গর্বাচেভের প্রতি ইমাম খোমেনী (রঃ)-এর ঐতিহাসিক পত্র

0 474

imagesIOZWPF1O

untitled555

গর্বাচেভের প্রতি ইমাম খোমেনী (রঃ)-এর ঐতিহাসিক পত্র
বিসইমল্লাহি রাহমানির রাহীম
বরাবর,
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের প্রেসিডেণ্ট পরিষদের সভাপতি জনাব গর্বাচেভ আপনার ওসেভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের কল্যাণ ও সৌভাগ্য কামনা করছি।
যেহেতু আপনি ক্ষমতায় আসার পর এ্মন এ্কটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে ,আ্পনি বিশ্ব রাজনীতির ঘটনা প্রবাহ , বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্যাবল পর্যালোচনা , পুর্নমূল্যায়ন , পরিবর্তন সাধন ও ঘাত- এ্ক নয়া অধ্যায়ে উপনীত হয়েছেন এবং যেহেতু বিশে¡র বিরাজমান বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার সৎসাহস ও মনোবল এ্ক বিরাট পরিবর্তনের এবং বিশ্বের বুকে বিদ্যমান ভারসাম্যে ওলট-পালট সৃষ্টির কারণ হতে পারে, সেহেতু আপনাকে কয়েকটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়া এক্ন্ত প্রয়োজনবোধ করছি । আপনার নবতর চিন্তাধারা ও সিদ্ধান্তসমূহ হয়ত বা শুধু দলীয় সংকট থেকে উত্তরণ ও তার পাশাপাশি আপনার জনগণের কোন কোন সমস্যার সমাধানের এ্কটি পন্থা বিশেষ , তথাপি যে মতাদশ বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের বিপ্লবী সন্তানদেরকে লৌহ প্রাচীরের অন্তরালে বন্দী করে রেখেছে , সে সম্মন্ধে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার এতটুকু সৎসাহসও অত্যন্ত প্রশংসারযোগ্য । আপনি এর চেয়েও আরেক ধাপ এগিয়ে চিন্তা করলে সর্ব প্রথম যে বিষয়টি আপনার জন্য সন্দেহাতীত সাফল্য বয়ে আনবে তা হচ্ছে , আপনার পূর্বসূরিরা সমাজ থেকে খোদা ও ধর্মকে বিতাড়নের যে নীতি অনুসরণ করেছেন Ñ যা নিঃসন্দেহে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের উপর সবচেয়ে মারাত্মক আঘাত হেনেছে Ñ সে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা । আপনার জেনে রাখা উচিত, এ পন্থা অবলম্বন ছাড়া বিশে¡র ঘটনাবলী দৃঢ়তার সাথে মুকাবিলা করা সম্ভব নয়। অবশ্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে , কমিউনিজমের (পতাকাবাহী) সাবেক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ভুলকর্মপন্থা ও কর্মকান্ডের কারণে হয়তবা পশ্চিমা বিশ্ব আপনাদের কাছে চিত্তাকর্ষকরূপে প্রতিভাত হতে পারে , কিন্তু (তা সত্ত্বেও এ্টা অনস্বীকার্য যে ) সত্য অন্যত্র নিহিত।

আপনি যদি বর্তমান সন্ধিক্ষণে পশ্চিমা পুজিবাদী ব্যবস্থার কোলে আশ্রয় নিয়ে শুধু সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট অর্থনীতির অন্ধ গিঁটগুলোই খুলতে চান , তাহলে আপনি যে স্বীয় সমাজের কোন ব্যথারই উপশম করতে পারবেন না তা-ই নয়, বর একাজে অন্যদেরই এগিয়ে আসতে হবে এবং আপনার ভুল-ক্রটিগুলো সংশোধন করতে হবে। কারণ, আজকে মার্কসবাদই শুধু তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়নি, পশ্চিমা বিশ্বও এসব ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্নতর রুপে এবং আরো বহু ক্ষেত্রে, সঙ্কটের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে।
জনাব গর্বাচেভ,
সত্য ও বাস্তবতার দিকে প্রত্যাবর্তন অপরিহার্য । আপনার দেশের মৌলিক সমস্যা মালিকানা , অর্থনীতি ও স্বাধীনতার সমস্যা নয় , বরং আপনাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি প্রকৃত বিশ্বাসের অভাব , যে সমস্যা পশ্চিমা জগতকেও চরম নৈতিক বিপর্যয় ও অচলাবস্থার সম্মুখীন করেছে বা করতে যাচ্ছে । আপনাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এ্ সৃষ্টিলোকের উৎস আল্লাহ্ তায়ালার বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ ও অর্থহীন লড়াই।
সম্মনিত মিঃ গর্বাচেভ,
এ্টা সকলের কাছেই সুস্পষ্ট যে, এখন থেকে কমিউনিজমকে বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের যাদুঘরসমুহে খুঁজতে হবে। কারণ, মার্কসবাদ মানুষের সত্যিকারের কোন প্রয়োজনই মিটাতে সক্ষম নয়। কেননা, এটি বস্তুবাদী মতাদর্শ। আর বস্তুবাদ দিয়ে কখনোই মাবতাকে আধ্যাত্মিকতায় অবিশ্বাসজনিত সংকট যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যর মানব সমাজের মৌলিকতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে-তা থেকে উদ্ধার করা যাবেনা।
জরাব গর্বাচেভ,
আপনি হয়ত কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তিতর্কের খাতিরে মার্কসবাদকে আঁকড়ে ধরে থাববে এবং এর পরও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মার্কসবাদকে প্রতি পূর্ণ আস্থার কথা প্রকাশ করবেন; কিন্তু আপনি নিজেই জানেন যে, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এরূপ নয়। চীনের নেতা কমিউনিজমের উপর প্রথম আঘাতটি হেনেছেন৩ এবং আপনি কমিউনিজমের দেহে দ্বিতীয়Ñদৃশ্যতঃ সর্বশেষ আঘাতটি হেনেছেন (৩)। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে আজ আর কমিউনিজম নামে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। তবে আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, মার্কসবাদের অবাস্তব কল্পনা বিলাসের দেয়ার ভাঙ্গতে গিয়ে আপনি পাশ্চাত্য ও “শয়তানে বুযুর্গের” (আমেরিকা) কারাগারে বন্দী হবেন না। আমি আশা করি, কমিউনিস্ট বিশ্বের সত্তর বছরের হঠকারিতা ও অবশিষ্ট পচা-গলা আস্তরগুলো ইতিহাসের পাতা এবং আপনার দেশের বুক থেকে ধুয়ে-মুছে সাফ করার যথার্থ গৌরবের অধিকারী হবেন আপনি। আজকে আপনার সহগামী যেসব সরকারের অন্তঃকরণ স্বীয় দেশ ও জনগণের জন্যে ব্যথিত , তাঁরা দেশের ভূপৃষ্ঠস্থ ও ভূগভস্থ সম্পদরাশি সেই কমিউনিজমের সাফল্য প্রমাণের জন্য আর অধিক ব্যয় করতে রাজী হবেন না , যার অস্তিত্ব কাঠামো ভেঙ্গে চরমার হবার শব্দ পর্যন্ত তাঁদের বংশধরদের কানে পৌছে গেছে।
জনাব গর্বাচেভ,
দীর্ঘ সত্তর বছর পরে যখন আপনাদের (দেশের) কতিপয় প্রজাতন্ত্রের মসজিদের মিনার থেকে “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি এবং মানবিক চরমতম নিদর্শন হযরত মুহাম্মদী (সঃ) এর রিসালাতের প্রতি সাক্ষ্য ঘোষণা কানে এসে পৌছেছে , তখন তা খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের সমস্ত অনুসসারীর নয়নকে আনন্দে ও আবেগে অশ্রুসিক্ত করেছে । এ্ কারনে আপনাকে অনুরোধ করছি যে, বস্তুবাদী ও খোদায়ী ৫ এ দু‘টি বিশ্বদর্শন সম্পর্কে আপনি আরেকবার গভীরভাগে চিন্তা করূন। বস্তুবাদীরা তাদের বিশ্ব দশর্নে ( একমাত্র) ইন্দ্রিয়ানূভূতিকেই জ্ঞানের মানদণ্ড বলে মনে করেছে এবং যা কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় তাকে জ্ঞান -প্রজ্ঞা বহির্ভূত বলে মনে করছে , তারা “অস্তিত্ব” -কে “বস্তুর” সমার্থক বলে মনে করছে এবং যাতে বস্তু বা পদার্থ নেই তার অস্তিত্ব অস্বীকার করছে ।এ ্ কারনে বাধ্য হয়েই অদৃশ্য জগৎ যেমন আল্লাহ্ তায়ালার অস্তিত্ব, অহী, নবুয়্যত ও কিয়ামতকে ঢালাওভাবে কাল্পনিক বলে অভিহিত করছে । অন্যদিকে খোদায়ী বিশ্বদর্শনে ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও বুদ্ধিবৃত্তি ( আকল) নির্বিশেষে ( উভয়ই) জ্ঞানের মানদণ্ড হিসাবে গণ্য হয়েছে এবং যা কিছই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেকের আওতাধীন তা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য না হলেও জ্ঞানও প্রজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হয়েছে। সুতরাং “অস্তিত্ব” প্রকাশ্য ও সুপ্ত উ্ভয় ধরনেরই এবং বস্তু বা পদার্থ নেই এমন কিছু কিছু বিষয়ও অস্তিত্বশীল হতে পারে আর বস্তুগত (বস্তুক) অস্তিত্ব যেমন নির্বস্তুক প্রমাণ বহন করে , তেমনি ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল । কুরআন মজীদ বস্তুবাদী চিন্তাধারার মৌল ভিত্তির সমালোচনা করে এবং যার মনে করে যে, খোদা বলে কেউ নেই, কারণ থাকলে তাঁকে দেখা যেত এবং এও বলে ঃ
لن نومن لك حتي نري الله جهره
অর্থৎÑ“আমরা চাক্ষুষভাবে আল−াহ্কে না দেখা পর্যন্ত কখনোই তোমার কথায় বিশ্বাস করব না।” ঃ {বাকারা ঃ ৫৫}। তাদের উদ্দেশ্যে ইরশাদ হয়েছে ঃ
لاتدركه الابصار وهو يدرك الاصار وهو اللطيف الخبير
অর্থাৎÑ তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত ; এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত। (৯) {আন্আ’ম্ ঃ ১০৩}। মহা সম্মানিত কুরআনে সজিদ এবং অহী, নবুওয়াত ও কিয়ামত সম্পর্কে কুরআন মজিদে উপস্থাপিত যুক্তি প্রমাণাদির কথা আপাতত ঃ রেখে দিলাম । কারণ, আপনার জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। প্রকৃতপক্ষে আমি চাচ্ছিলাম না যে, আপনাকে
দার্শনিকদের, বিশেষত ঃ ইসলামী দার্শনিবদের আলোচ্য বিষয়াদির জটিল ও দুর্গমপথে ঠেলে দেবো। (তাই) মাত্র দু’একটি সহজাত ও বুদ্ধিবৃত্তিক উদাহরণের মধ্যেই যা থেকে রাজনীতিবিদগণও উপকৃত হতে সক্ষমÑ(আমার এতদসংক্রান্ত বক্তব্য) সীমাবদ্ধ
রাখব। স্বত ঃ সিদ্ধ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো এই যে, বস্তু ও বস্তুগত সত্তা তা যাইহোক না কেনÑনিজের (অস্তিত্ব) স¤পর্কে অনবহিত। একটি প্রস্তর নির্মিত ভাস্কর্য বা বস্তুগত উপকরণে তৈরী মানুষ্য মূর্তির যে কোন দিকই তার অপর দিক থেকে আড়ালে
থাকে অথচ আমারা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, মানুষ বা প্রাণী নিজের চতুস্পার্শ সম্পর্কে ওয়াকেফহাল। সে জানে, সে কোথায় আছে, তার আশেপাশে কি ঘটছে, আর বিশ্বেইবা কি সব ঘটে চলেছে। অতএব, মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে এমন একটা ভিন্নতর জিনিস রয়েছে যা বস্তুর উর্ধ্বে এবং বস্তুগত জগৎ থেকে স্বতন্ত্র-বস্তুর অবলুপ্তিতে যার মৃত্যু ঘটে না, বরং অবশিষ্ট থেকে যায়।
মানুষ প্রকৃতিগতভাবে যে কোন বিষয়ে পূর্ণতা ও পরমোৎকর্ষ লাভের অভিলাষী। আর আপনি ভাল করেই জানেন, মানুষ বিশ¡জগতের নিরš‹ুশ শক্তিতে পরিণত হতে চায় এবং কোন খণ্ডিত বা অস¤পূর্ণ শক্তিতেই সে সন্তুষ্ট নয়। তাই কেউ যদি এ গোটা বিশ¡কে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে পেয়ে যায় এবং এরপর তাকে বলা হয় যে, (এ ছাড়া) আরো একটি বিশ¡ রয়েছে, তবে সে স্বভাতঃই ঐ দ্বিতীয় বিশ¡টিকেও স্বীয় ইখতিয়ারাধনে পেতে আগ্রহী হবে । তেমনি মানুষ যত বেশী পরিমানণেই জ্ঞানের অধিকারী হোক না কেন, তাকে যদি বলা হয় যে, আরো জ্ঞান-বিজ্ঞান রয়েছে তাহলে স্বভাবিকভাবে সে ঐসব জ্ঞান অর্জনের জন্যেও আগ্রহী হবে। অতএব, এমন এক নির¤‹ুশ শাক্তি ও জ্ঞান (এর অস্তিত্ব) থাকতেই হবে, মানুষ যার প্রতি সদা আকৃষ্ট হয়ে আছে।
আর তা (মানুষের পরম আকর্ষণের এ কেন্দু) হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সত্তা, আমরা সকলেই তাঁর প্রতি আকুষ্ট হয়ে আছি, যদিও আমরা হয়ত সে স¤পর্কে অনবহিত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালাতে বিলীন হয়ে যাবার লক্ষ্যেই মানুষ পরম সত্যে উপনীত হতে চায়। আর সাধারণভাবে প্রতিটি মানুষের সত্তার মাঝ অনন্ত জীবনের প্রতি যে দুর্বার আবর্ষণ রয়েছে, মূলতঃ তা মৃত্যুহীন এক অবিনশর জগতের অস্তিত্বেরইনিদর্শন। আপনি যদি এসব বিষয়ে চিন্তা-গবেষণায় আগ্রহী হন, তাহলে এ জাতীয় বিষয়াদিতে পারদর্শী, বিশেষত ঃ পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে পশ্চিমা দার্শনিকদের গ্রন্থাদির পাশাপাশি একই বিষয়ে আল ফারাবী ও ইবনে সিনর (রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা ) লিখিত মাশ্শা দর্শনের গ্রন্থাবলী অধ্যয়নের নির্দেশ দিতে পারেন। তাহলে (তাদের নিকট) এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, যে কার্য কারণ বিধির ওপর সব রকমের জ্ঞান-বিজ্ঞান নির্ভরশীল, স্বয়ং সে বিধিটিই হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। তেমনি সাধারণ তাৎপর্যসমূহ এবং সাধারণ বিধিসমূহ যার উপর সব রকমের যুক্তি-প্রমাণ নির্ভরশীল তার অনুধাবনও বুদ্ধিবৃত্তিক, ইন্দ্রিয়লব্ধ নয়। তেমনি তাঁরা সোহরাওয়ার্দীর (রঃ) ইশরাকী দর্শন বিষয়ক গ্রন্থাবলীও অধ্যয়ন করতে পারবেন এবং আপনার নিকট এ বিষয়টি ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরতে পারবেন যে, বস্তুসত্তা এবং অন্য যে কোন বস্তুগত অস্তিত্বই অতীন্দ্রিয় নিরেট জ্যোতির মুখাপেক্ষী। অনুরূপভাবে স্বীয় সত্তার স্বরূপ স¤পর্কে মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জ্ঞান ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা থেকে মুক্ত। আর আপনাদের বড় বড় পণ্ডিতদেরকে সাদরুল মুতাআল্লেহীনের (রিযওয়ানুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ওয়া হাশারাহুশ্লাহু মাআ’ন্নাবিয়্যিনা ওয়াস্সালেহীন) উচ্চতর বুদ্ধবৃত্তিক প্রজ্ঞা নামক দর্শন অধ্যয়ন করতে বলুন। তাহলে এটা সু¯পষ্ট হয়ে যাবে যে, জ্ঞানের স্বরূপ হচ্ছে বস্তুতান্ত্রিকতা থেকে মুুক্ত এক নির্বস্তুক অস্তিত তেমনি যে কোন ধরনের চিন্তার স্বরূপও হচ্ছে নির্বস্তুক এবং বস্তু সংক্রান্ত কোন বিধি বিধানই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।(এ প্রসঙ্গে অধিকতর বক্তব্য রেখে ) আপনার আর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাব না এবং আরেফগণের লিখিত গ্রন্থাবলী, বিষেশতঃ মহিউদ্দীন ইব্নে আ’রাবীর গ্রন্থাবলীরও নামোল্লেখ করব না। বরং এ মহামহীষীর উপস্থাপিত বক্তব্য স¤পর্কে যদি অবহিত হতে চান, তাহলে এ জাতীয় বিষয়াদিতে প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী কয়েকজন অতি ধী-শক্তিস¤পন্ন সুপণ্ডিত ব্যক্তিকে কোমে প্রেরণ করুন -যাতে আল্লাহ্ উপর নির্ভর করে কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁরা তত্ত্ব-জ্ঞান ও মারেফাতের বিভিন্ন স্তরের অতি সূক্ষ্মাতিস্ক্ষ্ম বিষয় স¤পর্কে অবগত হতে পারেন। কেননা, এরূপ প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে এ বিষয়ে অবহিতি লাভ সম্ভব নয়।
জনাব গর্ভচেভ,
এই প্রারাম্ভিক বিষয়টির উল্লেখ করার পর এবার আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, আপনি ইসলাম সম্পর্কে একটু গভীরভাবে চিন্তা গবেষনা ও অনুসন্ধান করুন। এটা এজন্যে বলছি না যে, ইসলাম বা মুসলমানরা আপনার মুখাপেক্ষী, বরং ইসলামের সুমহান ও বিশ্বজনীন মূল্যবোধের তাগিদেই বলছি। কেননা, এ বিশ্বের সমস্ত জাতি ও জনগোষ্ঠীর সুখ-শান্তি ও মুক্তির মাধ্যম হতে এবং মানবজাতির মৌল সমস্যাবলীর জটিলতম গ্রন্থি উন্মোচন করতে সক্ষম।
ইসলামের প্রতি একাগ্র মনোযোগ প্রদান হয়ত বা আপনাকে স্থায়ীভাবে আফগানিস্তান সংক্রান্ত সমস্যা, এবং এ ধরনের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমস্যা থেকেও মুক্তি প্রদান করবে। আমরা বিশে¡র মুসলমানদেরকে আমাদের নিজেদের দেশের মুসলমানদের ন্যায়ই মনে করি এবং সব সময়ই নিজেদেরকে তাদের ভাগ্যের ব্যাপারে অংশীদার বলে গণ্য করি। সোভিয়েত ইউনিয়নের কয়েকটি প্রজাতন্ত্রে ধর্মীয় অনূষ্ঠানাদির অপেক্ষাকৃত স্বাধীনতা প্রদান আপনি এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, আপনারা আর ধর্মকে জনগণের জন্যে আফিম বলে মনে করেন না। বাস্তবিকই, যে ধর্ম ইরানকে পরাশক্তিসমূহের সামনে পর্বত প্রমাণ দৃঢ়তা সহকারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তা কি জন্যে আফিম হতে পারে ? যে ধর্ম বিশ্বব্যাপী ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা কামনা করে এবং বস্তুগত ও নৈতিক বন্দীদশা থেকে মানবতার মুক্তি প্রত্যাশী তা কি জনগণের জন্যে আফিম সদৃশ ?
তবে হ্যাঁ, যে ধর্ম মুসলিম ও অমুসলিম দেশসমূহের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক সম্পদ রাশি পরাশক্তিবগর্ ও তাদের অনুসারির শক্তিবর্গের হাতে তুলে দেবার মাধ্যম রূপে কাজ করে এবং পাশাপাশি জনগণের সামনে “রাজনীতি থেকে ধর্ম আলাদা” বলে গলাবাজি করে, (নিঃসন্দেহে) তা জনগণের জন্যে আফিম স্বরূপ। কিন্তু তা তো সত্যিকারের ধর্ম নয়, বরং তা হচ্ছে এমন ধর্ম আমাদের জনগণ যাকে ‘মার্কিনী ধর্ম’ বলে অভিহিত করেছে।
উপসংহারে আমি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছি যে, ইসলামী বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক শক্তিশালী ঘাঁটি হিসাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান খুব সহজেই আপনাদের শাসন ব্যবস্থার আদর্শগত শূন্যতা পূরণে সক্ষম আর সর্বাবস্থায়ই আমাদের দেশ অতীতের ন্যায়ই সৎ প্রতিবেশী সুলভ ও সমমর্যাদা ভিত্তিক সম্পর্কে বিশ্বাসী এবং এ নীতির প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল।
والسلام علي من اتبع الهدي
যারা সত্যের অনুসরণ করে তার উপরে শান্তি বর্ষিত হোক।
রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী
(১১-১০-৬৭ ফার্সী),
(১-১-১৯৮৯ খৃষ্টাব্দ)

Leave A Reply

Your email address will not be published.