বরকতময় টাকা

0 296

একদিন আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আঃ) মহানবী (সাঃ) এর জন্য একটি জামা কিনতে বাজারে গেলেন। তিনি ১২ দেরহাম দিয়ে একটি জামা কিনে রাসূলের কাছে নিয়ে গেলেন। জামাটি হাতে নিয়ে নবীজী হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলেন, জামাটি কত দিয়ে কিনেছো ? হযরত আলী জবাবে বললেন, ১২ দেরহাম দিয়ে কিনেছি। তখন রাসূলেখোদা বললেন, জামাটি আমার পছন্দ হচ্ছে না। আমি এর চেয়ে কম দামে একটি জামা কিনতে চাই। তুমি বরং দোকানে গিয়ে দেখো যে, জামাটি ফেরত দিতে পারো কিনা ।
হযরত আলী জামাটি নিয়ে বাজারে গেলেন। দোকানদারকে তিনি বললেন, আমি এ জামাটি কিনেছিলাম রাসূলেখোদার জন্য। তিনি এর চেয়ে সস্তা একটি জামা চান। তুমি কি জামাটা ফেরত নিতে রাজি আছো ?
বিক্রেতা রাজি হলো। আলী (আঃ) টাকাগুলো নিয়ে রাসূলের কাছে এলেন। এরপর দুজন মিলে একসাথে বাজারের দিকে রওনা হলেন।

পথিমধ্যে তারা দেখতে পেলেন, এক ক্রীতদাসী রাস্তার ধারে বসে কাঁদছে। নবীজী তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছো কেন ? মেয়েটি জবাব দিলো, গৃহকর্ত্রী আমাকে চার দেরহাম দিয়ে বাজার করতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু দেরহামগুলো আমি হারিয়ে ফেলেছি। এখন খালি হাতে বাড়িতে যেতে আমার ভয় হচ্ছে। মালিক আমাকে নিশ্চয়ই মারধর করবে।
একথা শোনার পর রাসূল (সাঃ) মেয়েটিকে বারো দেরহাম থেকে চার দেরহাম দিয়ে বললেন, ”যাও, যা কেনার জন্য বাজারে এসেছিলে, তা কিনে নিয়ে বাড়ি চলে যাও।” এ কথা বলে নবীজী বাজারে গেলেন এবং চার দেরহাম দিয়ে একটি জামা কিনলেন এবং সেটি গায়ে দিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা হলেন।

বাড়ী আসার পথে তিনি এক লোককে দেখতে পেলেন যার পরনে কোন জামা নেই। নবীজী তার নতুন জামাটি খুলে লোকটিকে দিয়ে দিলেন। এরপর তিনি আবারো বাজারে গিয়ে বাকী চার দেরহাম দিয়ে আরেকটি জামা কিনলেন। বাড়ী ফেরার পথে তিনি আবারো দেখলেন যে, সেই ক্রীতদাসী মেয়েটি পথের পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে । রাসূলুল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার, তুমি এখনো বাড়ী যাওনি ?

মেয়েটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এসেছি অনেক আগে। কিন্তু টাকার হারানোর কারণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এখন বাড়ী গেলে আমার মনিব যদি আমাকে মারে-তাই ভয় পাচ্ছি। রাসূলেখোদা বললেন, ঠিকাছে। তোমার সাথে আমিও যাচ্ছি। তুমি আমাকে তোমার মনিবের বাড়িটা দেখিয়ে দাও।
ক্রীতদাসীকে সাথে নিয়ে লোকটির বাড়ীতে পৌঁছার পর রাসূলুল্লাহ বললেন, হে বাড়ীর বাসিন্দারা, আসসালামু আলাইকুম।

বাড়ী থেকে কেউই সালামের জবাব দিলো না। রাসূলেখোদা আবারো সালাম দিলেন। এবারো কোন জবাব এলো না। নবীজী তৃতীয়বার সালাম জানানোর পর জবাব এলো, ”আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” সালামের জবাব পেয়ে রাসূলেখোদা বললেন, তোমরা বাড়ীতে আছো অথচ প্রথম দুইবার আমার সালামের উত্তর দিলে না যে! তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাওনি ? বাড়ীর লোকেরা বললো,জী হুজুর ! প্রথমেই শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার সালাম বার বার শুনতে শুনতে ইচ্ছে করছিলো। কারণ আপনার সালাম তো আমাদের বাড়ির সবার জন্য রহমত ও কল্যাণ বয়ে আনবে। বাড়ীর লোকদের কথা শেষ হবার পর নবীজী বললেন, তোমাদের এ দাসীটি বাজারে গিয়ে দেরী ফেলেছে। তোমরা যেন তাকে কিছু না বলো, সে জন্য আমি তোমাদের এখানে এসেছি। বাড়ীওয়ালা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পদধুলি এ বাড়িতে ফেলেছেন এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আপনার শুভাগমনের কারণে এই মুহুর্তে আমি মেয়েটিকে মুক্ত করে দিলাম। বাড়ীওয়ালার কথা শুনে রাসূলেখোদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। তারপর বললেন, কত বরকতময় ঐ ১২টি দেরহাম-যা দুজনকে জামা পরালো আর একজন ক্রীতদাসীকে মুক্ত করে দিলো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.