ইমাম ও ইসলামী বিপ্লব ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের বাঙ্কার

0 578

images9FWP927F
ইমাম ও ইসলামী বিপ্লব ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের বাঙ্কার
মুসলমানদের দূর্বলতার কারণ
(অনৈক্য ও সরকারগুলোর দূর্বলতা)

ইসলামী দেশসমূহের সরকারগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হতো!
‘মুসলমানরা যদি কুরআনের এই হুকুম , তোমরা তাদের মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে । এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে’। ( আনফাল ঃ ৬০)
অনুসারে আমল করতো এবং ইসলামী সরকার গঠনপূর্বক ব্যাপাক তদারকিসহ যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি রাখতো তাহলে গুটিকতেক ইয়াহুদী আমাদের ভূখন্ডগুলোকে দখল এবং মসজিদুল আকসাতে অগ্নি সংযোগ ও এর ধ্বংস সাধন করতে সাহস পেতো না এবং জনগণও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতো না। এসব এজন্যই হয়েছে যে, মুসলমানরা আল্লাহর হুকুম পালনে ময়দানে নামেনি এবং যথোপযুক্ত ও ন্যায়নিষ্ঠ সরকার কায়েম করেনি। ইসলামী দেশসমূহের কর্মকর্তারা যদি ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি হতো এবং ইসলামের হুকুম-আহকাম বাস্তবায়ন করতো তাহলে নিজেদের ছোটখাট মতবিরোধকে ভুলে যেতো, দুস্কর্ম ও অনৈক্য সৃষ্টি থেকে হাত গুটিয়ে রাখতো, পরস্পর সংঘবদ্ধ হতো ও একক শক্তি গঠন করতো। এতে আমেরিকা, বৃটিন ও অন্যান্য বিদেশী শক্তির অনুচর গুটিকতেক হতভাগা ইয়াহুদী এসব দুস্কর্ম করতে পারতো না, আমেরিকা ও বৃটেন এদের যতই পৃষ্ঠপোষকতা করুক না কেন। মুসলমানদের উপর শাসনকর্মে রত লোকদের নপুংসুতার কারণেই এটা হচ্ছে।
ইমামের বেলায়েতে ফকীহ্ গ্রন্থ, ৩৮পৃ ঃ।

ইসলামী দেশসমূহের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনৈক্যই ফিলিস্তিনের সংকট সৃষ্টির কারণ
ইসলামী দেশসমূহের প্রধানরা যদি নিজেদের অনৈক্য থেকে বিরত হয়, ইসলামের সুমহান শিক্ষা-দীক্ষার সাথে পরিচয় লাভ করে এবং ইসলামের দিকে ঝুকে পড়ে তাহলে সাম্রাজ্যবাদের কাছে এভাবে অবমাননা ও দাসত্ব বরণ করতে হবে না। ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনৈক্যের কারণেই ফিলিস্তিনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং এর সমাধান মিলছে না। এতাসব বিশাল দেশের সত্তর কোটি মুসলমান যদি রাজনৈতিক প্রবৃদ্ধির অধিকারী হতো এবং একতাবদ্ধ হয়ে এক কাতারে সংঘবদ্ধ হতো তাহলে বড় বড় সাম্রাজ্যবাদী দেশের পক্ষেই তাদের দেশগুলোতে অনুপ্রবেশ করা সম্ভব হতো না- সাম্রাজ্যবাদের অনুচর মুষ্টিমেয় ইয়াহুদী তো কোন্ ছাড়!
ইমামের বাণী ; ৮/২/১৯৬১খৃঃ, ছহিফা ১খন্ড, ১৫৭ পৃ ঃ।

ইসলামের প্রতি ভরসা না করার কারণেই এতো বালা-মসিবত
ইসলামী জাহানের সরকারগুলো ও মুসলমান জাতিসমূহ যদি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উপর ভরসা না করে ইসলামের উপর ভরসা করতো এবং কুরআনে কারীমের আলোকাজ্জল ও মুক্তিদানকারী শিক্ষা-দীক্ষাকে নিজেদের দৈনন্দিন আদর্শের পরিণত ও বাস্তবায়ন করতো তাহলে আজ যায়নবাদী আগ্রাসীদের গোলামীবরণ করতে হতো না, আমেরিকার ফান্টমের ভয়ভীতি থাকতো না এবং সভিয়েত রাশিয়ার আপোষকামী ও শয়তানী প্রতারণাসমূহের জালে আবদ্ধ হতে হতো না।
ইসলামী জাহানের সরকারগুলোর কুরআনে কারীম থেকে দূরে অবস্থানই ইসলামী উম্মাহএক এই লাঞ্চনাকর অন্ধকার পরিস্থিতির শিকার করেছে এবং ইসলামী জাতিসমূহ ও দেশগুলোর ভাগ্যকে বামপন্থি ও ডানপন্থী সাম্রাজ্যবাদের আপোষকামী রাজনীতির জটাজালে আবদ্ধ করেছে।
ছাত্রদের প্রশ্নের জবাবে ইমাম; ১৩/৭/১৯৭২ খৃ ঃ, ছহিফা, ১খন্ড, ১৮৬পৃ ঃ।

কোন কোন শীর্ষনেতার গোলামী
ফিলিস্তিন এখন সংকটের মধ্যে নিপতিত। ইসলামী জাহানের কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের মতভেদ ও দাসত্ববৃত্তি এতো সব খনিজ, ধনÑসম্পদ ও প্রাকৃতিক সুযোগÑসুবিধা থাকা সত্ত্বেও সত্তর কোটি মুসলমানকে সাম্রাজ্যবাদ ও যায়নবাদের সুযোগÑসুবিধা ও অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে এবং অন্যান্য বিদেশীদের হাতকে খর্ব করতে অনুমতি দিচ্ছে না। বিদেশীদের প্রত্যক্ষ প্রভাবÑপ্রতিপত্তির মুকাবিলায় আরব বিশ্বের কোন কোন সরকারের স্বার্থপরতা, দাসত্ব ও আত্মসমপর্ণই কোটি কোটি আরব জনতাকে ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে ফিলিস্তিন ভূখন্ড মুক্ত করার পথে বাধা দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে ইমামের বাণী, ১০/১১/১৯৭২ খৃঃ, ছহিফা, ১ম খন্ড, ১৯২ পৃঃ।
সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য বিস্তারের কারণ কতিপয় রাষ্ট্রপ্রধানের দুর্বলতা,আত্মসমর্পণ অথবা দাসত্ব
যেমনি করে বারবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এসেছি, ইসলামী উম্মাহ যদি সজাগ ও নিজেদের দায়Ñদায়িত্ব সম্পর্কে অবগত না হয়, ইসলামের আলেম সমাজ যদি দায়িত্ববোধ অনুভব না করেন, উঠে না দাঁড়ান এবং যদি প্রকৃত ইসলাম, যা একতার ফল, বিদেশীদের মুকাবিলায় সকল মাজহাবের মুসলমানদের চালিকা শক্তি এবং ইসলামী জাতিসমূহ ও দেশগুলোর সৌভাগ্য ও স্বাধীনতার জিম্মাদার, সেই ইসলাম যদি একইভাবে বিদেশী শক্তির অনুচর ও গোলামদের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী কালো পর্দার আড়ালে অবগুন্ঠিত থাকে এবং মুসলমানদের মাঝে যদি অনৈক্য ও মতভেদের আগুন প্রজ্বলিত থাকে তাহলে ইসলামী উম্মার জন্য আরো অন্ধকারময় ও লাঞ্চনাকর সময় সামনে রয়েছে এবং ইসলামের ভিত্তি ও কুরআনের আহকামকে ধ্বংস ও বিনষ্টকারী বিপদ ঘনিয়ে আসবে।
কুরআন মজিদ ও ইসলামের মুক্তিদানকারী হুকুমÑআহকামের প্রতি ইসলামের দুশমন ও আন্তর্জাতিক আগ্রাসীদের সর্বমুখী আগ্রাসন প্রচন্ডভাবে অব্যাহত রয়েছে এবং ইসলামী জাহানের বেশীর ভাগ সরকার নিজেদের দুর্বলতা কিংবা দাসত্ববৃত্তির কারণে ঐ সমস্ত দুশমনদের জঘন্য ও বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ নীল নকশা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এসব ক্রীতদাসের অনেকেই হয়তো মুখে মুখে ইসলামের শ্লোগান দেয় অথবা অথবা তথাকথিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার অধিবেশন বসায়। এদের কেউ কেউ আবার নিজ নিজ দেশের ধর্মহীনতা তথা ধর্মনিরপেক্ষতার ধুয়া তুলে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে। এরা জেনে হোক না জেনে না জেনে হোক একই পথ ধরে চলছে আর তাহলো ইসলামের দুশমনদের জঘন্য সাম্রাজ্যবাদী নীলÑনকশার বাস্তবায়নÑযার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো ইসলামের এই লাঞ্চনাকর অবস্থা অব্যাহত রাখা, ইসলামী জাতিগুলোর জানমাল ও ভূখন্ডের উপর ইসরাইলের প্রভুত্ব বলবৎ থাকা, ইসলামী জাহানে সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য ও প্রভুত্ব চিরকালের জন্য বহাল থাকা, ইসলামী দেশগুলোতে ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, ইসলামী জাতিসমূহ ও রাষ্ট্রগুলোকে সব সময় আন্তর্জাতিক আগ্রাসীদের পদতলে অবহেলিত, লাঞ্চিত ও গোলাম হয়ে থাকা, সাম্রাজ্যবাদী অপরাধীদের করুনা ও ভিক্ষার প্রতি মুসলিম জাতিগুলোর হাত পেতে রাখা এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, শান্তি ও নিরাপত্তার মুখ দর্শন থেকে তাদের সব সময় বঞ্চিত থাকা।
ছাত্রদের প্রতি ইমামের জবাব, ১৫/৩/১৯৭৩ খৃঃ, ছহিফা, ১ম খন্ড, ১৯৫Ñ১৯৬ পৃঃ।
সরকারগুলোর চেতনাহীনতা দুঃখের বিষয়
মুসলিম বিশ্বের বেশীর ভাগ দেশই সীমাহীন সমস্যা ও সংকটে পতিত। লেবাননের কথাই ধরুন, দেশটি এক মুষ্টি মাটিতে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের উপর বিশেষতঃ শিয়া জনতার উপর জানÑমালের কী ক্ষতিই ঘটেছে! বিদেশী ও এদের অনুচররা পোড়ামাটি নীতির যুদ্ধে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণকে অস্তিত্বহারা করেছে। ফিলিস্তিনের দিকে তাকিয়ে দেখুন, দেখুন সেখানকার ক্রমবর্ধমানে সমস্যাদি। যে বিষয়টি চরম দুঃখের তাহল সরকার ও দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের কম আক্কেল ও চেতনাহীনতা । এরা বিদেশীদের উস্কানীতে পরস্পরের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নামে।
ইমামের বাণী; ৭/১১/১৯৭৩ খৃঃ, ছহিফা ১খন্ড ২১০পৃ ঃ।

ইসলামী সরকারগুলো বেশীর ভাগই অনার্থক আলোচনায় মশগুল
লেবাননের দুঃখজনক অবস্থা এবং দক্ষিন লেবাননে আমাদের দ্বীনি ভাইদের উপর আপতিত সংকট চরম দু ঃখ ও আফসোসের কারণ হয়েছে । বির্পযয়ের ক্যান্সার শিশু নামক দু®কৃতকারী ইসরাইলের খুন পিপাসু হাজার হাজার সৈন্য অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাঙ্ক- কামান ও বিমানবহর নিয়ে আমাদের ভাইদের কেন্দ্র দক্ষিণ লেবাননে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, মুজলুম বাসিন্দাদের তাদের ঘরবাড়ী থেকে উচ্ছেদ ও তাদের ঘরবাড়ী ধংস করেছে ও ফসলের মাঠে আগুন দিয়েছে । আর ইসলামী সরকারগুলো ও অপরাধযজ্ঞের সামনে বেশীরভাগই নির্বিকার রয়েগেছে। শুধু তাই নয়, উপরুন্ত কেউ কেউ অপরাধীদের সহযোগী হয়েছে কিংবা অনর্থক ও নিস্ফল বৈঠক ও আলোচনায় লিপ্ত হয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াইয়েরত ফিলিস্তিনী বীর মুজাহিদদের একা ফেলে দিয়েছে। সম্ভবতঃ এটি পরাশক্তিবর্গের চক্রান্তেরই প্রদর্শনী । এখন আমাদের ভাইয়েরা ও তাদের নিরাশ্রায় সন্তানেরা আগুনে জ্বলেপুড়ে ধ্বংস হচ্ছে এবং আরো বহু বিপদের সম্মুখীন হয়েছে।
লেবাননের দু ঃখজনক পরিস্থিতি র ব্যাপারে ইমামের বাণী; ২২/৩/১৯৭৮খৃ ঃ, ছহিফা, ২খন্ড, ১২৩ পৃ ঃ।

সবাই এক হলে আমেরিকা কিছুই করতে পারবে না
এতোসব অনৈক্য ও মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে ইসলামী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নয়তো এদের অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে। ঐ সমস্ত কারণেই এরা পরস্পর সমঝোতা করতে পারছেনা এবং সকলে মিলে এমন এক উত্তাল তরঙ্গমালার সাগরে পরিণত হতে পারছে না যার সামনে যাকিছু আসবে সবই ভেসে যাবে। ফিলিস্তিনে একমুষ্টি ইয়াহুদী ও যায়নবাদী দশ কোটি জনতার অধিকারী আরব দেশগুলোকে এমন অবস্থায় ফেলেছে যে, ওদের অনেকে এর (ইসরাইল) কাছে আত্মসমর্úণ করেছে এবং বাকী যারা আত্মসর্মপণ করেনি তারাও কিছু করতে পারছে না। এখন বহু বছর হলো ইসরাইল ফিলিস্তিনী ভূ-খন্ডগুলো জবরদখল করে রেখেছে। কিন্তু এতোসব আরব জনতা ও আরব রাষ্ট্র এতোটুকুন মুরোদের অধিকারী নয় যে, ফিলিস্তিনকে মুক্ত করবে। অজুহাত দেখাচ্ছে যে, আমেরিকা এর সর্ম্থক। বড়ই নপুংসুকের দল তোমরা, সামান্য মুরোদও নেই।
এই যে দশকোটি আরব জনতার শক্তি তাযদি সংঘবদ্ধ হয় তাহলে আমেরিকা কোন কাজই করতে পারবে না, ইউরোপও কিছু করতে পারবে না, কেউই কোন কাজ করতে পারবে না। কিন্তু আরব দেশগুলো এক ও সংঘবদ্ধ নয়। ‘হ্যাঁ’ ওরা যে কাজটি করে যাচ্ছে তাহলো এরা যেন এক না হয়। ওরা যে কাজ করছে তাহলো , যখনই ওরা ঘ্রাণ পায় যে, আরব সরকারগুলো এক ও ঐক্যবদ্ধ হতে যাচ্ছে তখন ওরা এমন কাজ করে যাতে ওদের একতা ভেঙ্গে পড়ে। যেমন, মিশরের রাষ্ট্রপতিকে আমেরিকায় নিয়ে যায়, তার সাথে চুক্তি করে, তাকে এমন পথে নিয়ে যায় যাতে অন্যরা সেপথে যেতে না পারে। আরেক জনকে নিয়ে যায় আরেক পথে যাতে অন্যরা তাকে খুঁেজ না পায়। এটা আমাদের নির্বুদ্ধিতার কারণেই হ্েচছ। আমাদের মুসলমানদেতর অক্ষমতার কারণেই এভাবে বন্দী হয়ে আছি, আধিপত্যের শিকলে আবদ্ধ হয়ে আছি। আর এ সুযোগে প্রাচ্যের সকল স্বার্থকে আমেরিকা, রাসিয়া ও এদের মতো অন্যরা লুটে নিয়ে যাচ্ছে।
ইমামের ভাষণ; ৩১/১০/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা ২খন্ড, ২৪৬পৃঃ।
সরকারগুলো স্বাধীনতা ও একতা সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে
আরব সরকারগুলোর ব্যাপারে আমার অভিমত সন্তোষজনক নয়। আরব সরকারগুলো নিজেদের স্বাধীনতা প্রতিরক্ষা করতে পারেনি এবং ইসরাইলকে মূলোৎপাটনের জন্য নিজেদের মাঝে একতা প্রতিষ্ঠিত করতেও সক্ষম হয়নি। নিজেদের অনৈক্য এবং কোন কোন আরব সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার ফলেই যায়নবাদীরা এখানে অবস্থান গড়তে ও নিজেদের শক্তিশালী করতে পেরেছে । আর সম্প্রতি দুঃখজনকভাবে মিশরের প্রেসিডেন্ট এ অপকর্ম সম্পন্ন করতে চলেছে (ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি)। সম্ভবতঃ ওদের কেউ কেউ তুলনামূলকভাবে মন্দ নয়; কিন্তু সামগ্রিকভাবে এরা একটি সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে যার মাধ্যমে যেমনি সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে নাজাত পেতো, তেমনি ইসরাইলের মতো সাম্রাজ্যবাদের অনুচরদের হাত থেকেও রেহাই পেতো। তবে আরব জাতিগুলো তথা জনসাধারণ সকলেই আমাদের ভাই এবং আমরা তাঁদের সাথে ভাইয়ের মতো আচরণ করবো।
মিশরীর সাংবাদিকের সাথে ইমামের সাক্ষাৎকার, ১২/১১/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা, তৃতীয় খন্ড, ১১৮Ñ১১৯ পৃঃ।
মুসলমানরা কাজের হলে ইসরাইলের সামনে লাঞ্চিত হতে হতো না
এটা স্বীকার করতেই হবে যে, ইমলামের দুশমনেরা অথাৎ ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ ও মুসলমানদের উপর যারা আধিপত্য বিস্তার করেছে এরা কাজের লোক ছিল, বুলিসর্বস্ব নয়। অথচ এ দিক দিয়ে মুসলমানরা প্রথম হতেই কথার পন্ডিত ছিল, কাজের নয়। এরা ভালো করে কবিতা বলতো, বির্তকের ঝড় তুলতো এবং যখনই সমস্যা-সংকটের বিষয় উত্থাপন করা হতো তখন বেশ ভালো করেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতো। কিন্তু কথার বাইরে পা বাড়াতো না, কাজে নামতো না।
এরা যদি কথার চৌহদ্দির বাইরে আসতো তাহলে কে বিশ্বাস করতে পারতো যে, ইসরাইলের কাছে দশ কোটির অধিক আরব জনতা এভাবে লাঞ্চিত অপদস্থ হবে? কোন মানুষ ধারণাও করতে পারে না যে, এদের সবকিছু থাকা সত্ত্বেও এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর কাছে পাশ্চাত্যের নির্ভরশীলতা থাকা সত্ত্বেও কি করে এরা (আরব) ওদের আধিপত্যের শিকার হলো। প্রচুর জনশক্তি ও বিপুল সম্পদ ভান্ডার থারা সত্ত্বেও যে এ রকম অবস্থা এর কারণ আর কিছুই নয় যে, ইসলামের প্রথম যামানায় যে মনোবল ছিলো ও যা সকল বিজয়ের উৎস ছিলো সেই মনোবলই আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
ইসলামী দেশ সমূহের রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে ইমামের ভাষণ; ১০/৭/১৯৭৯খৃঃ, ছহিফা ৮খন্ড, ৯৫পৃঃ।
মুসলমানদের দুঃখ-দূর্দশার কারণ
মুসলমানদের দুঃখ-দূর্দশার বেশীরভাগই ইসলামী দেশগুলোর সরকারসমূহ থেকে উৎসারিত। ইসলামী সরকারগুলোর উচিত একই আওয়াজ তোলা, এক চিন্তা করা, সবাই একই দ্বীনের অধিকারী। সবাই দেখতে পাচ্ছে যে, তাদের পারস্পারিক অনৈক্য থেকে অন্যরা ফায়েদা লুটছে। এরা ব্যাথা কি তা জেনেও ঔষধের পিছনে যাচ্ছে না। বরং দিন দিন এদর অনৈক্য বেড়েই চলেছে ও পাস্পারিক বিচ্ছিন্নতা আরো ব্যাপক হচ্ছে। বৃহৎ সরকারগুলোর কথাও এ্টাই যে, আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকি, বরং পরস্পরের শত্রু হই এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে লিপ্ত হই। এ সুযোগে ওরা ফায়েদা লুটুক। মুসলমানদের উচিত নিজেদের ব্যাপারে মৌলিক চিন্তা করা। মুসলিম সরকারগুলোর উচিত মৌলিক চিন্তা-ভাবনা করা। তাদের এ চিন্তা করলে চলবে না যে, যে ক’দিন ক্ষমতায় আছে ভোগ-বিলাসে কাটিয়ে দেবে এবং নিজেদের দেশের উপর ক্ষমতার দম্ভ চালিয়ে যাবে। তাদের উচিত অনৈক্যের সংকটের উপশম ঘটানো । নতুবা আর কোন উপায় নেই। অযথা সভা-সমীতি ও সম্মেলন করে কোন ফায়েদা হবে না। আমি আল্লাহ তায়লার কাছে এ মুনাযাত করছি সাধারণ ভাবে মুসলমানদের ও বিশেষ করে মুসলিম সরকারগুলোকে সজাগ-সচেতন করুন যাতে তারা তাদের সমস্যাÑসংকটের উপর বিজয়ী হতে পারে এবং ইসলাম তার আসলরূপে ইসলামী দেশগুলোতে বাস্তবায়িত হয়Ñঠিক যে রকম ইসলামের প্রথম যামানায় ছিল।
মুসলমানদের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সরকার ও জনগনের সমস্যা। আপনারাও যেমন অবগত আছেন এবং আমরাও যতটুকু জানি, সরকারগুলো তাদের জাতিগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জনগণ তথা জাতিগুলোর সাথে ওসব সরকারের সম্পর্ক ও লেনদেন দুশমনের সাথে দুশমনের লেনদেনের সম্পর্ক। সরকারগুলোর প্রতি জনগণ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে থাকে। সরকার চায় জনগণের উপর বিষয়াদি চাপিয়ে দিতে। এ কারণে জাতিসমূহ সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষক নয় বরং দুশমনের সাথে যে রকম আচরণ করে থাকে সে রকম আচরনই করে। আর এ বিষয়টিই সরকারগুলোর দুর্বলতার কারণ।
ইসলামী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সমাবেশে ইমামের ভাষণ, ১০/৭/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, ৮ম খন্ড, ৯৫Ñ৯৬ পৃঃ।
অনৈক্যের রহস্য
আমার কাছে একটি বিষয় রহস্য হয়ে রয়ে গেছে। আর তা হলো সকল ইসলামী সরকার ও সব ইসলামী জাতি অবগত আছে যে, দুর্দশা ও ব্যর্থতা কি। তারা সবাই জানে যে, বিদেশী হাতগুলোই তাঁদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে; তারা দেখতে পাচ্ছে যে, এই অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতাই তাদের দূর্বলতা ও ধ্বংস ডেকে আনছে; তারা দেখতে পাচ্ছে যে, ইসরাইল নামক একটি ঠুনকো সরকার মুসলমানদের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে আছে। মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতো এবং প্রত্যেকে এক বালতি করে পানি ইসরাইলের দিকে ঢেলে দিতো তাহলে বন্যায় সে ভেসে যেতো। অথচ এর সামনে মুসলমানরা লাঞ্চিত অপমানিত হচ্ছে। রহস্যটি এই যে, এতোসব জেনেও কেনো ঐক্য ও সমঝোতা নামক প্রতিকার ও প্রতিষেধকের পেছনে তারা ধাবিত হচ্ছে না? সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দূর্বল করার জন্য যে সমস্ত চক্রান্ত আঁটছে সে সবকে কেনো তারা নস্যাৎ করে দিচ্ছে না ? আর কতকাল পরে এ রহস্য উদ্ঘাটিত হবে ? কে তবে উদ্ঘাটন করবে? ইসলামী সরকার ও মুসলিম জাতিগুলো ব্যাতীত আর কে এসব চক্রান্তের জাল ছিন্ন করবে ? এ রহস্যের যদি কোন জবাব থাকে এবং যদি এধাঁধাঁর কোন সমাধান করতে পারেন তবে আমাদেরও জানিয়ে দিন।
ইমামের ভাষণ ; ১৬/৮/১৯৭৯ খৃঃ,
ছহিফা, ৮খন্ড, ২৩৫ -২৩৬পৃঃ।

মুসলমানদের দু’টি প্রধান সমস্যা
আমরাও জানি ,মুসলিম উম্মাহ্ও জানে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইসলামী সরকারগুলোও জানে যে, আমাদের উপর যা আপতিত হচ্ছে তার সবই দু’টি সমস্যার কারণে। প্রথমতঃ সরকারগুলোর পারস্পরিক সমস্যা। দুঃখজনকভাবে আজও এরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আর তা হলো পারস্পরিক অনৈক্যের ও মতবিরোধের সমস্যা । এরা ভালো করেই জানে যে, মুসলিম উম্ম্রা যাবতীয় দূর্দশার উৎস হলো এই মতবিরোধ ও অনৈক্য। আজ প্রায় বিশ বছর যাবৎ আমরা এই ব্যাপারে আবেদন জানিয়ে আসছি। একাধারে বলে আসছি, লিখে আসছি, সরকার প্রধানদের আহ্বান জানাচ্ছি ঐক্যের দিকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ যাবত কোন ফলোদায় হয়নি।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো , জাতিসমূহের সাথে সরকারগুলোর সমস্যা । সরকারগুলো তাদের জনগণের সাথে এমন আচারণ করেছে যে, জনগণ আর সরকারগুলোর সর্মথক ও পৃষ্ঠপোষক নয়। সরকারগুলোর জন্য যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা কেবল জনগণই সমাধান করতে পারে। অথচ তাদের মাঝে সমঝোতা ও সুসম্পর্ক নেই । জনগণ সরকারগুলোর সমস্যাদি না বাড়ালেও অন্ততপক্ষে নির্বিকার থাকছে। আমি বারবার এ বিষয়টি বলে এসেছি যে, ইসলামী রাষ্ট্র সমূহের সরকারগুলোর উচিত আমাদের অতীত ও বর্তমান সরকার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। অতীতে শয়তানী শাহী আমলে (তাগুতী সরকার) জনগণ হয় সরকারের সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে নয় নির্বিকার রয়েছে।
ইসলামী বিপ্লবী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্যদের সমাবেশে ইমামের ভাষণ; ১৫/৯/১৯৭৯খৃঃ, ছহিফা, নবম খন্ড, ১৩৩পৃঃ।
সরকার প্রধানদের অবহেলাই যাবতীয় দুর্দশা ও সংকটের কারণ
আল- কুদসে (বাইতুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন) এই দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমাদের ভাইদের উপর আপতিত যাবতীয় দুঃখ-দূর্দশার কারণ হল আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের অবহেলা প্রদর্শন । আমি গত বিশ বছর যাবত বিভিন্ন খুতবা ও ভাষণে এদের (এই রাষ্ট্রপ্রধানদের) বলে এসেছি যে, স্থানীয় ছোটখাট বিরোধকে ভুলে যান, ইসলামের জন্য ও ইসলামী লক্ষ্যÑআদর্শের অগ্রগতির জন্য পরস্পর পরামর্শ করুণ ও ঐক্যবদ্ধ হন। আমি এ কথা বলতেও লজ্জা পাচ্ছি যে, দশকোটিরও বেশী আরব জনতা এবং আশি কোটিরও বেশী মুসলিম জনতার (সত্তরের দশকের পরিসংখ্যান) সামনে গুটি কতক ভুইফোঁড় দাড়িয়ে এতসব কান্ড কীর্তি করবে ! এ অজুহাত দেখানো ও ঠিক নয় যে, আেিমরিকা এর (ইসরাইল) পৃষ্ঠপোষক। আমেরিকা তো শাহেরও পৃষ্ঠপোষক ছিল । কিন্তু যখন একটি জাতি কোন এক বিষয়ে সংঘবদ্ধ হলো তখন না শাহের শয়তানী শক্তি প্রতিরোধ করতে পেরেছে , না পরাশক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতা। বরং সবাই যখন সর্বশক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে , আরব জনগণ বিশেষ করে এদের রাষ্ট্রনায়করা যখন ঐক্যবদ্ধ হবে তখন নিঃসন্দেহে আমেরিকাও তাদের মোকাবিলায় কিছু করতে পারবে না। অন্য সকল শক্তিও কিছু করতে পারবে না।
আবু জিহাদের (ফিলিস্তিন নেতা) সাথে সাক্ষাতে ইমামের বক্তব্য, ১৪/১০/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, দশম খন্ড, ৫ম পৃঃ।
সরকারগুলোর গোলামী
মুসলমানদের সমস্যা হচ্ছে মুসলমানদের সরকারগুলো। এই সরকারগুলোই মুসলমানদের এ দুর্দিনে ও দুর্দশায় পৌঁছিয়েছে। মুসলমানদের সমস্যা মুসলিম জাতিগুলো নয়। জাতিগুলো তাদের স্বভাবসুলভ (ফিতরাত) চরিত্রের কারণেই সমস্যাদির সমাধান করতে সক্ষম। কিন্তু সমস্যা হলো সরকারগুলোকে নিয়ে। আপনারা যদি ইসলামী জাহানের সর্বত্র লক্ষ্য করেন তাহলে খুব কম রাষ্ট্রই পাবেন যেখানে সরকার সমস্যাÑসংকটের সৃষ্টি করছে না। এই সরকারগুলোই পরাশক্তিবর্গের সাথে তাদের সম্পর্ক এবং ডান ও বাম ব্লকের পরাশক্তিগুলোর প্রতি তাদের গোলামীর মাধ্যমে আমাদের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য সমস্যাদির সৃষ্টি করছে। মুসলমানদের সামনে থেকে যদি এসব সমস্যা তুলে নেয়া হয় তাহলে মুসলমানরা তাদের লক্ষ্যÑআদের্শ পৌঁছতে পারবে এবং সমাধানের পথও জাতিগুলোর হাতেই রয়েছে।
আল কুদস মুক্তি কংগ্রেসে যোগদানকারীদের সমাবেশে ইমামের ভাষণ, ৯/৮/১৯৮০ খৃঃ, ছহিফা, দ্বাদশ খন্ড, ২৭৮ পৃঃ।
আরব সরকারগুলো কেনো যায়নবাদীদের কাছে মার খাচ্ছে?
মুসলমানরা কেনো এই শক্তি (ইসলাম) সম্পর্কে অবহেলা করছে? কেনো ইসলামী সরকারগুলো ইসলামের শক্তির প্রতি অবহেলা দেখাচ্ছে? কেনো বহু বছর যাবত আরব সরকারগুলো যায়নবাদীদের হাতে মার খাচ্ছে? কেনো এরা বিদেশী শক্তির করায়াত্তে অবস্থান করছে? দুঃখজনকভাবে তাদের ভেতর অনৈক্য বিরাজ করছে। আর মুসলমানদের সমস্যা এটাই।
ইমামের ভাষণ, ২০/১০/১৯৮০খৃঃ, ছহিফা, ত্রয়োদশ খন্ড, ১২৬ পৃঃ।
আমেরিকার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ করা অনুচিত!
আমাদের উচিত নয় আমেরিকার বিরুদ্ধে এতো বেশী অভিযোগ করা যদিও সে সকল অনিষ্টের মূল। বরং ইসলামী দেশসমূহ ও ইসলামী সরকারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও ফরিয়াদ করা উচিত। সংঘবদ্ধ হওয়া ও ঐক্য স্থাপনের জন্য ইসলাম কতই না প্রচার করেছে ও বাস্তব পথ দেখিয়েছে। ইসলামে কত সব দিবসের জন্ম হয়েছে যা নিজেরাই ঐক্য স্থাপন ও মজবুতকারী। যেমন আশুরা ও আরবাঈন (ইমাম হুসাইনের শাহাদাত দিবস ও চল্লিশা)।
কুরাআনুল করীম নির্দেশ ও গুরুত্ব দিয়েছে যে, জনগন বিচ্ছিন্ন না হোক, মুসলমানগণ ঐক্যবদ্ধ হোক এবং আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরুক। আমেরিকার মন্ত্রই হলো মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করা এবং এ সুযোগ কাজে লাগানো আর মুসলমানদের সহায়Ñসম্পদ ও আত্মসম্মান সবই লুটেপুটে নেয়া ও মুসলমানদের কেবল ভোক্তায় পরিণত করা।
ওরা ওদের ঘৃণ্য লক্ষÑউদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য নানা ইস্যুর জন্ম দেয়। আমরাও ওদের কাছ থেকে এছাড়া অন্য কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না। কিন্তু মুসলমানদের, বিশেষ করে তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ রয়েছে। যারা ইসলামের দাবী করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ফরিয়াদ এই যে, এরাই কুরআনুল করীমের নির্দেশের বিরুদ্ধে ও মহান রাসূলুল্লাহর সুন্নাহর বিরুদ্ধে আমল করছে এবং তাদের অধীনস্থ দেশগুলোর স্বার্থ বিরোধী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের সমস্যাই হলো তাদের উপর শাসন কাজে লিপ্ত সরকারগুলো। যাবতীয় অনৈক্য এরাই নিজ হাতে তৈরী করছে। এই যে মার্কিনী পরিকল্পনা (আনোয়ার সাদাতের ক্যাম্প ডেভিড), এই যে ফাহাদের মার্কিনী পরিকল্পনা (ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে বাদশাহ ফাহাদের আট দফা পরিকল্পনা) এবং ভবিষ্যতে আরো যত পরিকল্পনা (মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের) প্রণয়ন করবে সবই অনৈক্যের কারণ। ইসরাইলের এতো দুঃসাহস নেই যে, এগিয়ে আসবে ও গোলান মালভূমির মত ভূখন্ডসমূহকে নিজ দেশের অন্তর্ভক্ত করে নেবে। ঐসব পরিকল্পনাই অনৈকের সৃষ্টি করেছে এবং ইসরাইলের জন্য পথ পরিস্কার করে দিয়েছে।
ইমামের ভাষন, ১৬/১২/১৯৮১ খৃঃ, ছহিফা, পঞ্চদশ খন্ড, ২৬২ পৃঃ।
কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের বিশ্বাসঘাতকতা
সরকারগুলোর উদাসীনতা ও অবহেলা হচ্ছে মূল সমস্যা। এরা নিজেদের (জাতীয়)স্বার্থসমূহ ও সহায়Ñসম্পদের দু’হাতে তুলে দিচ্ছে এবং এর বিনিময়ে নিজেদের জন্য ও জাতির জন্য অবমাননা ল্লাঞ্চনাকে হাদিয়া হিসাবে আনছে। মুসলমানদের ও ইসলামের সমস্যাই হলো এসব উদাসীনতা কিংবা কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের বিশ্বাসঘাতকতা। মুসলিম জাতিসমূহ যদি মনে করে থাকে যে, তারা বসে থাকবে আর তাদের সরকারগুলো ইসরাইলকে ঠেকাবে ও অন্যান্য শক্তি যারা মুসলমানদের অবমাননা করতে চাচ্ছে তাদের বাধা দেবে তাহলে এ প্রত্যাশা হবে সুদূরপরাহত ও অন্যায়। আপনারা লক্ষ্য করছেন যে, এসব পরিকল্পনার নামে খোদ আরবদের ভেতরই অনৈক্য ঢেলে দেয়া হয়েছে। পরাশক্তিগুলো আমাদের ইসলামী সরকারের মাঝেই বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে ফাটল ধরাতে চায়। ওরা এ গুজবও ছড়াচ্ছে যে, (ইরান) ইসরাইলের কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে, সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে এবং বাহরাইনে কি সব করছে (সশস্ত্র বিদ্রোহ!)। এসবই হলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত।
আজ ওরা অনৈক্যের পথকে বেশী করে পরিস্কার করছে। দিন দিন সরকারগুলোর মাঝে ফাটল বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এ সুযোগে নিজেরা সুফল ভোগ করা শুরু করে দিয়েছে। ইসরাইল ভূখন্ডের সাথে গোলান মালভূমির সংযোজনের ঘটনা প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। ইসরাইল আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় আমেরিকার ভাড়াটে সংঘ ও সংস্থাগুলোকে মোটেও তোয়াক্কা করে না। ওসব সংগঠন (জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা) যত বিরোধিতাই করুক না কেনো সে (ইসরাইল) তার নিজের কাজই করে যাচ্ছে।
ইমামের ভাষণ, ১৬/১২/১৯৮১ খৃঃ, ছহিফা, পঞ্চদশ খন্ড, ২৬৩পৃঃ।

হারামাইনে শরীফাইনের সেবক বলে দাবীদাররা কেন সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে?
আজ ইসলামের বড় সংকট এই যে, যেসব কানে মুসলমানদের সমস্যাদি ও ফরিয়াদের কথা পৌঁছতো সেগুলো কালা হয়ে গেছে, যে সব মুখ মুসলমানদের স্বার্থে কথা বলতো সেগুলো বোবা হয়ে গেছে এবং যে সব চোখ মুসলমানদের বালাÑমুছিবত প্রত্যক্ষ্য করতো সেগুলো অন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এসব কালা, বোবা ও অন্ধদের সম্পর্কে কি বলবো? এলাকার সরকারগুলো কি লেবাননের সংকটকে বিপর্যয় মনে করে না? বিশ্ব মুসলিমের জন্য বিপর্যয় বলে জানে না? লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসন ও পাইকারী হত্যাকান্ড কি বিপর্যয় নয়? ইসলামের জন্য কি বালাÑমুছিবত নয়? মুসলমানদের জন্য কি বিপর্যয় নয়? এসব কর্মকান্ড যে আমেরিকার স্বার্থ চরিতার্থ করছে তা কি ওদের কানে যাচ্ছে না? যদি এরা বধির না হবে তাহলে লেবাননে আমাদের প্রিয়জনদের ফরিয়াদ ও কান্না কেন শুনতে পাচ্ছে না? যদি অন্ধই না হবে তাহলে কেন প্রতিদিন লেবানন ও ইরানে এত সব প্রিয় যুবকের লাশ স্তপাকার হচ্ছে এবং রণাঙ্গন ও রনাঙ্গনের পেছনে শহরগুলোতে যে এতসব নরÑনারী, শিশু ও বৃদ্ধ নিহত হচ্ছে সে সব দেখতে পাচ্ছে না কেন? যদি দেখে থাকে ও বিপর্যয়ই মনে করে তাহলে কোন সাড়া শব্দ করছে না কেন? যদি ইসলামের আদর্শের প্রতি, কুরআনে করীমের প্রতি ও হারামাইন শরীফাইনের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসাই থাকবে তাহলে আজ যেখানে ইসলামী শিক্ষাÑদীক্ষা পদদলিত হচ্ছে এবং ইসলাম, কুরআন ও হারামাইন শরীফাইন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তখন কথা বলছে না কেন? কেন এরপরও শক্রদেরই সাহায্য করছে? ওদের কি হয়েছে যে, ওদের সামনেই এতসব বালাÑমুছিবত ঘটছে এবং সবার সামনে এতসব অপরাধযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে অথচ ওরা শুধু নীরবতাই পালন করছে না, উপরন্তু এসবকে সমর্থন করে যাচ্ছে? আবারো ক্যাম্পডেভিড চুক্তিকে সমর্থন করতে জড়ো হচ্ছে। আবারো ফাহাদ পরিকল্পনাকে সমর্থন করতে চাচ্ছে। এরপরও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে। এসব বিপর্যয়ের কথা আমরা কার কাছে বলবো? যে সব সরকার চোখÑকান বন্ধ করেছে এবং বিনা বাক্য ব্যয়ে আমেরিকার পায়ে আত্মসমর্পণ করেছে তাদের কাছে কি এসব কথা বলবো Ñ নাকি যে সব জাতি ওসব সরকারের পদতলে পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিচ্ছে তাদের কাছে বলবো?
ইমাম খোমেনীর ভাষণ, ১৩/৬/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষোড়শ খন্ড, ১৯৭ পৃঃ।
কার কাছে এসব সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করবো?
আল্লাহ তায়ালার পবিত্র দরবার ছাড়া আর কার কাছে এসব সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করবো? যারা আজ ইরানের বিরুদ্ধে জিহাদের পরিকল্পনা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কি নালিশ করবো? অথচ ইরান আজ সংগ্রামের ময়দানে দাঁড়িয়েছে, সকল শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাচ্ছে এবং ইসলামকে সারা বিশ্বে কায়েম করতে চাচ্ছে। ওরা কি না ইসরাইলের বিরুদ্ধে নীরবতা পালন করছে, অথচ এই ইসরাইল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে এবং পরিস্কার ভাষায় বলছে নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত আমার রাষ্ট্র! এছাড়া সে হারামাইন শরীফাইনকেও (মক্কা ও মদীনা শরীফ) তারই বলে মনে করে। আমরা এ দুঃখÑবেদনার কথা কোথায় বলবো? এসব বালাÑমুসিবতের কথা কার কাছে জানাবো? এ ধরনের মৃতবৎ নীরবতা, অপরাধীÑদুস্কৃতকারীদের প্রতি সমর্থনসূচক এসব নীরবতা, অত্যাচারীদের উৎসাহদায়ক এসব নীরবতার কাহিনী কোথায় কার কাছে বলবো? কাকে বলবো যে, দয়া করে এসব নীরবতা ভেঙ্গে দিন? তোমাদের জনসংখ্যা কি কোন অংশে কম? তোমাদের সহায়Ñসম্পদ কি কম? তোমাদের তেল কি নগণ্য? তোমাদের ভূখন্ড কি অল্প? তোমাদের হাতে কি মূলবান ও গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক কেন্দ্র ও এলাকার অস্তিত্ব নেই? সকল সুযোগÑসুবিধাই রয়েছে। তবে একটা জিনিস নেই আর তা হলো ঈমান। তোমাদের ঈমান নেই।
বিশ্বের মুক্তি আন্দোলনগুলোর প্রতিনিধি সমাবেশে ইমাম খোমেনীর ভাষন, ১৩/৬/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষোড়শ খন্ড, ১৯৮ পৃঃ।
শাসন ক্ষমতার লোভে ইসরাইলÑআরোপিত লাঞ্চনা অবমাননার গুরুভারকে জাতিসমূহের উপর চাপানো
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজেউন
১৯৮২ সালের আলকুদস বার্ষিকীতে আমরা বেদনাদায়ক ও দুঃখভারাক্রান্ত দিনগুলো অতিবাহিত করছি। বর্তমানে দুঃখজনক ও মসিবতজনক দিনগুলো অতিক্রম করছি। লেবাননের নিরাশ্রয় ও বেÑগুনাহ শহীদানের জন্যই কেবল দুঃখÑবেদনা নয়, বৈরুতের উপর দুস্কৃতকারী ইসরাইলের বিরামহীন গুচ্ছ বোমা ও অগ্নি বোমার আঘাতে নিহত নিরাশ্রয় ও বেÑগুনাহ আরব মুসলিম আবালÑবৃদ্ধÑবনিতার শাহাদতের জন্যই কেবল এ দুঃখÑবেদনা নয়, ইরান ও অন্যান্য দেশে ইসলামের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে বিশ্ব দুস্কৃতকারীÑঅপরাধী আমেরিকার অশুভ ষড়যন্ত্রসমূহের জন্যই এ কেবল দুঃখবেদনা নয়, রক্তপিপাসু ও অপরাধ পেশায় লিপ্ত বেগীন ও সাদ্দামের প্রতি মিশর ও জর্দানের বৈষয়িক ও নৈতিক সাহায্যÑসমর্থনের জন্যই কেবল এ দুঃখÑবেদনা নয়, যদিও এদের (সাদ্দাম ও বেগীন) জাগতিক জীবন যাত্রাই নির্ভর করছে বিশ্বের নিঃস্ব, দরিদ্র, অত্যাচারিত ও বঞ্চিত জাতিসমূহের অধিকারের প্রতি সীমালংঘনের উপর এবং মজলুম জাতিগুলোকে দমন নিপীড়নই এদের অহংকারের বিষয়; ইসলামী দেশ ইরানের উপর আফলাকপন্থী সাদ্দাম ও ইরাকের বাথ সমাজতন্ত্রী দলের নির্দয় আগ্রাসন, হাজার হাজার শিশু, নারী ও বৃদ্ধকে হত্যা এবং আরব ও ইরানী জনতাÑঅধ্যুষিত শহরÑসমূহকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার জন্যই কেবল এ দুঃখÑবেদনা নয়, যদিও ইরাকের মুশরেক বাথ পার্টি ইসলামকে বরদাশত করতে পারে না এবং এর পরিকল্পনাই হচ্ছে ইসলাম ও এর সমর্থকদের মূলোৎপাটন করা, বরং বালাÑমসিবত ও দুঃখÑবেদনা এজন্যই যে, মুসলমানরা এমন সব সরকারের কবলে পতিত হয়েছে যারা নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে এবং যারা পরাশক্তি আমেরিকার অন্ধ অনুচর। এরা চোখÑকান বন্ধ করে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের নির্দেশ পালন করে যাচ্ছে। এরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে বিরোধিতা ও ইসলামের শক্র সাদ্দামের প্রতি সামরিক অস্ত্রশস্ত্র এবং বৈষয়িক ও নৈতিক সাহায্যÑসহায়তা প্রদানের জন্য নানারকম অজুহাত তৈরী করেছে, কুরআন মজিদ ও ইসলামের নির্দেশ অমান্য করে ইরানী ও আরব জাতীয়তাবাদের জিগির তুলছে এবং পরাশক্তিবর্গের সেবায় নিয়োজিত পত্রÑপত্রিকা, রেডিওÑটিভি ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ইরানের প্রতি ইসরাইলের পৃষ্টপোষকতার মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে।
অথচ আজ যখন ইসরাইল খোদ একটি আরব মুসলিম দেশের উপরই (লেবানন) আগ্রাসন চালালো এবং মুসলমানদের হত্যা করছে তখন ওদের মৃতবৎ নীরবতার কি অজুহাত দেখাবে? ইসরাইল ও তার অপরাধপরায়ন প্রভুর প্রতি সাহায্যÑসহায়তা দানের জন্য ওরা প্রতিশোধ গ্রহণকারী আল্লাহ (কাহহার) ও ইসলামী জাতিগুলোর সামনে কি অজুহাত দেখাবে? ক্যাম্পডেভিডে চুক্তি ও ফাহাদ পরিকল্পনার মতো লাঞ্চনাকর প্রস্তাবাবলী উপস্থাপনের জন্য এদের কি অজুহাত রয়েছে? ওসব স্বভাবগত দুস্কৃতকারী ও পেশাগত খুন পিপাসুদের সাথে আপোষÑরফার পেছনে এদের কি অজুহাত রয়েছে? আমাদের নামে মিছেÑমিছি আপোষ করার অভিযোগ উত্থাপনকারী আমেরিকার স্বভাব চরিত্র কি অতীতের আমেরিকা থেকে ভিন্ন কিছু হয়েছে? যে ইসরাইল আমাদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ কারা মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে সাদ্দামের সাহায্যে এগিয়ে গেছে এবং আমাদের সাথে শত্রুতা করার উদ্দেশ্যে আফলাকী বাথ পার্টিকে রক্ষার্থে ছুটে গেছে এবং সে ইসরাইলের স্বাভাব চরিত্রটি কি এখন বদলে গেছে?
হে খোদা! এলাকার মুসলমানরা এরকম শাসকদের কবলে আজ বন্দিী যেমন করে তাদের নেতা হযরত আলী ইবনে আবি তালিবও (আ.) মুনাফেকদের কবলে পতিত হয়েছিলেন। ওসব মুনাফেকও ব্যহ্যত মুমি-মুসুল্লী ছিলো। ওদের হাতে নিহত হয়েই তিনি (হযরত আলী) তোমার দীদারে গমন করেন এবং ও সমস্ত বালা-মুসিবাত থেকে নাজাত পান।
হে খোদা! ইসলাম আজ সেদিনকার নাহরাওয়ানের মুনাফিকদের চেয়েও অপরাধীতম মুনাফিকদের হাতে পতিত হয়েছে। এরা ইসলামের নামেই ইসলামকে ধ্বংস করছে এবং ইসলামের দুশমনদের সাথে ইসলামেরই নামে আপোষ করছে। প্রকৃতপক্ষে এদের লক্ষ্য মজলুম ও বঞ্চিত জাতিসমূহকে লুটপাট করা এবং মুক্তিকামী জনগণকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা।
হে খোদা! এই মূর্খ সরকারপ্রধানরা মুসলিম জাতিগুলোর উপর আরো কিছুকাল শাসন-শোষণ চালানোর জন্য ইসরাইলের অবমাননার বোঝা কাঁধে বয়ে চলেছে।
হে খোদা! এই মূর্খ সরকারগুলো পরাশক্তিবর্গের উপর বিজয় অর্জনের সকল সুযোগ-সুবিধার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা ও ইসরাইলের অপরাধসমূহকে মেনে নিচ্ছে এবং কুফরীর ভিতএক মজবুত করার উল্লাসে রাত দিনের জ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে।
ইমামের বাণী, ১৬/৯/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষোড়শ খন্ড, ২২৬-২২৭পৃ.।

ইসরাইলের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমেরিকার আশ্রয় গ্রহণ!
বিশ্ব কুদস দিবস (রমজান শেষ শুক্রবার) ও ইতিহাসের সেরা মানবের (হযরত আলী) শাহাদতের (২১রমজান) প্রাক্কালে জাতিগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে সভা-সমাবেশ ও মিসিলমূহের মাধ্যমে সরকারগুলোর উপর দৃঢ়তার সাথে চাপ সৃষ্টি করা যাতে সামরিক শক্তি দিয়ে ও তেলাস্ত্র প্রয়োগ করে আমেরিকা ও ইসরাইলে বিরুদ্ধে দাঁড়ায় । যদি সরকারগুলো তাদের কথা না শোনে এবং যে অপরাধী ইসরাইল সমস্ত এলাকা, এমন কি হারামাইন শরীফাইনকেও হুমুক দিচ্ছে এবং বর্তমানেও যার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের গভীরতা পরিস্কার হয়ে গেছে সে ইসরাইলের প্রতি যদি ওসব সরকার সর্মথন যোগাতে চায় তাহলে জনগণের উচিত চাপ প্রয়োগ, ধর্মঘট-হরতাল ও হুমকী প্রদর্শন করে তাদেরকে সঠিক আচারণে বাধ্য করা।যখন ইসলাম ও এর পবিত্র স্থান সমূহ সীমালংঘনের হুমকি কবলিত হয়েছে তখন কোন একজন মুসলমানেরও অধিকার নেই নির্বিকারভাবে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া। আজ যখন ইসরাইল মুসলিম ভূখন্ডগুলোতে ব্যাপক সীমালংঘন ছালিয়েছে এবং বেগুনাহ ও নিরাশ্রয় মুসলমানদের হত্যা করছে তখন এলাকার সরকারগুলো যা করছে তা কতিপয় নিরর্থক বাক্যালাপ ও আপোষকামিতা বৈ কিছুই নয়। এর চেয়েও মুসিবতের বিষয় হচ্ছে, এসব সরকার ইসরাইলের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য আসল অপরাধী আমেরিকার কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটি হচ্ছে সাপে ভয়ে হায়েনার দিকে ছুটে যাওয়া।দুশমনদের মুকাবিলা করার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, এমন কি সামান্য কড়া ভাষায় হুমকি প্রদানেরও ক্ষমতা এদের নেই। অবস্থা এ রকম হতে থাকলে সবারই উচিত ধ্বংস ও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া এবং নিজেদের জীবনে যে কোন লাঞ্ছনা-অবমাননা গ্রহণ করা।
ইমামের বাণী, ১৬/৭/১৯৮২খৃ. , ছহিফা, ষোড়ষ খন্ড, ২২৮ পৃ.।
কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের প্রবৃত্তি পূজা
পরাশক্তিবর্গ ও এদের অনুচরদের এতো সব অপরাধযজ্ঞের সামনে যে বিষয়টি ইসলামী দেশগুলোকে, বিশেষত ইসলামী দেশসমূহের রাষ্ট্রপ্রধানের উদাসীন ও নির্বিকার করে রেখেছে তা হলো প্রবৃত্তিÑপূজা তথা নাফসানিয়াত। ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের প্রধানদের মাঝে যদি এই প্রবৃত্তিÑপূজা না থাকতো এবং এ ক্ষমতা লিপ্সা ও পদবী পূজা না থাকতো তাহলে ইরানের উপর এতোসব জঘন্য জুলুমÑঅত্যাচার এবং লেবাননের উপর আরো জঘন্যতম অত্যাচারÑউৎপীড়নের সামনে এভাবে নির্বিকার ও উদাসীন থাকতে পারতো না। এদের ভয় হচ্ছে তাদের কল্পিত এসব ক্ষমতা হস্তচ্যুত হবে। অথচ এসব ক্ষমতার কোন দামই নেই। ক্ষমতা হারানোর এ ভয়ের কারণেই এরা আমেরিকার সামনে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করছে এবং এর চেয়েও জঘন্য হলো এরা ইসরাইলের সামনেও হাঁটু গেড়ে বসছে। এ ছাড়া আজকাল এদের এতোসব দৌড়াদৌড়ি ও ছুটাছুটির লক্ষ্য হচ্ছে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া এবং ক্যাম্পডেভিড চুক্তিকে মজবুত করা। যদি অল্প ক’দিনের এ ক্ষমতা লিপ্সা ও আধিপত্য লিপ্সা না থাকতো তাহলে যে কোন লোকই এ তাৎপর্যটা উপলব্ধি করতে পারতো যে, মুসলিম দেশগুলোর উপর এবং সবার চোখের সামনে ইসরাইল এ ধরনের আচরণ ও ওদ্ধত্য দেখানোর সাহস পেতো না।
ইমামের ভাষণ, ৩১/৮/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষোড়শ খন্ড, ২৭২ পৃঃ।
আল্লাহতায়ালা সরকারগুলোকে জাগ্রত করুক
আল্লাহ তায়ালা জাতিগুলোকে প্রকৃত সমস্যাদির প্রতি মনোযোগী করে দিন! ইসলামী দেশগুলোর সরকারগুলোকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিন। এরা মনে করছে যে, ইসরাইল এদেরই আশ্রিত, তাই তাকে সাহায্য করছে। যে ইসরাইলের লক্ষ্যই হলো আরব দেশসমূহকে দখল করা সে ইসরাইল সম্পর্কেই এরা ভাবছে যে, সে তাদের কাছে আশ্রিত। এরা এটাও ধারণা করছে যে, আমেরিকা এদের সাহায্যÑসহায়তা করবে। নয়া, আমেরিকা তোমাদের তেল চায়, আমেরিকা তোমাদের স্বার্থ লটতে চায় এবং তোমাদেরকে তার বাজারে পরিণত করতে চায় মাত্র।
ইমামের ভাষণ, ১৮/৯/১৯৮৩ খৃঃ, ছহিফা, অষ্টদশ খন্ড, ১০৯ পৃঃ।

কোন কোন সরকারের গাফেলতির ঘুমে দুঃখ প্রকাশ

আজ এটা কি দুঃখের বিষয় নয় যে, আরব দেশসমূহের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই বিপর্যয়ের সামনে নীরবে বসে আছে এবং এ জঘন্য অপরাধের জন্য পথ খুলে রেখেছে কিংবা আমেরিকাকে অভ্যর্থনা জানারো ও ক্ষণকালের ক্ষমতায় থাকার বাসনায় ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে? আমি স্বীয় ইসলামী দায়-দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে যে কোন সুযোগ এলাকার বঞ্চিত ও মজলুমদের ফরিয়াদকে বিশ্ববাসীর কানে, বিশেষত ইসলামী দেশসমূহের সরকারগুলোর কানে পৌছিয়েছি। ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ্ এ ফরিয়াদের কথা পৌঁছাবো যাতে করে ভোগ-বিলাসে মত্ত, ভ্রাতৃঘাতী বিসংবাদে লিপ্ত এবং আমেরিকার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত কোন কোন সরকারের উপর প্রভাব পড়ে এবং তাদের গাফেলতির এ ঘুম ইসলামী ও মানবিক জাগরণে পরিণত হয়। তবেই কেবল এরা এদের এই লাঞ্ছনাকর অবস্থার ইতি ঘটাতে পারবে এবং বীরবিক্রমে ইরানের মতো পরাশক্তিবর্গের বুকে বজ্রাঘাত হানতে সক্ষম হবে। এখন আমাদের লেবাননী মুসলমান ভাইয়েরা ইসরাইলের নখর থাবা ও খুনপিপাসু সরকারের (লেবাননের ফালাঞ্জী) হাতে এবং তাদের চেয়েও জঘন্য সীমালংঘনকারী আমেরিকার করালগ্রাসে বন্দী হয়ে আছে। প্রীতি দিন এদের বহুলোক শহীদ কিংবা বাস্তুহারা হচ্ছে। অথচ এলাকার বেশীর ভাগ সরকার ইসরাইলের সাথে আপোষÑরফা কিংবা লেবাননের সরকারের প্রতি সমর্থন যোগানোর তালে লিপ্ত হয়েছে।
ইমামের বাণী, ২২/৯/১৯৮৩ খৃঃ, ছহিফা, অষ্টাদশ খন্ড, ১২১ পৃঃ।
কোন কোন মুসলিম সরকার প্রধানের আহাম্মকী আত্মঘাতী সংঘর্ষের সূচনা করে
দুঃখজনকভাবে কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের আহাম্মকী পরস্পরকে সংঘর্ষে লিপ্ত করে। ওরা একে (সাদ্দাম) ইরানের উপর হামলা করতে বাধ্য করেছে। ফলে ইরাকী জনগণের উপর এতা দুঃখÑকষ্ট, ক্ষয়Ñক্ষতি ও ভোগান্তি নেমে এসেছে। ওরা একে বলেছেঃ যাও কাদেসিয়ার সেনাপতি হও। এ উস্কানি দিয়ে কতো বিপদই না ডেকে এনেছে! ওরা ফিলিস্তিনীদেরও পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে। ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই বাঁধিয়ে দিয়েছে। আমাদের ভেতর ও মুসলিম সরকারগুলোর মাঝে অনৈক্য ও ফাটল সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কেনো এরকম হবে? এরা যদি প্রকৃতই সজাগ হয় এবং জানতে পারে যে, কতো বিশাল শক্তিই না তাদের হাতে রয়েছে এবং কতো সম্পদÑউৎসই না রয়েছে! তাহলে সব কিছুই বদলে যাবে। এদের হাতেই নিহিত রয়েছে ওদের (পরাশক্তিবর্গ) জীবনের ধমনী। এদের উচিত পরস্পর বন্ধু হওয়া, সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা চীৎকার করে বলছি, আসুন, পরস্পর বন্ধু হই। অথচ ওরা বলছে, না, ইরান সকল দেশ ধ্বংস করতে চায়! ইরান কি কারণে ধ্বংস করতে চায়? বরং ইরান চায় সবাইকে সংশোধন ও উন্নত করতে। ইরান চায় সবাই একত্রে বন্ধু হয়ে থাকুক, সবাই ভাই ভাই হোক। অথচ ওরা বুঝতেই চায় না। আশা করি ক্রমশ জাতিগুলো সজাগ হবে এবং জনগণের পক্ষ থেকে এসব কিছুর পরিবর্তন ও সংস্কার ঘটবে।
ইমামের ভাষণ, ২০/১১/১৯৮৩ খৃঃ, ছহিফা, অষ্টাদশ খন্ড, ১৬৯ পৃঃ।
বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের গোমর প্রকাশ
ক্যাম্পডেভিড হচ্ছে ইসরাইলের আগ্রাসনগুলোর আইনানুগ করার চক্রান্ত
প্রশ্নঃ আপনি কি অন্যান্য ইসলামী শীর্ষনেতার মতো ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির সাথে বিরোধিতা করেন?
জবাব ঃ ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ও এধরণের অন্যান্য চুক্তি হচ্ছে ইসরাইলের আগ্রসনগুলোর প্রতি আইনানুগ স্বীকৃতি দানের ষড়যন্ত্র। এসব ষড়যন্ত্র পরিণতিতে ইসরাইলের স্বার্থ এবং আরব ও ফিলিস্তিনীদের ক্ষতি ডেকে আনবে । আর ওরকম অবস্থা এলাকার জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
এসাসিয়েটেড প্রেসের সাথে ইমামের সাক্ষাতকার, ৭/১১/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা, ৩য় খন্ড, ৫৬পৃঃ।

ক্যাম্পডেভিড চুক্তি নিন্দনীয়

প্রশ্ন ঃ ক্যাম্পডেভিড চুক্তির ও বাইতুল মুকাদ্দাসের সাদাতের সফর সম্পর্কে আপনার কি মূল্যায়ন?
জবাব ঃ ইম দৃঢ়তার সাথে এর নিন্দা করি ।
লিবীয় সংবাদ সংস্থার সাথে ইমামের সাক্ষাতকার, ১৭/১১/১৯৭৮, ছহিফা, ৩য়খন্ড, ১৮১পৃ ঃ।

ক্যাম্পডেভিড চুক্তি এলাকার সকল দেশের জন্যই ক্ষতিকারক

প্রশ্ন ঃ ইরানের বিপ্লবের উপর ক্যম্পডেভিড চুক্তি ও সাদাতের বিশ্বাসঘাতকতার বি প্রভাব রয়েছে ?
জবাব ঃ ক্যাম্পডেভিড ও অন্য যে কোন পদক্ষেপ যা ইসরাইলের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে তো নীতিগতভাবে শুধু ফিলিস্তিনী ও আরবদের জন্যই নয়, বরং এলাকার সকল দেশের জন্যই ক্ষতিকারক এবং ফলত এলাকার সকল প্রকিক্রিয়াশীল চক্রের শক্তি বৃদ্ধি হবে।
লেবাননী পত্রিকা আসÑসাফিয়ানের সাথে ইমামের সাক্ষাৎকার, ২৩/১১/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা, ৩য় খন্ড, ২৩৮ পৃঃ।
ক্যাম্পডেভিড একটি রাজনৈতিক চাল
প্রশ্নঃ ক্যাম্পডেভিড চুক্তি সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? ফিলিস্তিনী সমস্যার সমাধান কি বলে মনে করেন?
জবাবঃ মুসলমানদের প্রতি ইসরাইলের আগ্রাসন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ক্যাম্পডেভিড চুক্তি একটি রাজনৈতিক প্রতারণা ও চাল বৈ অন্য কিছু নয়। আমি পনেরো বছরের বেশী সময় ধরে নিজ বক্তৃতা ও বিবৃতিতে ইসরাইলের নিন্দা এবং ফিলিস্তিনী জাতি ও তাদের ভূখন্ডের প্রতি সমর্থন করে এসেছি। ইসরাইল হচ্ছে দখলদার। তাই যত শীগগির তাকে ফিলিস্তিন ভূখন্ড ত্যাগ করতে হবে। সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে, ফিলিস্তিনী ভাইদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব অপকর্মের এ ঘাঁটিকে ধ্বংস এবং এলাকায় সাম্রাবাদের মূল গোড়াকে উৎপাটন করা। তাহলেই এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
‘‘ফিউচার আফ্রিকা’’ নামক পত্রিকার সাথে ইমামের সাক্ষাৎকার ৫/১২/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা, ৪র্থ খন্ড, ২৬ পৃঃ।
ক্যাম্পডেভিড চুক্তি ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি খেয়ানত
ইরান নিজেকে আরব বিশ্বের মুসলমান ভাইদের সহগোমী এবং তাদের সকল সিদ্ধান্তের সাথে শরীক বলে মনে করে। সাদাত ও ইসরাইলের শান্তি চুক্তিকে ইরান ইসলাম, মুসলিম উম্মাহ ও আরব ভাইদের প্রতি খেয়ানত বলে মনে করে এবং এ চুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক বিরোধিতার প্রতি সমর্থন জানায়।
ইমামের বাণী, ২৫/৩/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, ৫ম খন্ড, ২০৮ পৃঃ।
ক্যাম্পডেভিড সাদাতের পরনির্ভরতারই প্রমাণ
আমি পনেরো বছরেরও বেশী কাল যাবত দখলদার ইসরাইলের বিপদ সম্পর্কে বলে আসছি এবং আরব সরকার ও জাতিগুলোকে এ সত্যতা ঘোষনা করেছি। বর্তমানে মিশর ও ইসরাইলের সাম্রাজ্যবাদী চুক্তির ফলে এ বিপদ অধিকতর, নিকটতর ও গুরুতর হয়েছে। সাদাত এ চুক্তি মেনে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের উপর তার নির্ভরতাকে প্রকাশ করেছে। আর ইরানের সাবেক শাহের কাছ থেকেও এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা যায়নি।
ইমামের বাণী, ২৫/৩/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, ৫ম খন্ড, ২০৮ পৃঃ।
ক্যাম্পডেভিড চুক্তি মুসলমানদের মাঝে বিভেদের কারণ
আমরা প্রায় বিশ বছর আগে থেকে এ পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলে এসেছি এবং আরব সরকারসমূহ ও অন্য মুসলমানদের নসিহত করেছি যে, এ ব্যাপারে (ইসরাইল) সবাই মিলে চেষ্টা চালান। বিপুল জনসংখ্যা ও দলবলের অধিকারী আরব সরকারগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হতো তাহলে ফিলিস্তিন ও আলÑকুদসের উপর এসব বিপদাপদ আসতো না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আরব সরকারগুলো আমাদের নসিহতে কান দেয়নি এবং তাদের মাঝে বিদেশী শক্ররা যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে তা অনুধাবন করেনি। অনৈক্য এখনও বিদ্যমান এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশীরা মিশর ও ইসরাইলের চুক্তির মাধ্যমে যে অনৈক্যের জন্ম দিয়েছে সেই একই অনৈক্যের আওয়াজ মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী সরকারগুলোর মাঝে তোলা হচ্ছে। যেহেতু তাদের মাঝে রাজনৈতিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নেই সেহেতু এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এরা এতো বড় একটি ষড়যন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করলো! এই বিরাট বিশ্বাসঘাতকতার ফলেই মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী সরকারগুলোর মাঝে মতবিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এজন্য খুবই দুঃখিত।
সোমালীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাতে ইমামের ভাষণ, ৭/৫/১৯৭৯ পৃঃ, ছহিফা, ষষ্ঠ খন্ড, ১০৮ পৃঃ।
মিশর থেকে বিশ্বাসঘাতক সাদাতের উচ্ছেদ করতে হবে
মিশরীয় জনগণের উচিত তাদের দেশ থেকে এই বিশ্বাসঘাতককে (সাদাত) উচ্ছেদ করা এবং আমেরিকা ও যায়নবাদের কাছে আত্মসমর্পণের কলঙ্ককে নিশ্চিহ্ন করা।
লিবীয় নেতা গাদ্দাফীর বাণীর জবাবে ইমাম খোমেনী, ৭/৫/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফাÑষষ্ঠ খন্ড, ১২৩ পৃঃ।
ক্যাম্পডেভিড চুক্তির কারণে মিশরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের নির্দেশ
মিশর ও ইসরাইলের বিশ্বাসঘাতকতামূলক চুক্তি এবং আমেরিকা ও যায়নবাদের প্রতি মিশর সরকারের শর্তহীন আত্মসমর্পণের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অস্থায়ী সরকার মিশর সরকারের সাথে তার কুটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ করুক।
মিশরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়ে ইমামের নির্দেশনামা, ১/৩/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, ষষ্ঠ খন্ড, ১০৮ পৃঃ।
মিশর, ইসরাইল ও আমেরিকার ষড়যন্ত্র
ইসলামী দেশগুলোর উচিত তাদের অধিকাংশ সমস্যা সংকটের উৎস দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্রতামূলক নীতি অবস্থান গ্রহণ করা এবং সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রিয় ফিলিস্তিনী ও লেবাননী আদর্শের প্রতিরক্ষায় নামা। ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর উচিত সারা বিশ্বের মুক্তি সংস্থাগুলোর প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা করা। ফিলিস্তিনী সংগ্রামী জনতার মহান আন্দোলনকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিশর, আমেরিকা ও ইসরাইলের মিলিত ষড়যন্ত্রের আমরা নিন্দা করি। প্রিয় আলজেরিয়াতে যে সকল শীর্ষস্থানীয় নেতা ও প্রতিনিধি সমবেত হয়েছেন, আপনারা আসুন ঐক্যবদ্ধ হই এবং ডান ও বাম ব্লকের অপরাধী চক্র যাদের সর্দার হচ্ছে আমেরিকা তাদের হাত কেটে দেই, ইসরাইলের মূল গোড়াসহ উপড়ে ফেলি এবং ফিলিস্তিনী জনগনের অধিকার তাদের হাতেই ফিরিয়ে দেই। আল্লাহ তায়ালার কাছে মুসলমানদের জাগরণ, তাঁদেরকে একতা এবং ইসলামী দেশগুলোর ইজ্জত ও গৌরব কামনা করি
ইমামের বাণী, ৩০/১০/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, দশম খন্ড, ৭৯ পৃঃ।

ইসলামের শত্রুদের সাথে মৈত্রী করায় দুঃখ প্রকাশ
‘হ্যাঁ’ জনাব সাদাত আজ্ঞা পালন করে থাকে, তবে কি-না আমেরিকার আজ্ঞা! সে আমাদের শাহের মতই চোখ আত্মসর্মপণ করেছে। আমার কতই না আফসোস যে, একটি ইসলামী দেশে থেকে সে দাবী করছে যে, সে নাকি ওই দেশের সর্বোচ্চ নেতা! ইসলামের দুই দুশমন , যথাঃ ইসরাইলী জান্তা ও তারই ভাই কার্টারের সাথে সে এক টেবিলে বসেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ।অথচ আমরা বসে এ কথা শুনছি , মিশরের জনগণ নির্বাক হয়ে তামাশা দেখছে এবং আপনাদের সময়তো লেখকারও বসে থেকে শুনছেন।
এ বিষয়টি কতই না দুঃখের এবং আমাকে কতই না দুঃখ প্রকাশ করতে হচ্ছে যে, এরা ইসলামের ওই দুশমনদের সাথে সন্ধি করছে, একাত্ম হচ্ছে যারা মুসলমানদের লক্ষ্য করে গুলী চালিয়েছিল! অথচ ওরা এক টেবিলে বসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করছে। এর চেয়েও জঘন্য হলো মুসলমানগণ বসে বসে শুধু এসব দেখছে এবং ইসলামী সরকারগুলোও বসে বসে দেখছে, আর জাতিগুলোও কোন চেতনা নেই।
মিশরীয় সাংবাদিক হাসনাইন হাইকলের সাথে ইমামের সাক্ষাতকার, ১৯/১২/১৯৭৮খৃঃ, ছহিফা, একাদশ খন্ড, ৫৪পৃঃ।

আমেরিকার অনুচরদের দ্বারা অনৈক্য সৃষ্টি

প্রিয় ফিলিস্তিন ও লেবাননের মুসলমানদের উপর অপরাধী ইসরাইলের সার্বিক আগ্রাসন, বায়তুল মুকাদ্দাসে স্বীয় রাজধানী স্থানান্তরের ব্যাপারে তার অপরাধপূর্ণ পরিকল্পনা এবং নিজেদের ভিটে-মাটিতে মুসলমানদের হিংস্রভাবে হত্যা অভিযান ও তাদের উচ্ছেদ করার একই সময়ে যখন মুসলমানরা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ঐক্যের প্রতি অধিকতর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে ঠিক তখনই আমেরিকার বিশ্বাসঘাতক অনুচর, বেগীন ও বিতাড়িত শাহের ভাই আনোয়ার সাদাত এবং আমেরিকার অপর ক্রীকদাস সাদ্দাম মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টিতে হাত দিয়েছে এবং তাদের অপরাধী প্রভুর নির্দেশে কোন প্রকারের অপরাধ সংঘটন থেকে হাত গুটাচ্ছে না। আমেরিকাও একই অপরাধে অপরাধী। ইসলামী বিপ্লবকে পরাজিত করার জন্য সে ইরানের উপর একের পর এক হামলা চালাচ্ছে,গুপ্তচর পাঠাচ্ছে, অনৈক্য সৃষ্টির জন্য সাদাতের সাথে চক্রান্ত আঁটছে এবং ইরাকের মাধ্যমে ইসলামী সরকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যা রটনা ও গুজব ছড়ানোর কাজে লিপ্ত হয়েছে। মুসলমানদের উচিত আমেরিকার এ সমস্ত গোলামের বিশ্বাসঘাতকতার দিকে দৃষ্টি রাখা। ইমামের বাণী, ১২/৯/১৯৮০ খৃঃ, ছহিফা, ত্রয়োদশ খন্ড, ৮১ পৃঃ।
ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে শিয়াÑসুন্নীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছে
সাদ্দামের কাছ থেকে আমাদের কোন প্রত্যাশা নেই। তায়েফ সম্মেলনে সে যা তা কিছু বলতে পারে। কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকেও আমাদের প্রত্যাশার কিছু নেই। আজ ইসলামী দেশগুলো এদের কবলে পড়ছে। শাহের আমলে এরা শাহের সমর্থক এবং শাহের অপরাধযজ্ঞেরও শরীক ছিল। আজও ওরা সাদ্দামের অপরাধযজ্ঞের সাথে শরীক হয়েছে। এরা এদের অমানবিক স্বভাব চরিত্র অনুযায়ী আচরণ করছে। এরা সম্মেলনে বসে ইসলাম, ইসলামী দেশসমূহ, ফিলিস্তিন সমস্যা ও আমাদের ইসলামী বিপ্লব নিয়ে চিন্তাÑভাবনা করার বদলে এমন এক দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত আঁটছে যে চায় সব কিছু এদেশে ইসলামী হয়ে যাক ও ইসলামের হুকুমÑআহকাম চালু হোক। এরা বিভিন্ন সম্প্রদায়কে পরস্পরের উপর লেলিয়ে দিচ্ছে এবং আমাদের শিয়া ও সুন্নী ভাইদের একের বিরুদ্ধে অপরকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে।
ইমামের ভাষন,৪/২/১৯৮১ ছহিফা, চতুর্দশ খন্ড, ৩৯ পৃঃ।
তায়েফ কনফারেন্স প্রসংগ
ইসলামের এই দাবীদাররা কি দেখতে পাচ্ছে না যে, সকল ইসলামী দেশেই ইসলাম পরাশক্তিবর্গ ও ওদের অনুচরদের বুটের তলায় পিষ্ট হচ্ছে? ওরা কি জানে না দক্ষিন লেবানন, ফিলিস্তিন, ইরান, ইরাক ও অন্যান্য ইসলামী দেশে কি ঘটছে, সেখানকার জনগণের সাথে কি আচরণ করা হয়েছে, কতো শিশুকেই না পিতৃহীন করা হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা শরনার্থী করা হয়েছে ?
তায়েফ কনফারেন্স কি এসব জানতো না ? ইসলামের নামে ঐ কনফারেন্সে সমবেত হয়েছে, অথচ ইসলামের কোন গন্ধই সেখানে নেই। সেখানে যাকিছু ঘটেছে তাহল বিপুল অংকের অর্থ ব্যয়, বিলাস বহুল বিনোদন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিষয়াদির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। এরা কি রাসুলুল্লাহর (স.)-এ হাদীস শোনিনি যে, যে রাত কাটিয়ে ভোর করলো, অথচ মুসলমানদের সমস্যাদি নিয়ে চিন্তা ও চেষ্টা করলো না সে মুসলমানই নয়? এরা কি বিশ্বের মুসলমানদের সমস্যাদি সমাধানে চেষ্টা করেছে ? তায়েফ কনফারেন্স এমন স্থানে, এমন দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে যা রাসুলুল্লাহ্র (স.) দেশ, যেখানে রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন এবং সেখানেই তিনি প্রচার কাজ চালিয়ে ছিলেন। এরা সেখানেই সম্প্রতি সমবেত হয়েছে। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে কি বললো ? মুসলমানদের বিষয়ে এরা কি চেষ্টা চালালো ? কি করেছে ওরা ? হাদীস শরিফের মানদন্ড অনুসারে কি আমরা ওদের মুসলমান হিসাবে গন্য করতে পারি ?
ইমামের ভাষণ, ১৮/২/১৯৮১ খৃ. ছহিফা ১৪খন্ড, ৯০পৃ.।
সাদাত ও ফাহাদের পরিকল্পনার নিন্দা করা আমাদের কর্তব্য
সংগ্রমের শুরু থেকেই লেবানন ও ফিলিস্তিনের বিষয়াদি আমাদের মুল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের অর্ন্তগত ছিল এবং সেসব ইরানের সমস্যা থেকে ভিন্ন কিছু ছিলো না । সার্বিকভাবে কোন মুসলমানেরই উচিত নয় মুসলমানদের কোন অংশ বিশেষ বা গোত্রবিশেষকে কেবল দৃষ্টিতে রাখা।
যেহেতু এলাকা ব্যাপী ইসলামী গণ আন্দোলন সংঘটিত হতে যাচ্ছে সেহেতু আমেরিকা এমন সব বিষয় তুলে ধরছে যাতে এলাকার নিরাশ্রয় জনগণ তাদের ভাগ্য নিজ হাতে নির্ধারিত করতে না পারে । দুঃখজনকভাবে কোন কোন সরকারও ওদের সাহায্য করছে। সাদাত ও ফাহাদের পরিকল্পনা একই।
ধরেও যদি নেই যে, আমেরিকা এমন এক পরিকল্পনা পেশ করেছে যা শতকরা ১০০ভ্গাই ইসলামী ও মানবিক, তথাপি আমাদের বিশ্বাস হবে না যে, ওরা শান্তি ও আমাদের স্বার্থের পক্ষে পদক্ষেপ নেবে। আমেরিকা ও ইসরাইল যদি কালেমা ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ও বলে, তবুও আমরা তা মানবো না। কেননা ওরা চায় আমাদের ধোকা দিতে। ওরা শান্তির বুলি আউড়িয়ে এলাকায় যুদ্ধের আগুন লাগাতে চায়।আপনারা কি আশা করেন যে, এলাকাকে গ্রাস করতে আগ্রহী আমেরিকা, ইসরাইল ও অন্যান্য পরাশক্তির সামনে আমরা নির্বকার থাকবো ? না , আমরা কোন শক্তি-পরাশক্তির সাথেই আপোষ-রফার সম্পর্ক রাখি না। আমরা মুসলমান ও মুসলমান হয়েই জীবন কাটাতে চাই।
আমরা চাই দরিদ্রের জীবনযাপন করবো, তবু মুক্ত ও স্বাধীন থাকবো। যে উন্নতি ও সভ্যতার জন্য বিদেশী বেগানাদের কাছে হাত পাততে হয় সে উন্নতি ও সভ্যতা আমরা চাইনা। আমরা এমন সভ্যতা চাই যা ইজ্জত-সম্মান ও মানবতার স্তম্ভের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। এই স্থম্ভের উপর নির্ভরশীল শান্তি আমরা চাই। পরাশক্তিবর্গ মানুষের মানবতাকেই অধীনস্থ করতে চায়। আমরা, আপনারা ও সকল মুসলমানেরই দায়িত্ব হলো ওদের মুকাবিলায় দাঁড়ানো, আপোষ না করা এবং সাদাত ও ফাহাদ পরিকল্পনা মতো পরিকল্পনাগুলোকে প্রত্যাখান করা।
আমাদের উপর ফরজ হচ্ছে মুজলুম মুস্তাজাফদের স্বার্থবিরোধী এসব পরিকল্পনার নিন্দা করা। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমাদের সমস্যা আপনাদের সমস্যা থেকে ভিন্ন নয়। তবে আপনারা ভালো করে জানেন যে, আমেরিকা ও তার স্থানীয় অনুচর (শাহ) আমাদেরকে মুহুর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তাই আমরা আপনাদের উপযুক্ত সাহায্য দিতে পারিনি। কারণ আমরা এসব অপরাধীদের হাতে আটক ছিলাম। আমরা লেবাননকে আমাদের নিজের বলেই মনে করি। লেবানন ও ইরানের শীয়ারা এবং বিশ্বের সকল মুসলমান সবাই এক ও অভিন্ন। আমরা আশা করি যে, আমাদের একতা সংরক্ষন করতে পারবো।
আমাল আন্দোলনের সদস্যদের সমাবেশে ইমামের ভাষণ; ২৮/৮/১৯৮১খৃ., ছহিফা, ১৫খন্ড, ২০৯পৃ.।
ক্যাম্পডেভিড পরিকল্পনা সম্ভবত মক্কা ও মদীনাকেও মুসলমানদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে
এলাকার বিষয়াদির ভেতর যা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে তা হলো আমেরিকা যায়নবাদ (ইসরাইল) ও ওদের কতিপয় গোলামের হাতে প্রণীত পরিকল্পনাসমূহ। এলাকার কোন কোন মুসলিম ও আরব সরকার ওসব পরিকল্পনাকে উত্থাপন করতে ও সবার উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এসব পরিকল্পনার একটিও ভাল দিক নেই। যারা মনে করছে এসব পরিকল্পনায় গঠনমূলক দিক রয়েছে এরা হয় সমস্যাদির প্রতি মনোযোগী নয় নতুবা ভিন্ন কোন লক্ষ্য পোষন করছে। এসব পরিকল্পনায় গঠনমূলক কিছুই নেই। আমাদের দেশ যে এতো শহীদ ও এতো সব পঙ্গু উৎসর্গ করেছে সবই ইসলামের জন্যে এবং ইসলামও ইরানের কোন একচেটিয়া সম্পদ নয়। এখানেও বহু পঙ্গু এখন সমবেত হয়েছেন। আল্লাহ এদের শেফা দান করুন! ইসলাম সর্বত্রই রয়েছে তা সবারই অধিকার। মিশরেও একই ইসলাম, সুদানেও একই ইসলাম, সিরিয়া ও অন্যান্য স্থানেও একই ইসলাম। আমরা অন্যান্য মুসলমান থেকে নিজেদের আলাদা গণ্য করতে পারি না। আমাদের উপর যে এতো ক্ষয়ক্ষতি আরোপকরা হয়েছে, আমরা যে এতো শহীদ উৎসর্গ করেছি, এতা যে পঙ্গু হয়েছে এবং যে শরণার্থী ও বাস্তুহারা আমাদের দেখা দিয়েছে সব কিছুই ইসলামের জন্য হয়েছে।
ইরান একটি ইসলামী দেশ হওয়ার কারণেই আমরা এতোসব দুঃখÑকষ্ট বরদাশত করেছি। আমরা আরবদের তাদের সহায়Ñসম্পদ ও অধিকারকে আমাদের থেকে পৃথক মনে করতে পারি না। অন্যান্য দেশের সহায়Ñসম্পদ ও অধিকারকেও আলাদা মনে করতে পারি না। সর্বত্রই ইসলাম রয়েছে, সবখানেই মুসলমান বিরাজমান। আমরাও তাদের অংশ। তাই সর্বত্রই ইসলামকে সংরক্ষন করা আমাদের কর্তব্য। যতটুকু সম্ভব ইসলামী দেশগুলোকে পথ দেখানো আমাদের দায়িত্ব। কেননা আজ অত্যন্ত ক্ষতিকর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা চলছে এবং একে অনুমোদন দানের প্রয়াস চালাচ্ছে। আমরা অবশ্যই ইসলামী দেশ সমূহ ও মুসলিম জাতিগুলোকে এসম্পর্কে জানাবো। এর পরিকল্পনার (ক্যাম্পডেভিড) কারণে ইসলােিমর প্রতি এর বিপদের কারণে আমি বিপদাশঙ্কা ঘোষণা করছি।
যারা এই পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে এরা হয় মূর্খ, নয় আমেরিকা ও যায়নবাদের প্রভাবে পতিত। যারা এই পরিকল্পনায় গঠনমুলক দিক রয়েছে বলে মনে করে তারাও একই ধরণের। কেবল ইসরাইলকে সর্মথনের দিকটি ব্যাতীত আর কোন কিছুই যদি এপরিকল্পনায় না থাকতো, এমন অন্য সকল ধারাও যদি গঠনমুলক হতো তবু ইসরাইলকে স্বীকৃতিদানের ধারাটির কারণে সবই বরবাদ বলে গন্য হতো।
ইসরাইকে নিরাপত্তাদানের নিশ্চয়তাবিধান করার অর্থ হলো এ জঘন্যতম অপরাধীকে প্রশ্রয় ও নিরাপদ আশ্রয় দেয়া, অথচ এই ইসরাইল বহুযুগ ধরে মুসলিম ভূখন্ডগুলো দখল করে রেখেছে, ফিলিস্তিন, লেবানন ও অন্যান্য স্থানে পাইকারী গণহত্যা চালিয়ে এসেছে, মুসলমানদের বাস্তুহারা করেছে, মুসলমানদের সহায়Ñসম্পদ ও জীবনকে বিপদাপন্ন করেছে এবং তাঁদের নিজের অশুভ উদ্দেশ্যের বলি করেছে। অথচ এখন কিনা মুসলিম উম্মাহ একে নিরাপত্তা দেবে! এর অর্থ হলো কেউ যদি এই দখলদার দুস্কৃতকারী সরকারের উপর হামলা চালায় তখন সকল মুসলমান ও এলকার সব সরকারের দায়িত্ব হবে ইসরাইলকে প্রতিরক্ষার জন্য ওই হামলাকারীর বিরোধিতা করা। যে ইসরাইল মুসলমানদের খুন পিয়েছে, ফিলিস্তিন ও কুদসকে জবরদখল করেছে, লেবাননকে এরুপ অবস্থায় নিয়ে পৌছিয়েছে, মুসলমানদের হত্যা ও লন্ঠন করেছে, সে ইসরাইলকে এখন কিনা সবাই মিলে পুরস্কার দেবো, একে সংরক্ষন করবো এবং স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা দেবো!
কুদস ও ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশের প্রথম দিন থেকেই যার সকল কাজকর্ম ছিলো দখলদারীমূলক তাকে আমরা স্বীকৃতি দেবো অর্থাৎ আরব দেশগুলো এই অপরাধী ফাসেক ও কাফের সরকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং এতো সব অপরাধÑঅপকর্মের পর ইসরাইলকে পুরুস্কৃত করবে। কেউ কেউ বলছে এ চুক্তিতে গঠনমূলক দিক রয়েছে আর তা হলো ইসরাইল কোন কোন এলাকা ছেড়ে দেবে। এ ধরনের কথা মোটেও ইতিবাচক বা গঠনমূলক নয়, বরং নেতিবাচক। এ ধরনের কথার অর্থ হলো ইসরাইল এতো সব ভূখন্ড যে দখল করেছে সবই তার নিজস্ব হবে এবং দু’ একটি স্থান ফেরত দেবে অর্থাৎ আমরা যেনো সাদ্দামের সাথে এভাবে আপোষ করবোঃ এসো খুজিস্থান প্রদেশের কিছু এলাকা তুমি নিয়ে যাও আর কিছু এলাকা আমাদের হাতে থাকে। না, এ ধরনের চুক্তির সবটাই ইসরাইলের স্বার্থে প্রণীত। ওরা ইসরাইলকে আরবদের উপর শাসকরুপে দাঁড় করাতে চায়। আমি সকল ইসলামী সরকার, বিশেষত আরব জাতিগুলোকে সাবধান করে দিচ্ছি, ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সামরিক বাহিনীসমূহকে, আরবদেশগুলোর সামরিক বাহিনীগুলোকেও সাবধান করে দিচ্ছি যে, একটি আবদ্ধ স্থানে জাতিগুলোর দৃষ্টির বাইরে কার্যকর এ চুক্তি আপনাদের ইসরাইলের হাতে বন্দী করা, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপনাদের ইসরাইলের গোলামে পরিণত করা এবং হাত বাঁধা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় আপনাদের ইসরাইল ও আমেরিকার হাতে সোপর্দ করা বৈ অন্য কোন ফল দেবে না।
ইসলামী ও আরব জাতিগুলোর জন্যে এর চেয়ে বড় আর কোন কলঙ্ক ও অবমাননা থাকতে পারে না যে, এ ধরনের শতকরা একশ’ ভাগ ইসলামবিরোধী, ধ্বংসকরী ও অপরাধমূলক চুক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ইসরাইলের প্রভুত্ব মেনে নেয়া আরবদের জন্য মহাকলঙ্ক। আমি সকলকে সতর্ক করে দিচ্ছি, যদি এই চুক্তি মেনে নেয়া হয় তাহলে ইসরাইল আগামী দিন মক্কা ও মদীনাকেও আপনাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবে।
জাতিগুলোর উচিত সজাগÑসচেতন হওয়া, নিজ নিজ সরকারকে সজাগ করা এবং এই দুরাচারী কুফরী পরিকল্পনার সাথে বিরোধিতা করা। এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমেরিকা হিংস্র দাঁতালের মতো এগিয়ে আসছে, ভয় দেখিয়ে এদেরকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করাচ্ছে, এলাকায় তার কমান্ডারদের অবতরণ করিয়েছে। এলাকায় সৈন্য নামিয়েছে, প্রদর্শনীর আয়োজন করছে কুটনীতিক ও ভয় প্রদর্শনকারীদের পাঠিয়েছে যাতে সরকারগুলোকে ভীত সন্ত্রস্ত করতে পারে।
জাতিসমূহ ও জনগণের উচিত নয় ভয় পাওয়া। তাদের উচিত সৎ সাহস দেখানো। আমরা সবাইও যদি ধ্বংস হয়ে যাই তবু ইসরাইল ও আমেরিকার হাতে লাঞ্চিত হওয়ার চেয়ে উত্তম। আরব ও মুসলিম জাতিগুলোকে লাঞ্চিত ও অপদস্ত করার জন্যই আমেরিকার নির্দেশে এ পদক্ষেপে নেয়া হয়েছে। কলঙ্কিত ও ধ্বংস হোক সেই আরবরা যারা নিজ দেশের উপর ন্যূনতম শাসন ক্ষমতা ও ভোগÑবিলাসের সুযোগ পাওয়ার লোভে এ ধরনের যিল্লতির কাছে আত্মসমর্পন করছে। আমাদের সবার মুখও কলঙ্কিত হোক যদি আমরা নীরব বসে থাকি। সরকারগুলো যদি বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন না করে থাকে কিংবা ইসলাম এবং আরব ও মুসলিম জনসাধারণের প্রতি এসব বিশ্বাসঘাতকতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে এবং এই চুক্তি মেনে নেয় তাহলে এদের কানাকড়িও মূল্য নেই।
ইমামের ভাষণ, ১৭/৯/১৯৮১ খৃঃ, ছহিফা, পঞ্চদশ খন্ড, ২২৪Ñ২২৫ পৃঃ।

আপোষকামী পরিকল্পনাগুলো ইসরাইলের আগ্রাসনেরই পটভুমি
যদি আমেরিকার এই পরিকল্পনা (ক্যাম্পডেভিড) না থাকতো , যদি ফাহাদের হাতে আমেরিকার দ্বিতীয় পরিকল্পনা (সৌদী বাদশাহ ফাহাদের আট দফা পরিকল্পনা) প্রণীত না হতো এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলোও যদি প্রণীত না হতো তাহলে ইসরাইল মোটেও এ সাহস পেতো না যে, গোলান হাইটসকে তার দেশের অন্তর্ভক্ত করবে। এসব পরিকল্পনাই অনৈক্য ও ফাটল সৃষ্টি করেছে এবং ইসরাইলের জন্য পথ খুলে দিয়েছে।
ইমামের ভাষণ, ১৬/১২/১৯৮৯ খৃঃ, ছহিফা, পঞ্চদশ খন্ড, ২৬২ পৃঃ।
দুশমনের উপর থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা
বিশ্বাসঘাতক সাদ্দাম আজ ভালো করেই বুঝেছে যে, তার জন্যে যে ফাঁদ বিস্তার করা হয়েছে তা থেকে মুক্তির পথ নেই এবং ইরাকের কাফের বাথ পার্টির পতন ও ধ্বংস বৈ অন্য কোন পরিণতি নেই। সে এতসব জঙ্গী শ্লোগান ও কাদেসিয়ার মিথ্যা সেনাপতি হওয়ার চীৎকার দান, বিপ্লবী হওয়ার ফাঁকা ঢোল পেটানো ও ইসরাইলের আপোষহীন শক্র হওয়ার আসফালন সত্তেও আজ ইসরাইলের বন্ধু ও প্রভু আমেরিকার পদতলে আত্মসমর্পণ করেছে। সে নিজ হাতে নিজের ধ্বংসের যে ফাঁদ তৈরী করেছে তা থেকে প্রথমত নিজের নাজাতের উদ্দেশ্যে আরব ও ইসলামের দুশমনের দিকে কলঙ্কের হাত বাড়িয়েছে এবং দিত্বীয়ত ইসলামের ঘোরতম দুশমনদের, তাদের ভূমিসমূহ জবরদখলকারী আগ্রাসীদের ও কলঙ্কিত ক্যাম্পডেভিড চুক্তির উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার এবং হুসনী মুবারককে আরব সমাজে পুনরায় গ্রহনযোগ্য করার চেষ্টা চালিয়েছে। এছাড়াও আরব জাতিসমূহ এবং সর্বোপরি ইসলামের জন্য কলঙ্কজনক ফাহাদ পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্যেও সে পাঁয়তারা করছে।
আমি এলাকার আরব সরকারগুলোকে সাবধান করে দিচ্ছে যে, এ ধরনের পরিকল্পনাগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করে এরা আমেরিকা ও তার চেয়েও জঘন্যতর ইসরাইলের হাতে দাসত্ব বরণ ছাড়াও চিরকালের জন্যে ইরানের শক্তিশালী জাতি, সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর দুশমনী ডেকে আনছেন।
আজ যদি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ না করুন তাহলে কাল দেরী হয়ে যাবে। আপনাদেরকে আমেরিকার প্রতারণামূলক পদক্ষেপ এবং হুসনী, হাসান, হুসাইন ও কাবূসের (মিশর, মরক্কো, জর্দান ও ওমানের প্রেসিডেন্ট, রাজা ও সুলতানদের দল) জঙ্গী আসফালন যেন একটি ইসলামী দেশের বিরুদ্ধে ময়দানে না নামায়। কেননা প্রকৃতপক্ষে এসব আসফালনকারীই প্রাণরক্ষার জন্যে প্রভুদের আশ্রয় লাভের প্রয়োজন মনে করছে। তাই ওরা যেন ওদের দেশের যুবকদের ও সামরিক বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদকে ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে ময়দানে নামাতে না আসে। কারণ এ দেশ আমেরিকার মত বড় শয়তান ও অন্যান্য ছোট শয়তানের সমর্থনপুষ্ট শাহের বিশাল শয়তানী শক্তিকেও জাহান্নামে পাঠিয়েছে। তাছাড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত শাহের চেয়েও বড় অপরাধী সাদ্দামকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে।
ইমামের বাণী, ২৭/৫/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষোড়শ খন্ড, ১৫৮ পৃঃ।
ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান মুসলমানদের জন্য এক মহাবিপর্যয়
ইসলামের উপর যে সব সমস্যা ও বিপদাপদ এসেছে সে সবের সামনে ইরানের জাতি ও বিশ্বের সকল মুসলমানের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আজ সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে ক্যাম্পডেভিড চুক্তি ও ফাহাদ চুক্তি যা ইসরাইল ও এর অপরাধসমূহকে মজবুত করবে। আমরা সবাই ইসলাম, কুরআনে করীম ও ভবিষ্যত বংশধরদের কাছে দায়িত্বশীল। আর সবচেয়ে দায়িত্ব বেশী সৌদী আরব সরকারের।
আমার এ ভয় ও আশঙ্কা হচ্ছে যে, খোদা না করুন, এমন একদিন আসবে যখন ইসলামী সরকার ও জাতিগুলো সজাগ হবে ঠিকই কিন্তু করার আর কিছুই থাকবে না। ততদিনে দুস্কৃককারী আমেরিকার সহায়তায় ইসরাইল তার সকল অত্যাচারমূলক ও অপরাধপূর্ণ লক্ষ্যÑউদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। ইসরাইলের স্বাধীনতা ও একে স্বীকৃতি দানমূলক যে কোন পরিকল্পনাকেই আমি মুসলমানদের জন্যে এক মহাবিপর্যয় ও ইসলামী সরকারগুলোর জন্যে বিসফোরণ মনে করি এবং এর সাথে বিরোধিতা করাকে এক মহাইসলামী ফরজ ও কর্তব্য বলে বিবেচনা করি। মুসলমান নামধারীদের হাতে যেসব পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র ইসলামের বিরুদ্ধে প্রণীত হচ্ছে তা থেকে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
ইমামের বাণী, ৫/৬/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষোড়শ খন্ড, ১৮১ পৃঃ।
কোন কোন ইসলামী সরকার নেকড়ের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে!
মূর্খরা মনে করেছিল এদের অমানবিক অপরাধ চালিয়ে ও মহান ব্যক্তিত্ববর্গকে শহীদ করে ইরানের প্রিয় জাতিকে ময়দান ছাড়া করতে পারবে। এরা জনগণের উপস্থিতির রহস্যকে বুঝতে পারেনি, আর পারবেওনা। এ জাতি এখন আল্লাহর শক্তির উপর ভরসা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, সাদ্দাম ও তার আফলাকী বাথ পার্টির হেফাজত করার জন্যে আমেরিকার সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর এবং ইরাক সরকারের চূড়ান্ত পরাজয়ের পর আমাদের বীর সামরিক বাহিনী বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখে ধাবিত হওয়ার পথ খুলে ফেলতে পারবে। আশা করছি, ইসলামী দেশ লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসন, হত্যাকান্ড ও লটতরাজের সামনে এলাকার দেশগুলোর নির্বিকারে ও উদাসীন অবস্থা প্রত্যক্ষ করবো না। ইসরাইল তার এ আগ্রাসনে ঐ দেশের সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। মুসলিম জাতিগুলোর জানা আবশ্যক যে, এলাকার কতিপয় সরকারের মৃত্যুবৎ নীরবতা এবং আমেরিকা ও ইসরাইলের সামনে এদের প্রশ্নাতীত আত্মসমর্পণের ফলে আজ প্রিয়তম লেবানন এ বিশ্ব লুটেরা ও তার উচ্ছিষ্টভোগীর (আমেরিকা ও ইসরাইল) উদরে হারিয়ে যাচ্ছে এবং আগামীতে অন্যান্য প্রিয় দেশের পালা আসবে। আজ যদি এলাকার সরকারগুলো তেলঅস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অপরাধীদের মুকাবিলায় দাঁড়ায় তাহলে ইসরাইল, আমেরিকা ও অন্যান্য যে কোন অপরাধী শক্তির সমস্যা সমাধানে হয়ে যাবে। কোন কোন ইসলামী সরকার প্রধান অপরাধী ও পয়লা নম্বর চক্তান্তকারী আমেরিকার দিকে হাত প্রসারিত করায় এবং মানুষখেকো নেকড়ের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করায় আমরা তীব্র দুঃখ প্রকাশ ও নিন্দা করছি। আমাদের উপর ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং আমাদের অন্যদিকে ব্যস্ত রাখার ষড়যন্ত্রগুলো যদি বাস্তবায়িত না হতো তাহলে ইরানের বীর জাতি ও এর সশস্ত্র বাহিনী আজ অন্য ধরনের আচরণ করতো। আমরা কয়েকবারের মত ইসলামী সরকারসমূহ, বিশেষ করে এলাকার সরকারগুলোর কাছে গমন করেছি এবং তাদের কাছে দৃঢ়তার আহবান জানিয়েছি যে, ইসলামী জাতিগুলোর ইজ্জতÑসম্মান, জানমাল ও সহায়Ñসম্পদ হেফাজতের খাতিরে যেন উঠে দাঁড়ায়, আমাদের সাথে, সিরীয় সরকার ও ফিলিস্তিনীদের সাথে একত্র হয়, এক সারিতে দাঁড়িয়ে ইসলামের ইজ্জতÑসম্মান ও গৌরবের প্রতিরক্ষা করে এবং নিজেদের স্বর্ণগর্ভা দেশসমূহ থেকে চিরকালের জন্যে অপরাধী ও দুস্কৃতকারীদের উচ্ছেদ করে।
ইমামের বাণী, ২৭/৬/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, ষাড়শ খন্ড, ২১৭ পৃঃ।
ইসরাইলকে যদি স্বীকৃতি দেয়া হয় তাহলে সে সবার মনিব সেজে বসবে
আজ ইসরাইল ইসলামী দেশগুলোর মনিবে পরিণত হতে যাচ্ছে ।যদি এসব উদাসীনতা , নির্বিকারত্ব , সাহায্য-সহায়তা এবং ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার পায়তারা কার্যকারী হয় তাহলে সে সবার মনিবে পরিণত হবে এবং আমেরিকার পরিকল্পনায় এযাবত সে যে ভাবে নিজের সামনে ও আমেরিকার সামনে সবাইকে লাঞ্চিত অবমানিত করেছে তা আগামীতে আরো বেড়ে যাবে এবং সর্বত্র শিকড় ছড়াবে।
ইমামের ভাষণ; ৩১/৮/১৯৮২ খৃ., ছহিফা, ১৬খন্ড, ২৭৩পৃ.।

ফেজ কনফারেন্সে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে
আপনারা জানেন কি মরক্কোর ফেজে কি ঘটছে ? এরপর ইসরাইল বা কি করেছে? আমি ওসবের পুরাবৃত্তি করবো না। এক বিষয় নিয়ে আমি কথা বলবো। সেখানে উত্থাপিত পরিকল্পনার (ফাহাদের আট দফা পরিকল্পনা) সপ্তম দফা সম্পর্কে দাবী করা হচ্ছে যে, ওতে নাকি ইসরাইলের প্রতি স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। বাস্তবেও কি স্বীকৃতি দেয়া হয়নি? উপরন্তু শুধু কি স্বীকৃতিই দেয়া হয়েছে নাকি তারও অধিক কিছু ? যখন ইসলামী দেশগুলো সম্মেলনে (ফেজে) বসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানায়ঃ এসো এখানে, এলাকার দেশগুলোর নিরাপত্তা বিধান করো, তখন প্রশ্ন ওঠেঃ ইসরাইল কি এলাকার অন্তর্গত দেশ নয়? নিশ্চয়ই। যদি তাÑই হয় তবে ফেজ সম্মেলনে কি ইসরাইলকে ব্যতিক্রম বলে ধরা হয়েছে, নাকি ধরা হয়নি? নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম বলে ঘোষনা দেয়া হয়নি এবং ইসরাইল এলাকারই দেশ। বেশ ভালো কথা। এখন আপনারা যখন বলেছেন, হেজাজ (সৌদী আরব), লেবানন ও অন্যান্য দেশের মত ইসরাইলেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে তখন এর অর্থ হচ্ছে যদি কোন দেশ ইসরাইলের প্রতি আক্রমন চালায় নিরাপত্তা পরিষদ এসে আক্রমনকারীকে ঠেকাতে পারবে। এতে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে, কেউ ইসরাইলের ক্ষতি করতে চাইলে কিংবা তার বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলে ফেজে বসে শীর্ষ নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে অনুসারেই নিরাপত্তা পরিষদ এসে বাধা দিতে পারবে। আর এর তাৎপর্য হচ্ছে ইসরাইলকে শুধু স্বীকৃতিই দেয়া হচ্ছে না, উপরন্তু এর নিরাপত্তাকেও বীমা করা হচ্ছে।
এ সম্মলনের পর ইসরাইলই বা কি করলো? ইসরাইল তার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলোÑ এ পরিকল্পনার (ফাহাদ) প্রতি দৃষ্টিপাত করারও মূল্য নেই, তা পড়ে দেখারও কোন দাম নেই! পরিণতিতে এখন ইসরাইল এত সব অপরাধযজ্ঞে হাত দিয়েছে। ওসব শীর্ষ নেতা এবং খোদ আমেরিকার ভাষাতেই এ অপরাধ হচ্ছে কসাইবৃত্তি। যদি আমেরিকাই বলে যে কোথাও কসাইবৃত্তি করা হয়েছে, খোদ কসাই সর্দারই যখন বলে কসাইবৃত্তি চালানো হচ্ছে তখন বুঝতে হবে সেখানে কত বড় বিপর্যয়ই না ঘটে গেছে!
লেবানন, বৈরুত ও অন্যান্য স্থানের মজলুম জনতা কি করেছে যে, এ রকম বিপর্যয় নেমে এলো? শীর্ষ নেতারা এমন দেশকেই বীমা করলো যে, তাদের এ উদারতার প্রতি ভ্রূক্ষেপও করেনি। আমি একটি কথাই বলতে চাই, তা হলো, ইসরাইল যদি সারা জীবনে একটিও সত্য কথা বলে থাকে তবে এটি হলো এই যে, এ চুক্তি (ফাহাদ পরিকল্পনা) নজর বুলানোরও দাম রাখে না। কেন দাম নেই? কারণ যারা ঐ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ওদেরই কোন দাম নেই? ওদের যদি কোন দাম থাকতো তাহলে ইসরাইল কি এ ধরনের কোন কথা বলতে পারতো? এ ধরনের অবমাননা যদি কেউ কারো প্রতি করে বসে এবং বলে দেয়ঃ তোর কথা শোনার মত দামই নেই, যা লিখেছিস তাতে তাকানোরও কোন মূল্য নেই, তাহলে সে লোক সাধারন লোক হলেও ঐ বক্তার সাথ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শত্রু হয়ে থাকবে। এসব শীর্ষ নেতা এমন একজনের পক্ষ নিয়েছে যে তাদের এভাবে অবমাননা করলো। এভাবে তাদের লাঞ্চিতও করলো এবং এর পরপরই বৈরুত, লেবানন ও দক্ষিণ লেবাননে এভাবে আগুন ধরিয়ে দিল। এত অবমাননা, এত আঞ্চনা দেয়ার পরও এরা এখানো আমেরিকা ও ইসরাইলের পক্ষে অটল রয়েছে এবং হেজাজের পুলিশ আমাদের নারী, বৃদ্ধ, যুবক ও শিশুদের বন্দী করছে এবং দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে! এদের কি অপরাধ? এরা কি মুসলমান নয়? এরা কি বলেছিল? বলেছিল, আমেরিকা মুর্দাবাদ! রাশিয়া মুর্দবাদ! ইসরাইল ধ্বংস হোক! এরা ওদের মউত ও ধ্বংস কামনা করেছিল। এ বলেই কি এরা মুসলমান নয়? এরা কি আল্লাহর ইবাদত করতে যায়নি? এরা এমন কি করলো? এরা তো ইবাদতই করছিল, এরা তো রহমতের আশ্রয়ে ছিল, এরা তো ইসলামের জন্যে ফরিয়াদ করছিলো! এরা এছাড়া আর কি করেছে?
এরা বলেছে ইসরাইল ধ্বংস হোক! ইসরাইল এমন কি যে, এসব বলা যাবে না? ইসরাইল কি আমাদের বন্ধ? যে বন্ধু বলছে যে, তোমাদের কথা শোনার কোন মূল্য নেই সে কি তোমাদের বন্ধু? নাকি সে তোমাদের প্রভু? আমেরিকা পর্যন্ত এ যাবত তোমাদের এমন কথা শোনায়নি। আমেরিকাও এতসব শক্তি থাকা সত্ত্বেও তোমাদের এহেন কথা বলেনি। অথচ তোমাদের মত এতসব কিছুর দাবীদার লোকদের কথা শোনারও কোন দাম নেই বলে সে জানিয়ে দিল। আমেরিকা এ যাবত তোমাদের তা বলেনি। অথচ ইসরাইলের এহেন কথাকেও তোমরা মাথা পেতে নিচ্ছো। তাই দুনিয়া ও আখেরাতের যিল্লতি ও অবমাননা ভোগ করার জন্য তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো।
ইমামের ভাষন, ১৯/৯/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফাদ্দঞ্জ সপ্তদশ খন্ড, ২২Ñ২৪।
সুমহান কোরবানীর ঈদের প্রাক্কালে অবশ্যই বিশ্বের সকল মুসলমান, বিশেষ করে আম্বিয়ায়ে কেরামের পিতা হযরত ইবরাহিম খলিলুল্লাহ সালাওয়াতুল্লাহি আলাইহে ওয়া আলাইহিমের মহাকোরবানগাহের দিকে গমনকারী বায়তুল্লাহ আল হারামের হাজীগণের প্রতি মুবারকবাদ জানানো উচিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ বছর মুসলমানদের উপর এমন সব বালাÑমুসিবত নেমে এসেছে যে, মুবারকবাদ জানানোর বদলে শোকÑসমবেদনা জানানো উচিত। মুসলমানদের পবিত্র ভূখন্ডে শয়তানে বুযুর্গ অপরাধী আমেরিকার আগ্রাসনের জন্যই কেবল এ শোকÑসমরবদনা নয়, প্রিয় ইসলামী দেশ লেবাননে সন্ত্রাসবাদী ও পেশাদার দু®কৃতকারী ইসরাইলের হামলার কারণেই শুধু এ শোক-সমবেবদনা নয়, আমাদের দেশ ইরানের দক্ষিন ও পশ্চিমানঞ্চলের আরব ও অনারব মুসলমানদের উপর আমেরিকা ও ইসরাইলের কৃতদাস আফলাকী সাদ্দআমের অপরাধযজ্ঞের কারণেই শুধু এ শোক-সমবেদনা নয় মজলুম লেবাননের উপর ইসলাম ও মানবতার দুশমনদের বিজয়ের এবং সেখানকার হাজার হাজার অসহয় যুবক, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুর পাইকারী হত্যাকান্ডের মিশর, জর্দান, সুদান, মরক্কো ও অন্যান্য দেশের শীর্ষ নেতাদের আনন্দ, উল্লাস ও নাচানাচীর কারণেই কেবল এ শোক-সমবেদনা নয়।
যদিও এসব বালা-মসিবতের জন্য শোক প্রকাশ আবশ্যক কিন্তু যে মহিিবপর্যয়ের সামনে এসমস্ত বালা-মসিবত ও নগন্য বলে গন্য , তা হলো মুষ্টিমেয় কতিপয় ইতর ইয়াহুদী বর্নবাদী সন্ত্রাসী কিনা জঘন্যতম পন্থায় মুসলমানদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। যে মুসলমানদের এত সব বৈষয়িক ও নৈতিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যারা এক ঠেলায় আমেরিকাকেও এলাকা থেকে পিছু হটিয়ে দিতে পারে তাদের সামনে ইসরাইল কোন ছাড়! নিজেদের ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত একদল নিরাশ্রয় বাস্তুহারার জন্যে আমরা শোক করছি না যদিও তা এমন এক বিরাট বিপর্যয়পূর্ণ আপরাধ যাকিনা ইসলামের দাবীদার সরকারগুলোর চোখের সামনে প্রকাশ্যে ইসরাইলের হাতে সংঘটিত হচ্ছে। এর চেয়েও মহাবির্পযয় হলো ইসলামের দাবীদার সরকারগুলো আমেরিকা ও ইসরাইলের মনোরজ্ঞনের জন্যে তৎপরতায় ব্যস্ত যাতে করে ক্যাম্পডেভিট কিংবা এধরণের পরিকল্পনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং মহা অপরাধ চালিয়ে সুস্পষ্টভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতী দিতে কিংবা মনিবের আসনে বসাতে পারে। মুসলমানদের জন্য এটাই মহা বিপর্যয় যে, কতিপায় তথাকথিক মুসলিম সরকার এতবড় বিপর্যয়ের ভেতরেও মজলুমদের বাঁধা দিয়ে চলেছে যাতে তারা জালিম-অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে চিৎকারও করতে না পারে ।
পবিত্র কুরবানীর ঈদ উপলক্ষ্যে ইমামের বাণী; ২০/৯/ ১৯৮২ খ্রী., ছহিফা ১৭খন্ড, ২৭পৃ.।

দামত্বমুলক ক্যাম্প ডেভিডচুক্তি একটি কলঙ্ক
বিশ্বের মুসলমানরা যদি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের লক্ষ্যÑউদ্দেশ্য যার সারবত্তা হচ্ছে মানুষ গড়ার সর্বশেষ কিতাব কুরআনুল করিম, যে পথনির্দেশকারী কিতাব আলোর উৎস ‘‘আল্লাহ নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ’’ থেকে খাতেমুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের নূরানী কলব নামক মেশকাতে অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে মানব জাতির অন্তরগুলোকে অন্ধকার ও আলোর পর্দাসমূহ হতে মুক্ত করতে পারে এবং বিশ্বকে ‘‘নূরুন আলা নূর’’ তথা অত্যধিক আলোকময় করতে সক্ষম হয়, সেই কিতাব অনুধাবন করতে পারে এবং আলোর সমুদ্রে মিশে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা কখনো শয়তান ও শয়তানের সন্তানদের হাতে বন্দী হতে পারে না; কয়দিনের কল্পিত ক্ষমতার লোভে নিজেদের কপালে যিল্লতি ও অবমাননার কলঙ্ক বরণ করতে পারে না এবং শয়তানে বুযুর্গের (আমেরিকা) নৈকট্য অর্জন ও ক্যাম্পডেভিড চুক্তির মত দাসত্ব চুক্তি বাস্তবায়নে এভাবে ছুটাছুটি করতে পারে না।
কুরআন ও ইসলামের মহাসাগর থেকে বিচ্ছিন্ন হে ফোঁটাসমূহ! আত্মসম্বিৎ লাভ করো, এ খোদায়ী মহাসাগরে মিশে যাও। এই চূড়ান্ত আলো থেকে আলো সংগ্রহ করো যাতে বিশ্ব লুটেরাদের লোভাতুর চোখ তোমাদের উপর পড়ামাত্রই ঝলসে যায়, ওদের লুটেরা ও আগ্রাসী হাত পুড়ে যায় এবং সম্মানজনক ও মূল্যবোধপূর্ণ মানবিক জীবন লাভ করতে পারে। তবেই কেবল এ ঘৃণ্য নোংরা জীবন ও অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারোÑ যে অবস্থায় মুষ্টিমেয় কতিপয় বাস্তুহারা ভবঘুরে ইসরাইলী তোমাদের উপর শাসনকার্য চালাচ্ছে এবং মজলুম মুসলমানদের তোমাদের চোখের সামনেই পদদলিত করছে।
হে খোদা! আমাদের মত ঘুমন্তদের সজাগ হওয়ার তৌফিক দান করুন এবং ইসলামী দেশগুলোর শাসকদের আত্মসম্বিৎ ফিরিয়ে দিন যাতে এরা ইসলামী মানদন্ডের ভিত্তিতে মুসলমানদের উপর শাসন করতে পারে এবং জঘন্য শয়তানী ও তাগুতী মূর্তিসমূহকে চুরমার করতে পারে।
ইমামের বাণী, ২০/৯/১৯৮২ খৃঃ, ছহিফা, সপ্তদশ খন্ড, ৩০ পৃঃ।
আমেরিকার হাতে চুমো খাওয়ায় মিশরকে পুরস্কার দান
এতে কোন অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, আমেরিকা ও তার উচ্ছিষ্টভোগীরা মিশরকে আরব বিশ্বে পুনরায় স্থান দেয়ার জন্যে যে কোন প্রচেষ্টা চালাবে, বরং আরব শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অবস্থাই অবাক হওয়ার বিষয় ও দুঃখজনক। এতসব দীর্ঘ পটভূমি রচনা, প্রচরণা, পর্দার আড়ালে ও বাইরে দৌড়াদৌড়ি, বিস্ময়কর কথাবার্তা, ওঠাবসা এবং মুসলমানদের ও ইসলামের সমস্যাদি নিয়ে এতসব আসফালন করার পর ইসরাইলের মিত্র মিশরকে সসম্মানে আরব সমাজে স্থান দিল। সেদিন মিশরকে যায়নবাদীদের সাথে চুক্তি করার জন্য বের করে দিল আর আজ ইসরাইলকে শক্তিশালী করা ও স্বীকৃতি দানের কারণে বরণ করে নিল! সেদিন আরবদের লক্ষ্যÑউদ্দেশ্য না মানায় মিশরকে বের করলো আর আজ আমেরিকার হাতে চুমো খাওয়ায় তাকে বুকে তুলে নিলো! সেদিন ফিলিস্তিনের আদর্শের প্রতি খেয়ানত করায় মিশরকে বের করে দিল আর সদলবলে ঐ খেয়ানত স্বাক্ষর করায় কোলে তুলে নিলো! এর চেয়েও দুঃখজনক ও কলঙ্কময় হচ্ছে মিশর চরম অবজ্ঞার সাথে এদের (আরব নেতাদের) কোন শর্ত ও দাবীই গ্রহণ করলো না, বরং কায়রোর একজন উচ্চপদস্থ নেতা বলে বসলো ঃ আরব শীর্ষনেতাদের উচিত তাদের ভুল স্বীকার করা!
লেবাননে ইস্যু, আফগানিস্তান সমস্যা এবং আরব বিশ্বের অন্যান্য ইস্যু এমন কোন সমস্যা বলেই গণ্য হলো না যে, তথাকথিত ইসলামী শীর্ষ নেতার ওসবের জন্য তাদের অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রিয়তম সময়কে ব্যয় করতে পারে! আরব, অনারব ও অন্যান্য সম্মানিত মজলুম মুসলমান জাতিগুলো কেমন করে এই কলঙ্ক বরদাশত করতে পারছে যে, তাদের শাসকরা হচ্ছে এসব লোক? এখনো কি সে সময় আসেনি যে, ইসলামী জাতিগুলো রুখে দাঁড়াবে এবং নিজ নিজ শাসকদের হয় ইসলামের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করবে নতুবা তাদের সাথে তাই করবে যা ইরানের শাহের সাথে করা হয়েছে।
ইমামের বাণী, ১১/২/১৯৮৪ খৃঃ, ছহিফা, অষ্টাদশ খন্ড, ২২৮-১১৯পৃঃ।
ইন্তিফাদা ঠেকানোর চক্রান্ত
সবাই (শীর্ষ নেতারা) সম্মিলিত হয়ে বাধা দিচ্ছে যাতে ফিলিস্তিনী জাতি যে পথ ধরেছে সে পথ অব্যাহত রাখতে না পারে কিংবা ওরা আফসোসের ছদ্মবেশে বলে বেড়াচ্ছে, হায়, হায়! ফিলিস্তিনের কী অবনতিই না ঘটছে! ভালো হতো যদি তারা একটু ভেবেচিন্তে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতো যাতে সমস্যা মিটে যায়! কিন্তু ফিলিস্তিনী জনগণের জানা উচিত তারা যদি এক কদমও পিছিয়ে যায় তাহলেই তাদের ফিরে যেতে হবে সেই প্রথম অবস্থায়। বর্তমানে ফিলিস্তিনীরা ইয়াহুদীদের (যায়নবাদী) পদতলে ফেলতে যাচ্ছেন। আশা কার, এতে তারা সফল হবেন। যারা তাঁদের কল্পনানুযায়ী ফিলিস্তিনীদের মঙ্গলজনক উপদেশ দিতে যায় তারা আসলে ধোঁকা দিতে চাচ্ছে। যারা বলছে কিছুকাল সন্ধি হোক, যুদ্ধ বিরতি হোক কিংবা মাস পাঁচেক বিরতি দিক এসব কথার পেছনে এদের লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনীরা এখন যে কাজে হাত দিয়েছেন (ইন্তিফাদা বা গণআন্দোলন) এবং এতে এগিয়ে যাচ্ছেন তা থেকে বিরত রাখতে ও পুনরায় তাদের পদপিষ্ট করতে।
ইমামের ভাষণ, ১০/২/১৯৮৮ খৃঃ, ছহিফা, বিংশ খন্ড, ১৭৯ পৃঃ।
আত্মবিক্রীত বিপ্লবী নামধারীরা আমেরিকা ও ইসরাইলের আশ্রয় নিয়েছে
মুসলিম জাতিগুলোর উচিত ফিলিস্তিনকে নাজাত দানের উপায় চিন্তা করা এবং ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশ করা। সে ঘৃণ্য আত্মবিক্রীত আপোষকামী নেতাদের প্রতি যারা ফিলিস্তিনের নামে অধিকৃত এলাকাগুলোর জনগণের আদর্শ এবং ওসব এলাকার মুসলমানদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। তাদের উচিত বিশ্বাসঘাতকদের বাধা দেয়া যাতে আলোচনার টেবিলে বসে এবং এদিক সেদিক আসাÑযাওয়া করে ফিলিস্তিনের বীর জাতির মানÑসম্মান, মূল্যও গৌরবকে পদদলিত করতে পারে। কেননা এই বিপ্লবী নামধারী আত্মবিক্রংকারী ও ইতররা আল কুদস মুক্ত করার নামে আমেরিকা ও ইসরাইলের আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
ইমামের বাণী, ২৮/৭/১৯৮৭ খৃঃ, ছহিফা, বিংশ খন্ড, ১১৪ পৃঃ।
খাদেমুল হারামাইন কর্তৃক ইসরাইলের নিশ্চয়তা বিধান
মুসলমানরা বুঝতে পারছে না যে,তাঁদের এ ব্যাথা কোথায় লুকাবে যে, আলে সৌদ (সৌদী বংশ) ও খাদেমুল হারামাইন ইসরাইলকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে যে, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবো না। এরা এ কথার প্রমাণ হিসাবে ইরানের সাথে সম্পর্কও ছিন্ন করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে যায়নবাদী ইসরাইলীদের সাথে ইসলামী দেশসমূহের শীর্ষ নেতাদের সম্পর্ক কত ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক হতে পারে যে, এর ফলে এরা ইসলামী দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের কার্য বিবরণী থেকে ইসরাইলের সাথে বাহ্যিক ও নামকাওয়াস্তের সংগ্রাম চালানোর কথাটা পর্যন্ত বাদ দিতে পারে! এদের যদি তিল পরিমানও ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মান ও ইসলামীÑআরবী শৌর্যবীর্য থাকতো তাহলে মোটেও এ ধরনের নোংরা রাজনৈতিক ও আত্মবিক্রয়কারী ও দেশ বিক্রয়কারী লেনদেন করতে পারতো না।
মক্কায় পাশবিক হত্যাকান্ডের বার্ষিকীতে দেয়া ইমামের ভাষণ, ২০/৭/১৯৮৮ খৃঃ,ছহিফা, বিংশ খন্ড, ২৩১ পৃঃ।
অর্থ দিয়ে ফিলিস্তিনী ও লেবাননী সংগ্রামীদের সমর্থন করার অনুমতি দান
কল্যানকামী মুসলমান জনসাধারণ, বিশেষ করে কল্যানমূলক কাজে অগ্রগামী ইরানের জনগণের দায়িত্ব হলো অবিলম্বে নিরাশ্রয় শরণার্থীদের নাজাত দানে ধাবিত হওয়া, যে কোন উপায়ে তাদের সাহায্যে ছুটে যাওয়া, আল্লাহ তায়ালার দরবারে জবাব দানের দায়িত্ব অনুভব করে যে কোন সম্মানজনক সাহায্যÑসহযোগিতা থেকে বিরত না হওয়া এবং ইচ্ছে করলে ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের পবিত্র তহবিল (খুমস অর্থাৎ শিয়া মাজহাবে মারজায়ে তাকলিদ তথা সর্বজনকমান্য পীরÑমাশায়েখদের কাছে দেয় জনগণের বার্ষিক আয়ের শতকরা বিশ ভাগ অর্থ যা ইমাম মাহদীর তহবিল নামে পরিচিত। ইসলামের পথে ও জনসাধারণের কল্যাণে পীর মাশায়েখগণ এ অর্থ ব্যয় করে থাকেন।) থেকে এক তৃতীয়াংশ বাস্তুহারা ও যুদ্ধপীড়িত জনগণের জন্যে ব্যয় করার অনুমতি দেয়া গেল।
লেবাননের ঘটনা উপলক্ষে ইমামের বাণী, ২২/৩/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা, দ্বিতীয় খন্ড, ১২৩ পৃঃ।
ইসরাইল মুসলমানদের বৃহত্তম সংকটের কারণ
মুসলমানদের মহাসংকটের একটি হচ্ছে সীমা লংঘনকারী ইসরাইলের ঘটনা। সে এখন মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত ও লেবানন ভূখন্ডে এগিয়ে যাচ্ছে। শাহ (ইরান) একে সাহায্য দিচ্ছে। বেশীর ভাগ মুসলিম সরকার এ ব্যাপারে নির্বিকার রয়েছে। ওরা এতই অজ্ঞ যে, খোদা না খাস্তা ইসরাইল যদি তার এ অগ্রযাত্রায় সফল হয় তাহলে অন্যান্য দেশের সাথেও সে একই আচরণ করবে। আমাদের উপর আপতিত এতসব বালাÑমুসিবত কারণ হচ্ছে আমেরিকা ও তার অনুচররা।
ইমামের বাণী, ২৪/৩/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা,দ্বিতীয় খন্ড, ৪১ পৃঃ।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুসলমানদের একতা অর্জনের পথে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো
প্রশ্নঃ আপনি কি চান ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আরব দেশগুলোর সাথে ইরানও যোগ দিক?
জবাব ঃ আমি সবসময় জোর দিয়ে আহ্বান জানিয়ে এসেছি যে, সমগ্রবিশ্বের মুসলমান এক হোক এবং ইসরাইলে মতো শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুক। দুঃখজনক ভাবে মুসলিম দেশ সমূহে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। আমি আশা করি শেষ পর্যন্ত আমার ডাক তাদের কানে পৌঁছবে। আমি এপথে অটল থাকবো।
প্রশ্ন ঃ ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের সর্বশেষ ঘটনাগুলো আরেকটি আরবদেশ তথা লেবাননের ভূ-খন্ড জবরদখল করে নেয়া। ঐ ভূ-খন্ডের অধিবাসীরা শীয়া মাযহাব অনুসারী। এব্যাপরে আপনি কি করছেন?
জবাব ঃ দক্ষিন লেবাননের জনগণের উচিত সম্ভব্য যেকোন উপায়ে তাদের ঘরবাড়ীতে ফিরে যাওয়া, নিজেদের ভূ-খন্ড উদ্ধারের জন্য সংগ্রমে অবতীর্ণ হওয়া এবং ইসরাইল তার জনতাকে ওখানে বসানোর আগেই যেন তারা একাজ করে ফেলেন।
লেমন্ড পত্রিকার সাথে দেয়া ইমামের সাক্ষাতকার, ৬/৫/১৯৭৮খৃ., ছহিফা ২খন্ড, ৪৮পৃ.।

বিশ বছর যাবত ঐক্যের ডাক
আমি প্রায় বিশ বছর যাবত আরব দেশগুলোকে আহবান জানিয়ে আসছি যে, পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হোন ও অপকর্মের এ বস্তুটিকে (ইসরাইল) উচ্ছেদ করুন। ইসরাইল যদি শক্তি অর্জন করে বসে তবে শুধু বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়েই ক্ষান্ত হবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমার নসিহত এদের উপর কাজ করছে না। আমি আল্লাহর কাছে মুনাজাত করছি মুসলমানদেরকে তিনি যেন সজাগ করে দিন।
ইমামের ভাষণ, ৭/৫/১৯৭৮ খৃঃ, ছহিফা, দ্বিতীয় খন্ড, ১১৬ পৃঃ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.