ইসলামের দৃষ্টিতে বিদ্যা ও বিদ্যান

0 1,615

পবিত্র কুরআনের আলোকে বিদ্যা ও বিদ্যান

ww
ইসলামের দৃষ্টিতে বিদ্যা ও বিদ্যান নিয়ে আলোচনা করা একদিকে যেমন মনে হতে পারে সহজ আবার অন্য এক দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি বেশ কঠিনও। যারা ইসলামী সমাজে বসবাস করছেন বা করেছেন তারা বিষয়টির কোন কোন দিকের সাথে হয়ত পরিচিত আছেন বা এ ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব কোন দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে পারে। আমি এখানে এমন কিছু সুক্ষ্ম বিষয়ের আলোচনা করতে চাই যা সাধারণ স্তরের ধারনা সমূহের অনেকটা পরিপন্থী। তাই সাধারণ ধারণার অসড়তা ও অপক্কতাকে সুস্পষ্ট করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে যে বিষয়টিকে বিদ্যা নাম দেয়া হয়েছে ঐ বস্তুর সাথে বর্তমান সমাজে প্রচালিত বিদ্যা নামের অতিশ্রদ্ধাভাজন ও পবিত্র বিষয়ের সাথে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এই পরিভাষাগত অপব্যাবহারের ফলে অনেক সময় ঐ পরিভাষার প্রকৃত অর্থ উপলব্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। শুধু ‘ইলম্’ শব্দের ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটেনি বরং ইতিহাসে আরো অনেক ইসলামী পরিভাষার অর্থগত বিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

‘ইলম’ পরিভাষার অর্থগত বিবর্তন
ইমাম আবু হামেদ গাজ্জালী ‘এহিয়াউ উলুমিদ্দীন’ নামক গ্রন্থে সুনিদ্দিষ্ট ভাবে এমন পাঁচটি ইসলামী পরিভাষার কথা উল্লেখ করেছেন যা তার ধারণানুযায়ী সেযুগ পর্যন্ত অর্থগত ও বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উল্লেখিত পাঁচটি শব্দের মধ্যে একটি হল ‘ফেকহ্’ দ্বিতীয়টি হল হিকমাত, তৃতীয় হল, তাওহীদ, চতুর্থ হল, জির্ক আর পঞ্চম হল বিদ্যা বা জ্ঞান।
আমাদের যুগেও ঐ পরিভাষা গুলোর অবস্থা ইমাম গাজ্জালীর যুগ থেকে ভিন্ন নয়। হিকমাত, ফিকহ্, ও জিকির ও এজাতিয় আরো অনেক পরিভাষা কালের বিবর্তনের সাথে সাথে তাদের প্রকৃত অর্থ হারিয়ে ফেলেছে । আর আজ আমাদের সমাজে সর্বত্র এই বির্বতিত অর্থেই ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে কেউ কেউ তাদের অসৎ লক্ষ্য হাসিলে ঐ নব্য অর্থের প্রচার ও প্রয়োগ করে চলেছেন অহরহ।
আজ কেউ কেউ স্রেফ যুক্তিবাদী দর্শনককে সুরা বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতের দ্বারা প্রসংশা ও প্রমান করে থাকেন। তারা হিকমাত ও দর্শনের মুলতত্ত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। কেননা তাদের পরস্পরের মধ্যে যুক্তির দিক থেকে মিল থাকলেও একজন হাকিম ও দার্শনিকের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তাই স্রেফ যুক্তিবাদী দর্শন ও দার্শনিকদের জন্য হাকিম ও হিকমাত শব্দটি ব্যবহার করার অর্থ পবিত্র কুরআনের হিকমাত শব্দটির অর্থ বিক্রিত করা।
একইভাবে ‘ফিকহ্’ শব্দটিও স্রেফ একটি কৌশলী বিদ্যার নামের পরিভাষায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ‘ফিকহ্’ পরিভাষার অর্থ হিসাবে আমরা যা বুঝে থাকি তাহল কেবলমাত্র শরীয়তগত হালাল ও হারাম বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমমুলক বিশেষ বিদ্যাকে বুঝানো হয়ে থাকে আর ফকিহ্ হলেন হালাল ও হারাম বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি।
অথচ পবিত্র কুরআনে ‘তাফাক্কাহু ফিদ্দীন’ বলা হয়েছে এখানে ফিকহ্ শব্দের অর্থ অনেক ব্যাপাক কেবল শরীয়তের ঐ হারাম ও হালাল বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং ধর্মীয় জীবনের সকল বিষয় এ পরিভাষার অধীন।
উল্লেখিত পরিভাষা সমূহের মধ্যে বিদ্যান শব্দটি বেশ জটিল যা বর্তমান ইসলামী সমাজ আজ তার আদি অর্থ থেকে অনেক দুরে সরে গেছে।
আসলে কি কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন পরিভাষার অর্ন্তনিহীত অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে থাকে ? প্রতিটি সমাজের মানুষদের চিন্তাচেতনার অবস্থানের আবেদন হল ঐ সমাজের মানবিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন পরিভাষা সৃষ্টি করা । আর এসময়ই সেই নব্যচিন্তা ও মানবিক অবস্থার প্রকাশ ঘটাতে অনেক পরিভাষা তার পূর্বের ব্যবহৃত ক্ষেত্রের পট পরিবর্তন করে নব্য চিন্তার আলোকে ব্যবহারের কারণে ক্রমশঃ তার অর্থও পূর্বের অবস্থানকে ত্যাগ করে নতুন রূপ লাভ করে।
শুধু তাই নয় একটু সুক্ষ্মভাবে সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সমাজে মানুষদের সামাজিক, সাংসারিক ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিত্য নতুন মডেল পরিবর্তন হচ্ছে ফলে এক সময় যে মডেল তাদের কাছে সোনার হরিণ বা অতিপ্রিয় ছিল সে-ই বিশেষ অর্থবহ বস্তুটি কিছুদিন না যেতেই তাদের কাছে প্রথম অবস্থার অর্থ বিবর্ণরূপ ধারণ করে।
তাই সামাজিক আদর্শ পরির্বতনের পাশাপাশি প্রয়োগ ক্ষেত্র স্থানান্তরের ফলে বিভিন্ন শব্দের অর্থও পরিবর্তন ঘটে থাকে। আবু হামিদ গাজ্জালী এ কথাটিই বলতে চেয়েছেন যে ইসলামের প্রথম যুগে ‘ইলম’ শব্দটি যে অর্থ বহন করত বর্তমানে সেই একই শব্দের পিঠে আজ ভিন্ন অর্থ ভর করে আছে।
বিভিন্ন সমাজে ‘বিদ্যা’ পরিভাষার অর্থ
জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি ? মানুষ কিভাবে জ্ঞান লাভ করে থাকে ? জ্ঞানের সংজ্ঞা কি ? ইসলামের দৃষ্টিতে আমরা কাকে বিদ্যান বলতে পারি ?
বর্তমান সমাজে আমরা যে কোন জানাকে জ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। নিঃসন্দেহে যে কোন জ্ঞাত বিষয় মানুষের জানার পরিধিকে সম্প্রসারিত করে থাকে। আর যেহেতু সে তার অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানালোকে ধারণা লাভ করছে তাই এ বিষয়ে সে একজন অভিজ্ঞ এবং সে জ্ঞানী ব্যক্তি। আমরা সাধারণত এজাতিয় অভিজ্ঞতাকে জ্ঞান বলে থাকি।
অথচ আমরা পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাতে জ্ঞানের যে পরিচয় পাই এবং সেখানে জ্ঞানের যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে আমরা যে কোন অভিজ্ঞতা বা জানাকেই মানবিক স্তরের জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারি না।
ইসলামপূর্ব যুগে মানুষদের চিন্তাভাবনার অবকাঠামো ছিল, গোত্রিয় প্রাধান্য, মূর্তির প্রতি সম্মান, চার হাত পা দিয়ে অর্থ-সম্পদ জমা করা, পুত্র সন্তান ছিল তাদের শক্তির প্রতীক.. এ সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ঐ সমাজে বিভিন্ন বিষয়ের অর্থ আত্মপ্রকাশ করত। ঐ অবস্থাকে উল্লেখ করে পবিত্র কুরআনে সেই সমাজের রূপ অঙ্কিত হয়েছে ‘তোমরা কি কবরে পৌছানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ধন-সম্পদ সঞ্চয়ে নিমগ্ন থাকবে ?! [সুরা তাকাসুর, ১-২ নম্বর আয়াত।]
এরকম এক সমাজে ইসলামের আর্বিভাবের সাথে সাথে ঐ সকল অর্থপ্রদানকারী সামাজিক চিন্তাচেতনার ভিত্তি সমূহ ঢসে পড়ে এবং তদস্থানে নতুন এক চিন্তাচেতনার ছক ও আদর্শ মডেল দন্ডায়মান হয়। আর এই মডেলগুলোর প্রভাব মানুষের সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনে অনুপ্রবেশ ঘটে ফলে সবকিছু নতুন আঙ্গিকে অর্থ প্রকাশের সূচনা হয়। এমন কি এই নব্যচিন্তার আলোকে পূর্বে তাদের সমাজে বা মনে ক্বাবা শরীফের যে অর্থ তারা ধারণ করে ছিল সে অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে মনুষ্য চিন্তায়।
ইসলাম ধর্মের চিন্তার মুল ভিত্তি হল তাওহীদ, ঈমান, আখলাক, ইলম্, তাকওয়া, কুরআন, ওহী.. বেহেশত, দুযাখ…। ইসলামের আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে তাদের বিশ্বাস, জনগণের আচরণ সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়।
ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক ভিত্তি বা মানদন্ড হল ‘ইলম’ জ্ঞান। আর জাহেলিয়াত যুগে জ্ঞানের উপস্থিতি থাকলেও তার মুল বিষয়বস্তু ছিল ‘ইলমে নাসাব’ বংশ পরিচয় বিদ্যা। যে বিদ্যায় তারা ছিল অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত এবং এবিদ্যায় পারদর্শী পন্ডিতগণের সম্মান ছিল সবার উর্ধে।
অথচ ইসলাম ধর্মে জ্ঞানের মুল কেন্দ্রবিন্দু হল আল্লাহ এবং ‘তাওহীদি বিদ্যা’ এবং মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণ, সফলতা ও ব্যর্থতার সবকিছুই এখানে অবস্থান করছে।
আর বর্তমান পাশ্চাত্য জগতে পদার্থবিদ্যাই তাদের সফলতা, ব্যর্থতা এবং সভ্যতার মুল চাবিকাঠি। অর্থাৎ সামাজিক বিশ্বাস, আদর্শ, নৈতিক ও মানবিক মানদন্ডের ভিত্তিতে বিভিন্ন পরিভাষা একই শব্দ শাব্দিক দিক থেকে অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন রূপে অর্থ প্রকাশ করছে।
তাই লক্ষ্যনীয় বিষয় হল (১) প্রতিটি সভ্যতায় বিদ্যার গুরুত্ব থাকলেও প্রতিটি সমাজে বিদ্যা এবং বিদ্যানের অবস্থান ও সমাজিক ভুমিকা এক সমান নয়। (২) বিভিন্ন সাংস্কৃতি ও সভ্যতায় বিদ্যার একক ও অভিন্ন অর্থ খুজে পাওয়া যাবে না। তাই শাব্দিক ক্ষেত্রে ‘বিদ্যা’ শব্দের সাথে মিল থাকায় কেবল শাব্দিক সমতাই বিরাজ করছে, না অর্থগত সমতা। ইসলামী সাংস্কৃতিতে বিদ্যা হল ঐশী বা ধর্মীয় প্রতীক স্বরূপ। বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতায় বিদ্যা হল পার্থিব জীবনোপকরণের হাতিয়ার ও খোদামুক্তরূপ লাভ করেছে।
ধর্মীয় সংস্কৃতিতে বিদ্যা ও বিদ্যানের অবস্থান
ইসলামী সংস্কৃতিতে বিদ্যা ও বিদ্যানের অবস্থান মৌলিক ও জীবন সমতুল্য। [العلم الحيات মিজানুল হিকমাহ্ ইলম্ শব্দ।] বিদ্যাকে মানুষের জীবনের [‘বিদ্যা জীবন’ আল্ ইলমু হায়াতুন] সাথে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনেও রাসুলুল্লাহর আহ্বানের প্রতি সাড়া দেয়াকে জীবন গ্রহণের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মহানবীর আহ্বান গ্রহণ সমান জীবন গ্রহণ। আর এই জীবন হল ঈমান। আমরা উপরেও হাদীসে দেখেছি যে বিদ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি ঈমানের বৃদ্ধি না ঘটে তাহলে ইসলামের পরিভাষায় ঐ বিদ্যা এবং বিদ্যান ইসলামের পরিভাষায় বিদ্যা ও বিদ্যান নয়। [-হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন কিছুর প্রতি আহ্বান করেন তা গ্রহণ কর তাতে তোমাদের জীবন দান করবেন ! [সুরা আনফাল-২৪ নম্বর আয়াত] ]
জ্ঞানের ক্রমপর্যায় বা বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং অস্তিত্বের সিলসিলার ন্যায় প্রতিটি স্তরের সাথে সুক্ষ্ম সম্পর্ক আছে। আর জ্ঞানের এই ক্রমপর্যায়ের শীর্ষে অবস্থান করছে আল্লাহর জ্ঞান। অন্যদিকে সর্বজ্ঞানের একমাত্র অধিকর্তা হলেন আল্লাহ্ তাই সৃষ্টিজগতের সকল অস্তিত্বের জ্ঞান প্রভুর জ্ঞানের রশ্মিতলে অবস্থান করছে। ইসলামী দর্শনে হিকমাতে মাশ্শা বা হিকমাতে ইশরাখ অথবা হিকমাতে মুতাআলীয়াতে জ্ঞানের মুল উৎস হল মহান আল্লাহ। নিরাঙ্কুশ ও একচ্ছত্র জ্ঞানের অধিকারী হলেন মহান আল্লাহ আর বাকী সকল বিদ্যা তাঁর অসীম জ্ঞানের প্রকাশ মাত্র। প্রতিটি অস্তিত্ব তার ধারণ ও প্রকাশ ক্ষমতা অনুযায়ী ঐ বিদ্যা গ্রহণ করে প্রকাশ করে থাকে। আর অস্তিত্বজগতে মানুষ যেহেতু মহান আল্লাহর খলিফা তাই সে মহান আল্লাহর সকল নামের [জ্ঞানের] ধারক [{وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاءَ كُلَّهَا }(البقرة/৩১). মহান আল্লাহ আদমকে সকল নাম শিক্ষা দিয়েছেন।] এবং অন্যদের শিক্ষক। [{هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمْ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلاَلٍ مُبِينٍ}(الجمعة/২)] আর একারণেই ফেরেস্তাদের (মাসজিদে) সিজদায় পরিণত হয়েছে। এজন্যই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে প্রত্যেকের মুল্য তার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। [قیمهُ کلُّ امرء مَا یَعلمُ] আর তখনই মানুষ মানবিক স্তরের শীর্ষ পর্যায় কামালে উপনীত হতে পারবে [জিয়ারাতে জামেয়ে কাবীর-এর ভাষায়] যখন সে প্রভুর জ্ঞানভান্ডারে [ঐ নাম সমূহের] ধারক হবে। [خُزّانُ العلم و منتهیَ الحلم ] পবিত্র কুরআনও এই কথার পক্ষ্যেই কথা বলেছে কেননা হযরত আদম (আ.) প্রভুর নাম সমুহের শিক্ষা লাভের মাধ্যমে কামালে উত্তীর্ণ হয়েছেন। আর প্রভুর নামসমূহ হল স্রষ্টার জ্ঞানভান্ডারের রহস্যসমূহ।
অন্যসকল অস্তিত্বের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর জ্ঞান হল (শুহুদী ও হুযুরী) আর শুহুদী জ্ঞানের সাথে সক্ষমতা সহাবস্থান করছে। এখানে শক্তি নয় বরং জ্ঞানের আলোকছটা থেকেই ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছে। আর এজন্যই এখানে চাওয়া মানেই হওয়া নতুন কোন শক্তির প্রয়োজন পড়ে না। যে মানুষ ঐশী প্রতিনিত্ব লাভের মাধ্যমে প্রভুর ‘ইলমে লাদুন্নী’ থেকে উপকৃত হবে এবং অদৃশ্যগ্রন্থ ও সৃষ্টিজগতের লুহ-এ মাহফুজের দিকে ধাবিত হয়ে ঐ অসীম জ্ঞানের কয়টা অক্ষরের জ্ঞান সে লাভ করবে। যার ফলে সে এমন এক শক্তি অর্জন করতে পারে যে বিলকিসের প্রসাদকে এক পলক পড়ার আগেই [সর্বাধিক কম সময়ে] ‘সাবা’ থেকে ফিলিস্তিনে এনে উপস্থিত করতে পারবে। কেননা পবিত্র কুরআনের পরিভাষায় যে একাজটি করেছিল তার কাছে কেবলমাত্র কিতাবের তদসামান্য জ্ঞান ছিল বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। [عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الِکَتابِ] [সুরা নাহল ১৭ নম্বর আয়াত।]
শুহুদী বিদ্যা কখনোই আত্মশদ্ধি ব্যতীত নিজ সত্তার পরিবর্তন ছাড়া অর্জিত হয় না। আদৌও সম্ভব নয়। নবীগণ যারা মানুষ জাতির এই জ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন তারাও এ জ্ঞান অর্জনের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে আত্মশুদ্ধিকে উপস্থাপন করেছেন। [هُوَ الَّذی بَعَثَ فِی الاُمیّینَ رَسُولاً مِنْهُم یَتْلُوا عَلَیهِم آیَاتِهِ وَ یُزَکّیهِم وَ یُعَلِّهُمُ الکِتَابَ وَ الْحِکْمَهَ وَ اِنْ کَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفی ضَلاَل مُبین.গ্ধ(جمعه: ২)]
শুহুদী জ্ঞানের নিম্নপর্যায়ের জ্ঞান হল আকলী বুৎপত্তিক জ্ঞান আর আকলী জ্ঞানের নিন্মে অবস্থান করছে ইন্দ্রিয়লব্দ জ্ঞান।
আকলের অর্থবোধক জ্ঞান যা শুহুদের পথধারায় ও অসীম এবং নিরাঙ্কুশ মহাসত্যের ক্ষীন রশ্মি থেকে অর্জিত হয়ে থাকে। তাই যে ব্যক্তি বুৎপত্তিক জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হন যদিও তিনি ঐশী রহস্যের ধারক নন এবং মহান স্রষ্টার নৈকট্যের মহাতৃপ্তি ও মালাকুতে ফেরেশতাদের সাথে সহবাস থেকে বঞ্চিত। তারপরও তাদের গুনকীর্তনে সদা র্নিলপ্ত। কেননা তিনি তা অর্জন করতে না পারলেও তিনি সময় সময় তার আভাস পেয়ে থাকেন তাই সে জগতে প্রবেশের অধীর কামনা তাকে অনাদি চিরসত্যের প্রতি বিমুগ্ধ হয়ে তা অর্জনের সাধনায় প্রেমময় যপে নিমগ্ন রাখে। সে ঐপর্যায় থেকে বিশুদ্ধ হিকমাত যা আত্মশুদ্ধি ও ঐশী গ্রন্থ শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে তার বাহক হতে পারবে না ঠিকই। তবে তার প্রতি গভীর প্রেম নিবেদনে আত্মনিয়োগ করেছেন তাই আমরা দেখতে পাই সক্রেটিস নিজেকে প্রজ্ঞাবান হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। বরং নিজেকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। কেননা প্রকৃত জ্ঞান হল ঐশী বিদ্যা আর জ্ঞানপ্রেমিকগণ শব্দের রং তুলিতে সৃষ্টির মাধ্যমে যে প্রেমের ছোয়া পেয়েছে তা চিত্রাঙ্কন করে থাকেন মাত্র। বিদ্যাপ্রেমিকদের গুনর্কীতনের এই প্রেমাশ্বাস তার বিরহের আগুনকে আরও বেদনাদায়ক করে তোলে। এই আগুন প্রেমিকের দোয়ারে উপনীত হওয়ার কামনাকে আরও লেলিহান করে তোলে বিদগ্ধ করে তোলে তার অন্তর। এই লেলিহান আগুনের প্রজ্বলনে একসময় বিনাশ প্রাপ্ত তার আমি সত্তা এবং তৃপ্তির মহা মোহ তখন তার সাথে তার প্রভুর ব্যবধান কমে আসে এক ধনুকের চেয়েও কম অর্থাৎ প্রতিটি অস্তিত্ব তার প্রেমিকের সাক্ষাত লাভ করে।
মারেফাতের সর্বনিু স্তর হল অর্থবোধক (حسی مفاهيم) ইন্দ্রিয়লব্দ জ্ঞান। এ জ্ঞান বুৎপত্তিক সামগ্রীক অর্থসমূহের আলোকে মহান প্রতিপালকের এই বিশ্বনীতির প্রতিচ্ছবি যা বিশ্বজগতে প্রকাশ পেয়েছে তা আবিস্কার করতে সক্ষম। আর যদি ঐ বুৎপত্তিক ভিত্তি সমূহ থেকেও সে বঞ্চিত হয়ে থাকে তাহলে সন্দেহাতীত জ্ঞানের পথ পাড়ী না দিয়ে সে প্রাকৃতিক জগতে কাজ ও শক্তির হাতিয়ার বা মাধ্যমে পরিণত হয়।
১. ধর্মীয় সংস্কৃতিতে জ্ঞানের সার্বিক অর্থে উপরে উল্লেখিত সকল স্তরকে সামীল করা হয়। তবে বিশুদ্ধ জ্ঞান যে জ্ঞানের প্রতি পবিত্র কুরআন আমাদেরকে আহ্বান করেছে নিঃসন্দেহে সেটা এই ইন্দ্রিলব্ধ জ্ঞান নয়। বরং সেটি হল এমন একটি মাধ্যম যে জ্ঞান মানুষকে বস্তু জগত থেকে বের করে আলোর জগতের পথনির্দেশনা দিতে সক্ষম এমন জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। একটি পশু যেভাবে তার পাশবিক চাহিদা পুরণের জন্য মহান স্রষ্টা তাকে বিভিন্ন প্রকারের উপকরণ দান করেছেন। যাদ্বারা সে তার জীবন ও বিচারণের সকল প্রয়োজন নিবারণ করে থাকে। সেটা পশুজগত বা পাশবিক স্তরের উপযোগী উপলব্ধি। তেমনী মানুষকেও তার জাগতিক জীবন পরিচালনার সকল উপকরণ মহান প্রভু দিয়েছেন যা দিয়ে সে তার পাশবিক জীবনকে সর্বোত্তম রূপে অতিবাহিত করতে পারে। তবে মানুষকে তার ঐ পাশবিক পর্যায়ের জীবনের মধ্যে আর্বতিত হওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বরং সে স্রষ্টা খলিফা বা প্রতিনিধি পশু কখনো মহা মর্যাদাবান, প্রজ্ঞাবান, সর্বাজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, অনন্ত দাতা, পরমদয়ালু বৈশিষ্ট্য সমূহের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাই মানুষকে সেই অবস্থান লাভ করতে হবে প্রভু যেসব শিক্ষকদের পাঠিয়েছেন তারা দ্বারা প্রশিক্ষণ লাভ করতে। নতুবা কখনোই সে শিখতে পারবে না। কেননা পারলৌকিক জীবনের জন্য কোন তথ্যই তার [পাশবিক স্তরের অন্তরের] কাছে নেই এবং স্বাভাবিক অবস্থায় থাকাও সম্ভব নয়। আর এ জন্যই সৃষ্টা বলেছেন ঃ মানুষদেরকে কুরআন ও পয়গাম্বর প্রেরণের মাধ্যমে এমন অনেক বিষয় সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে যা তারা জানতো না বা জানা সম্ভব ছিল না। [وَعُلِّمْتُمْ مَا لَمْ تَعْلَمُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ }(الأنعام/৯১) তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানতো না।]
আর এবিষয়টিই জানার জন্য পবিত্র কুরআনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই কেবল মাত্র এ জগতে প্রবেশ ও পথনির্দেশনা মুলক জ্ঞানকেই পবিত্র কুরআনে সর্বাধিক মুল্যায়ন করা হয়েছে আর অন্য বিষয়াবলীকে পাশবিক পর্যায়ের তথ্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে। [তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক সম্পর্কে অবগত আছে মাত্র আর পরকাল সম্পর্কে তারা কোন জ্ঞান রাখে না। [সুরা রূম ৭ নম্বর আয়াত]]
কেননা বিদ্যার সম্মান নির্ভর করে তাদের নির্ধারিত স্তরের মান অনুযায়ী। তবে জ্ঞানের চেয়ে মুল্যাবান কোন অস্তিত্বই নেই। [لاشرفَ کالعلمِ ] এরূপ সংস্কৃতিতে বিভিন্ন শ্রেনী তাদের জ্ঞানগত অবস্থানের উপর ভিত্তি করেই সামাজিক মর্যাদা লাভ করে থাকেন। কেননা মানব সন্তানেরা জ্ঞান এবং আকলের উপর ভিত্তি করে সমাজে প্রাধান্য লাভ করে থাকে না, সম্পদ ও বংশ পরিচিতির উপর ভিত্তি করে। [یتفاضلُ النّاسُ بالعلومِ و العقولِ لاَ بالاموالِ والاصولِ.]
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন ঃ মানুষেরা জ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে থাকে।
একটি হল ঃ ঐশী বিদ্যান অপরটি সফলতার পথ অনুসন্ধানকারী শিক্ষার্থী এবং সর্বশেষ শ্রেণী হল বাতাসে ভাসমান কীটপতঙ্গের মত জন্তু। তারা চারপাশের যেকোন আহ্বানের পিছু ধাওয়া করে তারা জ্ঞানের আলো থেকে জ্যোতি লাভ করেনি এবং সুদৃঢ় অবস্থানে তারা আশ্রয় নেইনি।
ঐশী বিদ্যান হলেন নবী এবং রাসুরগণ যারা অদৃশ্য জগতের প্রত্যক্ষদর্শী এবং আল্লাহ থেকে জ্ঞান লাভ করেছেন। আর সফলতার পথ অনুসন্ধানী শিক্ষাথী হলেন যারা অদৃশ্য জগতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক ইন্দ্রিয়লব্দ জ্ঞানের ভিত্তিতে অদৃশ্যজগতের মুল বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়ে তার প্রতি ঈমান আনে এবং ঐশী বিদ্যানদের শিক্ষানুযায়ী আত্মশুদ্ধি, আমল ও পথপরিক্রমায় উত্তীর্ন হওয়ার পথে যাত্রা অব্যহত রাখেন।
তৃতীয় শ্রেনী শুহুদী জ্ঞান কিংবা আকলী তত্ব থেকে যেহেতু উপকৃত হয়নি তাই তারা ইন্দ্রিয়লব্দ জ্ঞানের মধ্যেই নিমজ্জিত থাকে। এই জাতিয় মানুষরা কাফের নতুবা মুনাফিক। তাই এরা প্রথম শ্রেনীর যারা মহান প্রভুর দরবারে পৌছেছেন তাদের বিপরীতে অবস্থান করছে। দ্বিতীয় শ্রেনীর অন্তভুক্ত মানুষেরা সৌভাগ্যবান। আর তৃতীয় শ্রেনীর লোকেরা র্দূভাগ্য ও কলঙ্কময়। [النّاسُ ثلاثهٌ: فعالمٌ ربّانّیٌ و متعلِّمٌ علی سبیلِ نِجاه و همجٌ رِعاعٌ، اتباعُ کلِّ ناعق لم یَستضیئوا بنورِ العلمِ و لم یَلجئوا الی رکن وثیق]
অতএব উপরে উল্লেখিত রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বিদ্যা এবং ঈমান একই সমান্তরালে অবস্থান করছে।[ نِعمَ قرینُ الایمانِ العلمُ] তাই বিদ্যা থেকে ঈমানকে কখনো বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয় এবং পৃথক করলেই উভয়ের বিনাশ ঘটবে। [الایمانُ و العلمُ اَخوَانِ توأمانِ و رفیقانِ لاَ یفترقانِ ]আর এজন্যই ইমাম আলী (আ.) বলেছেন ঃ সর্বোত্তম জ্ঞান হল যা তোমার সংশোধন করে এবং উন্নতি ও হেদায়েতের পথপ্রদর্শন করে। আর নিকৃষ্ট হল পরকালের পথ বিদাপন্ন করে।
পার্থিব ও ঐশী বিদ্যা
যে বিশ্ব জ্ঞানের উপর দন্ডায়মান সে জগতে জ্ঞানীর সম্মান অবস্থান সবার উপরে। [ ইমাম আলী (আ.) বলেন :জ্ঞানীর স্থান র্সবোচ্চস্থানেرتبهُ العالمِ أعلیَ المراتبِ ] আর এ জন্যই এবিশ্বের প্রশাসনিক অবকাঠামোও জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই সাজানো হয়েছে। এখানে জ্ঞানীরাই কর্তৃত্ব করবেন। [العلماءُ حکّامّ علیَ النّاسِ ইমাম আলী (আ.) বলেন : জনগণের উপর র্কতৃত্ব করবে জ্ঞানীরা, আল হাইয়াত ২ খন্ড, ৪৪৯ পৃ.] তাই এ সমাজের পতন তখনই ঘটবে যখন জ্ঞানের ভীত ধসে পড়বে এবং যেসকল আলেমগণ তাদের জ্ঞাত বিষয়ে আমল করবেন তারা অবহেলিত হবেন ; সমাজের মাঝে হারিয়ে যাবেন।
আর একারণেই উল্লেখিত চিন্তার আলোকে প্রথমতঃ আলেমকে তার জ্ঞানভিত্তিক আচরনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত ঃ সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই আবেদন করা হয়েছে যে কোথাও ঐরূপ আলেম দেখলে যেন তার খেদমত করে ।[ اذاَ رأیتَ عالماً فکُنْ لَه خادماً যদি কখনো আলমে বা (ঐ বৈশিষ্ট্যের অধকিারী) জ্ঞানীলোক প্রক্ত্যক্ষ কর তাহলে তার খাদেম হয়ে যাবে, গুরারুল হিকাম, মৌজামুল আলফাজ, ২৮৬ পৃ.।] কেননা এ সমাজে বিদ্যা বা বিদ্যানকে সম্মানের অর্থ হল প্রতিপালকের সম্মান সমতুল্য।
মহান স্রষ্টার দৃষ্টিতে দুনিয়া এবং তার মধ্যে যাকিছু আছে সবই অতি তুচ্ছ এবং তদসামান্য।[ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنْ اتَّقَى وَلاَ تُظْلَمُونَ فَتِيلاً} সুরা নিসা ৭৭ নম্বর আয়াত)] অতএব এ দুনিয়া কেন্দ্রিক জ্ঞানের মুল্যও হবে তদসামান্য। অথচ মহান আল্লাহ পরকালকে উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর একারনেই পরকালকেন্দ্রিক জ্ঞানকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে মুল্যায়ন করেছেন।[{يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلاَّ أُوْلُوا الأَلْبَابِ} / সুরা বাকারা ২৬৯ নম্বর আয়াত) ]তাই পরকাল কেন্দ্রিক যেকোন বিষয়ই কল্যাণকর এবং স্থায়ী।
[بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا} / وَالآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى /১৭সুরা আ’লা ১৬-১৭ নম্বর আয়াত) ] আর দুনিয়া এবং এই দুনিয়া কেন্দ্রিক যাকিছু সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। [{كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا /২৬ সুরা আর রাহমান ২৬ নম্বর আয়াত)] এমন কি এই চিকিৎসা বিদ্যা যা বস্তু দেহ কেন্দ্রিক জ্ঞান তাও উপরের আয়াত অনুযায়ী ঝরে যাবে কোন কাজে আসবে না। কেননা পরকালে কেউ তো আর অসুস্থ হবে না !
সার সংক্ষেপ
জ্ঞানকে ইসলামী চিন্তায় কিভাবে দেখা হয় সে বিষয় নিয়ে মোটামোটি আলোচনা করা হয়েছে। জ্ঞানের পরিচিয় কি এবং আমরা কোন প্রকারের অনুজ্ঞাকে জ্ঞান স্বরূপ পরিগণনা করবো ? এপ্রশ্নের ক্ষেত্রে আমরা যদি ইসলামী চিন্তায় বিদ্যা এবং বিদ্যান সম্পর্কে যেসকল বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোকে পরস্পর সংযুক্ত করি তাহলে ইসলামের বিশেষ দৃষ্টিকোন থেকে বিদ্যা ও বিদ্যানের প্রকৃত অবস্থান ও অর্থের আরো নিকটবর্তী হতে পারবো বলে আশা করছি। তাহলে আসুন এবার আমরা বিদ্যার অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে একেক করে পাশে রেখে ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞানের রূপায়ন করি।
প্রথম বৈশিষ্ট্যঃ
বিদ্যানরা হলেন নবীদের উত্তরসূরী [উসুল আল্ ক্বাফী ১খন্ড, ‘সাওয়াবু আলিম ওয়া মুতায়াল্লিম’ অধ্যায় হাদিস নম্বর-১ ] ।
আসলে নবীদের ওয়ারিস বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? একজন মানুষ কিভাবে নবীদের ওয়ারিস হয় ? নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে যে এখানে অর্থ-সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। বরং সমাজে নবীগণ যে ভুমিকা রেখেছেন সত্যপ্রচার প্রসর এবং জনগণের হিদায়েত করার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিও ঐ দায়িত্বের উত্তরসূরী হবেন। উত্তরাধিকারী হওয়ার অর্থ বিদ্যানরা নবীদের ঐশী কার্মধারাকে জনসমাজে অব্যাহত রাখবেন। আর এখান থেকেই ইসলামী চিন্তাধারায় বিদ্যানের সম্মান ও দায়িত্ব স্পষ্ট হতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে পাশ্চাত্যের আধুনা চিন্তার ভষ্কার বেকেন বলতেন ঃ আমরা বিদ্যাকে তখনই বিদ্যা বলে বিশ্বাস করবো যখন সে আমাদেরকে প্রকৃতির উপর আমাদের জন্য সফলতা এনে দেবে।
উল্লেখিত মতাদর্শে সাথে তুলনা করলে আমাদের বলতে হয় বিদ্যা যতক্ষণ আমাদেরকে নবীর প্রকৃত উত্তরাধিকারী স্বরূপ সৃষ্টি না করছে ততক্ষণ সে বিদ্যাকে ইসলামের দৃষ্টিতে (মানবিক পর্যায়ের) বিদ্যা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করবে না।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিদ্যা ও বিদ্যান আলোচনার শেষ পর্ব
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ঃ
আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে কেবল বিদ্যানরাই তাঁর ভয় পায়। [সুরা ফাতির ২৮ নম্বর আয়াত]।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন ঃ খোদা ভীতি হল বিদ্যার জীবন আর জ্ঞান হল প্রভু পরিচিতির জ্যোতি। যার মধ্যে খোদা ভীতি নেই সে কখনও বিদ্যান হিসেবে পরিচিত হবে না।এমন কি সে যদি বিদ্যার জটিল সমস্য সমূহকেও অতি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ভাবে সমাধান দিতেও সক্ষম হয়। [বিহারুল আনোয়ার ২খন্ড বিদ্যা অধ্যায় ৫২ পৃষ্ঠা]
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন ঃ খোদাভীতিই বিদ্যাকে প্রকৃত বিদ্যায রূপ রূপ দিযে থাকে আর অহংকার, আমিত্ববোধ বিদ্যাকে অজ্ঞতা আধাঁরে রূপান্তর করে। [বিহারুল আনোয়ার ২খন্ড বিদ্যা অধ্যায় ৫২ পৃষ্ঠা]
বিদ্যা কিভাবে খোদাভীতির সৃষ্টি করে আপাতত আমরা সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে আমরা বিদ্যাকে যেভাবেই ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা উপস্থাপন করি না কেন , অবশ্যই এ বিষয়টি বা উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যটি তার মধ্যে সন্নিবেশিত হতে হবে। তাই যে বিদ্যা খোদাভীতির সৃষ্টি করে না সে বিদ্যা বা বিদ্যান ইসলামের দৃষ্টিতে কখনও বিদ্যা ও বিদ্যান হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে না। এখানে ভয় শব্দটি সামান্য ব্যাখ্যা দেয়া দরকার মনে করছি। আরবী ভাষাতে خوف শব্দের অর্থও ভয় করা তবে এটা কাপুরুষসোচীত ভয় পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর সম্মুখে এ জাতিয় ভয়ের নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং خشيت শব্দের অর্থও তবে এ ভয়ের অর্থ হল মহান প্রভুর ঐশয্যের সম্মুখে নীচকে তুচ্ছজ্ঞান করা তাই স্রষ্টার মহত্ব দর্শনের ফলে নিজ অন্তরে যে ভয়ের উদয় হয় সেইটা হল ‘খাশয়িাত’ পবিত্র কুরআনে আল্লাহর সম্মুখে খাশিয়াত মুলক ভয়ের কথা বলা হয়েছে। তাই পবিত্র কুরআনে বিদ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হিসেবে খাশিয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যা প্রভু পরিচিতির মাধ্যমে অন্তস্থলে এক অবর্ণনীয় প্রেমাসক্তি বা উপলদ্ধির সৃষ্টি হয়। আর এ অবস্থা থেকে জন্ম নেয় খাশিয়াত নামক ভীতির যা স্বয়ং জ্ঞানের বর্হিঃপ্রকাশ এবং জ্ঞান বৃদ্ধিও সাথে সাথে এ জাতিয় ভীতিও বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য ঃ
বিদ্যা মানুষকে সত্যপথে হেদায়েত করে। প্রকৃত বিদ্যা তার বাহককে কখনও একাকী ছেড়ে দেয় না।
মহানবী (স.) বলেন ঃ যে ব্যক্তির বিদ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তার হিদায়েতের বৃদ্ধি ঘটে না। সে নিজের সাথে প্রভুর ব্যবধানকেই অধিক বৃদ্ধি করলো। [মুহাজ্জাতুল বাইদাহ্]
তাই ইসলামী চিন্তাচেতনায় বিদ্যার একটি লক্ষনীয় বিষয় হল বিদ্যা কখনও বিদ্যানের হেদায়েত সম্পর্কে নিরাপেক্ষ থাকতে পারে না।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য ঃ
বিদ্যার পরবর্তী বৈশিষ্ট্য হল ; বিদ্যার ধারাবহিকতা বা ক্রমপর্যায়। এ ধারাবাহিকতার অর্থ হল ঃ একই সত্যতা বা বাস্তবতা উপলব্ধির ক্ষমতা প্রত্যেকের সমান নয়। এপ্রসঙ্গে মহানবী (স.) এর একটি অতি প্রশিদ্ধ হাদিস হল ঃ আবুযার যদি জানত্ সালমানের অন্তরে কি (রহস্য লুকিয়ে আছে তাহলে তাকে কাফের ভাবত্ অথবা তাকে হত্যা করা বৈধ মনে করত। [মুহাজ্জাতুল বাইদাহ্ ১ম খন্ড ৬৫ পৃ.]
হযরত ইমাম সাজ্জাদ (আ.) একটি কবিতায় বলেন ঃ আমি আমার রহস্যময় বিদ্যাকে গোপন রেখেছে যাতে মূর্খরা তা দেখতে না পায়। [মুহাজ্জাতুল বাইদাহ্ ১ম খন্ড ৬৫ পৃ.]]
ইমাম আলী (আ.) বলেন আমার নিকট রহস্যময় জ্ঞানের ভান্ডার রয়েছে। যদি তা প্রকাশ করি তাহলে আমাকে তোমরা মূর্তি পুঁজারী বলবে এবং মুসলমানদের কেউ হয়ত আমাকে হত্যা করা বৈধ বিবেচনা করবে।
পঞ্চম বৈশিষ্ট্য ঃ
বিদ্যার আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল সহিষ্ণুতা।
ইমাম রেজা (আ.) বলেন ঃ সহিষ্ণুতা ও শান্তভাব হল জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। [মুহাজ্জাতুল বাইদাহ্ ১ম খন্ড ১৪৭ পৃ.]
৬ষ্ট বৈশিষ্ট্য ঃ
বিদ্যা এবং আমলের অবিচ্ছেদ্য অবস্থান। পবিত্র কুরআনে ঐসকল বিদ্যান যারা জ্ঞান বহন করে বেড়ায় কিন্তু আমল করে না তাকে গাধার সাথে তুলনা করা হয়েছে। সুরা জুম্য়ার ৫ নম্বর আয়াতে মহান প্রভু বলেন ঃ যাদেরকে তৌরত দেয়া হয়েছিল অতপর তারা তা আমল করে নি তাদের উপমা হল ঐ গাধার মত যারা বিদ্যাগ্রন্থ বহন করে বেড়ায় [কিন্তু তা থেকে তারা কখনো উপকৃত হয়না] এটা কতই না নিকৃষ্ট শ্রেণীর উপমা যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা ভেবেছে। আল্লাহ জালিমদেরকে কখনো পথপ্রদর্শন করেন না। [{مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ}(الجمعة/৫).] অতএব আমল ছাড়া বিদ্যার ধারককে প্রথমত গাধার সাথে তুলনা করা হয়েছে আর দ্বিতীয়ত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমল না করার অর্থ হল আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
বিদ্যা এবং বিদ্যান সম্পর্কে ইমাম আলী (আ.) ও কুমাইলের ঐতিহাসিক কথোপকথনে জ্ঞানের অধ্যায়ে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আমাদের প্রকৃত বিদ্যা ও বিদ্যান পরিচয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আশা করছি।
কুমাইল বলেন ঃ ইমাম আমার হাত ধরে মরুর দিকে নিয়ে গিয়ে আমাকে বললেন ঃ হে কুমাইল মানুষ সাধারণ তিন প্রকারের (১) ঐশী বিদ্যান (২) জ্ঞান পিপাসু বা বিদ্যা সন্ধানী (৩)মশার ন্যায় বাতাসে শুন্যে বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়ানো লোকসকল। বাতাস এদের যেদিকে নিয়ে যায় তারা সেদিকেই ধাবিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেদিক থেকে ডাক আসে তারা সেদিকেই অগ্রসর হয়। ইমাম আরো কিছু ব্যাখ্যার পর নিজের বুকের দিকে ইঙ্গেত করে বললেন ঃ এখানের জ্ঞানের ভান্ডর রয়েছে। হায় ! খোদা এ জ্ঞানের বাহক যদি পেতাম! ?
তারপর তিনি বললেন ঃ হ্যাঁ’ পাওয়া যাবে। তারা তিক্ষ্ম মেধা সম্পন্ন , তবে বিশ্বস্ত নয়। এরা এমন ধরণের মানুষ যারা নিজ ধর্মকে যে কোন মুহুর্তে পৃথিবীর (পার্থিব স্বার্থের) কাছে বিক্রি করে দিতে পারে।
আরও এক শ্রেণীর লোক পাওয়া যাবে যারা ঠিকই বিদ্যার্জন করে কিন্তু বিচক্ষণ নন। অন্ধের মত অন্যকে অনুসরণ করে, অন্যরা তার গলে কর্তৃত্বের শিকল পরিয়ে যেদিকে ইচ্ছাখুশী নিয়ে চলে। অনেক সময় সামান্য কারণেই সন্দেহ ও দোদুল্ল্যতার অগ্নিশিখা তাদের অন্তরে পৌছে যায়। এরা কেউই ঐশী জ্ঞানের প্রকৃত বাহক নয়।
অথবা যারা অতি সহজেই তাড়নার বশীভূত হয়ে পড়ে বা পার্থিব মোহে বিমোহিত হয়ে পাশবিকরিপুসমুহের পুজারী হয়ে থাকে। এ জাতিয় লোকদের নিকট যদি জ্ঞান আমানত রাখা হয় তাহলে সে জ্ঞান বিনাশ হয়ে যাবে। কেননা এদের মৃত্যুর সাথে সাথে বিদ্যাও সমাধিত হয়ে যাবে।
তাই প্রকৃত অর্থে ইসলামী চিন্তাচেতনায় উপরে উল্লেখিত কেউই বিদ্যার প্রকৃত বাহক (বিদ্যান) নয়। অর্থাৎ ইমাম আলী (আ.) এর কথা অনুযায়ী র্কতৃত্বপ্রিয়, তাড়না বা আত্মলিপ্সার বশীভূত এবং ধন-সম্পদের পুজারী ব্যক্তিরা কখনও জ্ঞানের প্রকৃত বাহক নন।
সবশেষে তিনি বলেন ঃ কেন ? ‘হ্যাঁ’ অতি নগন্য সংখ্যক জ্ঞানের বিশ্বস্ত বা প্রকৃত বাহক পাওয়া যাবে। ভুপৃষ্ঠ কখনও এজাতিয় মহান ব্যক্তিত্ব শুন্য অবস্থায় থাকবে না। অতপর তিনি ঐ শ্রেণীর মহান ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্যের বিবারণ দিতে গিয়ে বলেন ঃ তারা এমন এক প্রকৃতির মানুষ যাদের বিচক্ষণতা সম্পন্ন সত্তায় জ্ঞান আক্রোমনাত্মক ভাবে নিপাতিত হয়। তারা বিদ্যা দ্বারা বিহ্বলিত হয় না। তারা বিদ্যার পিছে ছুটে পরিশ্রান্ত হয় না বরং বিদ্যা তাদেরকে অনুসন্ধান করে। জ্ঞান তাদের অস্তিত্বের উপর কিরণ ছটায়, তাদেরকে জ্যোর্তিরময় করে তোলে। তারা আত্মিক তৃপ্তি ও বিশ্বস্ত আত্মার সাথে সহবাস করে।
উল্লেখিত বিষয়বস্তুর কোনটি জ্ঞান নয় বরং জ্ঞানের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য মাত্র। আমরা এতক্ষণ ধরে যে জ্ঞানের অনুসন্ধান করেছি তার ঠিকানা এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মহানবী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন ঃ অধিক পুথিগত বিদ্যা অর্জনের মধ্যে জ্ঞান নিহীত নয়। বরং জ্ঞান হল (ঐশী) নুর। মহান প্রভুর যাকে হেদায়েত করতে চান তার অন্তরে বিকিরিত করেন। [বিহারুল আনোয়ার ১ম খন্ড জ্ঞান অধ্যায় ২২৫ পৃ.]
ইমাম আলী (আ.)-এর দীর্ঘ বক্তব্যের সাথে উল্লেখিত হাদীসের পূর্ণরূপে মিল রয়েছে। অর্থাৎ জ্ঞানের সম্মুখে আমরা পাত্র সম। এ পাত্রের অবস্থা, অবস্থান, ক্ষমতা, বিশেষত্ব, পবিত্রতা ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে, মহান প্রভু মাশিয়াতের উপর ভিত্তি করে বিশুদ্ধ জ্ঞান তারই একান্ত বান্দাদেরকে দান করে থাকেন। আর এজন্যই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘তোমরা মহান আল্লাহর তাকওয়া ধারণ কর তিনিই তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন। [-وَاتَّقُوا اللَّهَ وَيُعَلِّمُكُمْ اللَّهُ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ}(البقرة/২৮২)সুরা বাকারা ২৮২ নম্বর আয়াত]
আরেক ব্যাখ্যায় আমরা বলতে পারি যেহেতু সকল জ্ঞানের মুল উৎস হল মহান প্রভু । তাই প্রভু পরিচিতির মাধ্যমে যে ব্যক্তি যতখানি তার অন্তুরে প্রভুকে ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করবে ততখানি সে বিশুদ্ধ জ্ঞানের ধারক। অতএব প্রভু প্রাপ্তি হল জ্ঞানপ্রাপ্তি। অর্থাৎ আপনার অস্তিত্বের পরিশুদ্ধ ফলকে ঐশী প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হওয়া অথবা ঐশী বৈশিষ্ট্যের পূর্ণ প্রতিচ্ছায়া যা মুহাম্মদী দর্পণ, তারই ছায়ার অবয়বে প্রকাশিত হওয়া, সেটিই হল বিশুদ্ধ জ্ঞান। এখানে জ্ঞান, জ্ঞাতব্য বিষয় ও জ্ঞানীর একটি একক ও অভিন্ন সমন্নয় সাধিত হয়ে থাকে। তখন তার অস্তিত্ব হয়ে যায় ঐশী অস্তিত্ব যেথানে শোসভিত হয় ঐশী বৈশিষ্ট্য ও অলংকার সমূহ। আর এজন্য প্রভুপরিচিতি ও প্রাপ্তির উপর ভিত্তি করেই আমাদের জ্ঞানের তারতম্য ঘটে থাকে।
এই বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম শিক্ষক হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.) কেননা তার মহান সত্তায় প্রতিফলিত হয়েছে মহান আল্লাহর গুনাবলীসমূহের (صفات و اسماء)পূর্ণরূপ আর এ কারণেই পবিত্র কুরআনে মানব জাতির শিক্ষক হিসেবে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এই বিশুদ্ধ জ্ঞানের পরবর্তী শিক্ষক হিসেবে হযরত আলী (আ.)-কে তিনি পরিচয় দিয়েছেন। পবিত্র হাদীসে বলা হয়েছে ঃ আমি জ্ঞানের শহর আলী তার দরওজা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.