বন্ধুত্বের মুল্য

0 330

বন্ধুত্বের মুল্য

ভালবাসা মানুষের সহজাত অনুভুতি। এজন্য আমরা প্রতিটি মানুকে তার সমগোত্রীয়দের প্রতি এক আভ্যন্তরীণ শক্তি দ্বারা আকৃষ্ট হতে দেখতে পাই। এভাবে এ সহজাত প্রয়োজন অবশ্যই পূর্ণ হতে হবে যেন প্রত্যেক মানুষ অন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সমষ্টির সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে । এধরনের সম্পর্কের মাধ্যমে সে তার সামাজিক জীবনে উপকৃত হতে পারে।
ভালবাসা ও নিরাপত্তা শান্তির ভিত্তি । এটা সর্বশেষ্ঠ উপভোগ্য আত্মিক চাহিদা যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ দুনিয়ায় ভালবাসার চেয়ে অধিকতর মূল্যবান আর কোন জিনিস নেই। তাই অনেক সময় কোন প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশী সর্বনাশা হয়ে থাকে। আমাদের আত্মাসমূহ অন্য আত্মার কাছে আশ্রয়লাভের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকে, যা নাহলে নিরাপত্তাহীনতা ও দুশ্চিন্তার হাতে নিগৃহীত হয়ে আমরা ক্ষতবিক্ষত হতাম। এভাবে, আমরা আমাদের নিজস্ব ভুবনেও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে যেতাম। প্রকৃত অনুভুতি ও সত্যিকারের ভালবাসার সম্পর্ক সর্বোকৃষ্ট উপায়ে সমাজের বিভিন্ন লোককে এক সুদৃঢ় ঐক্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাখে । দুটো আত্মার মধ্যে যে সম্প্রীতি দেখা যায় তা তাদেরকে ভালবাসা ও ঐক্যের জগতে একই ব্যক্তিতে পরিণত করে। এখন থেকে অনন্তকালীন সুখের ভিত রচিত হয়ে থাকে । তথাপি , এসুখ অব্যাহত রাখার জন্য , পারস্পারিক বিভেদসমূহ অবশ্যই মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং অন্যদের সাথে এমন সব বিষয়সমূহের ব্যাপারে সমঝোতা করে নিতে হবে যা তারা যথাযথভাবে মেনে নিতে রাজী নয়। সবচাইতে মূল্যবান ভালবাসা হচ্ছে এমন সব যা মানুষের ব্যক্তিগত স্বর্থের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় বরং তা মানুষের ভ্রাতৃত্বের অনুভূতির সাথে একাত্ম হয়ে তার ভালবাসার চাহিদা পূরণে সক্ষম। একজন মানুষ যে নিজেকে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পেশ করবে তাকে অবশ্যই এমন কোন কাজ বা আচরণ হতে বিরত থাকতে হবে যা তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরাতে পারে। বস্তুত:পক্ষে, তাকে তার বন্ধুর উপর অর্পিত বিপদ ও দু:খকষ্ট দূর করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে এবং বন্ধুকে আশা ও শান্তির পুষ্পকানন প্রদান করতে হবে। যারা অন্যের কাছ থেকে ভালবাসার প্রত্যাশী হতে চায় তাদেরকে তাদের এ অনুভুতির ছায়ায় বসবাসের পূর্বে প্রতিপক্ষের প্রতিও একই ধরণের ভালবাসা প্রদর্শনে সক্ষম হবে।

জনৈক বিজ্ঞ পন্ডিতের মতে: আমাদের জীবন একটা পাহাড়ীয়া অঞ্চলের মত, যেখানে কেউ কোন শব্দ করার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিধ্বনিত হয়ে পুন: তারই কাছে ফেরত আসে, যাদের অন্তর অন্যদের প্রতি ভালবাসায় পরিপূর্ণ তারা অন্যদের কাছ থেকে একই ধরণের বালবাসা পেতে থাকবে।এটা সত্য যে আমাদের বস্তুজীবন পারস্পরিক লেনদেনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা এটা বলতে চাই না যে, আমাদের আধ্যাত্মিক জগতও একই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভবপর বলে আশা করা যায় যে আমরা অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত না হয়ে তাদেরকে আমাদের প্রতি বিশ্বস্ত হতে আশা করতে থাকব। একজন কিভাবে অন্যদেরকে না ভালবেসে, তাদের কাছ থেকে ভালবাসা প্রত্যাশা করতে থাকবে?
অন্যদের সাথে আমাদের পাস্পরিক কাজকর্মের সম্পর্ক অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে যদি তা উভয় পক্ষ হতে ভালবাসা ও সততার মনোভাবের উপর প্রতিষ্ঠিত না হয়। ভয়াবহ কপটতা যখন মানুষের জীবন ও অন্তরসমূহকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে, যখন চাটুকারিতা সততার স্থলাভিষিক্ত হয়ে পড়বে, এবং বন্ধুত্ব, একাত্বতা, সহযোগিতা ও øেহশীলতা দূর্বল হয়ে পড়বে তখন সমাজ হতে পারস্পরিক সহযোগীতার মনোভাবের অবলুপ্তি ঘটবে।

নি:সন্দেহে , আমাদের সমাজের অনেকের সাথে এমন সব লোকের সাথে দেখা হয়েছে যাদের অন্তরে প্রকৃত ভালবাসা বা অনুভূতি বলতে কিছুই নেই । তারা তাদের প্রকৃত সত্তাকে ভালবাসার আবরণে আবৃত করে রাখে কিন্তু বারংবার আমরা তাদের এই আবরণ উন্মোচন করে তাদের সঠিক অবস্থা ও প্রকৃত অনুভূতি পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম হই এর ফলে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের মুখোশ ধ্বংসের কাজেই পর্যবসিত হয়ে যায়।
বস্তুত:পক্ষে, সুখী হওয়ার পূর্বশর্ত ও আত্মিক উন্নয়নের ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে সত্যপন্থী লোকদের সাথে প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এটা এজন্য যে এ ধরণের সম্পর্কের ছায়াতলে ব্যক্তিগত চিন্তার উন্নতি খোদাভীরুতার পর্যায়ে উন্নীত হয়ে উকৃষ্ট গুণাবলীর জন্ম দিতে থাকে। সুতরাং, বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব হতেই , অবশ্যই, সতর্কতার সাথে পরীক্ষা কাজ চালাতে হবে। যাদের সাথে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে তাদের সততা ও পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে বন্ধুত্ব করা এক অমার্জনীয় ভুল। কেননা, মানুষকে তাদের সঙ্গে সহচার্যকারীদের চরিত্র বৈশিষ্ট্যের প্রভাবে অতি সহজে প্রভাবিত হওয়ার যোগ্য করে সৃষ্টি করা হয়েছে। নেতিবাচক সম্পর্ক মানুষের সুখের পথে হুমকিস্বরূপ।
বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ও অবাঞ্চিত অভ্যাস ভালবাসার সম্পর্ককে দূর্বল করে এবং কোন কোন সময় পরিণতি এতদুর গড়ায় যে তা উক্ত সম্পর্ককে পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করে ফেলে। বদমেজাজী ব্যক্তিরা অন্যের ভালবাসার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয় না। তারা সমাজ ও তাদের নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার এক স্থায়ী প্রাচীর গড়ে তোলে যা তাদেরকে অন্যের ভালবাসা উপলব্ধি করার পথে বাধা প্রদান করে।
সুতরাং, বদমেজাজ সুখের ভিত্তিমূলকে ধ্বংস করে দেয় এবং মানুষের চরিত্রের অধ:পতন ঘটায়। এটা নির্বিবাদে বলা যায় যে, মন্দ আচরণ মানুষকে পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
মহানবী (স.) বলেছেন : বদস্বভাব হচ্ছে খারাপ এবং বসস্বভাবলোক তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম।-নাহজুল ফাসাহা, ৩৩১ পৃ.।

Leave A Reply

Your email address will not be published.