ্যার পরিমাণ যদি অধিকও হয়, সেটা এমন নতুন কিছু নয়। সত্যের পরিমাণ যদি কমও হয়, হোক না! অনেক সময় কমওতো সবার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে থাকে। আর উন্নতির আশাও এতে রয়েছে। তবে এমনটি খুব কমই দেখা যায় যে, যা একবার মানুষের হাতছাড়া হয়ে গেছে তা পুনরায় তার কাছে ফিরে এসেছে”।[40]

এভাবে হযরত আলী (আ.) তাঁর বৈপ্লবিক প্রশাসনকে অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বৈপ্লবিক আন্দোলন সমূহের স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে, এই আন্দোলনের ফলে যাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তারা এ ধারার বিরোধী হয়ে ওঠে। আমরা দেখতে পাই হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের বৈপ্লবিক নীতি বহু স্বার্থেন্বেষী মহলকে আঘাত করেছিল। তাই শুরুতেই সারা দেশের যত্রতত্র থেকে আলী (আ.)-এর খেলাফতের বিরোধী সূর বেজে ওঠে। বিরোধীরা তৃতীয় খলিফার রক্তের প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র মুলক শ্লোগানের ধুঁয়ো তুলে বেশ কিছু রক্তাক্ত যুদ্ধের অবতারণা করে। এ জাতীয় গৃহযুদ্ধ হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সমগ্র খেলাফতকালব্যাপী অব্যাহত ছিল। শীয়াদের দৃষ্টিতে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া এসব যুদ্ধের সূচনাকারীদের অন্য কোন উদ্দেশ্যই ছিল না।

তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের শ্লোগান ছিল সম্পূর্ণরূপে গণপ্রতারণামূলক একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। এমনকি কোন ভুল বোঝা বুঝির এখানে অবকাশ নেই।[41]

হযরত আলী (আ.)-এর যুগে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ যা ‘জংগে জামাল’ নামে পরিচিত, তা শুধুমাত্র শ্রেণী বৈষম্যগত মত পার্থক্যের জঞ্জাল বৈ আর কিছুই ছিল না। ঐ মতর্পাথক্য দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা ‘বাইতুল মালের’ অর্থ বন্টনের শ্রেণীগত বৈষম্য সৃষ্টির ফলে উদ্ভত হয়েছিল। হযরত ইমাম আলী (আ.) খলিফা হওয়ার পর ঐ সমস্যার সমাধান ঘটান এবং তিনি জনগণের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে ‘বাইতুল মালের’ অর্থের সুষম বন্টন করেন।[42] আর এটাই ছিল হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনার্দশ। কিন্তু হযরত আলী (আ.)-এর এ পদক্ষেপ তালহা ও যুবাইরকে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত করেছিল। যার ফলে তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীতা করতে শুরু করেন। তারা যিয়ারতের নাম করে মদীনা ছেড়ে মক্কায় গেলেন। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা তখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তারা এটা ভাল করেই জানতেন যে, ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে উম্মুল মুমেনীন আয়েশার সর্ম্পকের টানা পোড়ন চলছে। এ অবস্থাকে তারা আপন স্বার্থে কাজে লাগান এবং নবীপত্মী আয়েশাকে খুব সহজেই হযরত আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে নিজপক্ষে টেনে নিতে সমর্থ হন। অতঃপর তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীর শ্লোগানে আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে ‘জংগে জামাল’ নামক এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করেন।[43] অথচ এই প্রসিদ্ধ সাহাবীদ্বয় তাল্‌হা ও যুবায়ের বিপ্লবীদের দ্বারা ওসমানের বাড়ী ঘেরাওকালীন মুহুর্তে মদীনাতেই ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় খলিফা ওসমানকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষার ব্যাপারে এতটুকু সাহায্যও তারা করেননি।[44] এমনকি খলিফা ওসমান নিহত হওয়ার পর মুহাজিরদের পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম তিনিই হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর হাতে ‘বাইয়াত’ গ্রহণ করেন।[45] ওদিকে নবীপত্নী আয়েশাও স্বয়ং ওসমানের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি ওসমানকে হত্যার ব্যাপারে সব সময়ই বিরোধীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন।[46] নবীপত্নী আয়েশা ওসমানের নিহত হওয়ার সংবাদ শোনা মাত্রই তার প্রতি অপমান সূচক শব্দ উচ্চারণ করেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেন। তৃতীয় খলিফাকে হত্যার ব্যাপারে মূলত রাসুল (সা.)-এর সাহাবীরাই জড়িত ছিলেন। তারা মদীনার বাইরে বিভিন্ন স্থানে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে জনগণকে খলিফার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন।

হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগে দ্বিতীয় যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল, তা’হচ্ছে ‘সিফফিনের যুদ্ধ’। দীর্ঘ দেড়টি বছর এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এ যুদ্ধটি ছিল কেন্দ্রীয় খেলাফত প্রসাশন দখলের জন্যে মুয়াবিয়ার চরম লালসার ফসল। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের ছলনাময়ী শ্লোগানের ছত্রছায়ায় তিনি এ যুদ্ধের অবতারণা করেন। এ যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষেরও বেশী লোক অন্যায়ভাবে নিহত হন। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়াই ছিলেন প্রথম আক্রমনকারী। এটা কোন আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ ছিল না। বরং এটা ছিল মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে একটি আক্রমনাত্মক যুদ্ধ। কারণ, প্রতিশোধ গ্রহণমূলক যুদ্ধ কখনই আত্মরক্ষামূলক হতে পারে না। এ যুদ্ধের শ্লোগান ছিল তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ। অথচ তৃতীয় খলিফা তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অরাজকতা ও বিশৃংখলা দমনে মুয়াবিয়ার কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠান। মুয়াবিয়াও তার সেনাবাহিনীসহ সিরিয়া থেকে মদিনার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু মুয়াবিয়া উদ্দেশ্যমুলক ভাবে পথিমধ্যে এত বেশী দেরী করেন যে, ততদিনে তৃতীয় খলিফা বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন। এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই মুয়াবিয়া তার বাহিনী সহ সিরিয়ায় ফিরে যান। এর পর সিরিয়ায় ফিরে গিয়ে তিনি তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীতে বিদ্রোহ শুরু করেন।[47] ‘সিফ্‌ফিন’ যুদ্ধের পর ‘নাহরাওয়ান’ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.)-এর বেশ কিছু সাহাবীও এ যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। একদল লোক যারা ‘সিফফিনের’ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল, তারাই পরবর্তিতে আবার মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তারা তদানিন্তন ইসলামী খেলাফত বা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকে। তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী বা সমর্থকদের সন্ধান পাওয়া মাত্রই তাদেরকে হত্যা করত। এমন কি গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে তাদের মাথা কেটে হত্যা করত।[48]

সিফফিন যুদ্ধের পর মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় সংঘটিত এ-বিদ্রোহও হযরত ইমাম আলী (আ.) দমন করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই একদিন কুফা শহরের এক মসজিদে নামাযরত অবস্থায় ঐসব ‘খাওয়ারেজদের’ হাতেই তিনি শাহাদ বরণ করেন।

 

ইমাম আলী (আ.)-এর

পাঁচ বছরের খেলাফতের ফসল

 

হযরত আলী (আ.) তাঁর ৪ বছর ৯ মাসের শাসন আমলে খেলাফত প্রশাসনের স্তুপীকৃত অরাজকতা ও বিশৃংখলাকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যদিও সমর্থ হননি তবুও এ ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল।

১। নিজের অনুসৃত ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক জীবনাদর্শের মাধ্যমে জনগণকে এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ও আকর্ষনীয় জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত করেন। মুয়াবিয়ার চোখ ধাঁধানো রাজকীয় জীবন যাপন পদ্ধতির সমান্তরালে তিনি জনগণের মাঝে অতি দরিদ্রতম জীবন যাপন করতেন। তিনি কখনো নিজের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা আত্মীয় স্বজনকে অন্যায়ভাবে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেননি। অথবা ধনীকে দরিদ্রের উপর বা সক্ষমকে অক্ষমের উপর কখনো তিনি অগ্রাধিকার দেননি।

২। পর্বতসম সমস্যাকীর্ণ দিনগুলো অতিবাহিত করা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে তিনি ইসলামের সত্যিকারের অমূল্যজ্ঞান সম্ভার বা সম্পদ রেখে গেছেন।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীরা বলত, ইমাম আলী (আ.) একজন মহাবীর ছিলেন। তিনি কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। কেননা, তিনি বিরোধীদের সাথে সাময়িক বন্ধুত স্থাপন ও তেলমর্দনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতিকে শান্ত করে, নিজের খেলাফতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারতেন। অতঃপর সময় বুঝে তাদের দমন করতে পারতেন।

কিন্তু বিরোধীরা একথাটি ভুলেগেছে যে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফত ছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন। আর যে কোন বৈপ্লবিক আন্দোলনকেই সব ধরণের তৈল মর্দন ও মেকী আচরণ নীতিগুলো বর্জন করতে হয়। ঠিক একই পরিস্থিতি মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির যুগেও পরিলক্ষিত হয়। মহানবী (সা.)-কে মক্কার কাফের ও মুশরিকরা বহুবার আপোষের প্রস্তাব দিয়ে ছিল। তাদের প্রস্তাব ছিল, মহানবী (সা.) যেন তাদের খোদা গুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্য বিরোধীতা না করেন, তাহলে তারাও মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কোন বাধা দেবে না। কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের এই প্রস্তাব আদৌ মেনে নেননি। অথচ নবুয়তের চরম দূর্যোগপূর্ণ সেই দিনগুলোতে তৈলমর্দন ও আপোষমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারতেন। অতঃপর সময় সুযোগ মত শত্রুদের দমন করতে পারতেন। কিন্তু সত্যিকারের ইসলাম প্রচার নীতি কখনই একটি সত্যকে হত্যার মাধ্যমে অন্য একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা বা একটি মিথ্যাকে দিয়ে অন্য একটি মিথ্যাকে অপসারণ করার অনুমতি দেয় না। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উল্লেখযোগ্য।[49]

আবার অন্য দিকে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শত্রুরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে যে কোন ধরণের অন্যায় অপরাধ এবং ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিলংঘনের ব্যাপারেও কুন্ঠিত হয়নি। শুধু তাই নয়, নিজেদের চারিত্রিক কলঙ্ক গুলোকে ‘সাহাবী’ বা ‘মুজতাহীদ’ (ইসলামী গবেষক) উপাধি দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন। অথচ হযরত ইমাম আলী (আ.) সব সময়ই ইসলামী নীতিমালার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণের ব্যাপারে ছিলেন বদ্ধ পরিকর।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় এগারো হাজার অমূল্য সংক্ষিপ্ত হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে।[50] তিনি ইসলামের সুগভীর জ্ঞানরাজীকে অত্যন্ত শুদ্ধ ও উন্নত অথচ প্রাঞ্জল ভাষার বক্তৃতামালায়[51] বর্ণনা করেছেন।[52] তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার ব্যাকারণ ও সাহিত্যের মূলনীতি রচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের উচ্চতর দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিস্থাপন করেন এবং উন্মুক্ত যুক্তি-বিন্যাস ও যৌত্তিক প্রত্যক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে ব্যাখার নীতি প্রচলন করেন। সে যুগের দার্শনিকরা তখনও যেসব দার্শনিক সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন, তিনি সেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে ছিলেন। এমন কি এ ব্যাপারে তিনি এতবেশী গুরুত্বারোপ করতেন যে, যুদ্ধের ভয়াবহ ডামাডোলের মাঝেও[53] সুযোগ মত ঐসব জ্ঞানগর্ভ মুলক পর্যালোচনার প্রয়াস পেতেন।

৩। হযরত ইমাম আলী (আ.) ব্যাপক সংখ্যক লোককে ইসলামী পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলেন।[54] ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ঐসব জ্ঞানী-পন্ডিতদের মাঝে হযরত ওয়ায়েস কারানী (রা.), হযরত কুমায়েল বিন যিয়াদ (রা.), হযরত মিসাম তাম্মার (রা.) ও রশীদ হাজারীর (রা.) মত অসংখ্য সাধুপুরুষও ছিলেন। যারা ইতিহাসে ইসলামী ইরফানের (আধ্যাত্মবাদ) উ হিসেবে পরিচিত। ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে আবার অনেকেই ইসলামী ফিকাহ (আইন শাস্ত্র), কালাম (মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র), তাফসীর, কিরাআত (কুরআনের শুদ্ধপঠন শাস্ত্র) ও অন্যান্য বিষয়ের মুল উ হিসেবে পরিচিত।

 

 

মুয়াবিয়ার কাছে খেলাফত হস্তান্তর ও

রাজতন্ত্রের উত্থান

 

আমিরূল মু’মিনীন হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদতের পর তার ‘ওসিয়ত’ (উইল) এবং জনগণের ‘বাইয়াতের’ (আনুগত্য জ্ঞাপন) মাধ্যমে হযরত ইমাম হাসান (আ.) পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন। বারজন ইমামের অনুসারী শীয়াদের মতে হযরত ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন দ্বিতীয় ইমাম।

ওদিকে মুয়াবিয়াও এ ব্যাপারে চুপ করে বসে থাকেননি। মুয়াবিয়া, হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর বিরুদ্ধে তদানিন্তন খেলাফতের রাজধানী ইরাকের দিকে সেনা অভিযান পরিচালনা করলেন। বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র ও ইমাম হাসান (আ.)-এর সমর্থক ও সেনাপতিদের বিপুল পরিমাণ ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে মুয়াবিয়া তাদেরকে দূর্নীতির সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন। এর ফলে হযরত ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি চুক্তিতে বাধ্য হন। চুক্তি অনুসারে খেলাফতের ক্ষমতা মুয়াবিয়ার কাছে এই শর্তে হস্তান্তর করা হয় যে, মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর খেলাফত পুনরায় ইমাম হাসান (আ.)-এর কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর তারা ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.)-এর অনুসারীদেরকে উপীড়ন করবেন না। এভাবেই খেলাফতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতা মুয়াবিয়ার কাছে হস্তান্তরিত হয়।[55]

হিজরী ৪০ সনে মুয়াবিয়া খেলাফতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতা লাভ করার পর পরই ইরাকে এসে জনগণের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দেয়। ঐ বক্তৃতায় তিনি জনগণের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেনঃ “আমি নামায রোযার জন্যে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি। বরং আমি তোমাদের শাসন ক্ষমতা দখল করার জন্যে যুদ্ধ করেছি এবং শেষপর্যন্ত আমি তা লাভও করেছি”[56] !! মুয়াবিয়া আরো ব্যক্ত করেঃ “হাসানের সাথে যে মর্মে আমি চুক্তি সাক্ষর করেছিলাম, তা আমি বাতিল বলে ঘোষণা করছি এবং ঐ চুক্তি আমি পদদলিত করলাম!!”[57]

মুয়াবিয়া তার সেই বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্ম থেকে রাজনীতিকে পৃথক করার আভাস দেয়। উক্ত বক্তব্যে আরো ইঙ্গিত দেয় যে, ধর্মীয় নীতিমালার ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে না এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন। আর এটা খুবই স্পষ্ট যে, এ জাতীয় রাজনৈতিক পদ্ধতি আদৌ কোন ইসলামী খেলাফত বা রাসুল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী প্রশাসন ছিল না। বরং ওটা (মুয়াবিয়া প্রশাসন) ছিল সম্পূর্ণ রাজতান্ত্রিক প্রশাসন। এ জন্যে যখন কেউ তার (মুয়াবিয়া) সাক্ষাতে আসতো তখন ঐ ব্যক্তিকে (মুয়াবিয়াকে) বাদশাহী পদ্ধতিতে সালাম দিতে হত।[58] এমন কি স্বয়ং মুয়াবিয়াও বিশেষ বৈঠকগুলোতে নিজেকে রাজা বা বাদশাহ্‌ হিসেবে পরিচিত করতেন।[59] অবশ্য জনসমক্ষে তিনি নিজেকে ইসলামী খলিফা উপাধিতে ভূষিত করতেন। অবশ্য যেসব প্রশাসন ব্যবস্থার ভিত্তি কেবল স্বেচ্ছাচারীতার উপর প্রতিষ্ঠিত সেসকল প্রশাসন ব্যাবস্থা সাধারণত রাজতন্ত্রের জনক। আর শেষপর্যন্ত মুয়াবিয়াও তার হৃদয়ে লালিত আকাংখা বাস্তবায়িত করেন।

মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার যুবকপুত্র ইয়াযিদকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উত্তরাধিকার অর্পণ করেন।[60] চারিত্রিক দিক থেকে ইয়াযিদ ছিল লম্পট ও অনৈসলামী ব্যক্তিত্ব্যের আধিকারী। এই ইয়াযিদই ইতিহাসে অনেক লজ্জাষ্কর ঘটনার সুত্রপাত করে। মুয়াবিয়া তার পূববর্তী বক্তব্যে ইঙ্গিত করেন যে, কোনক্রমেই তিনি খেলাফতের ক্ষমতা ইমাম হাসান (আ.)-এর কাছে
হস্তান্তরিত হতে দিবেন না। কারণ, তার পরবর্তী খেলাফতের ব্যাপারে ভিন্ন চিন্তা পোষণ করতেন। যে চিন্তার ফলশ্রুতিতে তিনি হযরত ইমাম হাসান (আ.)-কে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করেন।[61] এভাবেই তিনি স্বীয় পুত্র ইয়াযিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের পথকে কন্টকমুক্ত করেন। ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলের ঘোষণার মাধ্যমে মুয়াবিয়া সবাইকে এটাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে পবিত্র আহলে বাইতের (নবীবংশ) অনুসারী শীয়াদেরকে তিনি কখনও শান্তি ও নিরাপদে বাস করতে দেবেন না যে তারা (শীয়া) তাদের নিজস্ব ধর্মীয় কর্মকান্ড পূর্বের মতই চালিয়ে যাবে। আর এ বিষয়টি তিনি কঠোরভাবে বাস্তবায়িত করেন।[62] তিনি প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা দেনঃ ‘যে ব্যক্তি পবিত্র আহলে বাইতের ফযিলত বা গুরুত্ব ও মহত্ত্ব সম্পর্কে কোন হাদীস বর্ণনা করবে, তার জান-মাল বা সম্মানের নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকবে না’।[63] এর পাশাপাশি আরো ঘোষণা দেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সাহাবী বা খলিফার মহত্ব ও পদ মর্যাদার ব্যাপারে কোন হাদীস বর্ণনা করবে, তাকে বিপুল ভাবে পুরস্কৃত করা হবে’। এ ঘোষণার পরিণতিতে উক্ত বিষয়ের উপর অসংখ্য বানোয়াট ও জাল হাদীস সৃষ্টি হয়।[64]  মুয়াবিয়া আরো ঘোষণা দেয় যে, রাষ্ট্রের সকল মসজিদের মিম্বারগুলোতে বক্তারা যেন নিয়মিত ভাবে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে গাল দেয় ও কুসা রটনা করে। [এই ঘোষণার বাস্তবায়ন খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজের (হিঃ -৯৯-হিঃ-১০১) পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল]। মুয়াবিয়ার সহকারীদের মধ্যে রাসুল (সা.)-এর বেশ কিছু সাহাবীও ছিলেন। মুয়াবিয়া তার ঐসব সাহাবী ও সহকারীদের সহযোগিতায় হযরত আলী (আ.)-এর অনুসারী অসংখ্য শীয়াকে হত্যা করে। এমন কি এসব নিহতদের অনেকের কর্তিত মস্তক বিভিন্ন শহরে গণপ্রর্দশনের জন্যে প্রদক্ষিন করানো হত। সর্বত্র শীয়াদেরকে হযরত আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে কুসা রটনা বা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য করা হত। আর যে কেউ এ আদেশ লংঘন করত, তাকেই হত্যা করা হত।[65]

 

শীয়াদের দুর্যোগপূর্ণ ও কঠিনতম দিনগুলো

 

মুয়াবিয়ার দীর্ঘ বিশ বছরের শাসনকালই শীয়াদের ইতিহাসের দুর্যোগপূর্ণ ও কঠিনতম দিন ছিল। ঐ সময় নিরাপত্তা বলতে শীয়াদের কিছুই ছিল না। শীয়াদের অধিকাংশই ছিল সর্বজন পরিচিত ও জনসমক্ষে চিহ্নিত ব্যক্তিত্ব। শীয়াদের দু’জন ইমাম [ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)] স্বয়ং মুয়াবিয়ার শাসনামলে জীবন যাপন করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রে এহেন অরাজক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সামান্যতম সুযোগও তাদের ছিল না। এমন কি তৃতীয় ইমাম [হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)], যিনি ইয়াযিদের শাসন আমলের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে তার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ পরিচালনা করেন, যার পরিণতিতে তিনি স্বপরিবারে শাহাদত বরণ করেন। কিন্তু মুয়াবিয়ার শাসনের প্রথম দশ বছর জীবন-যাপনকালীন সময়ে এ (বিদ্রোহ) সুযোগটিও পাননি। রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন সাহাবী, বিশেষ করে মুয়াবিয়া ও তার সহকর্মীরা ইসলামী রাষ্ট্রে অন্যায়ভাবে হত্যা ও নির্যাতনসহ যে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়ে ছিলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়েতের অধিকাংশই ঐসব অপকর্মের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। এ ব্যাপারে তাদের প্রধান যুক্তি হল, তারা ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সাহাবী। আর সাহাবীদের সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর যেসব হাদীস আমাদের কাছে পৌঁছেছে, সে অনুযায়ী সাহাবীরা মুজতাহিদ (ইসলামী গবেষক) তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমার যোগ্য। মহান আল্লাহ্‌ তাদের ওপর সন্তুষ্ট। তাই তারা যে কোন ধরণের অন্যায়-অপরাধই করুক না কেন, সে ব্যাপারে তারা ক্ষমা প্রাপ্ত! কিন্তু শীয়াদের দৃষ্টিতে এ যুক্তি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণঃ

প্রথমতঃ মহানবী (সা.) সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন করেছেন। এক দল লোককে নিজ বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং নিজের সমগ্র অস্তিত্বকে ঐ পবিত্র লক্ষ্য বাস্তবায়নের স্বার্থে বিলীন করে দিয়েছেন। এ জাতীয় যুক্তি আদৌ বুদ্ধিমত্তা প্রসূত ব্যাপার নয় যে, এত কষ্টের বিনিময়ে স্বীয় পবিত্র লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পর মহানবী (সা.) জনগণ ও ইসলামের পবিত্র নীতিমালার ব্যাপারে তার সঙ্গী বা সাহাবীদেরকে যা ইচ্ছে করার মত পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে যাবেন? স্বীয় সহকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত সত্যের অপলাপ, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ও অরাজতাকে তিনি ক্ষমা করবেন! এ জাতীয় কথার অর্থ হচ্ছে যাদের সহযোগীতায় তিনি সত্যের ভিত্তিরপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, তাদের দ্বারাই আবার তা ধ্বংস করবেন। এটা মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাপার নয়।

দ্বিতীয়তঃ যেসব হাদীসে সাহাবীদের নিষ্কলুষতা ও অপরাধ মুলক শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপকে পরিশুদ্ধতার আবরণ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্যে অগ্রিমভাবে ক্ষমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, প্রকৃত পক্ষে ওগুলো সাহাবীদের দ্বারাই বর্ণিত হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং রাসুল (সা.)-এর সাথে তা সর্ম্পকিত করা হয়েছে। অথচ ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী স্বয়ং সাহাবীরাই একে অন্যের অন্যায়কে কখনও ক্ষমা করেননি। সাহাবীদের অনেকেই একে অন্যকে হত্যা করেছেন, পরস্পরকে গালিগালাজ ও অভিশাপ দিয়েছেন এবং একে অন্যকে অপদস্থ করতেও ছাড়েননি। প্রতিপক্ষের সামান্যতম ভুলকেও তারা এতটুকু ক্ষমার চোখেও দেখেননি। সুতরাং সাহাবীদের কার্যকলাপের সাক্ষ্য অনুযায়ী-ও ঐসব হাদীসের অসত্যতা প্রমাণীত হয়। যদি ঐসব হাদীসকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে তার অর্থ অন্যকিছু হবে। আর তা অবশ্যই সাহাবীদের কলংকহীনতা বা আইনগত বৈধতা সংক্রান্ত নয়। যদি ধরে নেয়া যায় যে, মহান আল্লাহ্‌র পবিত্র কুরআনে সাহাবীদের কোন কাজের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন,[66] তাহলে সেটা তাদের পূর্ববর্তী কার্যকলাপের প্রশংসারই প্রমাণ। এর অর্থ এই নয় যে, ভবিষ্যতে যা ইচ্ছে তাই করা বা আল্লাহ্‌র আদেশ বিরোধী কার্যকলাপও তারা করতে পারবেন।

 

 

উমাইয়া বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা

 

হিজরী ৬০ সনে মুয়াবিয়া মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পূর্বে সে জনগণের কাছ থেকে আপন পুত্র ইয়াযিদের খেলাফতের ব্যাপারে বাইয়াত গ্রহণ করিয়ে নেয়। সে অনুযায়ী পিতার মৃত্যুর পর ইয়াযিদ ইসলামী রাষ্ট্রের খেলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী ইয়াযিদ মোটেও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিল না। এমন কি পিতার জীবদ্ধশাতেও এই যুবক ইসলামী নীতিমালার প্রতি এতটুকু তোয়াক্কাও করত না। বিলাসিতা, উচ্ছৃংখলতা ও লামপট্য চারিতার্থ করা ছাড়া আর কোন কাজ তার ছিল না। তার তিন বছরের শাসন আমলে এত অধিক পরিমাণে জঘণ্য অপরাধ সে ঘটিয়েছিল যা ইসলামের ইতিহাসে বিরল। প্রাথমিক যুগে ইসলামকে অসংখ্য জঘণ্য সামাজিক দুর্নীতিকে অতিক্রম করতে হয়েছিল। কিন্তু সেযুগে ইয়াযিদের দ্বারা সাধিত অপকর্মের কোন উদাহরণ ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। ইয়াযিদ তার শাসন আমলের প্রথম বছরই রাসুল (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে সংগী-সাথী সহ স্বপরিবারে অত্যন্ত নৃশংস ভাবে হত্যা করে। অতঃপর ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারের মহিলা, শিশু ও আহলে বাইতগণকে (নবীবংশ) শহীদদের কর্তিত মস্তক সহ গণ প্রদর্শনীর জন্যে বিভিন্ন শহরে প্রদক্ষিণ করানো হয়।[67]  ইয়াযিদ তার খেলাফতের দ্বিতীয় বছর পবিত্র মদীনা নগরীতে গণহত্যা চালায় এবং তিন দিন পর্যন্ত সে তার সেনাবাহিনীকে ব্যাপক লুটতরাজ ও গণধর্ষনের অনুমতি দিয়েছিল।[68]  খেলাফতের তৃতীয় বছর ইয়াযিদ পবিত্র কাবাঘর ধ্বংস করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়![69] ইয়াযিদের মৃত্যুর পর উমাইয়া বংশীয় মারওয়ান পরিবারের লোকেরা ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা অধিকার করে। ইতিহাস অনুযায়ী উমাইয়া বংশীয় এগারো জন ব্যক্তি প্রায় সত্তর বছর যাব খেলাফতের শাসন কার্য পরিচালনা করে। ইতিহাসের এ অধ্যায়ই ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের জন্যে সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ ও তিক্ত। যেসময় ইসলামী সমাজের শাসন ক্ষমতায় একজন খলিফা নামধারী অত্যাচারী আরবীয় সম্রাট ছাড়া অন্য কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। অবস্থা এক সময় এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ালো যে, রাসুল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী ও দ্বীনের ধারক-বাহক হিসেবে খ্যাত খলিফা ‘অলিদ বিন ইয়াযিদ’ নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পবিত্র কাবা ঘরের ছাদে একটি ঘর তৈরী করবেন!! হজ্জের সময় তিনি সেখানে বিলাস যাপন করবেন!![70] খলিফা ‘অলিদ বিন ইয়াযিদ’ পবিত্র কুরআনকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে। তীর নিক্ষেপের সময় কুরআনকে লক্ষ্য করে কবিতার সুরে বিদ্রূপ করে বলে ‘‘কেয়ামতের দিন যখন তোর খোদার কাছে উপস্থিত হবি, বলিস খলিফা আমাকে ছিন্ন-ভিন্ন করেছে!!’’[71] শীয়ারা খেলাফতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এ দু’টো বিষয়ে অধিকাংশ আহলে-সুন্নাত ওয়াল জামায়েতের সাথে মৌলিকভাবে ভিন্ন মত পোষণ করত। তারা ইতিহাসের এ অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়ে চরম কষ্ট ও তিক্ততাপূর্ণ দিন যাপন করেছেন। খেলাফত প্রসাশনের অবিচার, অত্যাচার ও অরাজকতা এবং নির্যাতিত আহলে বাইতের ইমামগণের তাকওয়া ও পবিত্রতা দিনের পর দিন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অধিকতর সুদৃঢ় করে তোলে। বিশেষ করে তৃতীয় ইমাম হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদতের হৃদয় বিদারক ঘটনা রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ইরাক, ইয়ামান ও ইরানে শীয়া মতাদর্শের সস্প্রারণে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। উপরোক্ত বক্তব্যর প্রমাণ শীয়াদের পঞ্চম ইমামের (হযরত ইমাম বাকের (আ.)) যুগের ঘটনায় দেখতে পাওয়া যায়। হিজরী বর্ষের এক শতাব্দী তখনও পূর্ণ হয়নি। তৃতীয় ইমাম হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদতের পর ৪০ বছরও তখন পূর্ণ হয়নি। ইতিমধ্যেই উমাইয়া খলিফার প্রশাসনে বিশৃংখলার সুত্রপাত ঘটে এবং এর ফলে প্রশাসন দূর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে খেলাফত বা রাজ্যের চর্তুদিকে থেকে শীয়ারা বন্যার বেগে পঞ্চম ইমাম হযরত ইমাম বাকের (আ.)-এর দিকে ধাবিত হয়। তার চর্তুপার্শ্বে ভক্তদের ভীড় জমতে থাকে। তারা ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে হাদীস ও ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করে।[72] ইতিমধ্যে হিজরী প্রথম শতাব্দী শেষ হবার পূর্বেই প্রশাসনের ক’জন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি ইরানের কোম শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং তাকে শীয়া প্রধান শহরে রূপান্তরিত করেন।[73] তথাপি শীয়াদেরকে সে যুগে তাদের ইমামগণের (আ.) নির্দেশে ‘তাকিয়া’ পালন করে অর্থা নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস গোপন করে থাকতে হয়েছিল। এরপরও রাসুল (সা.)-এর বংশের সাইয়্যেদগণ ইতিহাসে বহু বার ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়ে ছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। অবশেষে নিজেদের প্রাণও তারা এ পথে উসর্গ করেছেন। তদানিন্তন স্পর্ধাপূর্ণ শাসকগোষ্ঠী তাদের পবিত্র দেহ পদদলিত করতেও কুন্ঠা বোধ করেনি। যায়েদীপন্থী শীয়াদের নেতা জনাব যায়েদের মৃত দেহকে কবর খুড়েঁ বের করে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়। অতঃপর ঐ মৃত দেহকে দীর্ঘ তিন বছর যাব ঐ অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর ঐ মৃত দেহ ফাঁসি কাষ্ঠ থেকে নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং তার ভষ্মীভূত ছাই বাতাসে উড়িয়ে দেয়া হয়![74] শীয়াদের বিশ্বাস অনুসারে তাদের চতুর্থ (হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) ও পঞ্চম (হযরত ইমাম বাকের (আ.) ইমামকেও উমাইয়া খলিফারা বিষ প্রয়োগে হত্যা করে।[75]  দ্বিতীয় ইমাম হাসান (আ.) ও তৃতীয় ইমাম হুসাইন (আ.)-ও তাদের হাতেই শাহাদত বরণ করে ছিলেন। উমাইয়া খলিফাদের প্রকাশ্য নীতিহীন কার্যকলাপ এতই জঘণ্য পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে ছিল যে আহলে-সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীরা যারা সাধারণত খলিফাদের আনুগত্যকে ফরয বলে বিশ্বাস করে, তারাও খলিফাদেরকে দু’টো শ্রেণীতে ভাগ করতে বাধ্য হয়। ঐ দু’শ্রেণী হল ‘খোলাফায়ে রাশেদীন’ এবং ‘খোলাফায়ে রাশেদীনদের পরবর্তী যুগ’। রাসুল (সা.)-এর মৃত্যু পরবর্তী ইসলামের প্রথম চার খলিফা [আবু বকর, ওমর, ওসমান ও হযরত আলী (আ.) ] প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আর মুয়াবিয়া থেকে শুরু করে বাকী সব খলিফাই দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। শাসন ক্ষমতায় থাকা কালীন উমাইয়া খলিফা তাদের নিপীড়ন মুলক নীতির কারণে জনগণের চরম ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন সর্বশেষ উমাইয়া খলিফা ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হন। নিহত হবার পর তার দু’পুত্র সহ খলিফা পরিবারের বেশ কিছু সদস্য রাজ প্রাসাদ থেকে পলায়ন করে। কিন্তু পালানোর পর যেখানেই তারা আশ্রয়ের প্রার্থনা করেছে ব্যর্থ হয়েছে। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে নওবা, ইথিওপিয়া এবং বেজাওয়ার ও মরুভূমিতে লক্ষ্যহীনভাবে তাদের ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। এর ফলে তাদের অধিকাংশই ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় প্রাণ হারায়। অবশিষ্টরা ইয়ামানের দক্ষিণ অঞ্চলে এসে পৌঁছে। সেখানে ভিক্ষার মাধ্যমে পথ খরচ যোগাড় করে এবং কুলিদের ছদ্মবেশে মক্কার দিকে রওনা হয়। কিন্তু সেখানে মানুষের মাঝে তারা নিখোঁজ হয়ে যায়।[76]

 

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীতে শীয়াদের অবস্থা

 

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম তৃতীয়াংশের শেষদিকে উমাইয়া খলিফাদের চরম নির্যাতন ও অসদাচরণের পরিণতিতে সকল ইসলামী দেশ গুলোতে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিদ্রোহ, বিপ্লব ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হতে থাকে। এর পাশাপাশি ইরানের খোরাসান প্রদেশে একদল লোক জনগণকে ‘আহলে-বাইতের’ অধিকার আদায়ের আন্দোলনের আহবান জানাতে থাকে। জনাব ‘আবু মুসলিম মারওয়াযি’ নামক জনৈক ইরানী সর্দার ছিলেন ঐ আন্দোলনের নেতা। তারা উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং ক্রমেই তাদের আন্দোলন অগ্রগতি লাভ করতে থাকে। অবশেষে তারা উমাইয়াদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সমর্থ হয়।[77] ঐ আন্দোলন প্রকৃত পক্ষে শীয়াদের সুগভীর প্রচার অভিযান থেকেই উসরিত হয়েছিল। আহলে-বাইতের শহীদদের রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণের নামেই ঐ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। এমন কি জনগণ নবীবংশের জনৈক জনপ্রিয় ব্যক্তির হাতে গোপনে ‘বাইয়াত’ (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এতদসত্তেও এ ব্যাপারে শীয়া ইমামগণের (আ.) সরাসরি কোন নির্দেশ বা ইংগিত ছিল না। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন জনাব আবু মুসলিম মদিনায় ইমামিয়াপন্থী শীয়াদের ৬ষ্ট ইমামের (হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)) কাছে খেলাফতের জন্যে গৃহীত ‘বাইয়াত’ সমপূর্ণ করতে চান।

হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তক্ষনা ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যনণ করেন। তিনি বলেনঃ ‘‘তুমি আমার লোকদের অন্তর্ভুক্ত নও। আর সময়ও এখনও আসেনি’’।[78] অবশেষে আব্বাসীয় বংশের লোকেরা আহলে-বাইতের নাম ভাংগিয়ে খেলাফতের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়।[79] তারা শাসন ক্ষমতা লাভের পর প্রথম দিকে জনগণ ও হযরত আলী (আ.)-এর অনুসারী শীয়াদের সাথে সদাচরণ করতে থাকে। এমন কি ‘আলাভীদের’ (শীয়াদের) শহীদদের রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণের নামে তারা উমাইয়া বংশীয় লোকদের গণহত্যা চালায়। তারা উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে তাদের দেহাবশেষে যা কিছু পেত অগ্নিদগ্ধ করত।[80] কিছুদিন কাটতে না কাটতেই তারা উমাইয়া খলিফাদের মতই নিপীড়নমূলক নীতি গ্রহণ করে। অন্যায় অত্যাচার মূলক ও নীতিহীন কার্যকলাপ ঘটাতে তাদের এতটুকু কুন্ঠাবোধও হল না। আব্বাসীয় খলিফা মানসুরের দ্বারাই আহলে সুন্নাতের ইমাম আবু হানিফা জেল বন্দী হন।[81] ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল জনৈক আব্বাসীয় খলিফার দ্বারা চাবুকে প্রহৃত হন।[82] শীয়াদের ৬ষ্ট ইমাম হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ও আব্বাসীয় খলিফার দ্বারা নির্যাতিত হন এবং বিষ প্রয়োগে নিহত হন।[83] আব্বাসীয় খলিফারা শীয়াদের দলে দলে হত্যা করে। অনেক শীয়াকেই জীবন্ত কবর দিয়ে তারা হত্যা করেছে। অসংখ্য শীয়াকে হত্যা করে তাদের উপর দেয়াল এবং বিভিন্ন সরকারী ভবন তৈরী করা হয়। আব্বাসীয় খলিফা হারূনের শাসন আমলে ইসলামী সম্রাজ্য, ক্ষমতা ও পরিধি ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি লাভ করে। খলিফা মাঝে মাঝে সূর্যের দিকে লক্ষ্য করে বলতেনঃ ‘হে সূর্য! যেথায় খুশি জ্যোতি ছড়িয়ে যা কিন্তু তা যেন আমার সাম্রাজ্যের বাইরে না হয়!’ খলিফার সেনা বাহিনী মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে বিশ্বে সর্বত্র বিজয়ী বেশে এগিয়ে যাচ্ছিলো। অথচ খলিফার রাজ প্রসাদের মাত্র কয়েক কদম দূরে বাগদাদ সেতুর উপর খলিফার অজান্তে এবং বিনা অনুমতিতে কিছু লোক পথচারীদের কাছ থেকে টোল আদায় করতে থাকে। এমনকি একদিন স্বয়ং খলিফা ঐ সেতু অতিক্রম করার সময় টোল আদায়ের জন্য তার পথরোধ করা হয়েছিল।[84] জনৈকা গায়িকার যৌন আবেদনময়ী গানের মাত্র দু‘টো চরণ শুনেই আব্বাসীয় খলিফা আমিন উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং সাথে সাথেই ঐ গায়িকাকে ৩০ লক্ষ দিরহাম উপহার দেন। গায়িকা ঐ অপ্রত্যাশিত ঘটনায় আবেগে আপ্লুত হয়ে খলিফা আমিনের পায়ে লুটিয়ে পড়ে জিজ্ঞেস করেঃ “এতোগুলো অর্থ সবই কি আমাকে দান করলেন?” খলিফা উত্তরে বলেঃ “এটা তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। এ টাকা পুনরায় সম্রাজ্যের অচেনা অন্য আরেক অঞ্চল থেকে আদায় করে নেব!”[85] ‘বাইতুল মালে’র (রাজকোষ) নামে পাহাড় পরিমাণ অর্থ সমপদ সমগ্র ইসলামী সম্রাজ্য থেকে খলিফাদের কাছে নিয়মিত এসে জমত। আর খলিফারা ঐ অর্থ তাদের বিলাসিতা, লামপট্য ও সত্য নিধনের কাজে ব্যয় করতেন। হাজার হাজার রূপসী ক্রীতদাসী ও সুন্দর চেহারার তরুণ-তরুণীতে আব্বাসীয় খলিফাদের দরবার ছিল পরিপূর্ণ !!

উমাইয়া বংশের পতন ও আব্বাসীয় বংশের শাসনক্ষমতা লাভের মাধ্যমে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর নাম পাল্টানো ছাড়া শীয়াদের অবস্থার এতটুকুও উন্নতি ঘটেনি।

হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে শীয়াদের অবস্থা

 

হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকে শীয়ারা সর্বপ্রথম কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায়। কারণ প্রথমতঃ ইতিমধ্যে সুরিয়ানী ও গ্রীক ভাষার প্রচুর বিজ্ঞান ও দর্শনের বই আরবীতে অনুদিত হয়েছিল। জনগণের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক (দার্শনিক) ও প্রামাণ্য জ্ঞান চর্চা ও শিক্ষার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়াও আব্বাসীয় খলিফা মামুন (১৯৫-২১৮ হিজরী) ‘মু’তাযিলা’ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি যুক্তিভিত্তিক প্রামাণ্য মাযহাবের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। এ কারণেই তিনি যুক্তিযুক্ত প্রমাণভিত্তিক বিভিন্ন ধর্ম ও মাযহাব চর্চার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে ছিলেন। শীয়া আলেম ও দার্শনিকগণও এ সুযোগটি লুফে নেয়। জ্ঞান চর্চাসহ আহলে-বাইতের মাযহাব প্রচারের সার্বিক কর্মসূচী পূর্ণদ্দোমে চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তারা এ সুযোগের পূর্ণ সদ্বব্যবহার করেন।[86] দ্বিতীয়তঃ এ ছাড়াও আব্বাসীয় খলিফা মামুন তার নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের স্বার্থে শীয়াদের অষ্টম ইমাম, হযরত ইমাম রেজা (আ.) কে তার সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রদানের অংগীকার করেছিলেন।[87] এরফলে আহলে-বাইতের অনুসারী ও ভক্তরা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও উপীড়ন থেকে কিছুটা রক্ষা পেয়েছিল। সেদিন কিছুটা রাজনৈতিক স্বাধীনতাও তাদের ভাগ্যে জুটে ছিল। কিন্তু না, সে ভাগ্য আর বেশী দিন র্দীঘায়িত হয়নি। তলোয়ারের ধারালো অগ্রভাগ আবারও তাদের দিকেই ফেরানো হল। প্রাক্তন শাসকগোষ্ঠির বিস্মৃত প্রায় শোষণ ও নির্যাতন নীতি আবার তাদের উপর চালানো হয়। বিশেষ করে আব্বাসীয় খলিফা মুতাওয়াক্কিল (২৩২ হিঃ -২৪৭ হিঃ) আলী (আ.) ও তাঁর শীয়াদের প্রতি চরম বিদ্বেষী ছিলেন। এমন কি তার নির্দেশেই কারবালা প্রান্তরে অবস্থিত হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাযার সমপূর্ণরূপে ভেঙ্গে-গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়।[88]

 

 

 

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে শীয়াদের অবস্থা

 

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে এমন বেশ কিছু কারণের উদ্ভব ঘটে, যা শীয়াদেরকে শক্তিশালী ও সমপ্রসারিত হবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। আব্বাসীয় খেলাফতের রাজনৈতিক ও প্রসাশনিক দূর্বলতা ও ‘বুইয়া’ বংশীয় বাদশাহের অভ্যুদয় ছিল ঐসব কারণের মধ্যে অন্যতম।

‘বুইয়া’ বংশীয় বাদশারা ছিলেন শীয়া মাযহাবের অনুসারী। রাজধানী বাগদাদের খেলাফত প্রশাসনের কেন্দ্রে এবং স্বয়ং খলিফার উপর তাদের প্রচন্ড প্রভাব ছিল। ঐ দৃষ্টিগ্রাহ্য রাজনৈতিক শক্তির ছত্রছায়ায় শীয়ারা সমপূর্ণ স্বাধীনভাবে স্বীয় মতাদর্শ প্রচারের সুযোগ পায়, যা ইতোপূর্বে ক্ষমতাসীন খলিফাদের উপীড়নের কারণে কখনও বাস্তবতার মুখ দেখতে পায়নি। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুসারে ঐ (৪র্থ শতাব্দীতে) বড় শহরগুলো ছাড়া আরবের অধিকাংশ অঞ্চল শীয়া অধ্যুষিত ছিল। এ ছাড়াও হাজার, ওমান ও স‘য়াদাসহ বেশ কিছু শহরও ছিল শীয়া অধ্যুষিত। ইরাকের বসরা শহর যুগের পর যুগ সুন্নীদের এবং কুফা শহর শীয়াদের কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হত। এ দু‘শহরের মাঝে সব সময়ই মাজহাবগত প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। এভাবে তারাব্‌লুস, নাবলুস, তাবারীয়া, হালাব, হেরাত, আহওয়ায, ও ইরানের পারস্য উপসাগরীয় তীরবর্তী অঞ্চল সমূহ ছিল শীয়া অধ্যুষিত।[89] হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর প্রারম্ভে জনাব নাসের আত্‌রুশ নামক জনৈক ব্যক্তি বহু বছর যাব ইরানের উত্তরাঞ্চলে (শীয়া মতাদর্শ) প্রচার অভিযান চালায়। পরবর্তীতে ‘তাবারিস্থান’ নামক অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা তিনি লাভ করেন এবং ঐ শাসন ক্ষমতা তার বংশের বেশ কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অবশ্য জনাব আত্‌রুশের পূর্বে ও হাসান বিন যায়েদ আলাভী (শীয়া) বহু বছর তাবারিস্থানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।[90] হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতেই ফাতেমী বংশীয় ইসমাঈলীপন্থী শীয়ারা মিসরের শাসন ক্ষমতা লাভ করে এবং বেশ কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত তাঁদের রাজত্ব অব্যাহত (২৯২-৫২৭ হিজরী বর্ষ) থাকে।[91] ইতিহাসে বহুবার বাগদাদ, বসরা, নিশাপুর ইত্যাদি বড় বড় শহরে শীয়া-সুন্নী সামপ্রদায়িক বির্তক ও সংর্ঘষের সুত্রপাত ঘটেছিল, যার অনেক গুলোতেই শীয়ারা বিজয়ী হয়েছিল।


 

হিজরী নবম শতাব্দীতে শীয়াদের অবস্থা

 

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর মতই হিজরী পঞ্চম থেকে নবম শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্তও শীয়ারা তাদের বিস্তার লাভের গতি অব্যাহত রাখে। ঐ যুগে ক্ষমতাসীন বাদশারা ছিলেন শীয়া মতার্দশের অনুসারী। ফলে তারাও শীয়া মতাদর্শের বিসতৃতিতে যথেষ্ট সাহায্য করেন। হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর শেষ ভাগে ‘কিলাউল মাউত’ নামক স্থানে ‘ইসমাঈলীপন্থী’ শীয়া মতার্দশ প্রচারের অভ্যুদয় ঘটে। ইসমাঈলীরা প্রায় দেড় শতাব্দী পর্যন্ত ইরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সমপূর্ণ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করে।[92] ‘মারআ’শী’ বংশীয় সাইয়্যেদগণ (রাসুল (সা.)-এর বংশের লোক) বহু বছর যাব ইরানের মাযেন্দারানে রাজত্ব করেন।[93] শাহ্‌ খোদা বান্দেহ্‌ নামক জনৈক মোগল সম্রাট শীয়া মাযহাব গ্রহণ করেন এবং তারপরও বহু বছর যাব তার উত্তরাধিকারীরা (শীয়া) ইরানে রাজত্ব করেন এবং শীয়া মাযহাবের উন্নতি ও সমপ্রসারণে সাহায্য করেন। একইভাবে ইরানের তাব্রিজে ‘অকে কুইউ নালু’ ও ‘কোররে কুইউ নালু’ বংশীয় শীয়া সম্রাটরাও বহু বছর ঐ অঞ্চলে শাসন করে।[94] যাদের রাজ্যসীমা ইরানের (তাব্রিজ থেকে) ফাস্র্‌ প্রদেশ পযর্ন্ত বিস্তৃত ছিল। ঐ একই সময় মিসরে ফাতেমীয়রা বহু বছর যাব শাসন করে। অবশ্য মাযহাবগত শক্তি বিভিন্ন বাদশাহ্‌দের যুগে বিভিন্ন রকম ছিল। যেমন মিসরে ফাতেমীয়দেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে ‘আইয়ূবীয়’ বংশ যখন শাসন ক্ষমতা লাভ করে তখন, মিশরের অবস্থা সমপূর্ণ পাল্টে যায়। মিশর ও সিরিয়ার শীয়ারা সমপূর্ণ রূপে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তলোয়ারের সম্মুখে অসংখ্য শীয়াদের প্রাণ বির্সজন দিতে হয়।[95] বিখ্যাত শহীদুল আওয়াল (প্রথম শহীদ) জনাব মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ মাক্কীর শাহাদতের ঘটনা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তিনি ইতিহাসের এক অসাধারণ মেধাসম্পন্ন শীয়া ফকীহ্‌ (ইসলামী আইন বিশারদ) ছিলেন। শুধুমাত্র শীয়া মাযহাবের অনুসারী হওয়ার অপরাধে হিজরী ৭৮৬ সনে দামেস্কে তাকে হত্যা করা হয়েছিল![96] একইভাবে সিরিয়ার ‘হালাব’ শহরে জনাব শেইখ এশরাক শাহাবুদ্দিন সোহা্‌রাওয়ার্দি নামক জনৈক বিখ্যাত দার্শানিককে শীয়া হওয়ার অপরাধে হত্যা করা হয়!![97]

মোটকথা, এই পাঁচ শতাব্দী যাব ক্ষমতাসীন মৈত্রী শাসকগোষ্ঠী কতৃক প্রদত্ত ক্ষমতা ও স্বাধীনতা ভোগ করায় শীয়া মতার্দশের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আবার কখনও বা তারা বৈরী শাসক গোষ্ঠীর কোপানলেও পতিত হয়। কিন্তু ঐ দীর্ঘ সময়ে কোন ইসলামী দেশে শীয়া মাযহাব কখনও রাষ্ট্রীয় মাযহাব হিসেবে ঘোষিত হয়নি।


[1]| gnvb Avj−vn& e‡j‡Qb t Ò¯§iY ivL! Avj−vn&i Awfkvc AZ¨vPvix‡`i Dci wbcwZZ, hviv Avj−vn&i c‡_ cÖwZeÜKZv m„wó K‡i Ges Zv‡Z eµZv m„wó K‡iÓ| (-myiv Avj& AvÕivd, 44 I 45 bs AvqvZ|)

[2]| gnvb Avj−vn& e‡jb t ÒZvi †P‡q Øx‡bi e¨vcv‡i †K DËg †h Avj−vn&i Kv‡Q AvÍ mgc©b K‡i Ges wb‡RI mrKg© civqY, Avi GKwbô fv‡e Beªvnx‡gi mij ag©v`k© AbymiY K‡i? (-myiv Avb& wbmv, 125 bs AvqvZ|)

gnvb Avj−vn& Av‡iv e‡j‡Qbt ÒZzwg ej, ‡n Hkx MÖ‡š’’i AwaKvixMY! G‡mv, Ggb GK K_vq (HK¨ e× nB) hv Avgv‡`i I †Zvgv‡`i gv‡SI GKB (mgfv‡e MÖnY †hvM¨); †hb Avgiv Avj−vn& Qvov Avi Ab¨ Kv‡iv Bev`Z bv Kwi Ges †Kvb wKQy‡KB Avj−vn&i mv‡_ kixK& bv Kwi| Avgv‡`i †KD Avj−vn& Qvov Ab¨ KvD‡K †hb cÖwZcvjK iƒ‡c MÖnY bv K‡i| hw` Zviv G cÖ¯—ve †_‡K gyL wdwi‡q †bq, Zvn‡j ej, Ô†Zvgiv mv¶x †_‡Kv Avgiv gymwjgÓ| (-myiv Avj& Bgivb, 64 bs AvqvZ|)

gnvb Avj−vn& e‡jbt A_©t Ò†n gywgbMY †Zvgiv me©vÍK fv‡e AvÍm¤ú©‡Yi ¯—‡i (Bmjv‡g) cÖ‡ek Ki Ges kqZv‡bi c`v¼‡K AbymiY Ki bv| wbðqB †m †Zvgv‡`i cÖKvk¨ kΓÓ|(Ñmyiv Avj& evKviv 208 b¤^i AvqvZ|)

 

[3]| ÔhvBw`qvÕ‡`i †h `jwU Bgvg Avjx (Avt)-Gi c~e©eZx© `yÕRb Lwjdv‡K (1g I 2q Lwjdv) mwVK e‡j wek¦vm K‡i Ges †dKvn&MZ w`K †_‡K Bgvg Avey nvwbdvi Abymvix, ZvivI kxqv wn‡m‡e cwiwPZ| Z‡e Giv ewb DgvBqv I AveŸvmxq Lwjdv‡`i †gvKvwejvq Bgvg Avjx (Avt) I Zuvi eskai‡`i‡KB (cweÎ Avn‡j evBZ) †Ljvd‡Zi b¨vh¨ AwaKvix e‡j wek¦vm K‡i| G Kvi‡YB G‡`i‡KI kxqv ejv nq|

gnvb Avj−vn& e‡jbt (nhiZ Beªvnxg I nhiZ BmgvBj e‡j−b) †n Avgv‡`i cÖwZcvjK ! Avgv‡`i Dfq‡K †Zvgvi GKvš— AbyMZ Ki Ges Avgv‡`i eskai n‡Z †Zvgvi cÖwZ AbyMZ (gymwjg) GK D¤§Z (m„wó) KiÓ| (-myiv Avj evKviv, 128 bs AvqvZ|)

gnvb Avj−vn& e‡jbt ÒGUv †Zvgv‡`i wcZv Beªvnx‡gi ag©v`k©| wZwbB c~‡e© †Zvgv‡`i‡K gymwjg (AvÍ mg©cYKvix) wn‡m‡e bvg KiY K‡i‡QbÓ| (-myiv Avj& nv¾, 78 bs AvqvZ|)

[4]| ivmyj (mt)-Gi RxeÏkvq me© cÖ_g †h cwifvlvwUi D™¢e N‡U, Zv nj ÔkxqvÕ| ivmyj (mt)-Gi mvnvex nhiZ Aveyhvi (ivt), nhiZ mvjgvb dvimx (ivt), nhiZ wgK`v` (ivt), nhiZ Av¤§vi BqvwmiI (ivt) ivmyj (mt)-Gi RxeÏkv‡ZB GB †LZv‡e f‚wlZ wQ‡jb| (nv‡`i Avj& Avjvg Avj& Bmjvgx, 1g LÛ, 188 bs c„ôv)

[5]| (†n ivmyj) Avcwb wbKUZg AvÍxq‡`i‡K mZK© K‡i w`b| (myiv ÔAvk& ïAvivÕ 215 bs AvqvZ)

[6]| G nv`x‡m nhiZ Avjx (Avt) eY©bv K‡ibt ÒAvwg wQjvg me©Kwbô| Avwg gnvbex‡K (mt) ejjvgt ÔAvwg Avcbvi cÖwZwbwa neÕ| Avj−vn&i ivmyj (mt) Zuvi nvZ Avgvi Kuv‡a †i‡L ej‡jb, ÔG e¨w³ AvgviB fvB, Avgvi DËivwaKvix Ges Avgvi ¯’jvwfwl³| †Zvgiv Aek¨B Gi AvbyMZ¨ Ki‡eÕ| Dcw¯’Z †jv‡Kiv †n‡m Avey Zvwje‡K e‡j−v, Ô†Zvgv‡K Gevi †_‡K †Zvgvi †Q‡ji AvbyMZ¨ Kivi wb‡`©k w`‡q‡Q|Õ (ÔZvix‡L Zvevix, 2q LÛ, 321 c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ 116 b¤^i c„ôv| Avj& we`vqvn& Iqvb& wbnvqvn&, 3q LÛ, 39 bs c„ôv| MvqvZzj gvivg, 320 bs c„ôv|)

[7]| nhiZ D‡¤§ mvjgv n‡Z ewY©Z; nhiZ gynv¤§` (mt) e‡j‡Qbt ÒAvjx (Avt) me©`v mZ¨ I KziAv‡bi mv‡_ i‡q‡Q| Avi mZ¨ I KziAvbI me©`v Avjx (Avt)-Gi mv‡_ i‡q‡Q Ges ‡KqvgZ ch©š— Zviv ci¯úi wew”Qbœ n‡e bv|Ó

G nv`xmwU Avnjym& mybœvZ Iqvj Rvgvqv‡Zi 15wU eY©bv myÎ †_‡K ewY©Z n‡q‡Q| Avi kxqv‡`i 11wU eY©bv myÎ †_‡K G nv`xmwU ewY©Z n‡q‡Q| D‡¤§ mvjgv, Be‡b AveŸvm, cÖ_g Lwjdv Avey eKi, D¤§yj gywgbxb nhiZ Av‡qkv, nhiZ Avjx (Avt), Avey mvC` Ly`ix, Avey jvBjv Ges Avey AvBqye Avbmvix cÖgyL mvnvexMY n‡q‡Qb G nv`xmwUi g~j eY©bvKvix, (-evnivbx iwPZ ÔMvqvZzj gvivgÕ 539 I 540 bs c„ôv)

nhiZ gynv¤§` (mt) e‡j‡Qbt ÒAvjxi cÖwZ Avj−vn&i ingZ ewl©Z †nvK, ‡Kbbv, mZ¨ me©`v Zvi mv‡_ i‡q‡Q|Ó -Avj we`vqvn& Iqvb& wbnvqvn&, 7g LÛ 36 bs c„ôv|

[8]| nhiZ ivmyj (mt) e‡j‡Qbt ÔwnKgvZ (cÖÁv) `k fv‡M wef³ hvi bq fvMB †`qv n‡q‡Q Avjx (Avt)-†K Ges evKx GK fvM mgMÖ gvbe RvwZi gv‡S e›Ub Kiv n‡q‡QÕ| (-Avj we`vqvn& Iqvb& wbnvqvn&, 7g LÛ 359 bs c„ôv)

[9]| hLb g°vi Kvwdiiv Avj−vn&i ivmyj (mt)-‡K nZ¨v Kivi wm×vš— wb‡q Zuvi evox †NivI Kij, ZLb gnv bex (mt) g`xbvq wnRiZ Kivi wm×vš— wb‡jb Ges nhiZ Avjx (Avt)-†K ej‡jb, Zzwg wK Avgvi weQvbvq ï‡Z cÖ¯‘Z Av‡Qv, hv‡Z K‡i Kv‡diiv fve‡e AvwgB weQvbvq Nywg‡q AvwQ| Avi G fv‡e Avwg Zv‡`i cðvØeb ev Zj−vkx †_‡K wbivc` _vKe| nhiZ Avjx (Avt) H wec`RbK gyn~‡Z© ivmyj (mt)-Gi cÖ¯—vewU g‡b cÖv‡Y †g‡b wb‡jb|

[10]| ÔZvIqvixL I RvIqvwgC nv`xmÕ|

[11]| ÔMv`x‡i Ly‡giÕ nv`xmwU kxqv I mybœx Dfq m¤cÖ`v‡qi me©Rb ¯^xK…Z GKwU nv`xm| kxqv I Avn‡j mybœv‡Zi wewfbœ wbf©i†hvM¨ m~‡Î kZvwaK mvnvexi Øviv G nv`xmwU wewfbœ fv‡e ewY©Z n‡q‡Q hv Dfq m¤cÖ`v‡qi wewfbœ nv`xm MÖ‡š’’ wjwce× i‡q‡Q| we¯—vwiZ Rvb‡Z B”QyK cvVK‡`i wbæ wjwLZ MÖš’ ¸‡jv †`Lvi civgk© †`Iqv nj| (ÔMvqvZzj gvivgÕ 79 bs c„ôv, ÕAvj Mv`xiÕ Ges ÔAvevKv‡ZiÕ ÔMv`xi LÛ `ªóe¨)

[12]| ÔZvix‡L BqvKzexÕ -bvRvdxq gy`ªY- 2q LÛ, 137 I 140 bs c„ôv| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ 1g LÛ 156 bs c„ôv| Ômnxn& eyLvixÕ 4_© LÛ, 107 bs c„ôv| Ôgyi“hyh& hvnveÕ 2q LÛ, 437 bs c„ôv| ÔBe‡b Avwej nv`x`Õ 1g LÛ, 127- 161 bs c„ôv 10- Ômvnxn& gymwjgÕ 5g LÛ, 176 bs c„ôv| Ômnxn& eyLvixÕ 4_© LÛ, 207 bs c„ôv| Ôgyi“hyh hvnveÕ, 2q LÛ, 23 Ges 437 bs c„ôv| ÔZvixLy Avwej wd`vÕ cÖ_g LÛ, 127 I 187 bs c„ôv|

[13]| nhiZ Rvwei web Avãyj−vn& Avj& Avbmvix (ivt) e‡j‡Qbt ÒAvgiv GKevi gnvbex (mt)-Gi mv‡_ wQjvg| GKUz `~‡i nhiZ Avjx (Avt)-†K †`Lv †Mj| gnv bex (mt) ej‡jb, Òhvi nv‡Z Avgvi cÖvY, Zvi kc_ G e¨w³ (Avjx) I Zvi ÔkxqvivBÕ (Abymvix) ‡Kqvg‡Zi w`b bvRvZ (gyw³) cv‡e|Ó nhiZ Be‡b AveŸvm (ivt) eY©bv K‡i‡Qb †h, ÒhLb G AvqvZwU {Òhviv Cgvb Av‡b Ges mr KvR K‡i, ZviB m„wói †kªô|Ó-myiv Avj evBwqbvn, 7bs AvqvZ} bvwhj n‡jv, ivmyj (mt) nhiZ Avjx (Avt)-†K ej‡jb, ÒZzwg Ges †Zvgvi kxqvivB (Abymvix) n‡”Q GB Avqv‡Zi ev¯—e D`vniY hviv ‡Kqvg‡Zi w`b mš‘ó _vK‡e Ges Avj−vn Zv‡`i cÖwZ mš‘ó _vK‡eb|Ó G QvovI Gai‡Yi nv`xm bx‡Pi MÖš’ ¸‡jv‡Z D‡j−wLZ n‡q‡Qt Ô`yiij gvbmyiÕ 6ô LÛ, 379 bs c„ôv| ÔMvqvZzj gvivgÕ 326 bs c„ôv|

[14]| gnvbex (mt) g„Zz¨i c~‡e© Amy¯’ Ae¯’vq Rbve Dmvgv web hv‡q`‡K GKwU †mbvevwnbxi †bZ…‡Z¡i `vwqZ¡ Ac©Y K‡iwQ‡jb| Avi Ab¨ mevB‡K wZwb Dmvgvi †bZ…‡Z¡ H evwnbx‡Z †hvM w`‡q g`xbvi evB‡i hvIqvi R‡b¨ wb‡`©k w`‡qwQ‡jb| wKš‘ †ekwKQy msL¨K mvnvex ivmyj (mt)-Gi GB Av‡`‡ki weiƒ×vPviY K‡ib| Hme weiƒ×vPvix‡`i g‡a¨ cÖ_g Lwjdv Avey eKi I wØZxq Lwjdv Ig‡ii bvg we‡kl fv‡e D‡j−L †hvM¨| G welqwU gnvbex‡K (mt) fxlYfv‡e gg©vnZ K‡iwQj| [kviû Be‡b Avwej nv`x`, (wgkixq gy`ªY) 1g LÛ 53 bs c„ôv]

gnvbex (mt) †klwbk¦vm Z¨v‡Mi c~‡e© Dcw¯’Z mvnvex‡`i‡K ej‡jbt ÒKvMR Kjg wb‡q G‡mv| Avwg †Zvgv‡`i R‡b¨ Ggb wKQy wj‡L †i‡L †h‡Z PvB, hv †Zvgv‡`i R‡b¨ †n`vqZ ¯^iƒc n‡e Ges hvi d‡j †Zvgiv KLbB c_åó n‡e bv|Ó wKš‘ wØZxq Lwjdv Igi G Kv‡Ri we‡ivaxZv Ki‡jb Ges ej‡jbt Òivmyj (mt)-Gi †ivM Lye Pig gvÎvq †cuŠ‡Q †M‡Q| wZwb cÖjvc eK‡Qb|Ó(Zvix‡L Zvevix, 2q LÛ 436 bs c„ôv| mnxn& eyLvix 3q LÛ, mnxn& gymwjg 5g LÛ, Avj we`vqvn& Iqvb& wbnvqvn&, 5g LÛ 227 bs c„ôv| Be‡i Avwej nv`x`, 1g LÛ 133 bs c„ôv|)

wVK GKB ai‡Yi NUbv cÖ_g Lwjdv Avey eK‡ii g„Zz¨i mgq N‡U wQj| ZLb cÖ_g Lwjdv wØZxq Lwjdv Igi‡K Zvi cieZx© Lwjdv wn‡m‡e g‡bvbxZ K‡i IwmqZ (DBj) wj‡L hvb| Ggb wK ÔIwmqvZÕ wjLvi gv‡S wZwb msÁvI nvwi‡q †d‡jb| wKš‘ ZLb wØZxq Lwjdv Igi cÖwZev` K‡ibwb| A_P gnvbex (mt) †kl wbk¦vm Z¨vM Kiv ch©š— m¤ú~Y© ¯^vfvweK wQ‡jb Ges Zuvi mvnvexivI my¯’ wQ‡jb| G Qvov gnvbex (mt) wQ‡jb m¤ú~Y© gvmyg (wb¯úvc)| (iI`vZzm& mvdvÕ 2q LÛ, 250 bs c„ôv)

4| kviû Be‡b Avwej nv`x`Õ 1g LÛ, 58 I 123 †_‡K 135 bs c„ôv| Zvix‡L BqvKzexÕ 2q LÛ, 102 bs c„ôv| Zvix‡L ZvevixÕ 2q LÛ, 445 †_‡K 460 bs c„ôv|

[16]| Zvix‡L BqvKzexÕ 2q LÛ 103 †_‡K 106 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`vÕ 1g LÛ, 156 I 166 bs c„ôv| gyi“hyh& hvnveÕ 2q LÛ 307 bs I 352 bs c„ôv| kviû Bewb Avwej nv`x`Õ 1g LÛ, 17 I 134 bs c„ôv|

[17]| Rbve Igi web ûivBm, mvÕ` web hvB`‡K, e‡j‡Qbt cÖ_g Lwjdv Avey eK‡ii nv‡Z evBqvZ MÖn‡Yi e¨vcv‡i †KD we‡ivaxZv K‡iwQj wK?Õ wZwb DËi w`‡jbt ÒïaygvÎ ÔgyiZv`Õ ev ÔgyiZv`Õmg †jvK Qvov Avi †KDB Gi we‡ivaxZv K‡iwb|Ó(Zvix‡L Zvevix, 2q LÛ, 447 bs c„ôv)

[18]| nv`x‡m mvKvjB‡b ewY©Z n‡q‡Qt ÒAvwg AvgvbZ ¯^iƒc ‡Zvgv‡`i gv‡S `yÕwU g~j¨evb wRwbm †i‡L hvw”Q| hw` †Zvgiv H `yÕwU e¯‘‡K `„pfv‡e AvuK‡o _vK Zvn‡j KLbB c_åó n‡e bv| Avi Zv n‡”Q t ÔKziAvb I Avgvi cweÎ Avn‡j evBZ (bex esk), hv ‡Kqvg‡Zi w`b ch©š— KLbB ci¯úi ‡_‡K wew”Qbœ n‡e bv|Ó weL¨vZ G nv`xmwU hviv eY©bv K‡i‡Qb Zv‡`i g‡a¨ ivmyj (mv.) Gi mvnvexB cÖvq 35 Rb Ges Ab¨ Av‡iv kZvwaK m~‡Î ewY©Z n‡q‡Q| (MvqvZzj gvivgÕ 211 bs c„ôv, I ZvevKvZ MÖ‡š’i mvKvjvBb nv`xm `ªóe¨|) ivmyj (mv.) e‡j‡Qbt ÒAvwg Áv‡bi bMix Avi Avjx (Av.) Zvi `iRv| †h e¨w³ Ávb AR©‡b AvMÖnx n‡e, Zv‡K H `iRv w`‡qB cÖ‡ek Ki‡Z n‡e|Ó (Avj we`vqvn& Iqvb wbnvqvn& Õ 7g LÛ, 359 bs c„ôv)

[19]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 105 †_‡K 150 bs c„ôv `ªóe¨|

[20]| cweÎ KziAvb, ivmyj (mv.) Ges cweÎ Avn‡j evBZMY (Av.) Ávbv©R‡bi cÖwZ AwZkq ¸i“Z¡ Av‡ivc I Drmvn cÖ`vb Ki‡Zb| ÁvbvR©‡bi cÖwZ Aby‡cÖiYv cÖ`vb Ki‡Z wM‡q GK ch©v‡q gnv bex (mv.) e‡jbt ÒÁvb AR©b cÖwZwU gymjgv‡bi R‡b¨B diRÓ| (wenvi“j Av‡bvqvi, 1g LÛ, 172 bs c„ôv)

[21]| Avj& we`vqvn& Iqvb& wbnvqvn&, 7g LÛ, 360 bs c„ôv|

[22]| Zvix‡L BqvKzex, 111, 126, I 129 bs c„ôv|

[23]| gnvb Avj−vn& cweÎ KziAv‡b e‡j‡Qb t ÒcweÎ KziAvb GKwU m¤§vwbZ MÖš’, hvi mvg‡b I wcQb †_‡K KLbB wg_¨ AbycÖ‡ek Ki‡Z cvi‡e bv|Ó| -myiv dzmwmjvZ, 41I 42 bs AvqvZ|

gnvb Avj−vn& AviI e‡j‡Qbt ÒGKgvÎ Avj−vn& e¨ZxZ wb‡`©k †`qvi AwaKvi Avi KviI †bB Ó| -myiv Avj BDmyd, 67 bs AvqvZ|

kixqZ ev Bmjvgx wewa weav‡bi GKgvÎ cÖwZfz Avj−vn&B, hv bexi gva¨‡g RbM‡Yi Kv‡Q †cuŠQv‡bv n‡q‡Q|

G e¨vcv‡i Avj−vn& e‡jbt Òeis wZwb Avj−vn&i ivmyj Ges me©†kl bexÓ| -myiv Avj Avnhve, 40 bs AvqvZ| G Avqv‡Zi gva¨‡g gnvb Avj−vn& beyqZ I kixq‡Zi (‡Lv`vqx weavb) mgvwß †NvlYv K‡i‡Qb |

gnvb Avj−vn& AviI e‡jb t Òhviv Avj−vn&i AeZxY© weavb Abymv‡i wb‡`©kbv cÖ`vb K‡i bv, ZvivB Kv‡diÓ -myiv Avj gv‡q`v, 44 bs AvqvZ|

[24]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 110 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 158 bs c„ôv|

[25]| `yiiƒj gvbmyi, 3q LÛ, 186 bs c„ôv| Zvix‡L BqvKzex, 3q LÛ 48 bs c„ôv| G Qvov cweÎ KzIAv‡bI Avek¨Kxq weavb my¯úó| †hgbt Lyg&m m¤úwK©Z KziAv‡bi AvqvZ t Ò†R‡b ivL! hv wKQy †Zvgiv jvf Ki Zv †_‡K GK cÂvgvsk Avj−vn&i, ivmy‡ji I ivmy‡ji AvÍxq ¯^R‡bi cÖvc¨Ó| (-myiv Avj& Avbdvj, 41 bs AvqvZ|)

[26]| cÖ_g Lwjdv Avey eKi Zvi †LjvdZ Kv‡j cÖvq cvuP kZ nv`xm msMÖn K‡ib| D¤§yj gywgbxb Av‡qkv eY©bv K‡ibt ÒGK w`b †fvi ch©š— mviv ivZ Avgvi wcZv‡K gvbwmK Aw¯’iZvq fyM‡Z ‡`‡LwQ| mKv‡j wZwb Avgv‡K ej‡jbt Òivmyj (mt)-Gi nv`xm¸‡jv wb‡q G‡mv| AZtci wZwb AvbxZ H nv`xm¸‡jv cywo‡q †d‡jbÓ| (Kvbhyj D¤§vj, 5g LÛ, 237 bs c„ôv| )

wØZxq Lwjdv Igi cÖwZwU kn‡i wjwLZfv‡e GB g‡g© wb‡`©kbvgv cvVvb †h, hvi Kv‡QB ivmyj (mt)-Gi nv`xm i‡q‡Q †m †hb AwZ mËi Zv cywo‡q †d‡j| (-Kvbhyj D¤§vj, 5g LÛ, 237 bs c„ôv|) gynv¤§` web Avey eKi e‡jbt ÒwØZxq Lwjdv Ig‡ii hy‡M ivmyj (mt)-Gi AmsL¨ nv`xm msM„nxZ n‡qwQj| H¸‡jv hLb Zvi Kv‡Q Avbv nj ZLb wZwb I¸‡jv me cywo‡q †djvi wb‡©`k ‡`bÓ| (ZvevKv‡Z Be‡b mvÕ`, 5g LÛ, 140 c„ôv|)

[27]| Zvix‡L Be‡b Avwej wd`v, 1g LÛ, 151 c„ôv, I Ab¨vb¨ MÖš’ mg~n|Õ

[28]| gnvbex nhiZ gynv¤§` (mt) Zuvi we`vq n‡Ri mgq †hme nvRxiv `~i-`~ivš— †_‡K g°vq cÖ‡ek KiZ, Zv‡`i Rb¨ we‡kl AvBb cÖYqb K‡ib | hvi Drm wQj cweÎ KziAv‡bi GB AvqvZ. ÔAvi †Zvgv‡`i g‡a¨ hviv n¾ I Igivn& GK‡Î GKBmv‡_ cvjb Ki‡Z PvI …..Õ(-myiv Avj& evKviv -196 bs AvqvZ|) wKš‘ wØZxq Lwjdv Zvi †Ljvd‡Zi hy‡M `~i †_‡K AvMZ nvRx‡`i R‡b¨ n‡¾i H AvBbwU (n‡¾ ZvgvËz) evwZj I wbwl× e‡j †NvlYv K‡ib| Ô†gvZvn& ev mvgwqK weevn&Õ hv Avj−vn&i ivmyj (mt)-Gi hy‡M cÖPvwjZ wQj, ZvI wØZxq Lwjdv Igi wbwl× †NvlYv K‡ib| Avi wZwb Zvi wb‡`©k Agvb¨Kvix‡`i cv_i †g‡i nZ¨vi weavb Rvix K‡ib| GKBfv‡e nhiZ ivmyj (mt)-Gi hy‡M, ÔnvBq¨v Avjv LvBwij AvgvjÕ A_©vr ÒDËg Kv‡Ri (bvgv‡Ri) w`‡K avweZ nIÓ evK¨wU Avhv‡bi g‡a¨ D”PvwiZ nZ | wKš‘ wØZxq Lwjdv Igi Zvi kvmb Avg‡j e‡jb t G evK¨wU RbMY‡K wRnv‡` Ask MÖnY †_‡K weiZ ivL‡Z cv‡i! ZvB wZwb Zvi †Ljvd‡Zi hy‡M Avhv‡b H evK¨wU D”PviY wbwl× †NvlYv K‡ib| nhiZ ivmy‡ji (mv.) hy‡M Zvui wb‡`©k Abyhvqx gvÎ GK ‰eV‡K GKwUi †ekx ÔZvjvKÕ cÖ`vb ˆea e‡j M„nxZ nZ bv| wKš‘ wØZxq Lwjdv Igi Zvi kvmb Avg‡j GKB ˆeV‡K wZbwU ÔZvjvKÕ cÖ`vb Rv‡qh e‡j †NvlYv †`b!! GKB ˆeV‡K wZb ZvjvK M…nxZ nIqvi ˆeaZv wZwbB cÖ_g ‡NvlYv K‡ib| D‡j−wLZ welq ¸‡jv, nv`xm MÖš’ I kxqv Ges mybœx gvhnv‡ei †dKn& I ÔKvjvgÕ kv‡¯¿i MÖ‡š’ AZ¨š— cÖwm×|

[29]| Zvix‡L BqvKzex 2q LÛ, 131 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 160 bs c„ôv|

[30]| Avmv`yj Mvev, 4_© LÛ, 386 bs c„ôv| Avj-Bmvevn, 3q LÛ `ªóe¨|

[31]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 150 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 168 bs c„ôv| Zvix‡L Zvevix, 3q LÛ, 377 bs c„ôv|

[32]| ZvixLy BqvKzex, 2q LÛ, 150 bs c„ôv| Zvix‡L Zvevix, 3q LÛ, 398 bs c„ôv|

[33]| wgmievmx‡`i GKwU `j Z…Zxq Lwjdv Imgv‡bi wei“‡× we‡`ªvnx n‡q I‡V| Lwjdv G‡Z wec‡`i AvksKv Ki‡jb| wZwb G e¨vcv‡i nhiZ Avjx (Avt)-Gi mn‡hvwMZv cÖv_©bv K‡ib Ges K…ZK‡g©i R‡b¨ Aby‡kvPYv cÖKvk K‡ib| ZLb nhiZ Avjx (Avt) wgmievmx‡`i D‡Ï‡k¨ e‡jbt Ò†Zvgiv‡Zv m‡Z¨i weR‡qi R‡b¨B we‡`ªvn K‡iQ| Avi ImgvbI Zvi KzK©‡gi Rb¨ AbyZß Ges ZIev K‡i‡Qb| wZwb e‡j‡Qb t ÔAvwg Avgvi AZxZ K…ZK©g †_‡K nvZ ¸wU‡q wbw”Q| AvMvgx wZb w`‡bi g‡a¨B †Zvgv‡`i `vex-`vIqv Avwg ev¯—evqb Kie Ges mKj AZ¨vPvix cÖkvmK‡`i eiLv¯— KieÕ| Gi ci nhiZ Avjx (Avt) Z…Zxq Lwjdv Imgv‡bi c¶ n‡q GKwU mwÜcÎ cÖ¯‘Z K‡ib| AZtci we‡`ªvnxiv wbR wbR ¯’v‡b wd‡i hvq | wKš‘ we‡`ªvnxiv evox †divi c‡_ Z…Zxq Lwjdv Imgv‡bi R‰bK µxZ`vm‡K ZuviB D‡U P‡o wgk‡ii w`‡K †h‡Z †`Lj| we‡`ªvnxiv mw›`nvb n‡q H µxZ`vm‡K _vwg‡q Zj−vkx Pvjvq| NUbvµ‡g H µxZ`v‡mi Kv‡Q wgk‡ii cÖkvmK‡K †jLv Z…Zxq Lwjdv Imgv‡bi GKwU wPwV Zviv D×vi K‡i| H wPwV‡Z G fv‡eB †jLv wQjt ÒAvj−vn&i bv‡g ïi“ KiwQ| hLb Avãyi ingvb web D`vBm& †Zvgvi wbKU †cuŠQ‡e, Zv‡K 100wU PveyK gvi‡e| Zvi Pzj I `vwo Kvwg‡q †dj‡e Ges my`xN© Kvivev‡m wbe× Ki‡e| Avi Igi web Avj- nvgvK, my`vb web nvgivb, Ges ÔDiIqv web bvevÕi e¨vcv‡iI GKB wb‡`©k Rvix Ki‡e|Ó we‡`ªvnxiv AZ¨š— w¶ß Ae¯’vq H wPwV mn Imgv‡bi Kv‡Q wd‡i G‡m ejjt ÔAvcwb Avgv‡`i mv‡_ wek¦vm NvZKZv K‡i‡QbÓ| wKš‘ Imgvb H wPwVi welqwU m¤ú~Y© A¯^xKvi K‡ib| Rev‡e we‡`ªvnxiv ej‡jvt ÒAvcbvi µxZ`vmB GB wPwVUvi evnKÓ| Imgvb ej‡jbt Ò†m Avgvi webv AbygwZ‡Z G KvR K‡i‡QÓ! Zviv ejjt Ò†m Avcbvi D‡UB P‡o hvw”QjÓ| wZwb ej‡jbt Ô†m Avgvi DU Pzwi K‡i‡QÕ! Zviv ej‡jvt ÔwPwV‡Zv Avcbvi e¨w³MZ †m‡µUvixi †jLvÕ| wZwb ej‡jbt Ô†m Avgv‡K AewnZ bv K‡iB G KvR K‡i‡QÕ! Zviv ej‡jv t ÔZvn‡j †Zv †Ljvd‡Zi KvR cwiPvjbv Kivi gZ †hvM¨Zv Av‡`Š Avcbvi †bB| wkM&Mxi B¯—dv w`b| KviY hw` cÖK…Zc‡¶ G KvR Avcbvi ØvivB N‡U _v‡K, Zvn‡j Aek¨B wLqvbZ K‡i‡Qb| Avi hw` Gme ¸i“Z¡c~Y© KvR Avcbvi webv AbygwZ‡Z n‡q _v‡K Z‡e †Ljvd‡Zi e¨vcv‡i Avcbvi A‡hvM¨Zv I e¨_©ZvB cÖgvwYZ nj| myZivs B¯—dv w`b, ZvÕbvn‡j AZ¨vPvix cÖkvmK‡`i eiLv¯— Ki“bÓ| Gi Dˇi Imgvb ej‡jbt ÔAvgv‡K hw` †Zvgv‡`i K_v †g‡b Pj‡Z nq, Zvn‡j †Zv †ZvgivB Avgvi kvmbKZ©v| ‡mLv‡b Avwg †Kvb Rb? Z…Zxq Lwjdvi Gai‡Yi Dˇi we‡`ªvnxiv Pigfv‡e ivMvwš^Z n‡q I‡V Ges ‰eVK Z¨vM K‡iÓ| (Zvix‡L Zvevix, 3q LÛ 402- 409 bs c„ôv| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ 150- 151 bs c„ôv|)

[34]| Zvix‡L Zvevix, 3q LÛ, 377 bs c„ôv|

[35]| mnxn& eyLvix, 6ô LÛ, 89 bs c„ôv| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 113 bs c„ôv|

[36]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 111 bs c„ôv| Zvix‡L Zvevix, 3q LÛ, 129-132 bs c„ôv|

[37]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ 113 bs c„ôv| kviû Bewb Avwej nv`x`, 1g LÛ, 9 bs c„ôv| BwZnv‡m cvIqv hvq †h, cÖ_g Lwjdv AveyeKi †Ljvd‡Zi ÔevBqvZÕ cÖvwßi ci ciB nhiZ Avjx (Avt)-Gi wbKU †_‡K Zuvi ÔevBqvZÕ cÖvwßi Rb¨ †jvK cvVvb| wKš‘ nhiZ Avjx (Avt) DËi w`‡jb, ÒAvwg cÖwZÁv K‡iwQ †h, ‡Kej gvÎ bvgvh Qvov Avi Ab¨ †Kvb Kvi‡Y evoxi evB‡i hve bv, hv‡Z K‡i Avwg KyiAvb msMÖ‡ni KvR m¤úbœ Ki‡Z cvwiÓ| BwZnv‡m AviI cvIqv hvq †h, ivmyj (mt)-Gi g„Zy¨i cÖvq Qq gvm ci wZwb Avey eK‡ii ÔevBqvZÕ MÖnY K‡ib|

G NUbvwU KyiAvb msMÖ‡ni KvR mgvß nIqvi GKwU cÖgvY ¯^iƒc| AZtci nhiZ Avjx (Avt) wbR msM„nxZ KziAvb‡K D‡Ui wc‡V K‡i RbM‡Yi wbKU wb‡q Zv‡`i‡K †`Lvb| A_P ÔBqgvgviÕ hy‡×i ci hLb KyiAvb msMÖ‡ni KvR ïi“ Kiv nq †mUv wQj cÖ_g Lwjdv Avey eK‡ii †Ljvd‡Zi wØZxq eQi| G mg¯— NUbv Bmjv‡gi BwZnvm mn wewfbœ nv`xm MÖ‡š’ D‡j−wLZ n‡q‡Q|

[38]| Zvix‡L BqvKzwe, 2q LÛ, 154 bs c„ôv|

[39]| Zvix‡L BqvKzwe, 2q LÛ, 155 bs c„ôv| gyi“ƒhyh& hvnve, 2q LÛ, 364 bs c„ôv|

[40]| bvnRyj evjvMv, 15 bs e³…Zv|

[41]| gnvbex (mv.)-Gi g„Zz¨i ci nhiZ Avjx (Av.)-Gi Abymvix gywó‡gq wKQy mvnvex Lwjdvi ÔevBqvZÕ (AvbyMZ¨ cÖKvk) MÖn‡Y A¯^xK…wZ Ávcb K‡ib| GB msL¨vjNy †Mvwôi kx‡l© wQ‡jb nhiZ mvjgvb dvimx (iv.), nhiZ Aveyhvi (iv.), nhiZ wgK`v` (iv.) Ges nhiZ Av¤§vi (iv.)| GKB fv‡e ¯^qs nhiZ Bgvg Avjx (Av.)-Gi †Ljvd‡Zi mgqI D‡j−L‡hvM¨ cwigvY wKQy‡jvK Zvi ÔevBqvZÕ MÖn‡Y A¯^xK…wZ Rvbvq| G me we‡ivax‡`i g‡a¨ me‡P‡q K‡Vvicš’xiv wQ‡jb, Rbve mvB` web Avm, Iqvwj` web DKev, gviIqvb web nvKvg, Igi web Avm, evmvi web Giv`v, mvgvi wbRv›`v, gyMvBiv web ïÕAvev I Av‡iv A‡b‡K| †Ljvd‡Zi hy‡Mi G `yB we‡ivax c‡¶i †jvK‡`i mevi e¨w³MZ Rxebx Ges Zv‡`i HwZnvwmK Kvh©Kjvc hw` Avgiv my¶¥fv‡e ch©‡e¶Y I M‡elYv Kwi, Zvn‡j Zv‡`i j¶¨ D‡Ïk¨ Avgv‡`i Kv‡Q my¯úó n‡q DV‡e| cÖ_g we‡ivax c‡¶i m`m¨iv mevB wQ‡jb nhiZ ivmyj (mv.)-Gi we‡kl mvnvex e„›`| Zuviv mshg mvabv, Bev`Z, AvÍZ¨vM, †Lv`v fxi“Zv, Bmjvgx †PZbvi w`K †_‡K ivmyj (mv.) Gi we‡kl wcÖq cv·`i Aš—©f‚³ wQ‡jb| gnvbex (mv.) Gu‡`i m¤ú©‡K e‡j‡Qbt Ôgnvb Avj−vn& Avgv‡K AeMZ K‡i‡Qb ‡h PviRb e¨w³‡K wZwb fvj ev‡mb| Avi Avgv‡K Av‡`k w`‡q‡Qb, AvwgI †hb Zuv‡`i‡K fvj evwmÓ| mevB H e¨w³‡`i bvg wR‡Ám Ki‡j, Gi Dˇi ci ci wZbevi wZwb ÒcÖ_g Avjx (Av.) AZtci mvjgvb (iv.), Aveyhvi (iv.) I wgK`v‡`i (iv.) bvg D”PviY K‡ib|Ó (mybv‡b Be‡b gvRv, 1g LÛ, 66 bs c„ôv|) nhiZ Av‡qkv (iv.) e‡jbt nhiZ ivmyj (mv.) e‡j‡Qbt ÔÔ†h `ywU welq Av¤§v‡ii (iv.) cÖwZ Dc¯’vwcZ n‡e, Av¤§vi (iv.) Aek¨B H `yÕ ‡¶‡Î mZ¨‡KB †e‡Q †b‡e|ÕÕ (Be‡b gvRv 1g LÛ, 66 bs c„ôv| )

gnvbex (mv.) e‡j‡Qb t ÔÔAvKvk I c„w_exi gv‡S Aveyhv‡ii (iv.) †P‡q AwaKZi mZ¨ev`x Avi †KD †bB|ÕÕ (Be‡b gvRv, 1g LÛ, 68 bs c„ôv|) G‡`i KviI Rxeb BwZnv‡mB kixqZ we‡ivax GKwU Kv‡Ri D‡j−L cvIqv hvq bv| Giv †KD Ab¨vqfv‡e †Kvb i³cvZ NUvbwb| Ab¨vqfv‡e KviI AwaKvi KLbI niY K‡ibwb| KviI A_©m¤ú` KLbI wQwb‡q †bbwb| RbM‡Yi gv‡S Zviv KLbB `~bx©wZ I c_ åóZvi cÖmv‡i wjß nbwb| wKš‘ wØZxq we‡ivax c‡¶i e¨w³‡`i RNY¨ Aciva I aŸsmvZ¡K Kg©Kv‡Ûi AmsL¨ mv¶x‡Z BwZnvm cwic~Y©| BwZnv‡m Ab¨vqfv‡e cÖPzi i³cvZ Zviv NwU‡q‡Qb| gymjgvb‡`i abm¤ú` jyÚb K‡i‡Qb| GZme j¾vKi KvÛ Zviv NwU‡q‡Qb ‡h, Zv ¸‡b †kl KivI KwVb| Zv‡`i H me HwZnvwmK Aciv‡ai Av‡`Š †Kvb hyw³c~Y© ARynvZ Luy‡R cvIqv hvq bv| Zv‡`i H me KzK‡g©i †gvKvwejvq ïaygvÎ GUv e‡jB mvš—bv †`qv nq †h, Zviv hZ AcivaB Ki“K bv †Kb, Avj−vn& †Zv Zv‡`i cÖwZ mš‘ó (ivw`qvj−vû Avbû)| KyiAvb ev mybœvq D‡j−wLZ Bmjvgx AvBb Ab¨‡`i Rb¨, Ime mvnvex‡`i †¶‡Î cÖ‡hvR¨ bq!!

[42]| gyi“hzh& hvnve, 2q LÛ, 362 bs c„ôv| bvnRyj evjvMv, 122 bs e³…Zv| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 160 bs c„ôv| kviû& Bewb Avwej nv`x`, 1g LÛ, 180 bs c„ôv|

[43]| Zvix‡L BqvKyex, 2q LÛ, Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 172 bs c„ôv| gyi“hyh& hvnve, 2q LÛ, 366 bs c„ôv|

[44]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 152 bs c„ôv|

[45]| gyi“hzh& hvnve, 2q LÛ, 362 bs c„ôv| bvnRyj evjvMv, 122 bs e³…Zv| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 160 bs c„ôv| kviû& Bewb Avwej nv`x`, 1g LÛ, 180 bs c„ôv|

[46]| Zvix‡L BqvKyex, 2q LÛ, Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 172 bs c„ôv| gyi“hyh& hvnve, 2q LÛ, 366 bs c„ôv|

[47]| Z…Zxq Lwjdv hLb wec−ex‡`i Øviv wbR evox †NivI Ae¯’vq KvUvw”Q‡jb| ZLb G Ae¯’vi wbimb K‡í mvnvh¨ †P‡q wZwb gyqvweqvi Kv‡Q cÎ cvVvb| gyqvweqv D³ cÎ †c‡q cÖvq ev‡iv nvRvi ˆm‡bi GKwU †mbvevwnbx‡K A‡¯¿k‡¯¿ mymw¾Z K‡ib| wZwb H †mbvevwnbx mn wmwiqv †_‡K g`xbvi w`‡K iIbv †`b| wKš‘ Gi ciB wZwb Avcb †mbvevwnbx‡K wmwiqv mxgv‡š— Ae¯’vb Kivi wb‡`©k †`b| AZtci †mbvevwnbx H Ae¯’vq ‡i‡L wZwb GKvB g`xbvq wM‡q Z…Zxq Lwjdvi mv‡_ mv¶vZ K‡ib Ges Lwjdv‡K mvnv‡h¨i R‡b¨ Zvi cÖ‡qvRbxq mvgwiK cÖ¯‘Zx Pzov‡š—i cÖwZ‡e`b †ck K‡ib| Z…Zxq Lwjdv Gi cÖZz¨Ë‡i e‡jb t ÔZzB D‡Ïk¨-gyjKfv‡e †mbvevwnbxi Awfhvb _vwg‡q †i‡L G‡mwQm, hv‡Z K‡i Avwg wbnZ nB Avi Avgvi nZ¨vi cÖwZ‡kv‡ai evnvbvq ZzB we‡`ªvn Kivi my‡hvM cvm| ZvB bq wK? (Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 152 bs c„ôv| gyi“hyh hvnve, 3q LÛ 25 bs c„ôv| Zvix‡L Zvevix, 402 bs c„ôv|Õ)

[48]| gyi“hyh hvnve, 2q LÛ 415 bs c„ôv|

[49]| cweÎ KyiAv‡b Avj−vn e‡j‡Qb t ÒZv‡`i KwZcq wewkó e¨w³ GK_v e‡j cÖ¯’vb K‡i †h, ‡Zvgiv P‡j hvI Ges †Zvgv‡`i Dcvm¨‡`i cyRvq `„p _vK|ÕÕ(-myiv Avm& †mvqv`, 6 bs AvqvZ|)

Avj−vn AviI e‡j‡Qb t ÔÔAvwg Avcbv‡K `„pc` bv ivL‡j Avcwb Zv‡`i cÖwZ cÖvq wKQyUv Sz‡K co‡Zb|ÕÕ(-myiv Avj Bmiv, 74 bs AvqvZ|)

gnvb Avj−vn e‡j‡Qb t ÔÔZviv Pvq †h, Zzwg bgbxq nI, Zvn‡j ZvivI bgbxq n‡e|ÕÕ(-myiv Avj Kvjvg, 9 bs AvqvZ|) Dc‡iv³ AvqvZ ¸‡jvi nv`xm wfwËK Zvdwmi `ªóe¨|

[50]| ÔwKZveyj Mvivi Iqv` `vivi Avgvw`, I gyZvdviwiKvZz RvIqvwgD nv`xmÕ|

[51]| Ôgyi“hyh& hvnveÕ 2q LÛ, 431 bs c„ôv| Ôkviû Bewb Avwej nv`x`Õ 1g LÛ, 181 bs c„ôv|

[52]| Avkevn& I bvhvBi“ myqyZx wdb& bvû 2q LÛ| kviû Bewb Avwej nv`x` 1g LÛ 6 bs c„ôv|

[53]| bvn&Ryj evjvMv `ªóe¨|

[54]| kvi“û Bewb Avwej nv`x`, 1g LÛ, 6-9 bs c„ôv| ÔR‡½ Rvgv‡jiÕ hy‡× ˆRbK †e`yBb e¨w³ nhiZ Avjx (Av.)-†K e‡j−vt Ò†n Avwgi“j gyÕwgbxb!Ó Avcbvi `„wó‡Z Avj−vn& wK GK? cvk©¦¯’ mevB H e¨w³‡K Av‡µvgY K‡i e‡j−vt Ò†n †e`yBb G `~‡hv©Mgyû‡Z© Zzwg wK Bgvg Avjx (Av.)-Gi AivRK gvbwmK cwiw¯’wZ j¶¨ Ki‡Qv bv! Ávb PP©vi Avi †Kvb mgq †c‡j bvÓ?

Bgvg Avjx (Av.) Zuvi mv_x‡`i j¶¨ K‡i ej‡jbt ÒH e¨w³‡K †Q‡o `vI| ‡Kbbv, †gŠwjK wek¦vm I Bmjvgx gZv`‡k©i ms‡kvab Ges Bmjv‡gi D‡Ïk¨ I j¶¨‡K my¯úó Kivi R‡b¨B †Zv AvR Avwg G hy‡× AeZxY© n‡qwQ| ÒAZtci wZwb H †e`yBb Avie e¨w³i cÖ‡kœi we¯—vwiZ e¨vL¨v mn DËi w`‡q wQ‡jb| (wenvi“j Av‡bvqvi, 2q LÛ, 65 bs c…ôv|)

[55]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 191 bs c„ôv| Ges Ab¨vb¨ BwZnvm MÖš’ `ªóe¨|

[56]| kviû Be‡b Avwej nv`x`, 4_© LÛ, 160 bs c„ôv| Zvix‡L Zvevix, 4_© LÛ, 124 bs c„ôv| Zvix‡L Be‡b Avwmi, 3q LÛ, 203 bs c„ôv|

[57]| c~‡e©v³ m~Î `ªóe¨|

[58]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 193 bs c„ôv|

[59]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 202 bs c„ôv|

[60]| Bqvwh` wQj GK Ajm I Pig wejvmx e¨w³| †m wQj j¤úU I g`¨c| †ikgx e¯‘B wQj Zvi †cvkvK| KzKzi I evbi wQj Zvi wbZ¨ msMx I †Ljvi mv_x| Zvi wbZ¨ Avmi¸‡jv wQj g` I bvP-Mv‡b Avb›` gyLi| Zvi evb‡ii bvg wQj Avey Kv‡qm| H evbiwU‡K Bqvwh` memgq AZ¨š— my›`i g~j¨evb †cvkvK cwi‡q g`cv‡bi Avm‡i wb‡q AvmZ ! KL‡bv ev evbiwU‡K wb‡Ri †Nvovq Pwo‡q †Nvo ‡`Šo cÖwZ‡hvwMZvq cvVv‡Zv| (ZvixLy BqvKzex, 2q LÛ, 196 bs c„ôv| gyi“hyh hvnve, 3q LÛ 77 bs c„ôv|)

[61]| gyi“hyh hvnve, 3q LÛ, 5 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ 183 bs c„ôv|

[62]| Avb bvmvCn Avj Kvwdqvn, 72 bs c„ôv| Avj Bn`vm bvgK MÖš’ †_‡K DØ„Z|

[63]| nv`xm Rbve Aveyj nvmvb Avj-gv`v‡qbx wKZveyj Bn`vm MÖ‡š’ eY©bv K‡i‡Qb †h, nvmvb (Av.)-Gi mv‡_ Pzw³i c‡ii eQi gyqvweqv Zvi R‰bK Kg©Pvixi Kv‡Q wjwLZ GK wb‡`©‡k Rvbvq t ÔÔ†h e¨w³ Bgvg Avjx (Av.) ev Avn‡j evB‡Zi gh©v`v m¤ú‡K© †Kvb nv`xm eY©bv Ki‡e, Zv‡K nZ¨v Kivi R‡b¨ Avwg `vqx bB|ÕÕ {wKZveyj bvmvCnyj Kvwdqvn (gynv¤§` web AvwKj), (1386 wnRix m‡b bvRv‡d gyw`ªZ) 87 I 194 bs c„ôv|}

[64]| Avb& bvmvCnyj Kvwdqvn, 72 -73 bs c„ôv|

[65]| Avb& bvmvCnyj Kvwdqvn, 58, 64, 77 I 78 bs c„ôv|

[66]| ÒAvi hviv me©cÖ_g wnRiZKvix I Avbmvi‡`i gv‡S cyivZb Ges hviv Zv‡`i AbymiY K‡i‡Q, Avj−vn& †m mg¯— †jvK‡`i cÖwZ mš‘ó n‡q‡Qb Ges ZvivI Zuvi cÖwZ mš‘ó n‡q‡Qb|Ó (-myiv AvZ& ZIev, 100 bs AvqvZ `ªóe¨|)

[67]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 216 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 190 bs c„ôv| gyi“hyh hvnve, 3q LÛ, 64 bs c„ôv| AviI Ab¨vb¨ BwZnvm MÖš’ `ªóe¨|

[68]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 243 bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 192 bs c„ôv| gyi“hyh hvnve, 3q LÛ, 78 bs c„ôv|

[69]| Zvix‡L BqvKzex, 2q LÛ, 224bs c„ôv| Zvix‡L Avwej wd`v, 1g LÛ, 192 bs c„ôv| gyi“hyh hvnve, 3q LÛ, 81 bs c„ôv|

[70] | Zvix‡L BqvKzex, 3q LÛ, 73 bs c„ôv|

[71] | gyi“hyh hvnve, 3q LÛ, 228 bs c„ôv|

[72] | G eB‡qi Bgvg cwiwPwZ Aa¨vq `ªóe¨|

[73] | ÔgyÕRvgyj eyj`vbÕ Ô†KvgÕ kã `ªóe¨|

[74] | Ôgyi“hyh hvnveÕ 3q LÛ, 217-219 bs c„ôv| ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ, 66 bs c„ôv|

[75] | Ôwenvi“j Av‡bvqviÕ 12 bs LÛ|

[76] | ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ, 84 bs c„ôv|

[77]| ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ 79 bs c„ôv| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ 1g LÛ, 208 bs c„ôvI Ab¨vb¨ BwZnvm `ªóe¨|

[78]| ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ, 86 bs c„ôv| Ôgyi“hyh hvnveÕ 3q LÛ, 268 bs c„ôv|

[79]| ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ, 86 bs c„ôv| Ôgyi“hyh hvnveÕ 3q LÛ, 270 bs c„ôv|

[80]| ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ, 91-96 bs c„ôv| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ 1g LÛ, 212 bs c„ôv|

[81]| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ 2q LÛ, 6 bs c„ôv|

[82]| ÔZvix‡L BqvKzexÕ 3q LÛ, 198 bs c„ôv| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ 2q LÛ, 33 bs c„ôv|

[83]| Ôwenvi“j Av‡bvqviÕ 12 Zg LÛ, ÔBgvg Rvdi mvw`‡Ki (Av.) Ae¯’vÕ Aa¨vq|

[84]| ÔevM`v` †mZzi KvwnbxÕ|

[85]| ÔAvMvbx Avwej dvivR wKmÕAvZz AvwgbÕ|

[86]| ZvIqvwiL

[87]| ivR‰bwZK w`K †_‡K AveŸvmxq Lwjdv gvgyb wQ‡jb AZ¨š— PZzi| wZwb Aóg Bgvg nhiZ Bgvg †iRv (Av.)-‡K Zvi †Ljvd‡Zi cieZ©x DËivaxKvix wn‡m‡e †NvlYv K‡ib| wKš‘ GUv wQj Zvi GK a~Z©Zvc~Y© ivR‰bwZK †KŠkj| nhiZ Bgvg †iRv (Av.) GUv fvj K‡iB Rvb‡Zb| ZvB wZwb evnZ¨t Lwjdv gvgy‡bi cÖ¯—ve †g‡b wb‡jI iv‡óªi ivR‰bwZK †Kvb Kg©Kv‡Û n¯—‡¶c Ki‡Z A¯^xKvi K‡ib| gvgy‡bi a~Z©Zv m¤c‡K© Bgvg †iRv (Av.)-Gi aviYvi mZ¨Zvi cÖgvY ZLbB cvIqv †Mj, hLb Lwjdv gvgyb nhiZ Bgvg †iRv (Av.)-‡K welcÖ‡qv‡Mi gva¨‡g knx` K‡ib|

[88]| Zvix‡L Avwej wd`v I Ab¨vb¨ BwZnvm MÖš’vejx `ªóe¨|

[89]| ÔAvj wn`vivZzj Bmjvwgqvn&Õ -1g LÛ, 97 bs c„ôv|

[90]| Ôgyi“hyh& hvnveÕ 4_© LÛ 373 bs c„ôv| ÔAvj wgjvj Iqvb wbqvjÕ 1g LÛ, 254 bs c„ôv|

[91]| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ 2q LÛ, 63 bs c„ôv, Ges 3q LÛ, 50 bs c„ôv `ªóve¨|

[92]| ÔZvIix‡L Kv‡gjÕ ÔZvix‡L ivI`vZzm& mvdv, I ÔZvix‡L nvweeym& wmqvi `ªóe¨

[93]| ÔZvix‡L Kv‡gjÕ ÔZvix‡L Avwej wd`v, 3q LÛ `ªóe¨|

[94]| ÔZvix‡L nvweeym& wmqviÕ| ÔZvix‡L Avwej wd`vÕ I Ab¨vb¨ BwZnvm MÖš’ `ªóe¨|

[95]| ÔiI`vZzj RvbœvZ I wiqv`yj Djvgv (ivBnvbvZzj Av`ve )Õ 2q LÛ, 365 bs c„ôv|

[96]| ÔwKZveyi ivI`vZ wKZveyj gvRvwjk I IqvwdqvZzj AvÔCqvbÕ|

[97]| ÔiI`vZzm& mvdvÕ I Ônvweeym& mvBiÕ|

Leave A Reply

Your email address will not be published.