আসমানী খাদ্য

0 326

হযরত আবু সাঈদ খুদরী বলেন: একদা আলী ইবনে আবি তালিব ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিলেনতিনি হযরত ফাতেমাকে বলেন: তোমার কাছে কি আমাকে দেবার মত কোন খাবার আছে? হযরত ফাতেমা বলেন: নাসেই আল্লাহর কসম! যিনি আমার পিতাকে নবুওয়াত এবং তোমাকে তাঁর উত্তরাধিকারীত্ব দানে সম্মানিত করেছেন, কোন খাবার আমার কাছে নেইকোন খাবার ছাড়াই দুদিন গত হয়ে গেছেসামান্য খাবার ছিল তা তোমাকে দিয়েছিলামতোমাকে আমি এবং আমার আদুরে দুই সন্তানের উপর স্থান দিয়েছি

উত্তর শুনে হযরত আলী বলেন: কেন তুমি আমাকে আগে অবহিত করো নি, তাহলে তো আমি তোমাদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতামহযরত ফাতেমা বলেন: হে আবুল হাসান! আমি যে জিনিস তোমার কাছে নেই তা চাপিয়ে দিতে আল্লাহর কাছে লজ্জা পাই

হযরত আলী হযরত ফাতেমার কাছ থেকে বিশ্বাস ও আল্লাহর উপর নির্ভর করে ঘরের বাইরে চলে গেলেন এবং পরে তিনি কারো কাছ থেকে এক দিনার ঋণ নিয়েছিলেন

তিনি তা দিয়ে তাঁর পরিবারের জন্যে কিছু ক্রয় করার মনস্থ করেন কিন্তু তখন হযরত মেকদাদ বিন আল্ আসওয়াদের সাথে তাঁর দেখা হয়তিনি মেকদাদকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় দেখতে পানসেদিনের আবহাওয়া প্রচন্ড গরম ছিলসূর্যের উত্তাপে তাঁর ছাতি ফেটে যাচ্ছিল আর পায়ের নিচের মাটিও ছিল ভীষণ উত্তপ্তএহেন অবস্থা তাকে বেশ কষ্ট দিচ্ছিলতিনি মেকদাদকে জিজ্ঞেস করেন: হে মেকদাদ, তোমার এমন কি ঘটেছে যার কারণে এ সময়ে তুমি বাড়ী ও পরিবার ছেড়ে বাইরে আসতে বাধ্য হয়েছো? হযরত মেকদাদ বলেন: হে আবুল হাসান! আমাকে আমার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিন, আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করবেন নাতখন হযরত আলী (আ.) বললেন: ভাই, তুমি না বলে আমার কাছ থেকে চলে যেতে পারবে নামেকদাদ বলেন: ভাই, আল্লাহ্র ওয়াস্তে আমাকে ছেড়ে দিনআমার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইবেন না

হযরত আলী বললেন: ভাই, এটা অসম্ভবতুমি কোনক্রমে আমার কাছ থেকে লুকাতে পারবে না

তখন হযরত মেকদাদ বলেন: হে আবুল হাসান! যেহেতু আপনি জোর করে ধরেছেন তাই বলছিআমি সেই আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যিনি হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নবুওয়াত এবং আপনাকে ইমামত দানে সম্মানিত করেছেন, আমি আমার পরিবারের জন্যে রোজগারের উদ্দেশ্যে কাজের সন্ধানে বের হয়েছিকেননা আমি যখন আমার পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের বাইরে চলে আসছিলাম তখন তারা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছিলআর আমার পরিবারের কান্না শুনে সহ্য করতে না পেরে চিন্তিত মন নিয়ে ঘরের বাইরে চলে এসেছিআমার এই হলো অবস্থা

হযরত আলীর চোখে এমনভাবে অশ্রু ভরে গেল যে তাঁর দাড়ি মোবারক পর্যন্ত অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলোতিনি মেকদাদকে বললেন: তুমি যার কসম দিয়েছ আমিও তার কসম দিয়ে বলছি যে আমিও  ঠিক তোমার মত একই কারণে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছিআমি একটি দিনার ঋণ করেছিলামএক্ষনে আমি তোমাকে আমার উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছিএ বলে তিনি দিনারটি তাকে দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেনসেখানে তিনি যোহর, আসর এবং মাগরিব নামাজ আদায় করলেনমহানবী (সা.) মাগরিব নামাজ সমাপ্ত করে আলীর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ইশারা করলেনআলী প্রথম কাতারে দাঁড়িয়েছিলেনআলী উঠে দাঁড়ালেন এবং রাসূল (সা.)-এর পিছনে পিছনে হাঁটা শুরু করলেন

অবশেষে মসজিদের দরজার নিকট মহানবীর সাথে মিলিত হয়ে তাঁকে সালাম করেন এবং রাসূল (সা.) তাঁর সালামের উত্তর দিলেনমহানবী (সা.) বলেন: হে আবুল হাসান ! আমি কি রাত্রের খাবারের জন্যে তোমার সাথে আসতে পারি?

হযরত আলী মাথা নিচু করে চুপিসারে দাঁড়িয়ে রইলেনতিনি লজ্জায় হতবাকমহানবী (সা.)-এর সামনে কি উত্তর দিবেন বুঝে উঠতে পারছেন নামহানবী (সা.) দিনারের ঘটনা এবং এটা কোথা থেকে ব্যবস্থা করেছে আর তা কাকে দান করেছে- এসব কিছু সম্পর্কে অবগত ছিলেনআল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁর রাসূলকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে সেই রাত্রিতে যেন তিনি আলীর কাছে যানরাসূল (সা.) আলীর নিস্তব্ধতা লক্ষ্য করে বললেন: হে আবুল হাসান! কেন তুমি না বলে আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ না অথবা হ্যাঁ বলে তোমার সাথে যাওয়ার জন্যে বলছো না?

আলী লজ্জায় নবী (সা.)-এর সম্মানে বললেন: চলুন! আমি আপনার খেদমতে আছিনবী করীম (সা.) আলীর হাত ধরে ফাতেমার গৃহে প্রবেশ করলেনতখন ফাতেমা নামাজ শেষে তাঁর মেহরাবে অবস্থান নিয়েছিলেনতাঁর পিছনে একটি বড় হাড়ি রাখা ছিলসেখান থেকে অনবরত বাষ্প বের হচ্ছিলফাতেমা পিতার গলার কণ্ঠ শুনে নামাজের স্থান ত্যাগ করে তাকে সালাম দিলেনফাতেমা (আ.) নবী (সা.)-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেননবী (সা.) তাঁর সালামের উত্তর দিলেনতিনি তাঁর পবিত্র হাত দ্বারা ফাতেমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেননবী (সা.) ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করেন: তোমার দিনকাল কেমন কাটছে? আল্লাহ্ তায়ালা তোমার উপর কৃপা করুকআমাদের রাতের খাবার দাওআল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করুননিশ্চয়ই তিনি তোমাকে ক্ষমা করেছেনফাতেমা খাবারের পাতিল নবী (সা.) এবং হযরত আলীর সামনে রাখলেনআলী খাবারের প্রতি দৃষ্টি দিলেন এবং তার সুঘ্রাণ পেয়ে অবাক কণ্ঠে ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করেন: হে ফাতেমা! এ খাবার তোমার কাছে কোথা থেকে পৌঁছেছে- যা কোনদিন দেখিনি? এরকম সুস্বাদু খাবার তো আগে কোনদিন খাইনি?

মহানবী (সা.) হযরত আলীর স্কন্ধে হস্ত মোবারক রেখে ইশারা করে বললেন: হে আলী! এ খাবার তোমার সেই দিনারের পুরস্কার ও প্রতিদানমহান আল্লাহ্ কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেন: 

(إِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَشَآءُ بِغَيْرِحِسَابٍ)

অর্থা নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে অফুরন্ত রিজিক দান করেন

অতঃপর আনন্দে আল্লাহর শোকর গুজারিতে উদ্বেলিত অবস্থায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চক্ষুযুগল থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়েতিনি বলেন: সেই আল্লাহকে ধন্যবাদ যিনি এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বেই তোমাদেরকে পুরস্কৃত করেছেনহে আলী, আল্লাহ্ তোমাকে হযরত যাকারিয়া (আ.) এবং ফাতেমা (আ.)-কে হযরত মারিয়ামের অবস্থার ন্যায় করেছেন

আল্লাহ্ বলেন:

( كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا اْلْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا)

অর্থা যখনি যাকারিয়া (মারিয়ামের) মেহরাবের স্থানে প্রবেশ করতো তখনি তাঁর নিকট রিযিক (খাবার) দেখতে পেতো

তথ্যসূত্র: হযরত ফাতিমা (আ.)

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.