হজ্ববাণী-১৪৩২ হিজরী

0 301

হজ্ববাণী-১৪৩২ হিজরী

  

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ওয়া সালাওয়াতুল্লাহি ওয়া তাহইয়াতিহি আলা সাইয়্যিদিল আনাম মুহাম্মাদানিল মুস্তাফা ওয়ালিহিত তাইয়্যিবিন,ওসাহবিহিল মুনতাজিবিন।

আধ্যাত্মিক পবিত্রতা ও সতেজতা নিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত জাঁকজমকের সাথে হজ্বের বসন্ত আবারো এসেছে, একত্ববাদ এবং ঐক্যের প্রতীক পবিত্র কাবাকে ঘিরে তাই মুমিনদের অন্তরগুলো পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। মক্কা, মিনা, মাশআর এবং আরাফাত এখন সেইসব সৌভাগ্যবান মানুষদের পদচারণায় মুখরিত যাঁরা “অআয্যিন ফিন্নাসি বিলহাজ্বি”র আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহা দয়ালু ও ক্ষমাশীল আল্লাহর আতিথ্য বরণ করে সম্মানিত হয়েছেন। এখানে সেই পবিত্র ঘর এবং হেদায়েতের কেন্দ্র অবস্থিত যেখানে রয়েছে স্পষ্ট ঐশী নিদর্শন এবং সবার মাথার পরে রয়েছে নিরাপত্তার বিস্তৃত ছাউনি। অন্তরকে জিকির ও বিনয়ের সাথে নির্মল যামযামে ধুয়ে ফেলুন, অন্তর্চক্ষুকে সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলোর দিকে মেলে ধরুন, প্রকৃত ইবাদাত ও বন্দেগির নিদর্শন একাগ্রতা এবং আত্মসমর্পিত মানসিকতা নিয়ে সেই মহান পিতার স্মৃতিকে স্মরণ করুন, যিনি আল্লাহর প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তাঁর ইসমাইলকে কোরবানীর স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্মৃতি বারবার মনের ভেতর জাগিয়ে তুলুন। এভাবেই মহান আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জনের সুস্পষ্ট যে পথ আমাদের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে তা চিনে নিন এবং মুমিন সুলভ পবিত্র লক্ষ্য বা নিয়্যতে সেই পথে পা বাড়ান।
মাকামে ইব্রাহিম হচ্ছে সেইসব সুস্পষ্ট নিদর্শনের একটি। কাবা শরিফের পাশে হযরত ইব্রাহিম (আ) এর পবিত্র পা রাখার স্থানটিই মাকামে ইব্রাহিমের একমাত্র নিদর্শন। মাকামে ইব্রাহিম তাঁর আত্মত্যাগ ও একনিষ্ঠতার প্রতীক; রিপুর তাড়না বা ভোগলিপ্সা, পিতৃত্বসুলভ সহৃদয় আবেগ এবং সমকালীন নমরুদি আধিপত্য, শের্ক ও কুফুরির মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ানোর শ্বাশ্বত প্রতীক।

মুসলিম উম্মাহর সামনে এখনো মুক্তির সেই দুই পথই খোলা রয়েছে। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী পর্যন্ত আল্লাহর সকল পয়গম্বর মানব জাতিকে যে পথে বা যে লক্ষ্যপানে পরিচালিত করেছেন এবং যে পথের অনুসারীদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও সৌভাগ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেই লক্ষ্যপানে ধাবিত হওয়া আজো আমাদের সবার পক্ষেই সম্ভব,যদি আমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকে সেই উদ্যম, একনিষ্ঠতা এবং সাহস ও বীরত্বপূর্ণ ইমান।
মুসলিম উম্মাহর এই বিশাল সমাবেশে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উত্থাপন খুবই প্রাসঙ্গিক। মুসলিম বিশ্বের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর অন্যতম হলো কয়েকটি প্রধান মুসলিম দেশে ইসলামী জাগরণ ও বিপ্লব। বিগত হজ্ব থেকে এবারের হজ্ব পর্যন্ত সময়ের মাঝে মুসলিম বিশ্বে এমন কিছু ঘটনা ঘটে গেছে যেসব ঘটনা মুসলিম উম্মাহর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুসংবাদবাহী। এইসব ঘটনা মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক ও বস্তুতান্ত্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি বৃদ্ধি করবে তাদের জাতীয় সম্মান ও মর্যাদা। মিশর, তিউনিশিয়া এবং লিবিয়ায় দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারী শক্তিগুলোর পতন ঘটেছে। আরো অনেক দেশেও এই গণজাগরণের ঢেউ বলদর্পী স্বৈরাচারদের প্রাসাদ ধ্বংসের হুমকি হয়ে দাড়িয়েঁছে।
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের নবীন এই খোলা পাতা এই সত্য ও বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে তোলে যে এইসব সুস্পষ্ট ঐশী নিদর্শনের মধ্যে আমাদের জন্যে রয়েছে সঞ্জীবনী শিক্ষা। মুসলিম উম্মাহর সকল হিসেব-নিকেশের ক্ষেত্রে, সকল কাজে কর্মে সেই শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগানো উচিত।
প্রথমেই,যেসব দেশ ও জাতি দশকের পর দশক ধরে বিদেশিদের নীতি ও আধিপত্যের শিকার হয়েছিল সেসব দেশে এখন এমন একটি প্রশংসিত যুব প্রজন্মের সৃষ্টি হয়েছে যারা আত্মবিশ্বাসে উদ্দীপ্ত হয়ে বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতায় যে-কোনো বিপদের সামনে অগ্রসর হয়ে যেতে প্রস্তুত। এই যুব প্রজন্ম আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় প্রবল শক্তিমত্তা ও উদ্যমের সাথে রুখে দাড়িয়েঁছে।
অপরদিকে এইসব দেশের সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠি পরোক্ষে এবং প্রত্যক্ষে দ্বীনকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে ব্যাপক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও ইসলাম সেসব দেশে লক্ষ্যণীয় পর্যায়ের প্রভাব ফেলেছে। ইসলাম সেখানে লোকজনের অন্তরে এবং মুখে হেদায়েতের আলো দান করেছে। লক্ষ লক্ষ জনতার কথায় এবং কাজে তাদের সমাবেশে,তাদের আচার আচরণে ইসলাম উচ্ছ্বসিত ঝর্ণার মতো সঞ্জীবনী সতেজতা দান করেছে। মিনারগুলো, মসজিদগুলো, তাকবির ধ্বনিগুলো এবং ইসলামী শ্লোগানগুলো এই সত্যকেই ফুটিয়ে তোলে। বিশেষ করে তিউনিশিয়ায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক নির্বাচন এই দাবির সপক্ষে একটি উজ্জ্বল ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ। নিঃসন্দেহে অপরাপর মুসলিম দেশেও যদি সুষ্ঠু এবং স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সেসব দেশেও তিউনিশিয়ার নির্বাচনের ফলাফলের ব্যতিক্রম হবে না।
এই এক বছরের ঘটনাপঞ্জি থেকে প্রমাণিত হয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহ জাতিগুলোর আশা আকাঙ্ক্ষা বা চিন্তা-চেতনায় এমন এক শক্তির সঞ্চার করে দিয়েছেন, যাকে প্রতিরোধ করার মতো শক্তি অন্য কারো নেই। এইসব জাতি আল্লাহর দেওয়া শক্তির বলে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে তাঁর সাহায্য গ্রহণ করতে সক্ষম।
আরো একটি শিক্ষনীয় বা লক্ষ্যনীয় দিক হল, সাম্রাজ্যবাদী সরকারগুলো ও এসব সরকারের শীর্ষে থাকা মার্কিন সরকার গত কয়েক দশকে নানা ধরণের রাজনৈতিক ও সামরিক কূটচালের মাধ্যমে এ অঞ্চলের সরকারগুলোকে অনুগত সরকারে পরিণত করতে সক্ষম হয়। এ অবস্থায় তারা মনে করত যে বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলের ওপর তাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমেই বাড়ানোর পথে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এখন এ অঞ্চলেই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় জোয়ার সঞ্চালিত হয়েছে। এটা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এ অঞ্চলে গণবিপ্লবের ফলে যেসব নতুন সরকার-ব্যবস্থা বা সরকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সেসব সরকার কখনোই অতীতের অবিচার বা জুলুমপূর্ণ সম্পর্ক বা ব্যবস্থাগুলোকে মেনে নেবে না। পূর্ণ স্বাধীনতা ও সম্মান অর্জনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ভূগোল নির্ধারণ বা ঠিক করবে এখানকার জাতিগুলোই।
আরো একটি শিক্ষনীয় বা লক্ষ্যনীয় দিক হল, পশ্চিমা শক্তিগুলোর বলদর্পী ও কপটতা বা শঠতাপূর্ণ চরিত্র এ অঞ্চলের দেশগুলোর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। মিশর, তিউনিশিয়া ও লিবিয়া- এই তিনটি দেশেই মার্কিন ও ইউরোপীয় সরকারগুলো কোনো না কোনোভাবে নিজেদের সেবাদাস প্রকৃতির কর্মকর্তাদের টিকিয়ে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, কিন্তু এসব দেশের জনগণের ইচ্ছার কাছে যখন তারা হার মানতে বাধ্য হল তখন তারা বিজয়ী জনগণকে বন্ধুত্বের কপট হাসি উপহার দিয়েছে।
এ অঞ্চলের গত এক বছরের ঘটনায় ফুটে ওঠা নানা বাস্তবতা ও খোদায়ী নিদর্শনগুলোর সংখ্যা এখানেই শেষ নয়। এ ধরণের আরো অনেক বাস্তবতা ও খোদায়ী নিদর্শন রয়েছে। চিন্তাশীল মানুষের জন্য এইসব বাস্তবতা ও ঐশী নিদর্শন সনাক্ত করা কঠিন নয়।
তবে এসব ঘটনা সত্ত্বেও গোটা মুসলিম উম্মাহকে, বিশেষ করে জেগে ওঠা জাতিগুলোর জন্য দুটি মৌলিক বিষয় জরুরি:
প্রথমত, দৃঢ় প্রতিরোধ অব্যাহত রাখতে হবে এবং দৃঢ় মনোবলকে দূর্বল হওয়া থেকে অত্যন্ত কঠোরভাবে রক্ষা করতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে মহানবী (সাঃ)কে (সুরা হুদ ও সুরা আশশুরা’য়) বলেছেন,
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“অতএব, তুমি এবং তোমার সাথে যারা তওবা করেছে সবাই সোজা বা দৃঢ় পথে চলে যাও-যেমন তোমায় হুকুম দেয়া হয়েছে এবং সীমা লঙ্ঘন করবে না, তোমরা যা কিছু করছ, নিশ্চয় তিনি তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন।” (১১-১১২)
فَلِذَٰلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ
“সুতরাং আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিন এবং হুকুম অনুযায়ী অবিচল থাকুন;”… (৪২-১৫)
এ ছাড়াও মহান আল্লাহ সূরা আল আরাফে হযরত মূসা (আঃ)’র ভাষায় বলেছেন,
قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ﴿الأعراف: ١٢٨﴾
“মূসা বললেন তার কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।”(৭-১২৮)

জেগে ওঠা জাতিগুলোর জন্য এ যুগে খোদাভীরুতা বা তাকওয়ার বড় দৃষ্টান্ত হল এটা যে তারা যেন তাদের পবিত্র আন্দোলনকে স্থগিত না করেন এবং বর্তমান সময়ে অর্জিত সাফল্যগুলো নিয়ে ব্যস্ত না থাকেন। এটা খোদাভীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং যারা এর অধিকারী হবে তারাই মঙ্গলময় ভাগ্যের অধিকারী হবে বলে মহান আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর এবং এসব বিপ্লবের ক্ষতিগ্রস্ত শক্তিগুলোর নানা ধোকা ও প্রতারণার ব্যাপারে সদা-সতর্ক থাকা। তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, বরং সব ধরণের রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থ শক্তি ব্যবহার করবে যাতে এসব দেশে আবারও তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। প্রলোভন, হুমকি ও ধোকা দেয়া তাদের অস্ত্র বা মাধ্যম। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে এসবের ফাঁদে পড়ে শত্রুদের সেবকে পরিণত হন। তাই যুব সমাজ, বুদ্ধিজীবি ও আলেম সমাজকে অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সচেতন হতে হবে।
যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে সেসব দেশের নতুন রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কাফের ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ ও প্রভাব ফেলার চেষ্টা সবচেয়ে বড় বিপদ। তারা এসব নতুন ব্যবস্থাকে গণমুখী ও ইসলামী প্রকৃতিসম্পন্ন হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। এসব বিপ্লবী দেশের উন্নতি ও সম্মানের প্রত্যাশী সব দেশপ্রেমিক এবং নিবেদিতপ্রাণ নাগরিকের উচিত দেশের নতুন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ইসলামী ও গণমুখী করার জন্য সক্রিয় হওয়া।
এক্ষেত্রে সংবিধানগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐক্য, মাজহাব, গোত্র ও জাতিগুলোর অভিন্নতার প্রতি স্বীকৃতি ভবিষ্যত বিজয় বা সাফল্যগুলোর শর্ত।
মিশর, তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার জনগণসহ জেগে ওঠা অন্য জাতিগুলোর এটা মনে রাখা উচিত যে মার্কিন সরকারসহ পাশ্চাত্যের অন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর জুলুমের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ হল বিশ্বে শক্তির ভারসাম্যকে তাদের অর্থাৎ জনগণের পক্ষে নিয়ে আসতে হবে। মুসলমানরা যদি সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে তাদের সমস্যা সমাধান করতে চায় তাহলে তাদেরকে বৃহৎ শক্তিগুলোর মত ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে মুসলমানদের একতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। এ কথাটি মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ)’র একটি অবিস্মরণীয় উপদেশ।
মার্কিন সরকার ও ন্যাটো নিকৃষ্ট একনায়ক গাদ্দাফির অজুহাতে মাসের পর মাস ধরে লিবিয়া ও সেখানকার জনগণের ওপর বোমা বর্ষণ করেছে। লিবিয়ার জনগণের বীরোচিত জাগরণের আগে গাদ্দাফি ছিল পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। পাশ্চাত্যের সরকার প্রধানরা গাদ্দাফির সাথে আলিঙ্গন করত এবং তার হাত দিয়েই লিবিয়ার সম্পদ চুরি করত। গাদ্দফিকে নতজানু করার জন্য তারা তার হাতে দোলা দিত বা তাকে চুমো খেত। অথচ গণ-জাগরণের পর ওই পাশ্চাত্যই গাদ্দাফিকে অজুহাত বানিয়ে লিবিয়ার পুরো অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিশ্বের কোন্ সরকারটি লিবিয় জনগণের ওপর ন্যাটোর গণহত্যা ও দেশটিকে বিরানভূমিতে পরিণত করার ন্যাটোর ধ্বংসযজ্ঞ রুখতে পেরেছে? যতদিন পাশ্চাত্যের রক্তপিপাসু ও হিংস্র শক্তিগুলোর দাত ও নখগুলো ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হবে না ততদিন মুসলিম দেশগুলোর জন্য এ ধরণের বিপদকে অপ্রত্যাশিত বলা যাবে না। তাই মুসলিম দেশগুলোর একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জোট গঠন না করা পর্যন্ত এসব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
পাশ্চাত্য, মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদ এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দূর্বল। অর্থনৈতিক সংকট, আফগানিস্তান ও ইরাকে একের পর এক ব্যর্থতা, মার্কিন জনগণের ব্যাপক প্রতিবাদ ও গণ-অসন্তোষসহ পাশ্চাত্যের অন্য দেশগুলোর নানা সংকট দিনকে দিন বিস্তৃত হচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ও লেবাননি জনগণের প্রাণপন সংগ্রামসহ ইয়েমেন, বাহরাইন ও আরো কয়েকটি মার্কিন কর্তৃত্বাধীন দেশের জনগণের সাহসী জাগরণ বা অভ্যুত্থান- এসবই মুসলিম উম্মাহর জন্য, বিশেষ করে বিপ্লবী দেশগুলোর জন্য বড় ধরণের সুসংবাদ বহন করছে। মুসলিম বিশ্বের মুমিন নারী-পুরুষ, বিশেষ করে মিশর, তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার মুমিন জনগণ আন্তর্জাতিক ইসলামী জোট গঠনের এই সুযোগকে অন্যদের চেয়ে ব্যাপক মাত্রায় কাজে লাগাতে পারবেন। বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে এবং তাঁর সাহায্যের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। মুসলিম উম্মাহর সামনে ইতিহাসের যে প্রশস্ত দিগন্ত বা পাতা খুলে গেছে তাকে স্থায়ী গৌরবের নানা উপাদান- যা কিনা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর সাহায্য লাভের পরিবেশ সৃষ্টি করে – সেগুলা দিয়ে সুসজ্জিত করতে হবে। ওয়াসসালামু আলা এবাদুল্লাহি সসালিহিন
সাইয়েদ আলী খমেনেয়ী । ২৯ শে জ্বিলক্দ ১৪৩২

Leave A Reply

Your email address will not be published.