সর্বজনীন বাই‘আত্
সকল মুসলমানের অংশগ্রন্থহণ ছাড়াই সাক্বীফায় বিশেষ এক পরিস্থিতিতে খেলাফতের অন্য দাবীদারদের দাবী উপেক্ষা করে আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তখনো এ ব্যাপারে তাঁর বিজয় পুরোপুরি নিশ্চিত হয় নি, বরং এ জন্যে সর্বজনীন বাই‘আত গ্রন্থহণের প্রয়োজন ছিল। তাই পরে এ ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রন্থহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে যারা বাই‘আত হয় তারা হলো বানূ আসলামের লোকজন। বানূ আসলামের বাই‘আত এ ব্যাপারে ত্বাবারী লিখেছেন ঃ বানূ আসলামের লোকেরা এতই বিপুল সংখ্যায় মদীনায় এলো যেন মদীনার গলিগুলো তাদের জন্যে অপ্রশস্ত ছিলো; তারা এলো এবং আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হলো। এ ব্যাপারে ওমর বহু বার বলেন ঃ “বানূ আসলামকে যখন দেখলাম তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে, বিজয় আমাদেরই।”১ যুবাইর বর্ণনা করেন ঃ “বানূ আসলামের বাই‘আতের ফলে আবু বকর শক্তিলাভ করেন।”২ কিন্তু শেখ মুফীদ তাঁর “আল-জামাল” গ্রন্থনে‘ বানূ আসলামের মদীনায় আগমন সম্বন্ধে লিখেছেন ঃ তারা খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের জন্যে মদীনায় এসেছিল। এমতাবস্থায় তাদেরকে বলা হয় ঃ “এসো, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর খলীফাহ্র অনুকূলে বাই‘আত গ্রন্থহণে আমাদেরকে সাহায্য করো; এরপর আমরা তোমাদেরকে খাদ্যদ্রব্য দেবো।” এর ফলে তারা আবু বকরের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ হয়। আবু বকর মিম্বারে বসে ছিলেন এবং রাত পর্যন্ত লোকেরা এসে তাঁর নিকট বাই‘আত হতে থাকলেন; কেউই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দাফনের কথা চিন্তা করলেন না। এভাবে মঙ্গল বারের রাত (সোমবার দিবাগত রাত) এসে গেল।৩সর্বসাধারণের বাই‘আত পরদিন আবু বকর মসজিদে এলেন এবং সাধারণ জনগণের নিকট থেকে বাই‘আত গ্রন্থহণের জন্যে মিম্বারে বসলেন। আবু বকর তাঁর বক্তব্য রাখার আগেই ওমর উঠে দাঁড়ালেন এবং হাম্দ্ ও সানা’র পর বললেন ঃ “গতকালের কথা না কোরআনের কথা ছিল, না রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর হাদীছ ছিল। কিন্তু আমি মনে করেছিলাম যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)ই সামষ্টিক কার্যাবলী পরিচালনা করবেন এবং তিনি হবেন এ পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রন্থহণকারী সর্বশেষ ব্যক্তি।” এরপর তিনি বলেন ঃ “ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তোমাদের মধ্যে কোরআন রেখে গেছেন; এখন তোমরা যদি তার আশ্রয় গ্রন্থহণ করো তাহলে তা তোমাদেরকে সেদিকেই পথপ্রদর্শন করবে যেদিকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) পথপ্রদর্শন করতেন। এখন তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির হাতে সোপর্দ করা হয়েছে যিনি গুহায় আশ্রয় গ্রন্থহণকারী দুইজনের একজন। অতএব, তোমরা ওঠো; তাঁর নিকট বাই‘আত হও।” এভাবে সর্বজনীন বাই‘আতের ব্যবস্থা করা হয়। বুখারী বলেন ঃ “এর আগে কিছু লোক বানূ সা‘এদাহ্র সাক্বীফায় বাই‘আত হয়েছিলেন, কিন্তু সর্বজনীন বাই‘আত মিম্বারের ওপর অনুষ্ঠিত হয়।”৪ আনাস বিন্ মালেক রেওয়াইয়াত করেন ঃ শুনেছি যে, সেদিন ওমর আবু বকরকে অনবরত বলেন ঃ “মিম্বারে উঠুন।” তিনি এতই এ কথার পুনরাবৃত্তি করেন ও পীড়াপীড়ি করেন যে, শেষ পর্যন্ত আবু বকর মিম্বারে উঠে বসেন এবং সকলে তাঁর নিকট বাই‘আত হন। এরপর আবু বকর আল্লাহ্ তা‘আলার হাম্দ্ ও সানা’ করেন এবং বলেন ঃ “হে জনগণ! তোমাদের শাসন ক্ষমতা আমার হাতে সোপর্দ করা হয়েছে যদিও আমি তোমাদের মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তি নই। আমি যখন সদাচরণ করবো তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করো, আর যদি খারাপ কাজ করি এবং বক্র আচরণ করি তাহলে আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। … আমি যতক্ষণ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য করবো ততক্ষণ তোমরা আমার আনুগত্য করবে, আর যদি আল্লাহ্ ও রাসূলের নাফরমানী করি তাহলে তোমরা আমার অনুসরণ করো না। এবার নামাযের জন্যে ওঠো; আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন।”৫রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নামাযে জানাযা হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) সোমবার সকালে ইনে-কাল করেন। কিন্তু লোকেরা তাঁর লাশ দাফন করার পরিবর্তে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।৬ হ্যা, সোমবার থেকে শুরু করে মঙ্গল বার বিকাল পর্যন্ত বানী হাশেস বাদে মদীনার বাকী লোকেরা তিনটি কাজ আঞ্জাম দেন। তা হচ্ছে ঃ প্রথমতঃ সাক্বীফায় বিক্ষোভ ও বক্তৃতা, দ্বিতীয়তঃ সাক্বীফায় আবু বকরের সাথে প্রথম বারের মতো বাই‘আত অনুষ্ঠান, তৃতীয়তঃ মসজিদুন্নবীতে (সাঃ) বাই‘আত, ওমরের বক্তৃতা ও আবু বকরের ইমামতীতে নামায আদায়। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন ঃ মঙ্গল বার আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত সমাপ্ত হলে লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর লাশের প্রতি মনোযোগী হলেন৭ এবং তাঁর গৃহে প্রবেশ করলেন ও নামাযে জানাযা আদায় করলেন।৮ কোন ইমাম ছাড়াই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নামাযে জানাযা আদায় করা হয়; মুসলমানরা দলে দলে আসেন ও নামায আদায় করেন।৯রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দাফন হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর লাশ মোবারককে যারা গোসল করান, কাফন পরান ও দাফন করেন তাঁরা হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর চাচা আব্বাস, চাচাতো ভাই ও জামাতা আলী (আঃ), গোলাম ছালেহ্ এবং আব্বাসের পুত্র ফায্ল্। অন্য ছাহাবীগণ তাঁর লাশকে তাঁর ঘরে রেখে খলীফাহ্ নির্বাচনের জন্যে সাক্বীফায় ছুটে যান।১০ অন্য রেওয়াইয়াত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর লাশের দাফন কার্য়ে চারজন অংশ নেন১১ ; তাঁরা হলেন আলী, আব্বাসের দুই পুত্র ফায্ল্ ও কুছাম্ এবং রাসূলুল্লাহ্র গোলাম শুক্বরান্। এদের মধ্যে শুক্বরান্ কবরে নামেন। কোন কোন সূত্র অনুযায়ী ওসামাও ছিলেন। গোসল, কাফন পরানো ও অন্যান্য কাজও তাঁরাই সমাপন করেন।১২ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাফন ও দাফনের সময় আবু বকর ও ওমর উপস্থিত ছিলেন না।১৩ হযরত আয়েশাহ্ বলেন ঃ “বুধবার মধ্যরাতে (মঙ্গল বার দিবাগত রাতে) আমাদের কানে বেলচার শব্দ এসে পৌঁছার আগে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দাফন সম্বন্ধে জানি নি।”১৪ অন্য এক রেওয়াইয়াত অনুযায়ী তিনি বলেন ঃ “বেলচার শব্দ শোনার আগে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দাফন সম্বন্ধে কিছু জানি নি।”১৫ আরো রেওয়াইয়াত হয়েছে যে, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর লাশের কাছে কেউ ছিলেন না। অন্যতম আনছার গোত্র বানূ গ্বানামের লোকেরা রাতের বেলা যখন তাঁদের গৃহে বিশ্রাম ও আরাম করছিলেন তখন তাঁরা বেলচার শব্দ শুনতে পান।১৬ বানূ গ্বানামের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা পরে বলেন ঃ “আমরা শেষ রাত্রে বেলচার শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।”১৭আবু বকরের খেলাফতের বিরোধীগণ ইয়াকুবী লিখেছেন ঃ একদল মুহাজির ও আনছার আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাঁরা হযরত আলী (আঃ)কে খলীফাহ্ হিসেবে দেখতে চাচ্ছিলেন। এদের মধ্যে আব্বাস বিন্ আবদুল মুত্তালিব, ফায্ল্ বিন্ আব্বাস, যুবাইর বিন্ আল-‘আওয়াম, খালেদ বিন্ সা‘ঈদ্, মিক্বদাদ বিন্ ‘আমর্, সালমান ফারসী, আবু যার গিফারী, ‘আম্মার বিন্ ইয়াসার, বারাআ বিন্ ‘আযেব্ ও উবাই বিন্ কা‘ব্ ছিলেন অন্যতম।১৮ আবু বকর জাওহারী লিখেছেন ঃ তাঁরা রাতের বেলা বৈঠকে মিলিত হন এবং মুহাজির ও আনছার সকলের নিকট ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার পন্থা সম্পর্কে আলোচনা করেন। এ বৈঠকে উপরোল্লিখিত ছাহাবীগণ এবং তদসহ ‘ইবাদাহ্ বিন্ ছামেত, আবূল্ হাইছাম্ বিন্ তীহান্ ও হুযাইফাহ্ ছিলেন।১৯ এদিকে ওমর, আবু ওবায়দাহ্ ও মুগ্বীরাহ্ বিন্ শু‘বাহ্কে ডেকে নিয়ে আবু বকর তাঁদের নিকট পরবর্তী করণীয় সম্বন্ধে মতামত চাইলেন। তাঁরা আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে ও তাঁর সন্তানদেরকে ক্ষমতায় অংশীদার করে (বা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে) পক্ষে আনার প্রস্তাব দেন এবং বলেন, তাহলে আপনি আলীর ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন২০ এবং আব্বাসের আনুগত্য আলীর বিরুদ্ধে একটি যুক্তি (হুজ্জাত্) হিসেবে কাজ করবে। এ প্রস্তাব আবু বকরের মনঃপুত হলো এবং তিনি ওমর, আবু ওবায়দাহ্ ও মুগ্বীরাহ্ বিন্ শু‘বাহ্কে নিয়ে রাতের বেলা আব্বাসের গৃহে গেলেন। আবু বকর আল্লাহ্ তা‘আলার হাম্দ্ ও সানা’র পর বললেন ঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাঃ)কে এজন্য উত্থিত করেছেন যাতে তিনি আল্লাহ্র বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন, মু’মিনদের ওপর অভিভাবকত্ব করেন, তাদের প্রতি অনুগ্রন্থহ করেন ও তাদের মধ্যে জীবন যাপন করেন, অতঃপর তিনি (আল্লাহ্) তাঁকে নিজের নিকট ডেকে নেন ও তাঁর জন্যে যা সঞ্চিত রেখেছেন তা তাঁকে প্রদান করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় লোকদের (সামষ্টিক) দায়িত্ব তাদের নিজেদের ওপর সোপর্দ করে যান যাতে তারা নিজেদের জন্যে যা ভালো মনে করে পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে তা সম্পাদন করতে পারে। আর তারা আমাকে তাদের ওপর শাসক ও তাদের সামষ্টিক ব্যাপারে রক্ষক নিয়োগ করেছে। আমিও তা কবূল করেছি এবং আল্লাহ্র সহায়তায় তার রক্ষণাবেক্ষণে কোনরূপ শৈথিল্য ও উদ্বেগের বা আমার ভয় পাবার আশঙ্কা করছি না। আমি সাফল্যকে আল্লাহ্র হাতে বলে মনে করি এবং তাঁর নিকট আশ্রয় চাই ও তাঁর দিকে প্রত্যার্তনরত। আমার নিকট অনবরত খবর আসছে যে, কিছু লোক জনসাধারণের মতামতের বরখেলাফে মতামত ব্যক্ত করছে ও সমালোচনা করছে এবং তোমার ওপর নির্ভর করে আমার ত্রুটি নির্দেশ করছে। কেবল তোমার জনপ্রিয়তা ও সামাজিক মর্যাদার আশ্রয়ে থেকেই তারা এ নব উদ্ভাবিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব, তুমি লোকদের সাথে যোগাযোগ করো এবং তাদেরকে তাদের এ অপরিপক্ক চিন্তা থেকে ফিরিয়ে রাখো। তাই এখন আমরা তোমার কাছে এসেছি এবং তোমাকে ও তোমার সন্তানদেরকে এ কাজে (ক্ষমতায়) শরীক করতে চাই। যদিও তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর চাচা এবং লোকেরা তোমার ও তোমার বন্ধুদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিল, তা সত্ত্বেও তারা এ দায়িত্বকে তোমাদের নিকট থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে। হে হাশেমের বংশধরগণ! তোমরা শান্ত হও। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের ও তোমাদের সকলের, কেবল এককভাবে তোমাদের নন।” ওমর বিন্ খাত্তাব এই সাথে যোগ করেন ঃ “তোমার কাছে আমাদের আগমন থেকে এরূপ ধারণা না হয় যে, আমরা তোমাদের সাহায্যের ও তোমাদের সাথে খাপ খাইয়ে চলার মুখাপেক্ষী। না, বরং আমরা চাই নি যে, মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে যে কাজ করেছে তার বিরুদ্ধে তোমাদের কাছ থেকে বিরোধিতার আওয়ায শোনা যাক। কারণ, এ কাজের দ্বারা তোমাদের ও তাদের ক্ষতি হবে। অতএব, নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করো।” আব্বাস আল্লাহ্র হাম্দ্ ও সানা’র পর বললেন ঃ “তুমি যেরূপ বললে আল্লাহ্ তা‘আলা মুহাম্মাদকে নবী হওয়ার জন্যে এবং স্বীয় অনুসারী ও মু’মিনদের জন্যে সহায়ক ও পৃষ্ঠপোষক হওয়ার জন্যে উত্থিত করেন, আর তিনি (আল্লাহ্) তাঁর (রাসূলের) সত্তার নেয়ামতের দ্বারা তাঁর উম্মাতের প্রতি অনুগ্রন্থহ প্রদর্শন করেন এবং অতঃপর তাঁকে নিজের কাছে ডেকে নেন ও তাঁর জন্যে যা রেখেছিলেন তা তাঁকে প্রদান করেন, আর মুসলমানদের (সামষ্টিক) বিষয় তাদের ওপর ছেড়ে দেন২১ যাতে তারা সত্যকে লাভ করে ও নিজেদের জন্যে বেছে নেয়, এজন্য নয় যে, তারা সত্যের দিক থেকে গোমরাহীর দিকে যাবে। তুমি যদি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নামে এ অধিকার নিয়ে থাকো – যা আসলে আমাদের হক – তাহলে তুমি এ অধিকার জবর দখল ও আত্মসাৎ করেছো। আর যদি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অনুসারীদের নামে এ অধিকারের অধিকারী হয়ে থাকো তাহলে আমরাও তাঁর অনুসারী – আমরা যারা তোমার কাজে কোন ভূমিকাই পালন করি নি এবং নিজেদের জায়গা থেকে নড়ি নি ও সামনে আসি নি। তুমি জেনে রেখো যে, আমরা এতে অসন্তুষ্ট। মু’মিনদের মাধ্যমে যদি এ দায়িত্ব তোমার জন্যে অপরিহার্য হয়ে থাকে তাহলে তুমি অবশ্যই এর উপযুক্ত হয়েছো, কিন্তু যেহেতু আমরা এতে সম্মতি দেই নি সেহেতু তা (আমাদের ক্ষেত্রে) অপরিহার্য ও প্রযোজ্য হবে না। তুমি এ কেমন স্ববিরোধী কথা বলছো! একদিকে বলছো তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছে, অন্যদিকে দাবী করছো যে, লোকেরা তোমাকে নির্বাচিত করেছে ও তোমার পক্ষে রায় দিয়েছে! তুমি একদিকে নিজেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর খলীফাহ্ বলে দাবী করছো, অন্যদিকে বলছো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) লোকদের (সামষ্টিক) বিষয়াদিকে তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়ে গেছেন যাতে তারা নিজেদের জন্যে কাউকে বেছে নেয় এবং তারা তোমাকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই যে বললে আমাকে অংশ দেবে, তা যদি মু’মিনদের হয়ে থাকে এবং তুমি তা আমার ওপর অর্পণ করতে চাচ্ছ তাহলে তোমার এরূপ করার অধিকার নেই,২২ আর যদি তা আমাদের অধিকার হয়ে থাকে তাহলে আমাদের পুরো অধিকার দিয়ে দাও; আমরা আমাদের অধিকারের অংশবিশেষ গ্রন্থহণ ও অংশবিশেষ ছেড়ে দিতে রাযী নই। অতএব, এবার তুমি শান্ত হও, কারণ, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হচ্ছেন এমন একটি বৃক্ষ আমরা যার শাখা এবং তোমরা তার ছায়াতলে আশ্রয় গ্রন্থহণকারী।”হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে আশ্রয়গ্রহণ ইতিপূর্বে যেমন উল্লিখিত হয়েছে, একদল ছাহাবী আলী (আঃ)কে খলীফাহ্ হিসেবে দেখতে চাচ্ছিলেন এবং এ কারণে তাঁরা আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাঁদের মধ্য থেকে কয়েক জন হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং আবু বকরের খলীফাহ্ হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ সেখানে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রাখেন। এ প্রসঙ্গে ওমর বলেন ঃ “আল্লাহ্ যখন তাঁর রাসূলকে দুনিয়া থেকে নিয়ে গেলেন তখন আমাদের নিকট খবর এলো যে, আলী, যুবায়র ও অন্য কয়েক জন আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ও ফাতেমাহ্র গৃহে সমবেত হয়েছে।২৩ ঐতিহাসিকগণ তাঁদের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেছেন; তাঁদেরমধ্যে আলী ছাড়াও ছিলেন আব্বাস, ‘উতাইবাহ্ বিন্ আবি লাহাব, সালমান ফারসী, আবু যার গিফারী, ‘আম্মার বিন্ ইয়াসির, মিক্বদাদ বিন্ আস্ওয়াদ, বারাআ বিন্ ‘আযেব, উবাই বিন্ কা‘ব্, সা‘দ্ বিন্ আবি ওয়াক্কাছ ও ত্বাল্হা বিন্ ওবায়দুল্লাহ্। এছাড়া ছিলেন বানী হাশেমের আরো কয়েক জন লোক এবং অপর কতক মুহাজির ও আনছার।২৪“ফুছূলুল্ মুহিম্মাহ্” গ্রন্থেউক্ত দশজন ছাড়াও আরো কয়েক জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আলী (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত না হওয়া এবং হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে আশ্রয় গ্রহণের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল ঘটনাটি ইতিহাস, সীরাত২৫, ছহীহ্ হাদীছ, মুস্নাদ হাদীছ, সাহিত্য, ‘ইল্মে কালাম ও ‘ইল্মে রেজালের গ্রন্থাবলীতে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যা তাওয়াতোর২৬ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তবে অনেক লেখকই যেহেতু আবু বকরের বিজয়ী দল ও হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে অবস্থান গ্রহণকারীদের মধ্যে কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে চান নি সেহেতু তাঁরা কেবল যতটুকুর উল্লেখ ছাড়া গত্যন্তর ছিল না ততটুকুই উল্লেখ করেছেন। বালাযুরী লিখেছেন ঃ যেহেতু আলী আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে বিরত থাকেন সেহেতু আবু বকর ওমরকে নির্দেশ দেন যে, যেভাবেই হোক যেন আলীকে নিয়ে আসেন। ওমর আলীর কাছে এলে উভয়ের মধ্যে কথোপকথন হয়। আলী ওমরকে বলেন ঃ “তুমি খেলাফতের স্তন্য থেকে দুগ্ধ দোহন করছো যার অর্ধেক তোমার নিজের জন্য। আল্লাহ্র শপথ, আজ তুমি আবু বকরের খেলাফতের জন্যে যে উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে তা কেবল এ জন্য যে, আগামী দিনে যাতে তিনি অন্যদের ওপর তোমাকে অগ্রাধিকার দেন। …” আবু বকর যে অসুখে মারা যান তাতে শয্যাশায়ী থাকাকালে বলেন ঃ “এ দুনিয়ায় যত কাজ করেছি তার কোনটির জন্যেই আমি দুঃখিত নই কেবল তিনটি কাজ ব্যতীত। হায়! এ কাজগুলো যদি না করতাম! … সে তিনটি কাজ ঃ হায়! ফাতেমাহ্র গৃহের দরযা যদি না খুলতাম এবং তাকে সে অবস্থায়ই থাকতে দিতাম যদিও সে দরযা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্যে বন্ধ করা হয়েছিল! …”২৭ তারীখে ইয়াকুবীতে আবু বকরের শেষোক্ত বক্তব্যটি এরূপ উদ্ধৃত হয়েছে ঃ “হায়! রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কন্যা ফাতেমাহ্র গৃহের দরযা যদি না খুলতাম এবং লোকদেরকে তাঁর ঘরে ঝাঁপিয়ে না পড়াতাম, যদিও তা বন্ধ থাকার ফলে যুদ্ধ সংঘটিত হত!”২৮ ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, নিম্নলিখিত ব্যক্তিদেরকে হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে প্রবেশের জন্যে পাঠানো হয়েছিল ঃ ১) ওমর বিন্ খাত্তাব, ২) খালেদ্ বিন্ ওয়ালীদ্, ৩) আবদুর্ রহমান বিন্ ‘আওফ্, ৪) ছাবেত্ বিন্ শাম্মাস্, ৫) যিয়াদ্ বিন্ রাবীদ্, ৬) মুহাম্মাদ্ বিন্ মাস্লামাহ্, ৭) সালামাহ্ বিন্ সালেম্ বিন্ ওয়াক্বাস্, ৮) সালামাহ্ বিন্ আস্লাম্, ৯) হুযাইর্, ১০) যায়েদ্ বিন্ ছাবেত্। অন্যদিকে হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে হামলার ধরন এবং সেখানে অবস্থান গ্রহণকারীদের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে সে সম্পর্কে লেখা হয়েছে যে, আলী ইবনে আবি তালিব ও যুবাইর সহ একদল মুহাজির আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন এবং তলোয়ার হাতে হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে গমন করেন।২৯ আবু বকরকে খবর দেয়া হল যে, একদল মুহাজির ও আনছার রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কন্যা ফাতেমাহ্র গৃহে আলী ইবনে আবি তালিবের সাথে একত্রিত হয়েছেন৩০ এবং আরো জানানো হয় যে, আলীর অনুকূলে বাই‘আত হওয়াই তাঁদের একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য।৩১ আবু বকর ওমরকে হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে যাওযার ও সেখানে অবস্থান গ্রহণকারীদের বের করে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেন এবং বলেন ঃ “তারা প্রতিরোধ করলে ও বের হয়ে আসতে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।” ওমর ফাতেমাহ্র গৃহে আগুন দেয়ার জন্যে মশাল সাথে নিয়ে যান। ফাতেমাহ্ তা দেখে বলেন ঃ “হে খাত্তাবের পুত্র! আমার ঘরে আগুন দিতে এসেছো?” ওমর বললেন ঃ “হ্যা, যদি না উম্মতের সাথে অভিন্ন মতে আসো ও বাই‘আত হও।”৩২ “আল্-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্” গ্রনে‘৩৩ উদ্ধৃত এক রেওয়াইয়াতে বলা হয়েছে ঃ তাঁরা যখন আলীর গৃহে জমায়েত হলেন তখন ওমর এলেন এবং তাঁদেরকে ডাকলেন। কিন্তু তাঁরা গুরুত্ব দিলেন না ও বেরিয়ে এলেন না। তখন ওমর (তাঁর সঙ্গের লোকদেরকে) লাকড়ি আনতে বললেন এবং (গৃহে অবস্থান গ্রহণকারীদের উদ্দেশে) বললেন ঃ “সেই আল্লাহ্র শপথ ওমরের প্রাণ যার হাতে, অবশ্যই তোমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, অন্যথায় ঘরের মধ্যে যারা আছে তাদের সহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবো।” ওমরকে বলা হল ঃ “হে আবু হাফ্স্! ফাতেমাহ্ এ ঘরে আছেন।” ওমর জবাব দিলেন ঃ “থাকুক না কেন।”৩৪ “আল্-আন্ছাবুল্ আশরাফ্”৩৫ গ্রন্থেএ ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে ঃ আবু বকর আলীর নিকট থেকে বাই‘আত গ্রহণের জন্যে তাঁর কাছে লোক পাঠালেন। কিন্তু তিনি বাই‘আত হলেন না। তখন ওমর আগুনের মশাল নিয়ে তাঁর গৃহের পানে রওয়ানা হলেন। হযরত ফাতেমাহ্ ঘরের দরযায় তাঁর সাথে মুখোমুখী হলেন এবং তাঁকে বললেন ঃ “হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি আমার ঘরে আগুন দিতে চাচ্ছ?” ওমর জবাব দিলেন ঃ “হ্যা, তোমার পিতা যা এনেছেন এর ফলে তা সুদৃঢ়তর হবে।” জাওহারী তাঁর “আস্-সাক্বীফাহ্” গ্রন্থেলিখেছেন ঃ “আলীর গৃহে গৃহবাসীদের সহ অগ্নি সংযোগ করার জন্যে ওমর অপর কয়েক জন মুসলমান সহ সে গৃহের পানে রওয়ানা হন।”৩৬বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে শাহ্নাহ্ লিখেছেন ঃ “ঘরে যারাই থাকুন না কেন তাঁদের সকলকে সহ আগুন দেয়ার জন্যে …।”৩৭ কান্যুল্ ‘উম্মাল্-এ৩৮ বলা হয়েছে, ওমর বলেন ঃ “যদিও জানি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তোমার মতো আর কাউকেই ভালবাসতেন না, কিন্তু এ সত্য কখনো আমাকে আমার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে না, আর তা হচ্ছে এই যে, এই কয়েক ব্যক্তি যদি তোমার গৃহে জমায়েত করে তাহলে তোমাকে সহ এ ঘরে আগুন দেয়ার জন্যে নির্দেশ দেবো।” আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর যখন বানী হাশেমের সাথে যুদ্ধ করছিলেন এবং তাঁদেরকে একটি গিরিবর্ত্মে অবরুদ্ধ করে ফেলেন তখন তিনি তাঁদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে লাকড়ি আনার জন্যে আদেশ দেন। তাঁর ভাই ‘উর্ওয়াহ্ ইবনে যুবাইর-এর এরূপ আদেশ দানের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন ঃ “আমার ভাই হুমকি প্রদান ও তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্যে এ আদেশ দিয়েছিলেন, ঠিক যেরূপ অতীতেও এরূপ কাজ হয়েছে এবং বানী হাশেম বাই‘আত না হলে তাঁদেরকে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে লাকড়ি আনা হয়েছিল।”৩৯ তিনি অতীত বলতে আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত না করার ঘটনা বুঝিয়েছেন। মিসরের বিখ্যাত কবি হাফেয ইবরাহীম এ ঘটনা সম্পর্কে তাঁর কবিতায় লিখেন ঃ“আলীর জন্যে উক্তি যা বলেছেন ওমরসম্মানিত তার শ্রোতা আর মহান তার বক্তাতোমার গৃহে আগুন লাগাবো বাঁচবে না তব কেহযদি না বাই‘আত হও আর মুস্তাফার কন্যা সেথাআবু হাফ্ছ্ ছাড়া আনে নি কেহ তা মুখেবীর গৃহবাসী ও তার পৃষ্ঠপোষকের সামনে।” ইয়াকুবী বলেন ঃ (ওমরের সঙ্গীদের মধ্য থেকে) কয়েক জন এগিয়ে এলেন এবং গৃহে হামলা চালালেন। … আলীর তলোয়ার ভেঙ্গে গেল এবং তার পরে তাঁরা গৃহে প্রবেশ করলেন।৪০ ত্বাবারী লিখেছেন ঃ ওমর বিন্ খাত্তাব আলীর গৃহে এলেন। তখন ত্বালহাহ্ ও যুবাইর ছাড়াও মুহাজিরদের মধ্যকার আরো কয়েক ব্যক্তি সে গৃহে ছিলেন। যুবাইর নাঙ্গা তলোয়ার হাতে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং ওমরের ওপর হামলা করেন। এ সময় তাঁর পা পিছলে যায়, ফলে তাঁর হাত থেকে তলোয়ার পড়ে যায়। তখন ওমরের সঙ্গীরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ও তাঁকে আটক করে ফেলেন।৪১ তারপর তাঁরা আলীকে বন্দী করেন এবং আবু বকরের সামনে নিয়ে আসেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলছিলেন ঃ “হে লোক সকল! আমি আল্লাহ্র বান্দাহ্ এবং রাসূলের ভ্রাতা।” কিন্তু সরকার পক্ষের লোকেরা তাঁর কথায় কান দেন নি।আবু বকরের বিচারালয়ে আলীর বক্তব্য হযরত আলী (আঃ)কে আবু বকরের নিকট আনা হল এবং বলা হল ঃ “বাই‘আত হও।” আলী এর জবাবে আবু বকরকে সম্বোধন করে বললেন ঃ “এ দায়িত্বের ব্যাপারে আমি আপনার তুলনায় যোগ্যতর। তাই কিছুতেই আমি আপনার অনুকূলে বাই‘আত হবো না। সঠিক কাজ হলো আপনি আমার অনুকূলে বাই‘আত হোন। আপনি আনছারদের নিকট থেকে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং সে ক্ষেত্রে আপনার যুক্তি ছিল এই যে, আপনারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্বজন। আর তাই তারাও রাষ্ট্রক্ষমতা আপনার হাতে অর্পণ করেছে। আমিও আপনার সামনে সেই একই যুক্তি উপস্থাপন করছি। যদি আল্লাহ্কে ভয় করেন ও ইনছাফের পথে চলেন তাহলে আনছাররা যেভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্বজন হওয়ার যুক্তির কারণে আপনাকে অধিকার প্রদান করেছে ঠিক সেভাবেই আপনিও আমাকে অধিকার প্রদান করুন। নচেৎ জেনে রাখুন যে, আপনি যালেমে পরিণত হবেন।” তখন ওমর বললেন ঃ “তুমি বাই‘আত না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে ছাড়বো না।” জবাবে আলী বললেন ঃ “ওমর! যেটা লাভজনক সেটাই দোহন করো যাতে এর অর্ধেক তোমার হয়। আজ তাঁর স্বার্থে কাজের ভিত্তি মযবূত করো যাতে আগামী দিনে তিনি তা তোমাকে অর্পণ করেন। আল্লাহ্র শপথ, আমি কখনোই তোমার কথা মানবো না এবং তাঁর (আবু বকরের) অনুসরণ করবো না।” তখন আবু বকর বললেন ঃ “তুমি যদি সন্তুষ্টি ও আগ্রহের সাথে বাই‘আত না হও তাহলে আমি জোর করে তোমার কাছ থেকে বাই‘আত আদায় করবো না।” আবু ওবা্য়দাহ্ আলীকে সম্বোধন করে বললেন ঃ “আবূল হাসান! তুমি নবীন যুবক, আর এরা হচ্ছেন কুরাইশ গোত্রের বয়স্ক লোক। এরা (সামষ্টিক) কাজকর্মে তোমার তুলনায় অধিকতর পাকা ও অভিজ্ঞ। আমার মনে হয় আবু বকর এ কাজে তোমার চেয়ে অধিকতর সক্ষম এবং অধিকতর উত্তমরূপে এ বোঝা বহন করতে পারবেন; তিনি এ কাজেরই লোক। অতএব, তাঁকেই দায়িত্ব দাও এবং আপাততঃ তাঁর ব্যাপারে সম্মতি দাও। অতঃপর যদি বেঁচে থাকো এবং বয়স্ক হও তখন অবশ্যই তোমার মর্যাদা, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে আত্মীয়তা, ইসলাম গ্রহণে অগ্রগণ্যতা ও আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদের বিবেচনায় তুমি এ দায়িত্বের উপযুক্ত বলে গণ্য হবে।” জবাবে আলী বললেন ঃ “হে মুহাজিরগণ! তাকওয়া অবলম্বন করো এবং আল্লাহ্কে ভয় করো। শাসন ক্ষমতার দায়িত্ব রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর গৃহ ও আহ্লে বাইত থেকে বাইরে বের করে নিও না এবং নিজেদের গৃহকে সে ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত করো না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বাইতের অধিকার ও সামাজিক অবস্থান তাঁদের কাছ থেকে কেড়ে নিও না। আল্লাহ্র শপথ, হে মুহাজিরগণ! আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বাইত; যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মাঝে কোরআন তেলাওয়াতকারী, আল্লাহ্র দ্বীনের ফকীহ্, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সুন্নাতের আলেম ও সাধারণ জনগণের প্রতি রহম-দিল ব্যক্তি আছেন ততক্ষণ আমরা এ দায়িত্বের জন্যে তোমাদের তুলনায় যোগ্যতর। আল্লাহ্র শপথ, তোমরা যা-ই চাইবে তা-ই আমাদের আহ্লে বাইতের কাছে রয়েছে। অতএব, তোমারা স্বীয় প্রবৃত্তির লালসার অনুসরণ করো না। কেননা, তাহলে সঠিক পথ থেকে পূর্বাপেক্ষাও দূরে সরে যাবে।” তখন বাশীর বিন্ সা‘দ বললেন ঃ “হে আলী! আনছাররা যদি আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হওয়ার আগেই তোমার এ বক্তব্য শুনতো তাহলে তোমার ব্যাপারে দু’জন লোকও বিরোধিতা করতো না। কিন্তু এখন আর কী করার আছে! কাজ তো হয়ে গেছে; লোকেরা বাই‘আত হয়ে গেছে।” কিন্তু আলী বাই‘আত না হয়ে তাঁর ঘরে ফিরে এলেন।হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর সংগ্রাম ইবনে আবিল্ হাদীদ তাঁর “শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্” গ্রনে‘৪২ আবু বকর জাওহারী থেকে রেওয়াইয়াত করেন ঃ ঐ দুই ব্যক্তির (আলী ও যুবাইর) সাথে যে আচরণ করা হল ফাতেমাহ্ তা দেখলেন এবং স্বীয় হুজরায় দাঁড়িয়ে৪৩ বললেন ঃ “হে আবু বকর! কত তাড়াতাড়ি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বাইতের সাথে প্রতারণা করলে! আল্লাহ্র শপথ, আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত কখনোই আর ওমরের সাথে কথা বলবো না।” অন্য এক রেওয়াইয়াত অনুযায়ী ফাতেমাহ্ ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন ও এ অবস্থায় বেরিয়ে এলেন এবং লোকদেরকে পাশে সরে যেতে বললেন।ইয়াকুবী বলেন ঃ ফাতেমাহ্ বেরিয়ে এলেন এবং বললেন ঃ “আল্লাহ্র দোহাই দিচ্ছি, আমার ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে যাও, নইলে আমি আমার মাথা অনাবৃত করে ফেলবো এবং এলোচুলে আমার রবের দরবারে বিলাপ করবো।” তখন লোকেরা, এমন কি যারা সেখানে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন তাঁরাও বেরিয়ে গেলেন।৪৪ নিযাম বলেন ঃ ওমর বাই‘আতের দিন ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর পেটে ও পাঁজরে এমনভাবে আঘাত করেন যে, এর ফলে তাঁর গর্ভস‘ সন্তান মুহ্সিন গর্ভপাত হয়ে মারা যায় এবং ওমর তখনো চীৎকার দিচ্ছিলেন ঃ “ঘরের লোকদের সহ এ ঘরে আগুন দাও।”৪৫ মাস‘উদী লিখেছেন ঃ আবু বকরের সাথে যখন সাক্বীফায় বাই‘আত গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়ে যায় এবং (পরদিন) সোমবারও নতুন করে [মসজিদুন্নবী (সাঃ)-এ] বাই‘আত গৃহীত হয় তখন আলী বেরিয়ে আসেন এবং আবু বকরকে বলেন ঃ “আপনি আমাদের বিষয়গুলোকে (অধিকারকে) ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের সাথে পরামর্শ করেন নি এবং আমাদের কোন অধিকারই রক্ষা করেন নি।” জবাবে আবু বকর বললেন ঃ “হ্যা, কিন্তু আমি ফিৎনাহ্ ও বিশৃঙ্খলার ভয় করছিলাম।”৪৬ ইয়াকুবী আরো বলেন ঃ একদল লোক আলী ইবনে আবি তালিবের নিকট আসেন এবং তাঁর নিকট বাই‘আত হতে চান। তখন আলী বললেন ঃ “তোমরা সবাই মাথা মুণ্ডন করে আগামী কাল সকালে আমার কাছে এসো।” কিন্তু পরদিন মাত্র ছয়জন আসেন।৪৭ এরপর হযরত আলী ফাতেমাহ্কে সাথে নিয়ে রাতের বেলা আনছারদের গৃহদ্বারে করাঘাত করেন এবং তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য চান। ফাতেমাহ্ও তাঁদের নিকট সাহায্য চান। জবাবে তাঁরা বলেন ঃ “হে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কন্যা! ঐ ব্যক্তির সাথে আমাদের বাই‘আত হয়ে গেছে। আপনার চাচার ছেলে৪৮ যদি আবু বকরের আগে আমাদের কাছ থেকে বাই‘আত চাইতেন তাহলে অবশ্যই আমরা কাউকেই তাঁর সমান গণ্য করতাম না এবং তাঁকে ব্যতীত কাউকে গ্রহণ করতাম না।” জবাবে আলী বললেন ঃ “আশ্চর্য! তোমরা কি আশা করছিলে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর লাশ কাফন-দাফন ছাড়া ঘরে ফেলে রেখে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রেখে যাওয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তগত করার উদ্দেশ্যে ঝগড়া-বিরোধে লিপ্ত হবার জন্যে যাবো?” ফাতেমাহ্ও বললেন ঃ “যা করা উচিৎ ছিল আবূল হাসান তা-ই করেছেন এবং স্বীয় দায়িত্ব পালন করেছেন, আর তারাও এমন কাজ করেছে আল্লাহ্ যে কাজের জন্যে তাদের নিকট থেকে জবাবদিহি আদায় করবেন।”৪৯ মু‘আবিয়াহ্ও আলীকে লেখা পত্রে এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন ঃ “যেন এই কালকের ঘটনা; আবু বকরের সাথে বাই‘আতের দিনে তুমি তোমার গৃহের পর্দান্তরালবাসিনীকে গাধার পিঠে সওয়ার করে এক এক করে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ও ইসলাম গ্রহণে অগ্রবর্তীদের গৃহদ্বারে গেলে এবং তোমার দুই পুত্র হাসান ও হোসেনের মাথায় হাত রেখে তাঁদের (ছাহাবীদের) প্রতি বাই‘আতের জন্যে আহ্বান জানালে। তুমি তোমার স্ত্রীকে ও দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে গেলে এবং তাঁদের নিকট অনুরোধ জানালে ও তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ছাহাবীর (আবু বকরের) দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয়ার জন্যে আহ্বান জানালে। কিন্তু চার-পাঁচ জন ব্যতীত কেউ তোমার আহ্বানে সাড়া দিলো না। আমার প্রাণের শপথ, সত্য যদি তোমার পক্ষে হত তাহলে তারা তোমার ডাকে সাড়া দিতো। কিন্তু তুমি মিথ্যা দাবী করছিলে এবং নযীর বিহীন কথা বলছিলে এবং এমন কিছু চাচ্ছিলে যাতে তুমি উপনীত হতে পারো নি। আমি যতই ভুলো মনের লোক হই না কেন, তুমি আবু সুফিয়ানকে যা বলেছিলে আমি তা ভুলবো না। তোমাকে যখন তিনি উস্কানি দিচ্ছিলেন তখন তুমি বলেছিলে ঃ যদি দৃঢ়চেতা চল্লিশ জন লোকও সাথে থাকতো তাহলে আমি অভ্যুত্থান করতাম এবং এই লোকদের কাছ থেকে স্বীয় অধিকার আদায় করে নিতাম।”৫০ ছিফফীনের যুদ্ধকালে মু‘আবিয়াহ্র বাহিনী যখন আলী (আঃ)-এর বাহিনীকে পানি নিতে বাধা দেয় তখন ‘আম্র্ বিন্ ‘আছ্ মু‘আবিয়াহ্কে এ ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন ঃ “আমি ও আপনি উভয়ই আলীকে বলতে শুনেছিলাম ঃ “হায়! যদি চল্লিশ জন লোকও আমার সাথে থাকতো!” এরপর তিনি বলছিলেন …।”‘আম্র্ বিন্ ‘আছ্ এরপর হযরত আলী (আঃ)-এর ছাহাবীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাঁর সাথে আসার আহ্বানের কথা উল্লেখ করেন।বাই‘আতের মাধ্যমে সংগ্রামের সমাপ্তি উস্দুল্ গ্বাবাহ্ গ্রনে‘৫১ বলা হয়েছে ঃ অধিকতর সঠিক তথ্য হল এই যে, বাই‘আত হতে বিরত থাকা লোকেরা ছয় মাস পরে বাই‘আত হন। ইয়াকুবীও বলেন৫২ ঃ আলী ছয় মাস অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাই‘আত হন নি। আর ইসি-‘আব্৫৩ ও তাম্বিয়াতুল্ আশরাফ্৫৪ গ্রন্থদ্বয়ে বলা হয়েছে ঃ ফাতেমাহ্র ইনে-কালের পূর্বে আলী আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হন নি। আল-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্ গ্রন্থেবলা হয়েছে ঃ আলীর বাই‘আত ফাতেমাহ্র ইনে-কালের পরে সংঘটিত হয় এবং তা ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ওফাতের পঁচাত্তর দিন পরের ঘটনা। যুহ্রী এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উদ্ধৃত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মীরাছ প্রশ্নে আবু বকর ও ফাতেমাহ্র মধ্যকার ঘটনা সম্বন্ধে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশাহ্ থেকে রেওয়াইয়াত করেছেন। আয়েশাহ্ বলেন ঃ ফাতেমাহ্ তাঁর (আবু বকরের) দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং স্বীয় মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সাথে কথা বলেন নি। বর্ণনাকারী বলেন ঃ এক ব্যক্তি যুহ্রীকে জিজ্ঞেস করেন ঃ “তাহলে আলী কি এ ছয় মাস বাই‘আত হন নি?” যুহ্রী বলেন ঃ “না তিনি, না বানী হাশেমের অন্য কোন লোক বাই‘আত হয়েছেন যতক্ষণ না আলী বাই‘আত হন।” তায়সীরুল্ ঊছূল-এ৫৫ যুহ্রী বলেন ঃ “না, আল্লাহ্র শপথ, আলী বাই‘আত না হওয়া পর্যন্ত বানী হাশেমের এক ব্যক্তিও বাই‘আত হন নি। আলী যখন লক্ষ্য করলেন যে, লোকেরা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন তিনি আবু বকরের সাথে সমঝোতায় আসেন। …”৫৬ বালাযুরী লিখেছেন৫৭ ঃ যেহেতু আরবরা (তাদের একাংশ) দ্বীন থেকে ফিরে গেলো (মুরতাদ হলো) তখন ওসমান আলীর কাছে গেলেন এবং বললেন ঃ “হে চাচাতো ভাই! তুমি যদি বাই‘আত না হও তাহলে কেউ দুশমনদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে যাবে না। … ” তিনি বার বার তাঁর সাথে সাক্ষাত করেন ও কথা বলেন; অবশেষে তাঁকে আবু বকরের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। … আলী তাঁর অনুকূলে বাই‘আত হন এবং মুসলমানরা স্বসি-র নিশ্বাস ফেলে; লোকেরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয় এবং দলে দলে সৈন্যদেরকে পাঠানো হতে থাকে। হ্যা, হযরত আলী (আঃ) একদিকে হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)কে হারালেন, অন্যদিকে লোকদের মধ্যে উদাসীনতা দেখতে পেলেন। তেমনি তিনি মুসলমানদের উদ্বেগ জনক অবস্থাও লক্ষ্য করেন। তাই তিনি আবু বকরের সাথে সমঝোতায় আসেন। কিন্তু তিনি ঐ দিনগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কোনো দিনই, এমন কি তাঁর নিজের খেলাফত কালেও ভোলেন নি। তিনি সব সময়ই ঐ দিনগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ করতেন। তিনি “খুৎবায়ে শাক্বশাক্বিয়াহ্” নামে বিখ্যাত তাঁর খোৎবায় বলেন ঃ “ … আমার নিকট সুস্পষ্ট ছিল যে, বিচারবুদ্ধির রায় অনুযায়ী এবং আমার কাঁধে যে দায়িত্ব ছিল সে দায়িত্ববোধের দাবী অনুযায়ী ধৈর্য্য ধারণ করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তাই সহ্য করলাম। কিন্তু অবস্থা এমন ছিল যে, যেন চোখের ভিতর মাটি ও আগাছার কণা প্রবেশ করেছে এবং গলায় হাড্ডি আটকে গেছে। আমি স্বচক্ষে দেখছিলাম যে, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারের যে অকাট্য অধিকার পৌঁছেছে তা লুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর প্রথম জনের (আবু বকরের) জীবন শেষ হয়ে গেল, তাঁর জীবনের প্রদীপ নিভে গেল, আর তিনি খেলাফতের কনেকে খাত্তাবের পুত্রের কোলে সোপর্দ করে গেলেন। আর তিনি উপমা স্বরূপ হাম্দানের৫৮ কবির এ কবিতা পড়লেন ঃ “কতই না পার্থক্য আমার আজকের এ দিন – যখন আমি উটের কুঁজে ও জিনের ওপরে আছি, ও সেদিনের মধ্যে যেদিন আমি জাবেরের ভ্রাতা হাইয়ানের পার্শ্বচর ছিলাম!” বিস্ময়কর যে, আবু বকর জীবিত থাকাকালে লোকদেরকে বলছিলেন তারা যেন তাঁর অনুকূলে কৃত বাই‘আত প্রত্যাহার করে নেয়, কিন্তু জীবনের শেষ কয়েক দিন বাকী থাকতে ওমরের জন্যে খেলাফতের চুক্তিকে সৃদৃঢ় করে যান! হায়! এই দুই লুটেরা খেলাফতকে দুগ্ধবতী উটের স্তনের দুই পালানের মতো নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিয়েছিলেন! …”৫৯পাদটীকা ঃ১. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫৮; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২৪।২. শার্হে নাহ্জূল্ বালাগ্বাহ্, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮৭।৩. রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৬৩; তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৮৮।৪. ৪র্থ খণ্ড/ ৬৫।৫. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৪০; ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ২০৩; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৮ ও অন্যান্য।৬. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪৩; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২০।৭. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৪৩; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২৫; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৮; সীরাতে হালাবীয়্যাহ্, ৩য় খণ্ড/ ৩৯২ ও ৩৯৪।৮. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড, ৩৪৩।৯. ত্ববাক্বাত, ক্বাফ ২/ ৭০; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/, একাদশ হিজরীর ঘটনা প্রসঙ্গে; নিহাইয়্যাতুল্ আরাব্, ১৮তম খণ্ড/ ৩৯২-৩৯৩।১০. ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৭০; বিদাইয়্যাহ্ ওয়া নিহাইয়্যাহ্।১১. কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৪র্থ খণ্ড/ ৫৪ ও ৬০।১২. ‘ইক্বদুল্ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৬১; যাহাবী, ১ম খণ্ড/ ৩২১, ৩২৪ ও ৩২৬।১৩. কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৩য়খণ্ড/১৪০।১৪. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৪২; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫২ ও ৪৫৫; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৭০; মুস্নাদে আহ্মাদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ৬২ ও অন্যান্য।১৫. মুস্নাদে আহ্মাদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৪২ ও ২৭৪।১৬. ত্বাবাক্বাতে ইবনে সা‘দ্, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/৭৮।১৭. প্রাগুক্ত।১৮. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১৪।১৯. শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ৪৪ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ৫ (জাওহারীর “সাক্বীফাহ্” থেকে উদ্ধৃত)্২০. জাওহারী তাঁর সাক্বীফাহ্ গ্রন্থেলিখেছেন যে, মুগ্বীরাহ্ বিন্ শু‘বাহ্ এ প্রস্তাব দেন এবং এটাই সত্যের অধিকতর নিকটবর্তী।২১. আব্বাস আবু বকরের দাবীকে যুক্তির খাতিরে মেনে নেন তাঁর খলীফাহ্র পদ গ্রহণকে অযথার্থ প্রমাণ করার জন্যে, নচেৎ আব্বাস খেলাফতকে হযরত আলী (আঃ)-এর অধিকার বলেই জানতেন।২২. সাক্বীফাহ্ ও আল-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্ গ্রন্থদ্বয়ে এ বাক্যাংশটি এরূপ ঃ “এ র্অধিকার যদি তোমার হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্যে তার প্রয়োজন নেই।”২৩. মুস্নাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড/৫৫; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৬৬; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২১; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৬ এবং আরো অনেক সূত্র যার তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। ।২৪. প্রাগুক্ত।২৫. হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর জীবনেতিহাস বিষয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থ। ২৬. কোন ঘটনার বর্ণনা প্রথম বর্ণনাকারী থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে এত বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি কর্তৃক বর্ণিত হওয়া যত লোকের পক্ষে মিথ্যা রচনার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে অসম্ভব। ২৭. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৬১৯; মুরুজুয্ যাহাব, ১ম খণ্ড/ ৪১৪; আল-‘ইক্বদুল্ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৬৯; কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৩য় খণ্ড/ ৩৫ ও অন্য অনেক সূত্র।২৮. ২য় খণ্ড/ ১১৫।২৯. আর্-রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৬৭; শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৩২ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৯৩ (সাক্বীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৮৮।৩০. ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।৩১. ইবনে শাহ্নাহ্ ঃ “কামেল”-এর পার্শ্বটীকা; শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৫৬।৩২. আল-‘ইক্বদুল্ ফারীদ্, ৩য় খণ্ড/ ৬৪; আবূল্ ফিদা’, ১ম খণ্ড/ ১৫৬।৩৩. ১ম খণ্ড/ ১২।৩৪. রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৬৭; শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ১৩২ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২ (সাক্বীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৭৮।৩৫. ১ম খণ্ড/ ৫৮৬।৩৬. শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ১৩৪।৩৭. তারীখে কামেল-এর পার্শ্বটীকা, পৃৎ ১১২।৩৮. ৩য় খণ্ড/ ১৪০।৩৯. মুরুজুয্ যাহাব্, ২য় খণ্ড/ ১০০; শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ৪৮১।৪০. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।৪১. ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ১৯৮ ও ১৯৯; তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৮৮; কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৩য় খণ্ড/ ১২৮।৪২. ২য় খণ্ড/ ১৩৪, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮৬।৪৩. স্মর্তব্য, তাঁর হুজরা ছিল মসজিদুন্নবী (সাঃ) সংলগ্ন।৪৪. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।৪৫. শাহ্রিস্তানী ঃ মিলাল্ ওয়া নিহাল্, ১ম খণ্ড/ তেহরান সংস্করণ, পৃঃ ২৬, লিডেন সংস্করণ, পৃৎ ৪০।৪৬. মুরূজুয্ যাহাব্, ১ম খণ্ড/ ৪১৪; আল্-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্, ১ম খণ্ড, ১২-১৪।৪৭. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫; শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ৪।৪৮. উল্লেখ্য, আরবদের রীতি অনুযায়ী আপন চাচা, পিতার চাচা, দা্দার চাচা ইত্যাদি সবাইকে ‘চাচা’ ও তাঁদের পুত্রদেরকে ‘চাচার ছেলে’ বলা হয়। ৪৯. শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮ (আস্-সাক্বীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); আল্-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্, ১ম খণ্ড/ ১২।৫০. ইবনে আবিল হাদীদ ঃ শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ৬৭ এবং কিতাবে ছিফফীন্, পৃঃ ১৮২।৫১. ৩য় খণ্ড/২২২।৫২. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।৫৩. ২য় খণ্ড/ ১৪৪।৫৪. পৃঃ ২৫০।৫৫. ২য় খণ্ড/ ৪৬।৫৬. ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ২০২; বুখারী, ৩য় খণ্ড/ ৩৮ (বাবে গ্বায্ওয়ায়ে খাইবার্); মুসলিম, ১ম খণ্ড/ ৭৪ ও ৩য় খণ্ড/ ১৫৩; ইবনে কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮৫-২৮৬; ‘ইক্বদুল্ ফারীদ্, ৩য় খণ্ড/ ৬৪; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২৪; মাস্‘উদী, ২য় খণ্ড/ ৪১৪ ও অন্যান্য।৫৭. ১ম খণ্ড/ ৮৭।৫৮. তৎকালীন ইয়েমেনের অন্যতম আরব গোত্র।৫৯. শার্হে নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, ২য় খণ্ড/ ৫০; ইবনে জাওযী ঃ তাযকিরাহ্, ষষ্ঠ অধ্যায়; শাহ্রিস্তানী ঃ মা হুয়া নাহ্জুল্ বালাগ্বাহ্, খোৎবাহ্র সনদে।