সামাজিক নৈতিকতা

0 269

সৎকর্ম করতে অন্যদেরকে নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও সৎকর্মপরায়ণ হও। তোমার হাত ও ভাষা দ্বারা অকল্যাণকর্ম প্রতিহত কর এবং পাপাচারীদের থেকে দূরে থাকার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করো। আর আল্লাহর পথে যথার্থভাবে প্রচেষ্টা করো। তিরস্কারকারীদের সমালোচনা যেন তোমাকে আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত না করে। যে কোন বিপদই হোক না কেন ন্যায়ের খাতিরে ঝাঁপিয়ে পড়ো এবং নিজের ধর্মীয় পরিচিতিকে পরিপূর্ণতায় উপনীত কর। কষ্ট সহ্য করার অভ্যাস করো; কারণ ন্যায়ের ব্যাপারে ধৈয্য চরিত্রের একটা উত্তম অভ্যাস।
 তোমার সকল কাজে নিজকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করো; কারণ এতে তুমি এক শক্তিশালী রক্ষাকর্তা ও নিরাপদ আশ্রয় পাবে। তোমার প্রভুর কাছে বিশুদ্ধভাবে প্রার্থনা করো; কেননা, দেয়া-না দেয়া শুধুমাত্র তাঁরই হাতে। আল্লাহর কাছে যত পার মঙ্গল প্রার্থনা করো। আমার উপদেশ বুঝতে চেষ্টা করো এবং সহজে এটাকে এড়িয়ে যেয়ো না; কেননা, সর্বোত্তম বাণী সেটা যেখানে উপকার পাওয়া যায়।
মনে রেখো! যে জ্ঞান কোন উপকারে আসে না তাতে কোন কল্যাণ নেই এবং যে জ্ঞান উপকারে আসে না তা অর্জনের কোন যৌক্তিকতা নেই।
সন্তান প্রতিপালনের গুরুত্ব
হে আমার পুত্র, যখন আমি লক্ষ্য করলাম যে, আমি যথেষ্ট বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছি এবং ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছি তখনই আমি তাড়াতাড়ি করে তোমার জন্য আমার এ অসিয়াত লিখতে মনস্থ করলাম এবং নৈতিক মূল্যবোধ সমূহ তোমার জন্য বর্ণনা করলাম।
পাছে আমি যা তোমার কাছে প্রকাশ করতে চাই তার পূর্বেই অতর্কিতে মৃত্যু আমাকে পাকড়াও করে অথবা আমার দেহের মতো বুদ্ধিমত্তাও দুর্বল হয়ে পড়ে অথবা তোমার কামনা-বাসনা অথবা দুনিয়ার ঝলক  তোমার প্রতি আক্রমণ করে ফলে সত্য গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ দুষ্কর হয়ে পড়ে। কেননা, একজন যুবকের হৃদয় উর্বর ভূমির মতো। যে কোন বীজ বপনের জন্য এটা অতি উপযোগী ক্ষেত্র।
তাই আমি তোমাকে প্রতিপালনের জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যাতে তোমার হৃদয় অনমণীয় হবার আগে অথবা তোমার মন অন্য কিছুতে পূর্ণ হবার আগে তুমি তোমার জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে অন্যদের অভিজ্ঞতার ফসল আয়ত্ত করতে পার এবং এসব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পার। এতে তুমি অভিজ্ঞতার অনুসন্ধানের কষ্ট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিপদ এড়িয়ে যেতে পারবে। এভাবে আমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তা তুমি জানতে পারছো। যে সকল বিষয় আমাদের কাছে গুপ্ত ছিল তাও তোমার কাছে যেন স্পষ্ট হয়ে যায়।
হে আমার পুত্র, যদিও আমি আমার পূর্ববর্তীগণের মতো জীবনযাপন করি নি তবুও আমি তাদের কাজকর্ম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং তাদের জীবনের ঘটনা প্রবাহের ওপর গভীর চিন্তা করেছি। আমি তাদের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এমনভাবে ভ্রমণ করেছি ফলে তাদের মতো এক জন হয়েগেছি।
তাদের ইতিহাস অধ্যায়ণ করে মনে হলো যেন আমি তাদের প্রথম ব্যক্তি থেকে শুরু করে শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত তাদের সাথে ছিলাম। সে জন্যই আমি তাদের আধারাচ্ছন্ন কাল থেকে আলোকিত ও সুখীজীবনের অধ্যায়টি আলাদা করতে সামর্থ হয়েছি এবং পতনকাল থেকে অগ্রগতিপূর্ণ কালটি চিহ্নিত করতে পেরেছি।
  সে সব বিষয়ের সর্বোত্তম অংশ তোমার জন্য বেছে নিয়েছি এবং তাদের উত্তম বিষয়গুলো তোমার জন্য সংগ্রহ করেছি এবং তাদের অপ্রয়োনীয় অংশটুকু বাদ দিয়ে দিয়েছি। একজন দয়ালু পিতা যেভাবে কল্যাণ সমূহ তার সন্তানের জন্য বেছে নেয়; আমি সে ভাবে তোমাকে উত্তমরূপে গড়ে তুলতে চাই। কেননা, যেহেতু তুমি বয়ঃপ্রাপ্ত হতে যাচ্ছো এবং এ দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চের প্রতি তুমি নবযাত্রী। অপরদিকে এই সময়ে তুমি পবিত্র অন্তর ও  স্বচ্ছ মনের অধিকারী।
সন্তান প্রতিপালনের পদ্ধতি
এজন্যই প্রশিক্ষণের শুরুতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মহান আল্লাহর কিতাব থেকে বিভিন্ন আয়াত ব্যাখ্যাসহ  তোমাকে শিক্ষা দেব। ইসলামী বিধি-বিধান, আদেশ-নিষেধ, হালাল-হারাম শিক্ষা দেব এর বাইরে আমি যাব না।
 তারপরও আমার ভয় হয় অন্য লোকেরা যেভাবে তাদের কামনা-বাসনা ও নানান মতের কারণে বিভ্রান্ত হয়েছে তোমার প্রতি তেমনটি আক্রমণ করে কিনা। যদিও এবিষয় সম্পর্কে আপাতত তোমাকে অবগত করাটা আমার পছন্দীয় নয় তারপরও তোমাকে সর্তক করা এবং সূদৃঢ় করাকে প্রাধান্য দিয়েছি। যাতে তুমি সামাজিক অধঃপতনের স্বীকার না হও। আমি আশা করি সরল-সঠিক পথে চলতে মহান আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন এবং স্থির সংকল্পে তিনি তোমাকে পথ-প্রদর্শন করবেন।
অতএব, আমি আমার এ অসিয়াত তোমার জন্য এভাবে সাজিয়েছি।
বৎস! জেনে রেখো, আমার এ অসিয়াত থেকে যা গ্রহণ করলে আমি সব চাইতে খুশি হবো তা হলো – আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহ্‌র ফরজ দায়িত্ব সমূহ এবং তোমার পূর্ব-পুরুষদের কর্মপন্থা অনুসরণ করা ও তোমার পরিবার পরিজনদের সৎকর্মশীল ব্যক্তিরা যেপথে চলেছেন সেপথে অবিচল থাক।  কেননা, তুমি তোমার নিজের সম্পর্কে যেভাবে বিবেচনা কর ঠিক তারাও এভাবেই দেখতো। তুমি যেভাবে নিজ সম্পর্কে চিন্তা কর; তারাও ঠিক এভাবেই তাদের ব্যাপারে চিন্তা করতো। তাদের প্রচেষ্টা এটাই ছিল যে জ্ঞান ও পরিচিতির ভিত্তিতে চলবেন। যেবিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি সেবিষয় থেকে নিজকে সরিয়ে রাখতেন।   তোমার মন যদি এটা গ্রহণ করতে না চায় এবং তাদের মতো করে জানার ইচ্ছা পোষণ করে। তাহলে চেষ্টা কর যাতে তোমার এ আবেদনগুলো যেন জ্ঞান ও উপলদ্ধিভিত্তিক হয়। এমনটি যেন না হয় যে ধারণাভিত্তিক বা শত্রুতার রেষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছো।
  পবিত্র মানবদের পথ পরিক্রম করার পূর্বে মহান প্রভুর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং তাদের পথে আগ্রহ সহকারে দায়িত্ব পালন কর। আর যেসব বিষয় তোমাকে সন্দেহ ও বিভ্রান্তিতে অবনত করে তা থেকে নিজকে সম্পূর্ণ দূরে রাখ।
 আর যখন তুমি নিশ্চিত হবে যে, তোমার হৃদয় স্বচ্ছ ও বিনয়ী হয়েছে এবং তোমার চিন্তা শক্তি  পূর্ণতা লাভ করে একগ্রতা অর্জন করতে পেরেছে এবং তোমার ইচ্ছাশক্তি একটা বিষয়ের এক বিন্দুতে স্থির হয়েছে তখন তুমি চিন্তা করবে আমি যা তোমাকে ব্যাখ্যা করেছি। আর যদি দেখ এ পথে তোমার কাংঙ্খিত উপকরণ সঞ্চয় করতে সামর্থ হওনি এবং তোমার চিন্তা-চেতনাকে প্রশান্ত অবস্থায় পাওনি তবে জেনে রেখো, তুমি অনিশ্চত ও বিপদজনক পথে চলছো এবং অন্ধকার পথে নিপতিত হচ্ছো। কেননা, একজন ধার্মিক মানুষ কখনো ভুল করে না এবং সন্দেহ ও দিশাহারা হয়ে পথ চলে না। এমতাবস্থায় পথ চলা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.