আধ্যাত্মিক বিষয়ে মনযোগী হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ

0 283

, আমার উপদেশসমূহ গভীরভাবে চিন্তা কর এবং মনে রেখো যিনি মৃত্যুর অধিকর্তা তিনি জীবনেরও মালিক এবং তিনিই সৃষ্টী ও মৃত্যু ঘটান। যিনি জীবনের বিনাশ ঘটান তিনিই আবার জীবনের সূচনা করেন এবং যিনি রোগে আক্রান্ত করেন আবার তিনিই আরোগ্য দান করেন।

জেনে রাখো, এ পৃথিবী অবিনশ্বর নয়, যেভাবে আল্লাহ্‌ চেয়েছেন সেভাবেই চলছে, বিভিন্ন কল্যাণ দানের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রে, পরকালে প্রতিদান দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং আরও যাকিছু তিনি ইচ্ছা করেছেন তুমি তা জান না।

 

যদি এবিশ্ব ও তার উত্থান-পতন সম্পর্কে কোন কিছু বুঝতে না পার, তাহলে সেটাকে তোমার অজ্ঞতার কারণ বলে মনে করো। কেননা, তুমি প্রথমেই জ্ঞানশূন্য অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছিলে। অতঃপর তুমি জ্ঞান অর্জন করেছিলে। এমন অনেক বিষয় আছে যা তুমি জান না [কিন্তু আল্লাহ জানেন] এবং এসব ক্ষেত্রে তোমার চিশক্তি দিশাহারা আর তোমার দৃষ্টিশক্তিও এখানে অকেজো। তারপরও তুমি ওগুলোকে জানবে! সুতরাং তাঁর কাছে আশ্রয় গ্রহণ কর যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে আহার দিচ্ছেন এবং তোমাকে সুসম অবয়বে গঠন করেছেন। তোমার ইবাদত কেবল তাঁরই জন্য হবে, তোমার একাগ্রতা একমাত্র তাঁর প্রতিই নিবদ্ধ থাকবে এবং তাঁকেই ভয় করবে।

 , জেনে রাখো! মহানবী (স.) যেভাবে মহিমান্বিত আল্লাহ্‌ সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন, আর কেউই এমন খোদা পরিচিতির জ্ঞান দেয়নি। সুতরাং নেতৃত্বকে মাথায় তুলে নাও এবং তোমার মুক্তির জন্য তাঁর পথনির্দেশনাকে মেনে চলো। নিশ্চয়ই, তোমাকে উপদেশ দিতে আমি আমার চেষ্টার ত্রুটি করবো না এবং নিশ্চয়ই তুমি চেষ্টা করেও সে অন্তর্দৃষ্টি তোমার কল্যাণের জন্য লাভ করতে পারবে না যা আমি তোমাকে দিতে পারবে।

! জেনে রাখো, তোমার প্রভুর কোন অংশীদার নেই। যদি থাকতো তবে তার নবীও তোমাদের কাছে আসতো এবং সে ক্ষেত্রে তুমি তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা, কাজ ও গুণাবলী জানতে পারতে। কিন্তু তিনি এক মাবুদ যেহেতু তিনি নিজেই তাঁর বর্ণনা করেছেন। তাঁর কর্তৃত্বে কেউ আপত্তি উত্থাপন করার নেই। তিনি অনাদি অতীত থেকে অনন্ত ভবিষ্যতে আছেন।

 তিনি সকল কিছুর পূর্বে আছেন এবং তাঁর কোন সূচনা নেই। তিনি সব কিছুর পরেও থাকবেন, তাঁর কোন সমাপ্তি নেই, তিনি এমনই শ্রেষ্ঠ যে পালনকর্তাও মহত্ত্বকে  চিন্তা ও অন্তর উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়।

যেহেতু এসব রহস্য তুমি বুঝতে পেরেছো তাই কার্জক্ষেত্রে তুমি এখন এমনই চেষ্টা করবে যা তোমার মত [জ্ঞাত] মানুষের চেষ্টা করা উচিত।

পরকালমুখী হওয়ার গুরুত্ব

 যে ব ! আমি তোমাকে এ দুনিয়ার অবস্থা, এর ধ্বংস এবং এটা একজনের হাত থেকে অন্যের হাতে ঘোরার বিষয় সম্বন্ধে অবহিত করেছি। পরকাল সম্পর্কে এবং মানুষের জন্য সেখানে কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাও আমি তোমাকে অবহিত করেছি; আর প্রত্যেকটির জন্য অনেক উদাহরণ উপস্থাপন করেছি। যাতে তুমি তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পার এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি শিখতে পার।

 যারা দুনিয়াকে বুঝতে পেরেছে তাদের উদাহরণ হলো সেসব যাত্রীর মতো যারা খরাপীড়িত ও কঠিন অবস্থায় বাস করছে এবং এ স্থান থেকে তারা এমন এক অঞ্চলে অবতরণ করবে যেখানে সমস্ত প্রকারের আরাম-আয়েশ ও উপভোগের সকল উপকরণ প্রস্তুত করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় তারা তাদের কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছার জন্য পথের সকল কষ্ট সহ্য করবে এবং বন্ধু-বান্ধবদের বিচ্ছেদ বেদনাকে তুচ্ছজ্ঞান করবে, ভ্রমণের কষ্ট  ও অন্ন কষ্ট সব মনেপ্রাণে সহ্য করবে। যাতে তারা সুবিসতৃর্ণ ও নিরাপদ অবস্থানে নিশ্চিন্তে শান্তিতে পা রাখতে পারে। তাই তারা তাদের এ দীর্ঘ যাত্রার কষ্ট থেকে কোন বেদনা অনুভব করবে না এবং এ যাত্রার কোন ব্যয়কে তারা অপচয় মনে করে না। তখন তাদের কাছে ঐ নিরাপদ আবাস ও শান্তির নগরে পৌছানোর মতো প্রিয় আর কোন কিছুই থাকে না।

অপরপক্ষে দুনিয়াদার মানুষদের উদাহরণ হলো সেসব লোকের মতো যারা শস্যপূর্ণ স্থান থেকে বিরক্ত হয়ে খরাপীড়িত এলাকায় চলে যেতে চায়। ফলে তাদের কাছে সেস্থান ত্যাগ করা অপেক্ষা বিস্বাদের আর কিছু নেই। আর তারা সেখানে যেতেই কষ্ট সহ্য করে।

সামাজিক সম্পর্কের মানদন্ড সমূহ

হে আমার সন্তান ! অন্য লোক ও তোমার মাঝে নিজেকেই আচরণের মাপকাঠি নির্ধারণ করো। সুতরাং তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করো এবং নিজের জন্য যা ঘৃণা কর অন্যের জন্যও তা ঘৃণা করো। কখনো অত্যাচার করো না যেভাবে তুমি নিজে কখনো অত্যাচারিত হতে চাও না।

 

অন্যের কল্যাণ করো যেভাবে তুমি অন্যের থেকে কল্যাণ পেতে চাও। তোমার নিজের জন্য যা মন্দ মনে কর অন্যের জন্যও তা মন্দ মনে করো। অন্যদের সেরকম ব্যবহারে তুমি সন্তুষ্ট হও, তোমার যে আচরণে তারা সন্তুষ্ট থাকে।

যা তুমি জান না সে বিষয়ে কথা বলো না, এমন কি যা তুমি অল্প জান সে বিষয়েও না। তোমার কাছে যা বলা তুমি পছন্দ কর না সে রকম কথা অন্যদেরও তুমি বলো না। মনে রেখো, আত্ম-প্রশংসা শোভনতার বিপরীত এবং প্রজ্ঞাশক্তির জন্য একটা রোগ। সুতরাং তোমার জীবনে সর্বাত্মক চেষ্টায় লিপ্ত হও এবং অন্য কারো জন্য সম্পদ গচ্ছিত করার চিন্তায় থেকো না। এভাবে যখন তুমি সঠিকপথে পরিচালিত হবে তখন যতটুকু পার আল্লাহর কাছে সকল ক্ষেত্রে বিনীত ও আনত হয়ো।

পরকালে যাত্রার পাথেয় সঞ্চয় ও প্রচেষ্টা

মনে রেখো, তোমার সম্মুখে অতিদীর্ঘ ও চরম কষ্টের পথ রয়ে গেছে এবং সে পথ যথাচিত প্রচেষ্টা ব্যতীত তুমি অতিক্রম করতে পারবে না। পাপ থেকে দূরে থাক ও সে পথের পাথেয় সংগ্রহ করো এবং অত্যাধিক প্রচেষ্টা করো নতুবা এপথ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না।

 তোমার ক্ষমতার বেশী বোঝা (দায়িত্ব) পিঠে নিয়ো না। কেননা বোঝার ভার তোমার জন্য শাস্তি হয়ে দাঁড়াবে। আর যখন কোন অভাবি লোকের দেখা পাবে যে তোমার বোঝাকে কেয়ামত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে এবং আগামীকাল তোমার প্রয়োজনে সে তা ফিরিয়ে দেবে; এ সুযোগ হাত ছাড়া না করে তোমার বোঝা ও পাথেয় তার ঘাড়ে চাপিয়ে দাও (বেশী বেশী দান কর) । তাই তোমার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে বেশী বেশী দান করে তার সাথে পাঠাও। কেননা, কেয়ামতের দিন হয়ত এমন মানুষের প্রয়োজনে ঘুড়ে বেড়াবে কিন্তু খুঁজে পাবে না।

তোমার স্বচ্ছল অবস্থায় কেউ যদি কিছু ঋণ নিতে চায় তবে এ সুযোগ হাত ছাড়া করো না। যা তোমার কঠিন ও অভাবের দিনে সে তোমাকে ফেরত দেবে।

, জেনে রাখো, তোমার সামনে অনেক দূরতিক্রম্য উপত্যকা রয়েছে। তাই [এ পথে যাত্রায়] ভারী বোঝা বহনকারী লোকের চেয়ে হালকা বোঝা বহনকারী লোক অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় থাকবে। [এ পথে যাত্রায়] দ্রুতগামীদের চেয়ে ধীরগামীরা খারাপ অবস্থায় পড়বে। এ পথে তোমার প্রানি-ক স্থান হলো বেহেশত; না হয় দোযখ। সুতরাং পরকালে পৌঁছানোর আগেই নিজের জন্য উপকরণ সমূহ সংগ্রহ কর। ওখানে যাওয়ার পূর্বে ঐ স্থান প্রস্তুত কর, [কেননা, মৃত্যুর পর কোন প্রকার প্রস্তুতি নিতে পারবে না] এবং এ দুনিয়ায় ফিরেও আসার কোন পথ থাকবে না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.