ধর্ম

0 281

এখানে কোন সন্দেহ নেই যে, মানুষ তার স্বজাতীয় লোকদের সাথে সমাজবদ্ধ হয়ে একসংগে জীবন যাপন করেমানুষ তার জীবনে সামাজিক পরিবেশে যে সব কাজ করে, সে সকল কাজ পরষ্পর সম্পর্কহীন নয়যেমনঃ মানুষের খাওয়া, পড়া, পান করা, চলা, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া, পরষ্পরের সাথে মেলা মেশা ইত্যাদি কাজ বাহ্যতঃ পরষ্পর সম্পর্কহীন বলে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এগুলো সম্পূর্ণ রূপে পরষ্পর সম্পর্কযুক্তযে কোন কাজই ইচ্ছেমত যত্র-তত্র ও যখন ইচ্ছে তখন করা যায় নাবরঞ্চ যে কোন কাজের জন্যেই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছেতাই মানুষ তার জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মগুলো সুনির্দিষ্ট একটি নিয়মতান্ত্রিকতার অধীনে সম্পন্ন করে, যা কখনই ঐ নিয়ম থেকে বিচ্যুত হয় নাআর মানব জীবনে সম্পাদিত সকল কাজের উদ্দেশ্যই বিশেষ একটি বিন্দু থেকে উসারিতআর সেই কেন্দ্র বিন্দুটি হল, মানব জীবনের সাফল্য ও সৌভাগ্য লাভের আকাংখা, অর্থা মানুষ তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যে তার অভাব ও প্রয়োজন গুলোকে যথাসম্ভব পূর্ণ করার আকাংখা পোষণ করে

 

এ কারণেই মানুষ তার জীবনের সকল কাজকর্মকে তার স্বরচিত নিজের ইচ্ছেমত রচিত আইন বা অন্যের কাছ থেকে গৃহীত আইনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেএ ভাবে সে আপন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করেতাই জীবন যাপনের স্বার্থে সে প্রয়োজনীয় জীবন উপকরণ সংগ্রহের জন্যে আত্ম নিয়োগ করেকেননা, সে বিশ্বাস করে জীবন উপকরণ সংগ্রহ জীবন যাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় একটি বিধানসে রসনার তৃপ্তি সাধন এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে খাদ্য ও পানি পান করে থাকেকেননা, সৌভাগ্যপূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকার জন্যে খাওয়া ও পান করাকে সে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করেঠিক এভাবেই সে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের লক্ষ্যে পূর্বনির্ধারিত কিছু নিয়ম মেনে চলে

মানব জীবনের উপর প্রভুত্ব বিস্তারকারী উল্লিখিত বিধি বিধানের ভিত্তিমূল একটি বিশেষ মৌলিক বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিতআর তার উপরই মানব জীবন নির্ভরশীল

মানুষ এই সৃষ্টি জগতেরই একটি অংশ বিশেষ এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতের অস্তিত্বের মূল রহস্য সম্পর্কে প্রতিটি মানুষেরই একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা বা বিশ্বাস রয়েছেসৃষ্টি জগতের রহস্য সম্পর্কে মানুষের চিন্তা-ভাবনা বা ধারণার প্রকৃতি কেমন হতে পারে, একটু চিন্তা করলেই তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবেযেমন-যারা এ সৃষ্টি জগতকে শুধুমাত্র জড় বা বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে এবং মানুষকেও সস্পূর্ণরূপে (১০০%) জড় অস্তিত্ব (জন্মের মাধ্যমে জীবনের সূচণা এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তার ধ্বংস) বলে বিশ্বাস করে, তাদের অনুসৃত জীবন পদ্ধতিও জড়বাদের উপর ভিত্তি করেই রচিতঅর্থা স্বল্পকালীন এ পার্থিব জীবনের স্বাদ উপভোগই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যআর এ জন্যেই সমগ্র বিশ্বজগ ও প্রকৃতিকে বশে আনার জন্যে তারা তাদের জীবনের সকল প্রচেষ্টা ও সাধনা বিনিয়োগ করে

আবার অনেকেই (মূর্তি উপাসকরা) এ বিশ্ব জগ ও প্রকৃতিকে তার চেয়ে উচ্চতর ও মহান এক অস্তিত্বের (আল্লাহ্) সৃষ্টিকর্ম বলে বিশ্বাস করেতারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর অসংখ্য অনুগ্রহ মূলক দান ও নেয়ামতের মাঝে নিমজ্জিত রেখেছেন, যাতে মানুষ আল্লাহ্ প্রদত্ত অসীম অনুগ্রহ উপভোগ করে উপকৃত হতে পারেসৃষ্টি জগতের অস্তিত্বের রহস্য সস্পর্কে এ ধরণের বিশ্বাসের অধিকারী ব্যক্তিগণ এমন এক জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করেন, যার মাধ্যমে সর্বস্রষ্টা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং তাঁর ক্রোধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়কেননা, যদি তারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে সর্মথ হন, তাহলে তিনি তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন এবং তাদেরকে অসীম ও চিরন্তন অনুগ্রহ বা নেয়ামতের অধিকারীও করবেনআর মানুষ যদি তার কৃতকর্মের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার ক্রোধের সঞ্চার করে, তাহলে তারা আল্লাহ্ প্রদত্ত অনুগ্রহ বা নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে

অন্য দিকে যারা শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ছাড়াও মানুষের জন্যে এক অনন্ত জীবনে বিশ্বাসী, এবং মানুষকে তার পার্থিব জীবনের কৃত সকল ভাল ও মন্দ কাজের জন্যে দায়ী বলে বিশ্বাস করেফলে তারা কেয়ামত দিনের প্রতিও বিশ্বাসী, যে দিন মানুষকে তার ভাল মন্দ সব কাজের জবাবদিহি করতে হবে এবং ভাল কাজের জন্যে পুরস্কৃত করা হবে; এই কেয়ামতের দিনকে ইহুদী, খৃষ্টান, মাজুসী এবং মুসলমানরাও বিশ্বাস করেএ ধরণের বিশ্বাসের অধিকারী ব্যক্তিরা এমন এক জীবন পদ্ধতির অনুসরণ করে যা ঐ মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জশ্যপূর্ণ এবং মানুষের ইহকাল ও পরকালীন উভয় জীবনেই সৌভাগ্যবান হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেএ বিশ্ব জগতের সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কিত মৌলিক বিশ্বাসসমূহ এবং তার ভিত্তিতে রচিত অনুকরণীয় জীবন পদ্ধতির নীতিমালা সমষ্টির অপর নামই দ্বীনদ্বীনেরমধ্যে সৃষ্ট শাখা সমূহকে মাযহাববলা হয়উদাহরণ স্বরূপ যেমনঃ আহলুস্ সুন্নাহ্ ও আহলুত তাশাইয়ূ ইসলামের অন্যতম দুটি মাযহাব এবং খৃষ্টান ধর্মের মালেকানী ও নাসতুরী মাযহাবদ্বয়

ইতিপূর্বের আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, মানুষ দ্বীনের (এক শ্রেণীর মৌলিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে রচিত জীবন পদ্ধতি) প্রতি নির্ভরশীলতা থেকে (যদি সে আল্লাহতে বিশ্বাসী নাও হয়) আদৌ মুক্ত নয়সুতরাং দ্বীনমানুষের জন্যে প্রয়োজনীয় এমন এক জীবন পদ্ধতি, যা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ স্বরূপপবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী দ্বীনকে এড়িয়ে যাওয়া মানুষের জন্যে অসম্ভবএটা এমন এক পথ যা স্বয়ং মহান আল্লাহ্ মানব জাতির প্রতি প্রসারিত করেছেন এবং মহান আল্লাহতে গিয়েই এ পথের পরিসমাপ্তি ঘটেছেঅর্থা সত্য দ্বীন’ (ইসলাম) গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথেই ধাবিত হয়আর যারা সত্য দ্বীনকে গ্রহণ করেনি প্রকৃতপক্ষে তারা ভ্রান্ত পথই অনুসরণ করেছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে[1]


[1] মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ স্মরণ রাখ! আল্লাহর অভিশাপ অত্যাচারীদের উপর নিপতিত, যারা আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং তাতে বক্রতা সৃষ্টি করে। (-সুরা আল্ আরাফ, ৪৪ ও ৪৫ নং আয়াত।)

সূত্র: ইসলাম ও শিয়া মাযহাব

Leave A Reply

Your email address will not be published.