আবদুল্লাহ্‌ ইবনে সাবার কল্পকাহিনী ও শীয়া মতবাদ

0 303

হযরত রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ওফাত 

রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সোমবার দুপুরে ইন্তেকাল করেন। এ সময় ওমর মদীনায় ছিলেন১ এবং আবু বকর সান্‌হে২ তাঁর বাড়ীতে ছিলেন।ওমর কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ওফাত অস্বীকার        ওমর ও মুগ্বীরাহ্‌ বিন্‌ শুবাহ্‌ অনুমতি নিয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর হুজরায় প্রবেশ করলেন এবং যে কাপড় দিয়ে তাঁর চেহারা ঢেকে দেয়া হয়েছিলো তা সরিয়ে ফেললেন। ওমর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর চেহারা দেখার পর চীকার করে বলে উঠলেন ঃ দেখো! রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কেমন মারাত্মকভাবে বেহুশ হয়ে গেছেন!তিনি একথা বলে হুজরাহ্‌ থেকে বের হবার সময় মুগ্বীরাহ্‌ তাঁকে বললেন ঃ হে ওমর! আল্লাহ্‌র শপথ, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।         তখন ওমর বললেন ঃ তুমি মিথ্যা বলেছো। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কখনো মারা যান নি। কিন্তু তুমি যেহেতু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোক সেহেতু এরূপ ভান করছো। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মুনাফিকদেরকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত কখনো মারা যাবেন না।শুধু তা-ই নয়, যারাই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের কথা বলেন ওমর তাঁদেরকেই হত্যার হুমকি দেন। তিনি বলেন ঃ কতক মুনাফিক ব্যক্তি ধারণা করছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তা নয়, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মারা যান নি। মূসা বিন্‌ ইমরান যেমন চল্লিশ দিনের জন্যে লোকচক্ষুর আড়ালে যান ও পরে ফিরে আসেন, আর তাঁর সম্পর্কে লোকেরা বলে যে, তিনি মারা গেছেন, তেমনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)ও তাঁর রবের নিকট গিয়েছেন; আল্লাহ্‌র শপথ, তিনি ফিরে আসবেন এবং যারা ধারণা করছে ও বলছে যে, তিনি মারা গেছেন তাদের হাত-পা কেটে ফেলবেন।৪ এরপর তিনি বলেন ঃ যে ব্যক্তি বলবে যে, তিনি মারা গেছেন এই তলোয়ার দ্বারা আমি তার মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলবো।৫ তিনি বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আসমানে চলে গেছেন।        এ সময় ইবনে উম্মে মাক্‌তূম্‌ মসজিদুন্নাবী (সাঃ)-এ কোরআন মজীদের এ আয়াত তেলাওয়াত করছিলেন৭ ঃ আর মুহাম্মাদ রাসূল বৈ নন; তাঁর পূর্বে রাসূলগণ চলে গেছেন। অতএব, তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন বা নিহত হন তাহলে কি তোমরা তোমাদের অতীত অবস্থায় ফিরে যাবে? তাহলে তারা আল্লাহ্‌র কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আল্লাহ্‌ অচিরেই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন।        রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর চাচা আব্বাসও বললেন ঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) অবশ্যই ইন্তেকাল করেছেন। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদের চেহারায় মৃত্যুকালে সব সময়ই যে চিহ্ন ও নিদর্শন দেখেছি তাঁর চেহারায়ও তা-ই দেখেছি।        কিন্তু ওমর নিরস্ত হলেন না। আব্বাস জনতাকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)কে তাঁর নিজের মৃত্যু সম্পর্কে কোন কথা বলতে শুনেছো?” সবাই বলল ঃ না।আব্বাস ওমরকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ তুমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) থেকে কিছু জান কি?” ওমর বললেন ঃ না।তখন আব্বাস জনতার উদ্দেশে বললেন ঃ হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে এমন কি এক ব্যক্তিও নেই যাকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে (কোন ব্যতিক্রমী কথা বলার) দায়িত্ব দিয়েছেন।১০ যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই তাঁর শপথ, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মৃত্যুর পেয়ালা পান করেছেন।১১        কিন্তু ওমর আগের মতোই গর্জন করতে ও হুমকি দিতে থাকলেন। আব্বাস বলে চললেন ঃ শুনে রেখো, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) অন্যান্য মানুষের মতোই রোগ-ব্যাধি ও মৃত্যুর উপযোগী। তাঁর লাশকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করো। আল্লাহ্‌ কি তোমাদেরকে এক বার আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)কে দুই বার মৃত্যু দেবেন? তিনি আল্লাহ্‌র নিকট এমনই প্রিয় যে, তিনি তাঁকে দুই বার মৃত্যুর পেয়ালা পান করাবেন না। তোমাদের কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তো আল্লাহ্‌র জন্যে তাঁকে কবরের মাটি পাশে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে বের করে আনা কঠিন ব্যাপার নয়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) লোকদের জন্যে সৌভাগ্য ও নাজাতের পথ উজ্জ্বল ও সহজগম্য না করে দুনিয়া থেকে যান নি।১২ কিন্তু ওমর তাঁর কথা বার বারই বলতে থাকলেন, ফলে তাঁর মুখে ফেনা এসে গেল, …১৩        এরপর সালেম বিন্‌ ওবাইদ্‌ সান্‌হ্‌ গিয়ে আবু বকরকে খবর দিলেন।১৪ আবু বকর মদীনায় এলেন এবং দেখলেন যে, ওমর দাঁড়িয়ে আছেন ও লোকদেরকে হুমকি দিচ্ছেন১৫ এবং বলছেন ঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বেঁচে আছেন; মারা যান নি। তিনি বেরিয়ে আসবেন এবং যারা তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলছে ও তাঁকে মৃত মনে করছে তিনি তাঁদের হাত কেটে দেবেন ও শিরচ্ছেদ করবেন এবং তাদেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাবেন।        ওমর আবু বকরকে দেখামাত্র সহসাই শান্ত হয়ে গেলেন ও বসে পড়লেন।১৬        আবু বকর আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং বললেন ঃ যারা আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ্‌ সদা জীবিত। আর যারা মুহাম্মাদের ইবাদত করে তারা জেনে রাখুক যে, মুহাম্মাদ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন ঃ আর মুহাম্মাদ রাসূল বৈ নন; তাঁর পূর্বে রাসূলগণ চলে গেছেন। …১৭ওমর জিজ্ঞেস করলেন ঃ আপনি যা পড়লেন তা কি কোরআনের আয়াত?” আবু বকর বললেন ঃ হ্যা।১৮        রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ইন্তেকাল সম্বন্ধে ওমরের মত বদলে গেল। তবে তা মুগ্বীরাহ্‌র কথায় বা ইবনে উম্মে মাকতূম্‌ কর্তৃক কোরআন মজীদের আয়াত তেলাওয়াতের কারণে নয়, বা আব্বাসের যুক্তির কারণেও নয়, বরং আবু বকরের আগমন ও কথায়। অতঃপর তিনি নীরব ও শান্ত হলেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে বলেন ঃ আবু বকরকে যখন এ আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনলাম তখন আমার হাঁটুদ্বয় এমনভাবে নিঃশক্তি হয়ে গেলো যে, আমি মাটিতে পড়ে গেলাম এবং পুনরায় দাঁড়াবার শক্তি থাকলো না। আমি বুঝতে পারলাম রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন।১৯রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ওফাত অস্বীকারের কারণ কী?        এখানে প্রশ্ন জাগে, ওমর হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওফাতের কথা অস্বীকার করলেন কেন? তিনি কি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর প্রতি মহব্বতের আতিশয্যে মানসিক চাপে ও মনের দুঃখে এমনটি করেছিলেন? কতক ঐতিহাসিক যে বলেছেন ঃ ওমর ঐদিন পাগল হয়ে গিয়েছিলেন২০ এটাই কি সত্য?        কিন্তু না, আমরা জানি যে, ব্যাপার অন্য কিছু।         আমাদের মতে, ইবনে আবিল হাদীদ প্রকৃত বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন ঃ ওমর যখন বুঝতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তখন তিনি ভয় করছিলেন যে, পাছে খেলাফতের প্রশ্নে কোন বিপ্লব ঘটে যায় এবং আনছাররা অন্যদের সাথে মিলে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নিয়ে নেন। তাই তিনি যেকোনোভাবেই হোক লোকদের নীরব করে রাখার মধ্যেই কল্যাণ দেখতে পান। অতএব, তিনি যে কথা বলেছিলেন এবং জনগণকে যে সংশয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন তার উদ্দেশ্য ছিলো দ্বীন ও রাষ্ট্রের হেফাযত: অতঃপর আবু বকর এলেন।২১        অন্যদের সাথে মিলে আনছাররা প্রাধান্যের অধিকারী হবে বলে ওমর ভয় করছিলেন বলে ইবনে আবিল হাদীদ যে উল্লেখ করেছেন আমাদের মতে তা যথার্থ। কারণ, হযরত আলী (আঃ) ছিলেন সেই অন্য লোকদেরঅন্তর্ভুক্ত এবং ওমর ভয় করছিলেন যে, আলীই হয়তো খেলাফত লাভ করবেন।         ঐ সময় খেলাফতের দাবীদার ছিলেন তিনজন ঃ        প্রথম – আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)। সমগ্র বানী হাশেম ছিলেন তাঁর সমর্থক। এ ছাড়া আবু সুফিয়ান, যুবাইর, খালেদ বিন্‌ সাঈদ উমাভী, বারাআ বিন্‌ গ্বারেব আনছারী, সালমান, আবু যার, মিক্বদাদ ও আরো অনেক শীর্ষস্থানীয় ছাহাবী তাঁর সমর্থক ছিলেন।        দ্বিতীয় – সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌ আনছারী। তিনি ছিলেন আনছার গোত্র বানূ খাযরাজের সমর্থনপুষ্ট।        তৃতীয় – আবু বকর। ওমর, আবু ওবায়দাহ্‌, মুগ্বীরাহ্‌ বিন্‌ শুবাহ্‌ ও আবদুর রহমান আওফ্‌ ছিলেন তাঁর পক্ষে।        কিন্তু সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌র পক্ষে খেলাফত লাভ করার কোনই সম্ভাবনা ছিলো না। কারণ, আনছারদের মধ্যকার আউস্‌ গোত্র ছিলো তাঁর বিরোধী। অন্যদিকে মুহাজিরদের মধ্যে তাঁর পক্ষে একজন লোকও ছিলো না। এমতাবস্থায় আবু বকরের সমর্থকগণ যদি তাড়াহুড়া করে, এমন কি হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কাফন ও দাফনের আয়োজন সমাপ্ত করার আগেই আবু বকরকে খলীফাহ্‌ করার পদক্ষেপ না নিতেন তাহলে আলী (আঃ)ই খেলাফতের দায়িত্ব লাভ করতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাফন ও দাফনের আয়োজনে ব্যস্ত না থেকে মজলিসে হাযির হলে, বা তাঁর হাযির হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হলে লোকেরা তাঁকেই খেলাফতের দায়িত্ব প্রদান করতেন। সে ক্ষেত্রে আবু বকরের পক্ষে আর খলীফাহ্‌ হওয়া সম্ভব হত না। সম্ভবতঃ এটাই ছিলো ওমরের দুশ্চিন্তার বড় কারণ এবং কতক মনীষী যেমন মনে করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)কে ওয়াছিয়্যাত করার ক্ষেত্রে বাধা দান এবং তাঁর ইন্তেকালের কথা অস্বীকার করা – তাঁর এ উভয় কাজের পিছনেই এ দুশ্চিন্তাই কাজ করেছিল। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর প্রতি মহব্বতের আতিশয্যে দিশাহারা হয়ে যাওয়াই যদি ওমর কর্তৃক রাসূলের (সাঃ) ইন্তেকাল অস্বীকার করা ও অস্বাভাবিক আচরণ করার কারণ হয়ে থাকতো তাহলে তাঁর পক্ষে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাফন-দাফনের কাজে না গিয়ে বানূ সায়েদাহ্‌র সাক্বীফায় ছুটে যাওয়া এবং খেলাফত প্রশ্নে আনছারদের সাথে বিরোধে লিপ্ত হওয়া ও আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হওয়া সম্ভব হত না।        এ ব্যাপারে ইবনে হিশাম লিখেছেন ঃ শাইখাইনের২২ নিকট যখন সংবাদ পৌঁছল যে, আনছাররা বানূ সায়েদাহ্‌র সাক্বীফায় সমবেত হয়েছে [তখনো রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশ মোবারক তাঁর গৃহে ছিলো এবং কাফন-দাফনের কাজ সম্পন্ন হয় নি] ২৩ ওমর আবু বকরকে বললেন ঃ চলুন, আমাদের ভাইদের (আনছারদের) কাছে যাই এবং দেখি যে, তারা কী করছে।২৪        ত্বাবারী বলেন, হযরত আলী (আঃ) যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাফন-দাফনের কাজে ব্যস্ত তখন তাঁরা দুজন আনছারদের দিকে ছুটে গেলেন। পথে আবু ওবায়দাহ্‌ ইবনে জার্‌রাহ্‌র সাথে তাঁদের দেখা হলো এবং তিনজন একত্রে গেলেন।২৫        ইতিপূর্বেই আনছাররা খেলাফত সম্বন্ধে আলোচনার জন্যে সাক্বীফায় জমায়েত হয়েছিলেন এবং কতক মুহাজিরও তাঁদের সাথে যোগদান করেছিলেন। ফলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাফন-দাফনের কাজে কেবল তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠ জন ছাড়া আর কেউই থাকলেন না। কেবল তাঁরাই তাঁকে গোসল দেয়া ও কাফন পরানোর দায়িত্ব পালন করলেন।২৬        ছাহাবী আবু যুওয়াইব হুযালী সেদিন মরু এলাকা থেকে মদীনায় আসেন; তিনি বলেন২৭ ঃ        আমি যখন মদীনায় পৌঁছলাম তখন সেখানে কান্নাকাটি ও হৈচৈ শুনতে পেলাম; এ ছিলো ঠিক ইহ্‌রামের লোকদের ক্রন্দনের শব্দের মতো। জিজ্ঞেস করলাম ঃ ব্যাপার কী? লোকেরা জবাব দিল ঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। মসজিদে ছুটে গেলাম, কিন্তু তা খালি দেখলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর গৃহের দিকে ছুটে গেলাম। কিন্তু সেখানে দরযা বন্ধ দেখতে পেলাম। শুনলাম, ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশ তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে চলে গেছেন। জিজ্ঞেস করলাম ঃ লোকেরা কোথায়? জবাব দিলেন ঃ বানূ সায়েদাহ্‌র সাক্বীফায় আনছারদের নিকট ছুটে গেছেন।        হ্যা, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশ গোসল দেয়া ও কাফন-দাফনের জন্যে তাঁর পরিবারের সদস্যগণ ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। এ কাজে যারা অংশ নেন তাঁরা হলেন ঃ আব্বাস বিন্‌ আবদুল মুত্তালিব, আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ), ফায্‌ল্‌ বিন্‌ আব্বাস, ক্বাসাম বিন্‌ আব্বাস, ওসামাহ্‌ বিন্‌ হারেছাহ্‌ ও ওসামাহ্‌র গোলাম ছালেহ্‌। হযরত আলী (আঃ) তাঁদের সহায়তায় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশকে গোসল দিলেন। এ সময় আউস্‌ বিন্‌ খুওয়ালী আনছারী সেখানে আসেন, তবে তিনি কোন কাজে অংশ নেন নি।রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর দাফনের পূর্বে খেলাফতের দাবীদারগণ        হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কাফন-দাফনের কাজ সম্পাদিত হবার আগেই তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও ছাহাবীগণ খলীফাহ্‌ হিসেবে তাঁদের পসন্দীয় ব্যক্তির অনুকূলে বাইআত হওয়ার উদ্যোগ নেন। তাঁরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যান এবং প্রত্যেক দলই তাঁদের পসন্দনীয় ব্যক্তিকে খলীফাহ্‌ করার চেষ্টা করেন।রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর খেলাফতের প্রথম দাবীদার        হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খেলাফতের প্রথম দাবীদার ছিলেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)।        ইবনে সাদ্‌ তাঁর ত্বাবাক্বাতে লিখেছেন ঃ আব্বাস আলীকে বললেন ঃ তোমার হাত বাড়িয়ে দাও; আমি তোমার নিকট বাইআত হবো যাতে জনগণও তোমার নিকট বাইআত হয়।২৮ আর মাসউদীর রেওয়াইয়াত অনুযায়ী আব্বাস বলেন ঃ এ্যায় ভাতিজা! এসো তোমার নিকট বাইআত হই যাতে দুই ব্যক্তিও খেলাফতের ব্যাপারে তোমার বিরোধিতা না করে।২৯         যাহাবী ও অন্যান্য সূত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, আব্বাস বলেন ঃ তোমার হাত বাড়িয়ে দাও; বাইআত হবো, যাতে বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর চাচা রাসূলের চাচাতো ভাইয়ের নিকট বাইআত হয়েছেন। তখন তোমার বংশের সকল লোক তোমার নিকট বাইআত হবে। আর একবার বাইআত হয়ে গেলে তা আর উল্টানো যাবে না।        যাওহারীর রেওয়াইয়াতে বলা হয়েছে, আব্বাস পরে এ ব্যাপারে আলীকে তিরস্কার করেন; তিনি বলতেন ঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) যখন দুনিয়া থেকে চলে গেলেন তখনই আবু সুফিয়ান বিন্‌ হার্‌ব্‌ আমার কাছে এলো এবং আমরা তোমার নিকট বাইআত হতে চেয়েছিলাম। আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমার হাত বাড়িয়ে দাও; আমি তোমার নিকট বাইআত হবো, আর এই শায়খ (তাঁর গোত্রের মুরুব্বী)ও বাইআত হবেন। এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, আমরা দুজন যদি তোমার নিকট বাইআত হই তাহলে আব্‌দ্‌ মানাফের বংশের এমন কি একজন লোকও তোমার বিরোধিতা করবে না। আর কুরাইশরা তোমার অনুকূলে বাইআত হলে আরবদের মধ্যে একজন লোকও তোমার বিরোধিতা করবে না। কিন্তু তুমি জবাবে বললে, আমরা আপাততঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর জানাযাহ্‌ নিয়ে ব্যস্ত আছি।৩০        ত্বাবারীর রেওয়াইয়াতে বলা হয়েছে, আব্বাস আলীকে বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ওফাতের পর আমি চাচ্ছিলাম যে, তুমি এ ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কর, কিন্তু তুমি বিরত থাকলে …।৩১        আব্বাস ও আবু সুফিয়ান বিন্‌ হার্‌ব্‌ ছাড়াও আরো অনেক ছাহাবী আলী (আঃ)-এর পক্ষে কাজ করছিলেন। কিন্তু আলী (আঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর গোসল ও কাফন-দাফনের দিকেই পূর্ণ মনোযোগ প্রদান করেন এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশ মোবারক কাফন-দাফন ছাড়াই ঘরে রেখে দিয়ে খেলাফত লাভ ও লোকদের নিকট থেকে বাইআত গ্রহণে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। এ কারণেই পরবর্তী কালে আব্বাস তাঁকে এই বলে তিরস্কার করেন যে, কেন তিনি তখন বাইআত গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেন?কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল এই যে, এ ব্যাপারে আব্বাসের যুক্তি ও তিরস্কার কোনটাই সঠিক ছিলো না। কারণ, একদল মুসলমান যেমন বিশ্বাস করেন যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) হযরত আলী (আঃ)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত খলীফাহ্‌ নিয়োগ করে গিয়েছিলেন, এটা সত্য হয়ে থাকলে তাঁর অনুকূলে লোকদের বাইআত হওয়া না হওয়ায় প্রকৃত অবস্থায় কোনই পার্থক্য ঘটে না এবং বাইআত না হওয়ায় তাঁর অধিকার মোটেই হ্রাস পায় না।        তখনকার মুসলমানরা যদি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ইচ্ছাকে সম্মান প্রদর্শন ও কার্যকর করতে প্রস্তুত থাকতেন তাহলে তাঁর প্রতি প্রলাপ বকার অভিধা আরোপ করতেন না। অনেক মুসলামানেরই যেমন বিশ্বাস, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) খেলাফতের বিষয়টি অনির্ধারিত রেখে গেছেন, যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে তাড়াহুড়া করে হযরত আলী (আঃ)-এর অনুকূলে বাইআত হয়ে অন্যদেরকে খলীফাহ্‌ নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার আব্বাসের ছিলো না। মোদ্দা কথা, ঐদিন আলী (আঃ) যদি তাঁর চাচার কথা শুনতেন এবং বাইআত গ্রহণ করতেন তাহলে আবু বকরের অনুকূলে বাইআতকে যেমন ভুল কাজ বলে ম্বীকার করা হয়েছে৩২ আলী (আঃ)-এর অনুকূলে বাইআতকেও একইভাবে ভুল কাজ বলে স্বীকার করা হতো। আর সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরোধীরা এমনভাবে যুদ্ধের আগুন প্রজ্জ্বলিত করতো যে, বছরের পর বছর পার হলেও তা নির্বাপিত হত না। কারণ তাঁর বিরোধীরা ছিলো এমন লোক যারা নবুওয়াত ও খেলাফত উভয়ের গৌরব বানী হাশেমকে দিতে প্রস্তুত ছিলো না। হযরত আলী (আঃ) যেহেতু এসব বিষয়ে আব্বাস থেকে অধিকতর সচেতন ছিলেন তাই তিনি সর্বসাধারণ মুসলিম জনগণকে বাদ দিয়ে ঘরের মধ্যে অল্প কয়েক জনের নিকট থেকে বাইআত গ্রহণ করতে প্রস্তুত হন নি। আর একই কারণে হযরত ওসমানের হত্যাকাণ্ডের পর লোকেরা তাঁর নিকট এসে বাইআত হতে চাইলে তিনি তাঁর ঘরে বসে অল্প সংখ্যক লোকের নিকট থেকে ঘরোয়া পরিবেশে বাইআত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।৩৩         তাছাড়া হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সাথে হযরত আলী (আঃ)-এর) যে নৈতিক ও আত্মিক সম্পর্ক সে বিচারে তাঁর মতো এত বড় মহান ব্যক্তিত্বের পক্ষে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশ গোসল ও কাফন-দাফন ছাড়া ফোলে রেখে অন্য লোকদের মতো খেলাফত লাভের দিকে মনোযোগ দেয়া আদৌ সম্ভব ছিলো কি?রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর খেলাফতের দ্বিতীয় দাবীদার        আনছারগণ বানূ সায়েদাহ্‌র সাক্বীফায় সমবেত হলেন এবং বললেন ঃ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পর আমরা নেতৃত্ব ও খেলাফতের দায়িত্ব সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌র ওপর অর্পণ করবো।ঐ সময় সাদ্‌ অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদের এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সাদ্‌কে সাক্বীফায় নিয়ে এলেন।        সাদ্‌ আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে আনছারদের অগ্রবর্তিতা, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর দুশমনদের বিরুদ্ধে তাঁদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ও ছাহাবীগণ তাঁদেরকে যেভাবে মর্যাদা দিয়েছেন আর তাঁদের ওপর সনষ্ট থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তার কথাও উল্লেখ করলেন। এরপর তিনি বললেন ঃ সমস্যার সমাধান সম্বন্ধে আপনাদেরকেই চিন্তা করতে হবে, অন্য কাউকে নয়।তখন সবাই এক বাক্যে বললেন ঃ আমরা আপনার কথার সাথে একমত; আপনার কথাই সঠিক। আমরা কখনোই আপনার মতামতকে উপেক্ষা করবো না। আমরা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দায়িত্ব আপনার ওপরই  অর্পণ করবো।এরপর সকলে আলাপ-আলোচনায় মশগুল হলেন। তারপর বললেন ঃ কিন্তু কুরাইশ মুহাজিরগণ যদি তা মেনে নিতে রাযী না হন এবং বলেন যে, ‘“আমরা মুহাজির ও রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর প্রথম সহচর এবং তাঁর স্ববংশীয় ও বন্ধু; অতএব, তার পরে তোমরা এ ব্যাপারে আমাদের সাথে বিরোধে লিপ্ত হবে – এর কোন কারণ নেই,” তাহলে করণীয় কী?” একদল বললেন ঃ এ ধরনের আপত্তি হলে আমরা জবাবে বলবো ঃ আমাদের মধ্য থেকে একজন এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমীর নির্বাচিত হবে।তখন সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌ বললেন ঃ এটাই হল প্রথম পরাজয়।৩৪তৃতীয় ও সফল দাবীদার        সাক্বীফায় আনছারদের জমায়েত ও আলাপ-আলোচনার খবর পেয়ে আবু বকর ও ওমর আবু ওবায়দাহ্‌ বিন্‌ জার্‌রাহ্‌ সহ দ্রুত সেদিকে রওয়ানা হলেন। উসাইদ্‌ বিন্‌ হুযাইর্‌, ‘উওয়াইম্‌ বিন্‌ সাএদাহ্‌, ‘আছেম্‌ বিন্‌ আদী, মুগ্বীরাহ্‌ বিন্‌ শুবাহ্‌ ও আবদুর রহমান বিন্‌ আওফ তাঁদের সাথে মিলিত হলেন। এদের সকলেই সেদিন আবু বকরের অনুকূলে বাইআতের জন্যে যথেষ্ট তপরতা চালান। এ কারণে তাঁরা আবু বকর ও ওমর – উভয় খলীফারই বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন।        আবু বকরের নিকট আনছারদের মধ্যে উসাইদ ছিলেন সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি এবং ওমর তাঁকে তাঁর ভাই বলে উল্লেখ করতেন। আর উওয়াইম্‌ বিন্‌ সাএদাহ্‌ ইন্তেকাল করলে ওমর তাঁর কবরের কাছে বসে বলেন ঃ এ দুনিয়ার বুকে অন্য কোন লোকই বলতে পারবে না যে, আমি এই কবরস্থ ব্যক্তির চেয়ে অধিকতর উত্তম।        ওমর আবু ওবায়দাহ্‌কে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনাপতি নিয়োগ করেন। ওমর মৃত্যুর আগে যখন পরবর্তী খলীফাহ্‌ নিয়োগের চিন্তা করেন তখন আবু ওবায়দাহ্‌র জীবিত না থাকার জন্যে আফসোস করেন এবং বলেন যে, তিনি বেঁচে থাকলে তাঁকে খলীফাহ্‌ করতেন।         খলীফাহ্‌ ওমর মুগ্বীরাহ্‌ বিন্‌ শুবাহ্‌র প্রতি যথেষ্ট অনুগ্রহ দেখান এবং সব সময়ই তাঁকে কোথাও না কোথাও প্রশাসক পদে দায়িত্ব দেন। তিনি আবদুর রহমান বিন্‌ আওফের প্রতিও যথেষ্ট অনুগ্রহের দৃষ্টি রাখতেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি পরবর্তী খলীফাহ্‌ নিয়োগের জন্যে যে কমিটি গঠন করে দেন তাতে মূল দায়িত্ব দেন আবদুর রহমানের ওপর।        এরা হলেন সেই সব বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর লাশকে গোসল ও কাফন-দাফন বিহীন অবস্থায় রেখে দিয়ে সাক্বীফায় ছুটে যান এবং খেলাফতের ব্যাপারে আনছারদের সাথে বিরোধে লিপ্ত হন ও তাতে বিজয়ী হয়ে আবু বকরকে খলীফাহ্‌ করতে সক্ষম হন।সাক্বীফায় বিতর্ক        আবু বকর ও তাঁর সমর্থকগণ সাক্বীফায় এসে পৌঁছার পর খেলাফত প্রশ্নে হৈচৈ ও দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কথা বলতে থাকেন। আবু বকরের সমর্থকদের মধ্যে ওমরই ছিলেন সবচেয়ে বেশী সক্রিয়। তিনি একদিকে যেমন আবু বকরকে খলীফাহ্‌ করার জন্যে সকলকে উসাহিত করছিলেন, অন্যদিকে তাঁর বিরোধীদেরকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আবু বকর দাঁড়িয়ে যান এবং ওমরকে থামিয়ে দিয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা এবং ইসলামের খেদমতে মুহাজিরদের ভূমিকা বর্ণনা করার পর বলেন ঃ হে জনগণ! এই মুহাজিররা হচ্ছেন তাঁরা যারা সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌র যমিনে আল্লাহ্‌র ইবাদত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর প্রতি ঈমান এনেছেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সহযোগী ও স্বগোত্রীয়। তাই তাঁর পরে খেলাফতের জন্যে অন্য সকলের চেয়ে তাঁরাই অধিকতর উপযুক্ত ও অধিকতর উত্তম। যালেমগণ ব্যতীত কেউ এ ব্যাপারে তাঁদের সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে না।        এরপর তিনি আনছারদের মর্যাদা বর্ণনা করেন। এরপর তিনি বলেন ঃ যে সব মুহাজির ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে অগ্রবর্তী আমাদের দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যকার কেউই মর্যাদায় তাঁদের সমান নও। অতএব, আমরাই তোমাদের নেতা এবং তোমরা আমাদের সহযোগী।        এ সময় হুবাব্‌ বিন্‌ মুনযার দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বলতে লাগলেন ঃ হে আনছারগণ! তোমরা ক্ষমতার লাগামকে শক্ত করে নিজেদের হাতে ধরো যাতে অন্যরা তোমাদের অধীন হয়ে থাকে ও তোমাদের ছায়াতলে থাকতে বাধ্য হয় এবং কখনো তোমাদের বিরোধিতা করার সাহস না পায়। দুশমনরা যেন তোমাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করতে ও পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তোমাদের রায়কে নস্যাত করে দিতে না পারে। কারণ, তাহলে তোমাদের পরাজয় অবধারিত হয়ে যাবে। তোমরা যা শুনলে এরা তা ছাড়া অন্য কিছুই করবে না। আমরা আমাদের নিজেদের জন্যে একজন নেতা নির্বাচন করবো এবং তারা তাদের জন্যে একজন নেতা নির্বাচন করবে।        তখন ওমর বললেন ঃ কখনোই এক দেশে দুজন রাজার স্থান হবে না। আল্লাহ্‌র শপথ, আরবরা কখনোই এটা মেনে নেবে না যে, তোমরা তাদের ওপর শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করবে যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তোমাদের মধ্য থেকে ছিলেন না। কিন্তু আরবরা এমন কারো শাসন ক্ষমতা মেনে নিতে আপত্তি করবে না রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) যাদের মধ্য থেকে ছিলেন। আমাদের এ দাবীর সপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সহচর ও স্ববংশীয় হওয়া সত্ত্বেও তাঁর শাসন ক্ষমতার উত্তরাধিকার যে আমাদের এ প্রশ্নে তোমরা আমাদের সাথে বিরোধ করছো? ৩৫ …        তখন হুবাব বিন্‌ মান্‌যার পুনরায় দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন ঃ হে আনছারগণ! তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে রেখো (বাইআতের জন্যে এগিয়ে দিও না); এই ব্যক্তির ও তার বন্ধুদের কথায় কান দিও না; এরা তোমাদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে। … এরা তোমাদের প্রস্তাবের বিরোধিতা করলে এদেরকে শহর থেকে বের করে দাও এবং শাসন ক্ষমতার লাগাম নিজেদের হাতে নিয়ে নাও। আল্লাহ্‌র শপথ, এ জন্যে তোমরাই যোগ্যতম। …তারপর তিনি বলেন ঃ আমি তোমাদের মধ্যে উষ্ট্রশালায় স্থাপিত সেই কাষ্ঠতুল্য উটেরা যার সাথে গা ঘষে, আমি সেই বিশাল বৃক্ষ ঝড়ো হাওয়ার সময় যার নীচে আশ্রয় গ্রহণ করা হয়, আমি সেই ব্যক্তি বড় বড় কাজে সবাই যার ওপর নির্ভর করে এবং এবং যার শক্তি থেকে সাহায্য গ্রহণ করে।তখন ওমর বললেন ঃ আল্লাহ্‌ তোমাকে ধ্বংস করুন।হুবাব বললেন ঃ বরং তোমাকে ধ্বংস করুন।তখন ওমর তাঁর পেটে লাথি মারেন এবং তাঁর মুখে ধুলাবালি পুরে দেন।৩৬        এরপর আবু ওবায়দাহ্‌ বক্তৃতা শুরু করলেন ঃ হে আনছারগণ! তোমরা ছিলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)কে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী প্রথম জনগোষ্ঠী; অতএব, এখন তোমরা পরিবর্তনকারী ও ওলট-পালটকারী প্রথম জনগোষ্ঠী হয়ো না।        এ সময় খাযরাজ গোত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি বাশীর বিন্‌ সাদ্‌ উঠে দাঁড়ালেন – সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌র সাথে যার দীর্ঘদিনের শত্রুতা ছিল।৩৭ তিনি বললেন ঃ হে আনছারগণ! আল্লাহ্‌র শপথ, যদিও আমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও দ্বীনের প্রসারের ক্ষেত্রে দীর্ঘ ভূমিকা পালন করেছি এবং এ জন্য মর্যাদার অধিকারী, কিন্তু এর পিছনে আল্লাহ্‌র সনষ্টি, রাসূলের আনুগত্য করা ও নিজেদের জন্যে কষ্ট স্বীকার করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন লক্ষ্য ছিলো না। অতএব, এজন্য মানুষের সামনে গর্ব-অহঙ্কার করা আমাদের উচি নয়। আমাদের লক্ষ্য পার্থিব সুযোগ-সুবিধা ও ইজ্জত ছিলো না। … মুহাম্মাদ ছিলেন কুরাইশ বংশোদ্ভূত, অতএব, অতএব, তাঁর আত্মীয়-স্বজনই তাঁর উত্তরাধিকারী হওয়ার ব্যাপারে অধিকতর যোগ্য। আমি আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে বলছি, আমি কখনোই এ ব্যাপারে তাদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হবো না। তোমরাও আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং তাঁদের বিরোধিতা ও তাঁদের সাথে ঝগড়া করো না।        তখন আবু বকর বললেন ঃ তাহলে এখানে ওমর ও আবু ওবায়দাহ্‌ উপস্থিত আছে; তোমরা তাদের মধ্য থেকে যে কারো অনুকূলে বাইআত হও।        ওমর ও আবু ওবায়দাহ্‌ উভয়ই এক বাক্যে বললেন ঃ আল্লাহ্‌র শপথ, আপনি থাকতে কখনোই আমরা তা গ্রহণ করবো না। …        আবদুর রহমান বিন্‌ আওফ্‌ দাঁড়িয়ে বললেন ঃ হে আনছারগণ! যদিও স্বীকার করতেই হবে যে, তোমাদের মর্যাদা অনেক, কিন্তু এটাও অস্বীকার করা যায় না যে, তোমাদের মধ্যে আবু বকর, ওমর ও আলীর মতো লোক পাওয়া যাবে না।তখন মুনযার্‌ বিন্‌ আর্‌ক্বাম্‌ দাঁড়িয়ে বললেন ঃ তুমি যাদের নাম উল্লেখ করলে আমরা তাদের মর্যাদা অস্বীকার করি না। বিশেষ করে এ তিন জনের মধ্যে এমন একজন আছেন যিনি শাসন ক্ষমতার অধিকারী হলে এক ব্যক্তিও তাঁর বিরোধিতা করবে না।তাঁর কথার উদ্দেশ্য ছিলো হযরত আলী (আঃ)।৩৮ তখন সকল আনছার বা তাঁদের একদল ধ্বনি দিয়ে উঠলেন ঃ আমরা আলী ছাড়া কারো অনুকূলে বাইআত হবো না।        ত্বাবারী ও ইবনে আছীর রেওয়াইয়াত করেছেন৩৯ ঃ ওমর আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হলে আনছাররা বললেন ঃ আমরা আলী ছাড়া আর কারো অনুকূলে বাইআত হবো না।        যুবাইর বিন্‌ বাক্কার বলেন৪০ ঃ আনছাররা যখন খেলাফত পেলেন না কখন তাঁরা বললেন ঃ আমরা আলী ছাড়া অন্য কারো অনুকূলে বাইআত হবো না।যেভাবে বাইআত সংঘটিত হল        সাক্বীফায় আবু বকরের অুনুকূলে বাইআত সম্বন্ধে ওমর বলেন ঃ এত হৈচৈ হচ্ছিল যে, আমি ভয় করছিলাম যে, মতভেদের সৃষ্টি হবে। তাই আবু বকরকে বললাম ঃ আপনার হাত বাড়িয়ে দিন; বাইআত হবো।৪১ওমর থেকে উদ্ধৃত অন্য এক রেওয়াইয়াত অনুযায়ী তিনি বলেন ঃ আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, এ সমাবেশে যদি বাইআত গ্রহণ করা না হয় তাহলে অন্য একটি বাইআত সমুপস্থিত হবে, আর তখন আমরা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তা মেনে নিতে বাধ্য হবো, অথবা সে বাইআতের বিরোধিতা করবো ও ফলে আরেকটি বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) সংঘটিত হবে।        ওমর ও আবু ওবায়দাহ্‌ বাইআত হওয়ার উদ্দেশ্যে আবু বকরের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু তার আগেই সাদ্‌ বিন্‌ বাশীর্‌ এগিয়ে গিয়ে তাঁর নিকট বাইআত হলেন।        তখন হুবাব বিন্‌ মুনযার চীকার করে উঠলেন ঃ ওহে বাশীর বিন্‌ সাদ্‌! এ্যায় অভিশপ্ত কুলক্ষুণে! আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে! তোমার চাচাতো ভাই শাসক হবেন এটা দেখতে চাচ্ছিলে না?” জবাবে বাশীর বিন্‌ সাদ্‌ বললেন ঃ আল্লাহ্‌র শপথ, তা নয়। কিন্তু আল্লাহ্‌ যাদেরকে অধিকার দিয়েছেন তাঁদের সাথে সংঘাতে যেতে চাচ্ছিলাম না।        আউস্‌ গোত্রের লোকেরা এতক্ষণ এসব ঘটনার দর্শক ছিালেন। তাঁরা বাশীর বিন্‌ সাদের বাইআতের দৃশ্য দেখলেন এবং তার আগে কুরাইশদের আহ্বান ও সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌কে খলীফাহ্‌ নির্বাচনে আগ্রহী খাযরাজীদের কথাও শুনেছিলেন। উসাইদ্‌ বিন্‌ হুযাইর সহ আউসের কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বললেন ঃ আল্লাহ্‌র শপথ, খাযরাজরা যদি এক বারের জন্যেও শাসন ক্ষমতা হাতে নিতে পারে … তাহলে চিরদিনের জন্যে তারা এ মর্যাদার অধিকারী হবে এবং তোমরা কখনোই তার অংশ বিশেষেরও অধিকারী হবে না। অতএব, শীগগির ওঠো, আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হও।        আবু বকর জাওহারী তাঁর সাক্বীফাহ্‌গ্রনেলিেখেছেন ঃ আউস গোত্রের লোকেরা যখন খাযরাজের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হতে দেখলেন তখন সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌র সাফল্য রোধ করার জন্যে এ সুযোগকে কাজে লাগালেন এবং অত্যন্ত দ্রুত উঠে গিয়ে আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হলেন।৪২        এভাবে খাযরাজদের আশা-ভরসা নস্যাত হয়ে গেলে লোকেরা সকল দিক থেকে ছুটে এলেন এবং আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হলেন। এ সময় ভীড়ের কারণে সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌র অন্য লোকদের দ্বারা পদদলিত হওয়ার অবস্থা হয়।তারীখে ইয়াকুবীর বর্ণনা অনুযায়ী৪৩, লোকেরা আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হওয়ার জন্যে সাদ্‌ বিন্‌ ইবাদাহ্‌ ও তাঁর জন্যে বিছানো কার্পেটের ওপর দিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সাদের পদদলিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন সাদকে ঘিরে রাখা লোকেরা বলছিলেন, “খেয়াল রেখো, সাদকে পদদলিত করো না।তখন ওমর বলেন ঃ ওকে হত্যা করো; আল্লাহ্‌ ওকে ধ্বংস করুন।তারপর তিনি সাদের শিয়রের কাছে৪৪ গিয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেন ঃ তোমাকে আমি এমনভাবে পদদলিত করতে চাই যে, তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো যেন ভেঙ্গেচুড়ে যায়।এ সময় ক্বায়স্‌ বিন্‌ সাদ্‌ এলেন এবং ওমরের দাঁড়ি ধরে ফেললেন এবং বললেন ঃ আল্লাহ্‌র শপথ, তাঁর শরীরের এক গাছি পশমও যদি কমাও তো দাঁত নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না।তখন আবু বকর ডাক দিলেন ঃ ওহে ওমর! শান্ত হও; এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শান্ত হওয়া বেশী প্রয়োজন।        ওমর সাদের কাছ থেকে চলে এলেন। তখন সাদ্‌ তাঁর দিকে ফিরে বললেন ঃ আল্লাহ্‌র শপথ, আমি যদি উঠতে পারতাম তাহলে সর্বত্র ও মদীনার গলিসমূহে আমার এমন গর্জন শুনতে পেতে যে, তুমি ও তোমার বন্ধুরা ভয়ে গর্তে আশ্রয় নিতে। আল্লাহ্‌র কসম, তাহলে তোমাকে এমন লোকদের কাছে পাঠাতাম তুমি যাদের শাসক নয়, হুকুম পালনকারী হতে।এরপর তিনি তাঁর সঙ্গীসাথীদের বললেন ঃ এখান থেকে বেরিয়ে যাও।তখন তাঁর সঙ্গী-সাথীরা তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে তাঁর বাড়ীতে চলে গেলেন।৪৫        আবু বকর জাওহারী বলেন ঃ এদিন৪৬ ওমর কোমর বেঁধে আবু বকরের সামনে ছুটাছুটি করছিলেন এবং বলছিলেন ঃ সবাই দেখো, লোকেরা আবু বকরের নিকট বাইআত হয়েছে। …৪৭সাক্বীফাহ্‌র বাইআতের পর        সাক্বীফায় আবু বকরের অনুকূলে বাইআতের পর তাঁকে নিয়ে তাঁর সঙ্গী-সাথীরা মসজিদে এলেন যাতে অন্য লোকেরাও তাঁর অনুকূলে বাইআত হতে পারে।হযরত আলী (আঃ) ও আব্বাস তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)কে গোসল দিচ্ছিলেন; গোসলের কাজ তখনো শেষ হয় নি, এমন অবস্থায় তাঁরা মসজিদ থেকে তাকবীর ধ্বনি শুনতে পেলেন। আলী জিজ্ঞেস করলেন ঃ এতো হৈচৈ কিসের?” আব্বাস বললেন ঃ অতীতে কখনোই এমনটি ঘটে নি। তারপর তিনি আলীর দিকে ফিরে বললেন ঃ আমি তোমাকে কী বলেছিলাম?”৪৮        সাক্বীফায় আবু বকরের অনুকূলে বাইআত অনুষ্ঠিত হবার পর বারাআ বিন্‌ আযেব্‌ আতঙ্কিতভাবে বানী হাশেমের লোকদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাঁদের ঘরের দরজায় করাঘাত করে বলতে লাগলেন ঃ বানী হাশেমের লোকেরা! শুনে রেখো, লোকেরা আবু বকরের অনুকূলে বাইআত হয়েছে।        বানী হাশেমের লোকেরা এ খবর শুনে বিস্ময়ে পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন ঃ আমরা মুহাম্মাদের আত্মীয়-স্বজন; আমাদেরকে ছাড়া তো মুসলমানরা কোনো কাজ করতো না!        আব্বাস বললেন, “কাবাহ্‌র রবের শপথ, তারা সেই কাজই করল যা তাদের না করাই উচি ছিল।        ইয়াকুবী বারাআ বিন্‌ আযেব্‌ থেকে উদ্ধৃত করেছেন, আব্বাস বানী হাশেমকে সম্বোধন করে বলেন ঃ তোমাদের হাত চিরদিনের জন্য মাটিমাখা হয়ে গেল: জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার কথা শোনো নি।        সাক্বীফায় আবু বকরের অনুকূলে বাইআত এভাবেই সমাপ্ত হয় এবং পরদিন থেকে তাঁর অনুকূলে সর্বজনীন বাইআত গ্রহণ শুরু হয়।পাদটীকা ঃ১.    সীরাতে ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৩১-৩৩৪; তারীখে ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪২।২.    তারীখে খামীস্‌, ১ম খণ্ড/ ১৮৫। সান্‌হ্‌ তকালীন মদীনা থেকে এক মাইল পূর্বে অবস্থিত; অন্যতম আনছার গোত্র বানী হারেছের বাসস্থান ছিল।৩.    ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৫৪; কান্‌যুল্‌্‌ উম্মাল্‌. ৪র্থ খণ্ড/ ৫০; তারীখে যাহাবী, ১ম খণ্ড/ ৩৭; মুসনাদে আহ্‌মাদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২১৯ ও অন্যান্য।৪.    তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ৯৫; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ২৪২; বিদাইয়াহ্‌ ওয়া নিহাইয়াহ্‌, ৫ম খণ্ড/ ২৪৪ ও অন্যান্য।৫.    তারীখে আবূল ফিদা, ১ম খণ্ড/ ১৬৪; তারীখে ইবনে শাহ্‌নাহ্‌, ৩য় খণ্ড/ ৩৯০।৬.    তারীখে আবূল ফিদা, ১ম খণ্ড/ ১৬২।৭.    ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৫৭; কান্‌যুল্‌ উম্মাল্‌, ৪র্থ খণ্ড/ ৫৪, হাদীছ নং ১৯০২ ও অন্যান্য।৮.   সূরাহ্‌ আলে ইমরান ঃ ১৪৪। ৯.    আবু বাক্‌র্‌ বাক্কেলানী ঃ তাম্‌হীদ্‌,পৃঃ ১৯২-১৯৩।১০.   ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৫৭; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৩; কানযুল্‌ উম্মাল্‌, হাদীছ নং ১০৯২ ও অন্যান্য সূত্র।১১.   তারীখে আবূল ফিদা’, ১ম খণ্ড/ ১৫০।১২.   ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৫৩; কানযুল্‌ উম্মাল্‌, হাদীছ নং ১০৯০; ত্বিবরানী, ২য় খণ্ড/ ১৮৫ ও অন্যান্য সূত্র।১৩.   ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৫৩; কানযুল্‌ উম্মাল্‌, ৪র্থ খণ্ড/ ৫৩ ও অন্যান্য সূত্র।১৪.   তারীখে ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৪ ও অন্যান্য সূত্র।১৫.   ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪৩ ও অন্যান্য।১৬.   কানযুল্‌ উম্মাল্‌, ৪র্থ খণ্ড/ ৫৩, হাদীছ নং ১০৯২।১৭.   ত্ববাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৫৪; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪৪; তারীখে ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২১৯ ও অন্যান্য।১৮.   ত্বাবাক্বাতে ইবনে সাদ।১৯.   ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ২৩৫ ও ৩৩৪; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪২-৪৪৪; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪২ ও অন্যান্য্‌২০.   সীরাতে হালাবীয়্যাহ্‌, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯২ এবং ৩৯১ পৃষ্ঠার পার্শ্বটীকা।২১.   শার্‌হে ইবনে আবিল্‌ হাদীদ, ১ম খণ্ড/ ১২৯।২২.   শাইখাইন – দুই শায়খ অর্থা হযরত আবু বকর ও হযরত আলী। – অনুবাদক২৩.   সীরাতে ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৩৬ ও অন্যান্য।২৪.   প্রাগুক্ত; মাসউদী, পৃঃ ২৪৭।২৫.   তারীখে ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫৬।২৬.   মুসনাদে আহমাদ, ৪র্থ খণ্ড/ ১০৪-১০৫; ইবনে কাছীর, ৫ম থণ্ড/ ২৬০; তারীখে ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫১ ও অন্য অনেক সূত্র।২৭.   ইসি-আব, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৩৪; উস্‌দুল্‌ গ্বাবাহ্‌, ৫ম খণ্ড/ ১৮৮; ইছাবাহ্‌, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৮৮।২৮.   ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৩৮।২৯.   মুরূজুয্‌ যাহাব্‌, ২য় খণ্ড/ ২০০; তারীখে যাহাবী, ১ম খণ্ড/ ৩২৯ ও অন্যান্য সূত্র।৩০.   ইবনে আবিল্‌ হাদীদ ঃ শার্‌হে নাহ্‌জুল্‌ বালাগ্বাহ্‌, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫৪ ও ১৩১।৩১.   ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ২৯৪; ‘ইক্‌দুল্‌ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৭৪।৩২.   এটা হযরত ওমরের অভিমত। পরবর্তীকালে তিনি স্বীকার করেন যে, তাড়াহুড়া করে আবু বকরের অুনকূলে বাইআত হওয়া একটা ভুল কাজ ছিল।৩৩.  ইবনে আবিল্‌ হাদীদ ঃ শার্‌হে নাহ্‌জুল্‌ বালাগ্বাহ্‌, ৯ম খণ্ড।৩৪.   ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২২ ও অন্যান্য।৩৫.   হযরত ওমরের এ যুক্তির কথা যখন পরে হযরত আলী (আঃ)কে জানানো হল তখন তিনি মন্তব্য করেন ঃ নবুওয়াতের বৃক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করলো, কিন্তু তার ফলকে বিনষ্ট করলো।অর্থা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর স্ববংশীয় হওয়ার যুক্ততে তাঁরা আনছারদের মোকাবিলায় খেলাফতকে মুহাজিরদের হক বলে দাবী করলেন, কিন্তু একই যুক্তিতে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর আহ্‌লে বাইতকে তথা হযরত আলী (আঃ)কে খলীফাহ্‌ করতে তাঁরা রাযী হলেন না।৩৬.  শার্‌হে নাহ্‌জুল্‌ বালাগ্বাহ্‌ ঃ ইবনে আবিল্‌ হাদীদ, ২য় খণ্ড/ ২৯১।৩৭.   প্রাগুক্ত, ৬ষ্ঠ খণ্ড।৩৮.  তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৩।৩৯.  ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪৩; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২০।৪০.   শার্‌হে নাহ্‌জুল্‌ বালাগ্বাহ্‌, ৬ষ্ঠ খণ্ড, “কিতাবে মুওয়াফফাক্বিয়াতও ২য় খণ্ড/ ১২২।৪১.   সীরাতে ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৩৬। সমস্ত ঐতিহাসিকগণই এ বাক্যটি উদ্ধৃত করেছেন; কেবল তারীখে ইবনে কাছীরে বাক্যটি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে ঃ আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, আরেকটি বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) না ঘটে যায়।৪২.   ইবনে আবিল হাদীদ কর্তৃক শার্‌হে নাহ্‌জুল্‌ বালাগ্বায় উদ্ধৃত ওয়া মিন্‌ কালামি লাহু ফী মানাল্‌ আন্‌ছার্‌অধ্যায়।৪৩.   ২য় খণ্ড/ ১০৩।৪৪.   স্মর্তব্য,  সাদ্‌ তখন অসুস্থ ছিলেন।৪৫.   তারীখে ত্বাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৫৫-৪৫৯।৪৬.   অর্থা বাইআতের দিন।৪৭.   শার্‌হে নাহ্‌জুল বালাগ্বাহ্‌, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৪ ও ১৩৩ (আবু বকর জাওহারীর সাক্বীফাহ্‌থেকে উদ্ধৃত)।৪৮.   ইকদুল ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ২৬৩; শার্‌হে নাহজুল্‌ বালাগ্বাহ্‌ , ২য় খণ্ড/ ৭৪ ও ১৩৩ (সাক্বীফাহ্‌ থেকে উদ্ধৃত)। 

Leave A Reply

Your email address will not be published.