মিনার ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য সৌদি অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতাই দায়ী

0 586

127334_349

ইরানের প্রেসিডেন্ট ডক্টর হাসান রুহানি মহান আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে আসা শত শত হজযাত্রীর মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে আইনি ও ইসলামী দায়-দায়িত্ব পালন করতে সৌদি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য নিউইয়র্কে রওনা হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রুহানি এই বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে জরুরি নানা পদক্ষেপ নিতে ইরানি ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তিন দিনের জাতীয় শোক প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যেসব ভুল ব্যবস্থাপনা ও অসঙ্গত পদক্ষেপের কারণে মিনায় এই ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে তা গোপন করা ঠিক হবে না বলে উল্লেখ করেছেন। ইরান অন্যান্য দেশের হাজিদের সম্ভাব্য সব সহায়তা দেবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুর রেজা রহমানি সৌদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন নায়েফের কাছে লেখা এক চিঠিতে গতকালের ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় মক্কা ও মিনায় অবস্থানরত ইরানি ত্রাণকর্মীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মাত্রার সহযোগিতা নিতে সৌদি হজ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়ার দাবি জানান যাতে ইরানি হজযাত্রীদের সমস্ত অসুবিধা দূর হয়।
গতকাল সকাল নয়টার দিকে মিনায় শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মারতে আসা প্রায় ১৩০০ হজযাত্রীর প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে প্রাণ হারান। কোনো কোনো সৌদি সূত্র নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার বলে উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় ১৩১ জন ইরানি হজযাত্রী নিহত ও  নিখোঁজ রয়েছেন দেশটির ৩৬৫ জন। এ পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ৫ জন বাংলাদেশি হজযাত্রীও এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বের অনেক নেতা এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব মিনার মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে শোক প্রকাশ করেছেন। বান কি মুন নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে দায়-দায়িত্ব পালন করতে সৌদি সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
সৌদি রাজপুত্র সালমান মিনা অঞ্চলে ২০০ সেনা ও ১৫০ জন পুলিশসহ বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে ঢোকার পর হঠাৎ হজযাত্রীদের স্রোতের উল্টো দিকে ফিরতে থাকায় এবং হজযাত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় না করে কয়েকটি সড়ক হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার কারণেই মিনায় গতকালের ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে বলে নানা সূত্র খবর দিয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ যত সাফাই বা রাখঢাকই করুক না কেন এ জাতীয় ঘটনার দায়-দায়িত্ব কোনোক্রমেই এড়াতে পারে না।
সৌদি অব্যবস্থাপনার কারণে এ বছরই প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ক্রেন ভেঙ্গে পড়ায় ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় ১২০ জন হজযাত্রী। এর আগে ২০০৬ সালেও মিনায় ভিড়ের চাপে বহু হজযাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
বিভিন্ন বছরে হজের সময় অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে শত শত হজযাত্রী প্রাণ হারানোর ঘটনা যেন সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে উপেক্ষা করার মত একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে; ঠিক যেভাবে ইয়েমেনের বেসামরিক জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করাটাও সৌদি আরবের বর্তমান অদূরদর্শী,অনভিজ্ঞ ও আনাড়ি সরকারের কাছে পরিণত হয়েছে সাধারণ বিষয়ে।
তাই মিনার গতকালের ঘটনাকেও এক অর্থে গণহত্যা বলা যায় এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করার কথাও ভাবছেন অনেকেই। পবিত্র হজের মত একটি বিশ্ব সমাবেশ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.