মুসলমানদের দুঃখ-দূর্দশার কারণ

0 456

Imam khomeni
মুসলমানদের দুঃখ-দূর্দশার কারণ
মুসলমানদের দুঃখ-দূর্দশার বেশীরভাগই ইসলামী দেশগুলোর সরকারসমূহ থেকে উৎসারিত। ইসলামী সরকারগুলোর উচিত একই আওয়াজ তোলা, এক চিন্তা করা, সবাই একই দ্বীনের অধিকারী। সবাই দেখতে পাচ্ছে যে, তাদের পারস্পারিক অনৈক্য থেকে অন্যরা ফায়েদা লুটছে। এরা ব্যাথা কি তা জেনেও ঔষধের পিছনে যাচ্ছে না। বরং দিন দিন এদর অনৈক্য বেড়েই চলেছে ও পাস্পারিক বিচ্ছিন্নতা আরো ব্যাপক হচ্ছে। বৃহৎ সরকারগুলোর কথাও এ্টাই যে, আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকি, বরং পরস্পরের শত্র“ হই এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে লিপ্ত হই। এ সুযোগে ওরা ফায়েদা লুটুক। মুসলমানদের উচিত নিজেদের ব্যাপারে মৌলিক চিন্তা করা। মুসলিম সরকারগুলোর উচিত মৌলিক চিন্তা-ভাবনা করা। তাদের এ চিন্তা করলে চলবে না যে, যে ক’দিন ক্ষমতায় আছে ভোগ-বিলাসে কাটিয়ে দেবে এবং নিজেদের দেশের উপর ক্ষমতার দম্ভ চালিয়ে যাবে। তাদের উচিত অনৈক্যের সংকটের উপশম ঘটানো । নতুবা আর কোন উপায় নেই। অযথা সভা-সমীতি ও সম্মেলন করে কোন ফায়েদা হবে না। আমি আল্লাহ তায়লার কাছে এ মুনাযাত করছি সাধারণ ভাবে মুসলমানদের ও বিশেষ করে মুসলিম সরকারগুলোকে সজাগ-সচেতন করুন যাতে তারা তাদের সমস্যাÑসংকটের উপর বিজয়ী হতে পারে এবং ইসলাম তার আসলরূপে ইসলামী দেশগুলোতে বাস্তবায়িত হয়Ñঠিক যে রকম ইসলামের প্রথম যামানায় ছিল।

মুসলমানদের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সরকার ও জনগনের সমস্যা। আপনারাও যেমন অবগত আছেন এবং আমরাও যতটুকু জানি, সরকারগুলো তাদের জাতিগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জনগণ তথা জাতিগুলোর সাথে ওসব সরকারের সম্পর্ক ও লেনদেন দুশমনের সাথে দুশমনের লেনদেনের সম্পর্ক। সরকারগুলোর প্রতি জনগণ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে থাকে। সরকার চায় জনগণের উপর বিষয়াদি চাপিয়ে দিতে। এ কারণে জাতিসমূহ সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষক নয় বরং দুশমনের সাথে যে রকম আচরণ করে থাকে সে রকম আচরনই করে। আর এ বিষয়টিই সরকারগুলোর দুর্বলতার কারণ।
ইসলামী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সমাবেশে ইমামের ভাষণ, ১০/৭/১৯৭৯ খৃঃ, ছহিফা, ৮ম খন্ড, ৯৫Ñ৯৬ পৃঃ।
অনৈক্যের রহস্য
আমার কাছে একটি বিষয় রহস্য হয়ে রয়ে গেছে। আর তা হলো সকল ইসলামী সরকার ও সব ইসলামী জাতি অবগত আছে যে, দুর্দশা ও ব্যর্থতা কি। তারা সবাই জানে যে, বিদেশী হাতগুলোই তাঁদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে; তারা দেখতে পাচ্ছে যে, এই অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতাই তাদের দূর্বলতা ও ধ্বংস ডেকে আনছে; তারা দেখতে পাচ্ছে যে, ইসরাইল নামক একটি ঠুনকো সরকার মুসলমানদের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে আছে। মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতো এবং প্রত্যেকে এক বালতি করে পানি ইসরাইলের দিকে ঢেলে দিতো তাহলে বন্যায় সে ভেসে যেতো। অথচ এর সামনে মুসলমানরা লাঞ্চিত অপমানিত হচ্ছে। রহস্যটি এই যে, এতোসব জেনেও কেনো ঐক্য ও সমঝোতা নামক প্রতিকার ও প্রতিষেধকের পেছনে তারা ধাবিত হচ্ছে না? সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দূর্বল করার জন্য যে সমস্ত চক্রান্ত আঁটছে সে সবকে কেনো তারা নস্যাৎ করে দিচ্ছে না ? আর কতকাল পরে এ রহস্য উদ্ঘাটিত হবে ? কে তবে উদ্ঘাটন করবে? ইসলামী সরকার ও মুসলিম জাতিগুলো ব্যাতীত আর কে এসব চক্রান্তের জাল ছিন্ন করবে ? এ রহস্যের যদি কোন জবাব থাকে এবং যদি এধাঁধাঁর কোন সমাধান করতে পারেন তবে আমাদেরও জানিয়ে দিন।
ইমামের ভাষণ ; ১৬/৮/১৯৭৯ খৃঃ,
ছহিফা, ৮খন্ড, ২৩৫ -২৩৬পৃঃ।

মুসলমানদের দু’টি প্রধান সমস্যা
আমরাও জানি ,মুসলিম উম্মাহ্ও জানে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইসলামী সরকারগুলোও জানে যে, আমাদের উপর যা আপতিত হচ্ছে তার সবই দু’টি সমস্যার কারণে। প্রথমতঃ সরকারগুলোর পারস্পরিক সমস্যা। দুঃখজনকভাবে আজও এরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আর তা হলো পারস্পরিক অনৈক্যের ও মতবিরোধের সমস্যা । এরা ভালো করেই জানে যে, মুসলিম উম্ম্রা যাবতীয় দূর্দশার উৎস হলো এই মতবিরোধ ও অনৈক্য। আজ প্রায় বিশ বছর যাবৎ আমরা এই ব্যাপারে আবেদন জানিয়ে আসছি। একাধারে বলে আসছি, লিখে আসছি, সরকার প্রধানদের আহ্বান জানাচ্ছি ঐক্যের দিকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ যাবত কোন ফলোদায় হয়নি।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো , জাতিসমূহের সাথে সরকারগুলোর সমস্যা । সরকারগুলো তাদের জনগণের সাথে এমন আচারণ করেছে যে, জনগণ আর সরকারগুলোর সর্মথক ও পৃষ্ঠপোষক নয়। সরকারগুলোর জন্য যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা কেবল জনগণই সমাধান করতে পারে। অথচ তাদের মাঝে সমঝোতা ও সুসম্পর্ক নেই । জনগণ সরকারগুলোর সমস্যাদি না বাড়ালেও অন্ততপক্ষে নির্বিকার থাকছে। আমি বারবার এ বিষয়টি বলে এসেছি যে, ইসলামী রাষ্ট্র সমূহের সরকারগুলোর উচিত আমাদের অতীত ও বর্তমান সরকার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। অতীতে শয়তানী শাহী আমলে (তাগুতী সরকার) জনগণ হয় সরকারের সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে নয় নির্বিকার রয়েছে।
ইসলামী বিপ্লবী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্যদের সমাবেশে ইমামের ভাষণ; ১৫/৯/১৯৭৯খৃঃ, ছহিফা, নবম খন্ড, ১৩৩পৃঃ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.