আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা’র কল্পকাহিনীও শীয়া মতবাদ
ঐতিহাসিকদের মতে, খলীফাহ্ হযরত ওসমানের শাসনামলে আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা’ নামে জনৈক ইয়াহূদী মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। এ ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে নিম্নলিখিত চিন-া-বিশ্বাস ছড়িয়ে দেয় ঃ
ক) হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) পুনরুত্থিত হবেন।
খ) সব নবী ও রাসূলেরই (আঃ) উত্তরাধিকারী ছিলেন; আর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা হযরত আলী (আঃ)। কিন‘ খলীফাহ্ ওসমান তাঁকে তাঁর ঐশী দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন। অতএব, ওসমানের বিরুদ্ধে ও আলীর অনুকূলে বিদ্রোহ করা অপরিহার্য।
আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা’ “সাবাইয়্যাহ্” নামে একটি দল গঠন করে এবং এ দলটি তৃতীয় খলীফাহ্ ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এরপর বসরার নিকটে উটের যুদ্ধের (জঙ্গে জামাল) সময় আলী ও তাঁর শত্রু ত্বাল্হার মধ্যে যখন শানি–আলোচনা চলছিল ও শানি- প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল তখন সে দুর্বৃত্তপনার আশ্রয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলযোগ বাধিয়ে দিয়ে শানি- প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে নস্যাত করে দেয়। সাবায়ীরা ইতিপূর্বেই পরিকল্পিতভাবে উভয় সৈন্যদলেই যোগদান করেছিল। তারা সেনাপতিদের আদেশের জন্যে অপেক্ষা না করেই অতি প্রত্যুষে প্রতিপক্ষের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করে এবং এর ফলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, মুসলমানদের মধ্যে যত রকমের অপকর্ম ও যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে সে জন্য এই ইয়াহূদী লোকটিই দায়ী।
কল্পকাহিনীর উৎস
আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা’র গল্প দীর্ঘ বারোশ’ বছরের পুরনো। একের পর এক ঐতিহাসিকগণ ও লেখকগণ এ কাহেনী লিপিবদ্ধ করেছেন এবং এতে নতুন নতুন উপাদান যোগ করেছেন।
সব ঐতিহাসিক এ ব্যাপারে একমত যে, এ কাহিনীটি সর্বপ্রথম সাইফ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।
নিম্নোক্ত ঐতিহাসিকগণ এ কাহিনীটি সরাসরি সাইফের রেওয়াইয়াত১ থেকে গ্রহণ করেছেন ঃ
১) ইবনে জারীর ত্বাবারী।
২) যাহাবী; তিনি ত্বাবারী থেকেও উদ্ধৃত করেছেন।
৩) ইবনে আবি বাক্র্; তিনি ইবনে আছীর থেকেও উদ্ধৃত করেছেন – যিনি ত্বাবারী থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
৪) ইবনে ‘আসাকের।
নিম্নাক্ত ঐতিহাসিকগণ কাহিনীটি পরোক্ষভাবে সাইফ থেকে বর্ণনা করেছেন ঃ
৫) নিকলসন; তিনি ত্বাবারী থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
৬) এনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলাম; ত্বাবারী থেকে।
৭) ভন ফ্লোটন; ত্বাবারী থেকে।
৮) ওয়েরহাউযেন; ত্বাবারী থেকে।
৯) মিরখান্দ্; ত্বাবারী থেকে।
১০) আহ্মাদ আমীন; ত্বাবারী ও ওয়েলহাউযেন থেকে।
১১) ফারীদ ওয়াজ্দী; ত্বাবারী থেকে।
১২) হাসান ইবরাহীম; ত্বাবারী থেকে।
১৩) সাঈদ আফগ্বানী; ত্বাবারী থেকে এবং সেই সাথে ইবনে আবি বাক্র্, ইবনে ‘আসাকের ও ইবনে বাদ্রান থেকে।
১৪) ইবনে খালদূন্; ত্বাবারী থেকে।
১৫) ইবনে আছীর; ত্বাবারী থেকে।
১৬) ইবনে কাছীর; ত্বাবারী থেকে।
১৭) ডোনাল্ডসন; নিকলসন ও এনসাইক্লোপেডিয়া অব্ ইসলাম থেকে।
১৮) গিয়াসুদ্দীন; মীরখান্দ্ থেকে।
১৯) আবূল্ ফিদা; ইবনে আছীর থেকে।
২০) রাশীদ রেযা; ইবনে আছীর থেকে।
২১) ইবনে বাদ্রান্; ইবনে ‘আসাকের থেকে।
২২) বোস-ানী; ইবনে কাছীর থেকে।
উপরোক্ত তালিকা থেকে সুস্পষ্ট যে, আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা’ সংক্রান- কল্পকাহিনী সাইফ কর্তৃক সূচিত হয়েছে এবং প্রথমতঃ ত্বাবারী কর্তৃক উদ্ধৃত হয়েছে। অতএব, এ কাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা বা অগ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চত হতে হলে অবশ্যই অত্যন- সতর্কতার সাথে সাইফের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও জীবনেতিহাস অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করতে হবে।
সাইফ্ কে? (সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী)
সাইফ ইবনে ওমর তামীমী হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীতে (খৃস্টীয় ৮ম শতাব্দীতে) জীবন যাপন করে এবং হিজরী ১৭০ সালে (৭৫০ খৃঃ) মৃত্যুবরণ করে। তার লিখিত দু’টি বই-এর সন্ধান পাওয়া যায় ঃ
১) আল্-ফুতূহ্ ওয়ার্-রিদ্দাহ্। এটি হচ্ছে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ইনে-কালের পূর্ববর্তী সময় থেকে শুরু করে তৃতীয় খলীফাহ্ হযরত ওসমানের খিলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়া পর্যন- সময়কার ইতিহাস।
২) আল্-জামালু ওয়াল্-মাসীরি ‘আয়িশাতা ওয়া ‘আলী। এটি হচ্ছে খলীফাহ্ ওসমানের হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে জঙ্গে জামাল (উটের যুদ্ধ) পর্যন- সময়কার ইতিহাস।
এ দু’টি বইয়ে সত্য ঘটনার তুলনায় কল্পকাহিনীই বেশী স‘ানলাভ করেছে। এতে যেমন কতগুলো বানানো কিচ্ছা-কাহিনী সন্নিবেশিত করা হয়েছে, তেমনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কতক সত্য ঘটনাকে বিকৃত আকারে ও উদ্ভটভাবে পরিবেশন করা হয়েছে।
যেহেতু সাইফ তার পুস-ক দু’টিতে অনেক ছাহাবীর নামোল্লেখ করেছে এবং ছাহাবী পরিচয়ে কতক কল্পিত চরিত্রকেও অন-র্ভুক্ত করেছে সেহেতু এ দু’টি পুস-ক ইসলামের প্রথম যুগের ইতিহাসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। উস্দুল্ গ্বাবাহ্, ইস্তিয়াব্ ও আল-ইছাবাতু ফী তামীযিছ্ ছাহাবাহ্-র গ্রন‘কারগণ সহ অনেক জীবনী গ্রন‘কার এবং মু‘জামুল্ বুল্দান্ ও আর্-রাওযুল্ মি’তার্-এর গ্রন‘কার সহ অনেক ভূগোল গ্রন‘কার এমন কতক ছাহাবীর জীবন কাহিনী লিখেছেন এবং এমন কতক জায়গার নাম উল্লেখ করেছেন যাদের ও যে সব জায়গার নাম কেবল সাইফের পুস-কেই রয়েছে। এসব কারণে সাইফের জীবন ও চরিত্র সম্বন্ধে অবশ্যই বিস-ারিতভাবে ও সতর্কতার সাথে অনুসন্ধান চালানো অপরিহার্য।
সাইফের জীবন ও চরিত্র সম্বন্ধে অনুসন্ধানের ফলাফল যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, সে ছিল এমন একজন ব্যক্তি যে বিশ্বাস করত যে, বস‘গত প্রপঞ্চ সমূহের বাইরে কোন জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয় এবং সে ছিল একজন অনির্ভরযোগ্য কাহিনীকার। তার বর্ণিত কাহিনীগুলো পুরোপুরি সন্দেহপূর্ণ এবং সেগুলো পুরোপুরি বা আংশিকভাবে মিথ্যা রচনা। তার বর্ণিত কাহিনীগুলোর কয়েকটি নিম্নরূপ ঃ
১) ওসামাহ্র বাহিনী ঃ
হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) সিরিয়ায় পাঠানোর জন্যে একটি বাহিনী প্রস‘ত করেন। এ বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন উসামাহ্। এ বাহিনীর সর্বশেষ দলটি মদীনা নগরীর মুয়াত্ (নগরীর শেষ সীমারেখা) ত্যাগ করার আগেই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইনে-কাল করেন। তাই ওসামাহ্ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী হযরত আবু বকরের নিকট থেকে যুদ্ধে গমনের অনুমতি আনার জন্যে হযরত ওমরকে তাঁর নিকট পাঠান। সেই সাথে হযরত ওমর কয়েক জন আনছারের দেয়া এ প্রস-াবও তাঁর কাছে নিয়ে যান যে, যুদ্ধের সেনাপতির পদ থেকে যেন ওসামাহ্কে সরিয়ে দেয়া হয়। হযরত আবু বকর এ প্রস-াব শোনার সাথে সাথে লাথে লাফ দিয়ে ওঠেন এবং ওমরের দাড়ি টেনে ধরেন ও তাঁকে অপদস- করেন এবং বলেন যে, “রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ওসামাহ্কে সেনাপতি নিয়োগ করে গেছেন; আমি তাকে পরিবর্তন করবো না।” এরপর তিনি ওসামাহ্র বাহিনীকে তৎক্ষণাৎ রওয়ানা হয়ে যাওয়ার জন্যে আদেশ দেন এবং হযরত ওমরকে এই বলে অভিশাপ দেন, “তোমার প্লেগ হোক।”
কিন‘ সমকালীন অন্যান্য ইতিহাসবিদগণ এ ঘটনাকে ভিন্নভাবে লিখেছেন।
২) সাক্বীফাহ্ ঃ বানী সায়েদাহ্র ছাউনি
সাইফ বলে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যেদিন ইনে-কাল করেন সেদিন একমাত্র ইসলাম-ত্যাগীরা ছাড়া মুহাজিরদের মধ্যকার সকলেই হযরত আবু বকরকে রাসূলূল্লাহ্ (সাঃ)-এর স‘লাভিষিক্ত হিসেবে সমর্থন করে। আবু বকরের নির্বাচিত হওয়ার সংবাদ আলীকে এতই উচ্ছ্বসিত করে তোলে যে, তিনি কেবল তাঁর জামা গায়ে দিয়ে (‘আবা ও ক্বাবা’ নামক ওপরে পরার মজলিসী পোশাক ছাড়াই) বেরিয়ে আসেন। তিনি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আবু বকরের সাথে মোছাফাহা করেন এবং এরপর যখন তাঁর পোশাক নিয়ে আসা হয় তখন তিনি তা পরিধান করেন এবং আবু বকরের পাশে বসে পড়েন। সাইফ আরো লিখেছে, আবু বকর দাবী করেন যে, তাঁর আত্মার মধ্যে একটি শয়তান রয়েছে, তাই মুসলমানরা যেন সব সময় তাঁর দিকে দৃষ্টি রাখে এবং তিনি অবিচার করলে তা যেন প্রতিহত করে।
সাইফ সাক্বীফাহ্ সম্পর্কে সাতটি কাহিনী বর্ণনা করেছে। এসব গল্পে এমন তিনজন লোককে নায়কের ভূমিকায় দেখানো হয়েছ্ে যাদের মধ্যে ছাহাবীর নামও রয়েছে, অথচ সাইফের পুস-ক ছাড়া সমকালীন অন্য কোন সূত্রে তাদের নামোল্লেখ নেই। এ অদ্ভূত বিষয়টি যে কাউকেই চিন-া করতে এবং তার বর্ণিত কাহিনীগুলো সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতে বাধ্য করে। আহ্লে সুন্নাতের দ্বীনী নেতৃবৃন্দের নিকট নির্ভরযোগ্য বলে পরিগণিত গ্রন‘াবলীতে অনুসন্ধান চালালে সাক্বীফাহ্র ঘটনা লিপিবদ্ধ করণে সাইফের সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার বিষয়টি খুব সহজেই ধরা পড়ে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী বানী সায়েদাহ্র সাক্বীফাহ্র কাহিনী
হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর অনি-ম শয্যায় একটি ওয়াছিয়্যাত করার ইচ্ছা করেন। কিন‘ ওমর তার বিরোধিতা করেন এবং এ অবস‘ায় নবী করীম (সাঃ) ইনে-কাল করলে তিনি লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ্র (সাঃ) ওফাতের সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে হুমকি দেন। এমতাবস‘ায় আবু বকর সেখানে আগমন করেন। তখন ওমর সহসাই শান- হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বায়ত যখন তাঁর কাফন-দাফনের কাজে ব্যস- তখন আনছারগণ সা‘দ ইবনে ‘ইবাদাকে নবী করীম (সাঃ)-এর স‘লাভিষিক্ত হিসেবে নির্বাচিত করার জন্যে একটি ছাউনির (সাক্বীফাহ্) নীচে সমবেত হন। তখন ওমর, আবু বকর ও তাঁদের বন্ধুরা ঐ সভায় যোগদান করার জন্যে সেখানে ছুটে যান। শেষ পর্যন- আবু বকরকে খলীফাহ্ নির্বাচিত করা হয় এবং উপসি‘ত ছাহাবীগণ তাঁর অনুকূলে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর সমবেত জনতা আবু বকরের অনুকূলে সাধারণ ও সর্বজনীন আনুগত্য শপথের (বাই‘আত) জন্যে সেখান থেকে মসজিদে চলে যান। এ পুরো সময়ই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর দেহ মোবারক তাঁর গৃহেই ছিল এবং সেখানে কেবল তাঁর আহ্লে বাইত ও আনছারদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ছাহাবী উপসি‘ত ছিলেন।
উপরোক্ত ছাউনিতে ও মসজিদে আবু বকরের অনুকূলে শপথ অনুষ্ঠানের পর লোকেরা হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর গৃহে গমন করেন এবং তাঁর নামাযে জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। এ পুরো সময়টাই অর্থাৎ সোমবার দুপুর থেকে শুরু করে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দাফনের পূর্ব পর্যন- তাঁর দেহ মোবারক তাঁর বিছানায় ছিল।
কেবল আহ্লে বায়তের সদস্যরাই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর গোসল, কাফন পরানো ও দাফনের পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। হযরত ইমাম আলী (আঃ) এবং বানী হাশেম [হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর চাচাতো ভাইগণ] আবু বকরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স‘লাভিষিক্ত হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁরা নবী-কন্যা হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তখন ওমর তাঁদেরকে আবু বকরের অনুকূলে শপথ গ্রহণ করানোর লক্ষ্যে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্যে সেখানে গমন করেন। কিন‘ তাঁরা হযরত ফাতেমার জীবদ্দশায় আবু বকরের অনুকূলে শপথ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। ছয় মাস পর হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ) ইনে-কাল করেন। অতঃপর হযরত আলী (আঃ) ও বানী হাশেম আবু বকরকে খলীফাহ্ হিসেবে মেনে নেন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।
উপরোক্ত ঘটনাবলী, এ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস, আবু যার, মিকদাদ, আবু সুফিয়ান, মু‘আবিয়া ও ওমর ইবনে খাত্তাবের মূল্যায়ন, সা‘দ ইবনে ‘ইবাদার বৃদ্ধ বয়সের ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্তসার এবং এসব ঘটনা সম্পর্কে সাইফের বর্ণনা ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র সমূহের বর্ণনার মধ্যকার তুলনা মূলক আলোচনা অত্র গ্রনে‘ স‘ানলাভ করেছে।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কীভাবে সাইফ সমকালীন সরকারকে সন‘ষ্ট করার জন্যে মনগড়াভাবে ছাহাবীদের জীবন চরিত রচনা করেছে এবং সাধারণ মানুষের মনমানসকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। ইসলামের ইতিহাসকে উপহাস করার লক্ষ্যে সাইফ তার মনগড়া মতামতের কাল্পনিক সাক্ষী-প্রমাণ তৈরী করেছে।
অনেক শতাব্দী যাবত সাইফের রচিত কল্পকাহিনী সমূহ ইসলামের ইতিহাস হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ), তাঁর আহ্লে বায়ত ও তাঁর ছাহাবীগণের সঠিক ইতিহাস পর্যালোচনার মাধ্যমে ইসলাম যে রকম ঠিক সে রকম হিসেবে ইসলামকে উপস‘াপনের লক্ষ্যে এখন সাইফ ও তার সূত্র সমূহের ওপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে তার স্বরূপ তুলে ধরার সময় এসেছে। আমাদের জন্যে সাইফ ও তার কল্পকাহিনী সমূহের সপক্ষে কথা বলা বা ইসলামী হাদীছের নামে সেগুলোকে রক্ষা করা কিছুতেই উচিৎ হবে না। কেননা তাহলে ইসলামী সত্যের প্রচারের বিরোধিতার মাধ্যমে কার্যতঃ আমরা ইসলামেরই ক্ষতি সাধন করবো।
পাদটীকা ঃ
১. “রেওয়াইয়াত” শব্দের মানে বর্ণনা যা পারিভাষিক দিক থেকে “হাদীছ” শব্দের প্রায় সমার্থক এবং বিশেষজ্ঞ ও মনীষীগণ অনেক ক্ষেত্রেই এ দু’টি শব্দকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেছেন যদিও পারিভাষিক দিক থেকে “রেওয়াইয়াত” শব্দের তাৎপর্য “হাদীছ” শব্দের তাৎপর্য থেকে ব্যাপকতর। আমরা সাধারণতঃ হাদীছ সংকলন সমূহে উল্লিখিত হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কথা ও কাজ এবং তাঁর উপসি‘তিতে অন্যের কথা বা কাজের ব্যাপারে তাঁর অনুমোদন, বিরোধিতা ও নীরবতাকে হাদীছ বলে থাকি। আবার ক্ষেত্র বিশেষে যে কোনো ছাহাবীর কথা ও কাজকে হাদীছ বা হাদীছে ছাহাবাহ্ বলা হয়। অন্যদিকে রেওয়াইয়াত বলতে আমরা সাধারণতঃ ইতিহাস গ্রন‘াদিতে সন্নিবেশিত একই ধরনের বর্ণনা এবং তাবে‘ঈন ও তাবে‘ তাবে‘ঈনের কথা, কাজ ও ঘটনাকে বুঝি। এসব বিষয় সামনে রেখে আমরা অত্র অনুবাদে সাধারণতঃ ব্যাপক তাৎপর্যবোধক পরিভাষা “রেওয়াইয়াত” ব্যবহার করেছি।