নতুন ফের্কার নতুন কথা সৌদি আরবের বাস্তবতা

0 365

আমরা যদি বিভিন্ন ধর্ম বা ধর্মীয় উৎসগুলো নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো বহু ধর্ম কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন মাযহাব বা ফের্কায় বিভক্ত হয়ে গেছে। মহান ঐশী ধর্মগুলোর ক্ষেত্রেও এ সত্য সমানভাবে প্রযোজ্য। ধর্মগুলোর প্রবর্তন করেছিলেন যাঁরা,তাদেঁর সাথে কালগত দূরত্ব সৃষ্টির কারণে এইসব মাযহাব আর ফের্কার জন্ম হয়েছে। এ ধরনেরই একটি ফের্কা হচ্ছে ওহাবিফের্কা।

নিঃসন্দেহে ঐশী ধর্মগুলোতে এতোসব ফের্কা আর মাযহাবগত মতপার্থক্য এসেছে মানুষের চিন্তা থেকে। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সকল নবী-রাসূলেরই লক্ষ্য বা মিশন ছিল এক আল্লাহর প্রার্থনা বা একত্ববাদের প্রতি মানুষকে আহ্বান করা। এক্ষেত্রে সকল নবীরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এক ও অভিন্ন এবং তাদেঁর সবাই মানব জাতিকে বিচ্ছিন্নতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাব এবং জুলুম নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাও সকল ঐশী ধর্মের অভিন্ন বিশ্বাস। একইভাবে সকল ঐশী ধর্ম এ ব্যাপারে অভিন্ন বিশ্বাস পোষণ করে যে, ওহী আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে-যা সকল মারেফাত বা আধ্যাত্মিকতার উৎস। তবে ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় আমরা লক্ষ্য করবো,সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতি, লোভ-লালসা এবং পার্থিব মুনাফার লোভে অথবা অন্য কোনো দুরভিসন্ধিমূলক চিন্তার কারণে কোনো কোনো ব্যক্তির মাঝে ধর্ম সম্পর্কে ভুল উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে।

 

চিন্তা ও উপলব্ধিগত এই পার্থক্য কালক্রমে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়ে ঐশী ধর্মের অনুসারীদের মাঝে বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে। এভাবেই অসংখ্য ফের্কা এবং মাজহাব-চাই তা মানুষের চিন্তাগত ভ্রান্তির কারণেই হোক কিংবা কোনো ব্যক্তি,দল বা কারো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির কারণেই হোক-গড়ে উঠেছে। একথা এখন অনস্বীকার্য বাস্তবতা যে এইসব ফের্কা এবং মাজহাব দ্বীন বা ঐশী ধর্মগুলোর ঐক্যকে টার্গেট করে বিচ্ছিন্নতার তীর নিক্ষেপ করেছে। ঐশী ধর্মগুলো হচ্ছে ঐক্যের মূল উৎস। ঐক্যের এই উৎসমূলে বিচ্ছিন্নতার বীজ রোপন করেছে ফের্কা বা মাজহাবগুলো-যেসব মাজহাব কখনো কখনো সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামিপূর্ণও বটে। ওহাবিমতবাদও অপরাপর বহু ফের্কার মতো একটি ফের্কা।

অন্যান্য ফের্কার মতো এই ফের্কাটিরও শেকড় প্রোথিত রয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত চিন্তাধারার মধ্যে। ওহাবি মতবাদের মূল ভাবনাগুলো গৃহীত হয়েছে ইবনে তাইমিয়ার চিন্তাধারা থেকে। তাই প্রথমেই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিগুলো একবার পর্যালোচনা করে নেওয়া জরুরি। হিজরি সপ্তম শতাব্দিতে তথা ৬৬১ হিজরিতে তাকিউদ্দিন আহমাদ ইবনে আব্দুল হালিমতৎকালীন তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাররান ( ইংরেজি ভাষায় Carrhae ) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইবনে তাইমিয়া নামেই বেশি পরিচিত। হাররান শহরটি সেই সময় ছিল হাম্বলি মাজহাব চর্চার প্রধান প্রধান কেন্দ্রগুলোর একটি। বর্তমানে অবশ্য শহরটির কোনো অস্তিত্ব অবশিষ্ট নেই। তবে প্রাচীনকালে হাররান ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ একটি শহর।


ইবনে তাইমিয়া এমন এক পরিবারে লালিত পালিত হন যেই পরিবারটি ছিল এক শতাব্দিরও বেশি সময় ধরে হাম্বলি মাজহাবের পতাকাবাহী। ধর্মীয় বহু বই-পুস্তক লেখালেখি হয়েছে এই পরিবারে। স্বয়ং ইবনে তাইমিয়ার পিতা ছিলেন হাররানের বিখ্যাত ফকিহ। তিনি শায়খুল বালাদনামে পরিচিত ছিলেন। হাররানের জনগণ তাকেঁ খতিব এবং ইসলামী জ্ঞান ও বিদ্যার শিক্ষক হিসেবেই জানতো। অপরদিকে ইবনে তাইমিয়ার জীবনকাল ছিল ইসলামী ভূখণ্ডে মোঙ্গলদের পাশবিক হামলার সমকালীন। সে সময় মোঙ্গলরা ব্যাপক সহিংস হামলা চালিয়ে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো দখল করে নিয়েছিল এবং প্রতিদিনই প্রায় তাদের হুকুমাত বিস্তৃত হচ্ছিলো। এই যুগে মূল্যবান সব ইসলামী শিল্পকর্ম ও মুসলিম মনীষীদের বইপুস্তকগুলো মোঙ্গলদের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

বিখ্যাত আরব ঐতিহাসিক ইবনে কাসির লিখেছেনঃ হিজরি ৬৬৭ সালে অর্থাৎ ১২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন ইবনে তাইমিয়ার বয়স ৬ বছরের বেশি ছিলো না,তখন হাররান শহরের ওপর মোঙ্গলদের চাপ এতো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে, তাদের হামলার ভয়ে হাররানবাসীরা শহর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। ইবনে তাইমিয়াও সে সময় তার পরিবারের সাথে হাররান থেকে দামেশকে চলে গিয়েছিলেন।দামেশকে যাবার পর দারুল হাদিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ইবনে তাইমিয়ার পিতা। সেখানে ইবনে তাইমিয়া পড়ালেখা করেন। তিনি তাঁর যৌবনকাল কাটান দামেশকে। তাঁর পিতাসহ হাম্বলি মাজহাবের বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে তিনি ফিকাহ, হাদিস, উসূল, তাফসির, কালাম ইত্যাদি শেখেন। এক পর্যায়ে তিনি হাম্বলি মাজহাবে ইজতেহাদের পর্যায়ে পৌছেঁন এবং ফতোয়া দেওয়া ও শিক্ষকতা করার মতো যোগ্যতা অর্জন করেন। দামেশকে তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং কোরআনের তাফসির পড়ানোর দায়িত্বে নিয়োজিত হন।

ইবনে তাইমিয়া অন্যান্য ধর্ম এবং মাজহাব নিয়েও পড়ালেখা করেন এবং এমন কিছু ফতোয়া দিতে থাকেন যেগুলোর সাথে আহলে সুন্নাতের চার মাজহাবসহ শিয়া মাজহাবেরও কোনো মিল ছিলো না। ইবনে তাইমিয়া মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত কিছু রীতিনীতিরও সমালোচনা করতে থাকেন এবং এমনকি কিছু কিছু সুন্নাতের অনুসরণকে শিরকের সাথে তুলনা করার পাশাপাশি আল্লাহর সাথে দূরত্ব সৃষ্টির কারণ বলেও উল্লেখ করেন। মুসলমানদের দৃঢ় বিশ্বাসগুলোর কোনো কোনোটির ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার কারণে এবং ব্যতিক্রমধর্মী ফতোয়া প্রদান করার কারণে ইবনে তাইমিয়ার জীবনে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। হিজরি ৬৯৮ সাল পর্যন্ত ইবনে তাইমিয়ার চিন্তাধারা সম্পর্কে তেমন কিছুই শোনা যায় নি, কিন্তু এখন আবার ধীরে ধীরে তার চিন্তাধারার উত্থান ঘটছে। উদাহরণত বলা যায় এ বছরই আশআরি মাজহাবের বিরুদ্ধে একটি বই লেখা হয়েছে যে বইটি দামেশকে ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।

ইবনে তাইমিয়া নিজেকে সালাফিবলে মনে করতেন।সালাফি শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অতীতচারিতা বা পূর্বপুরুষদের নিঃশর্ত অনুসরণ করা। তবে সালাফিয়াএকটি ফের্কার নাম যেই ফের্কায় নবীজী (সা), তাঁর সাহাবিবর্গ এবং তাবেয়িনদের অনুসরণের দাবী করা হয়। তাবেয়িন বলতে বোঝায় এমন শ্রেণীর লোকজনকে যাঁরা এক বা একাধিক সাহাবির সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন। সালাফিরা মনে করতেন ইসলামের সকল আকিদা-বিশ্বাস সাহাবি এবং তাবেয়িনদের আমল অনুযায়ী বাস্তবায়িত হওয়া উচিত। আর ইসলামী আকিদা কেবল কিতাব এবং সুন্নাত থেকেই গ্রহণ করতে হবে,আলেমদের উচিত হবে না কোরআনের বাইরের কোনো দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো কিছু আমল বা বাস্তবায়ন করা। সালাফিদের চিন্তায় বিবেক-বুদ্ধি বা যুক্তি তথা গবেষণার কোনো স্থান নেই,তাদের কাছে কেবল কোরআন-হাদিসের মূল টেক্সটই প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট। তাদের যুক্তির বিরোধিতাকারীদের সাথে তারা কঠোর ব্যবহার করতো।

ইবনে তাইমিয়া সালাফি ইসলাম তথা প্রাচীন ইসলামে ফেরার অজুহাত দেখিয়ে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে এমন সব দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত দিতে থাকেন যার ভিত্তিতে মুসলমানদের বহু চিন্তা ও কাজকর্ম প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে যায়,এমনকি বহুসংখ্যক মুসলমান ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত অর্থাৎ কাফের হিসেবে পরিগণিত হয়।

ইবনে তাইমিয়া যখন তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রসূত বিভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন, তখন তার ঐসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে,বিশেষ করে তিনি যখন আল্লাহর গুণাবলি নিয়ে কথা বলতেন তখন। তিনি আল্লাহ সম্পর্কে বিশ্বাস করতেন যে আল্লাহ সশরীরী একটি সত্ত্বা এবং তিনি আকাশসমূহের উর্ধ্বে থাকেন। ইবনে তাইমিয়াই প্রথম কোনো মুসলিম যিনি আল্লাহর সশরীরী সত্ত্বার প্রবক্তা এবং এর পক্ষে লেখালেখিও করেছেন। তিনি মহানবী (সা) এর রওজা শরিফ যিয়ারত করা কিংবা তাঁর সম্পর্কে কোনো স্মরণসভা বা কোনো অনুষ্ঠান করাকে হারাম এবং শের্‌ক বলে মনে করতেন। এছাড়া তিনি কোনো ওলি আওলিয়া কিংবা নেককার বান্দাদের শরণাপন্ন হওয়া অথবা তাদের সহায়তা প্রার্থনা করাকেও হারাম বলে মনে করতেন কেননা তাঁর ধারণা এ ধরনের আমলের মানে হলো আল্লাহ বহির্ভুত সত্ত্বার শরণাপন্ন হওয়া।

ইবনে তাইমিয়া নবীজীসহ সকল অলিআওলিয়ার কবর মেরামত করা বা পবিত্র কোনো কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণ করারও বিরোধী ছিলেন এবং এ ধরনের কাজকে তিনি শিরক বলে মনে করতেন। তাঁর এইসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাজহাবের আলেম ওলামাগণ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা আল্লাহর সশরীরী সত্ত্বায় বিশ্বাসী এবং আল্লাহকে মানুষের মতোই চিন্তা করতে অভ্যস্থ এমন কোনো ব্যক্তির এ ধরনের কথাবার্তা গ্রহণ করতে পারছিলেন না। তাঁরা কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্যগুলোকে খণ্ডন করে বহু বই লিখেছেন। বিশেষ করে আল্লাহ যে অশরীরী বা দৈহিক কাঠামোর উর্ধ্বে এবং মানুষের উপলব্ধিরও উর্ধ্বে সে সম্পর্কে বিস্তারিত লেখালেখি করেছেন। সেইসাথে তাঁরা আদালতে আবেদন জানিয়েছেন ইবনে তাইমিয়ার বিপথগামী চিন্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে। ইবনে তাইমিয়া প্রতিবাদের এই ঝড়ের মুখেও তার বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটাতে থাকেন।

কেবল তাই নয় যারা তাঁর বিরোধিতা করছে তাদেরকে তিনি কাফের বলে অভিহিত করেন এমনকি কখনো কখনো তাঁর লেখায় তাদেঁরকে অভিহিত করার ক্ষেত্রে অশোভন শব্দও ব্যবহার করেছেন। ইতিহাসে এসেছে হিজরি ৭০৩ সালে ইবনে তাইমিয়া যখন বিখ্যাত আরব মুসলিম আরেফ মহিউদ্দন আরাবির লেখাকুসুসুল হেকামনামক বইটি পড়েন,তখন তিনি এতে তাঁর নিজস্ব মত ও বিশ্বাসের বিরোধী বক্তব্য খুঁজে পান। সেজন্যে পাল্টা একটি বই লেখেন আন্নুসুসু আলাল ফুসুসনামে। এ বইতে মহিউদ্দিন আরাবির চিন্তাধারাকে প্রত্যাখ্যান করে তাঁর অনুসারীদেরকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। এভাবে মতবিরোধ ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করে।

মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত বিখ্যাত ধ্যান-ধারণার সাথে ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য সাংঘর্ষিক হবার ফলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যার পরিণতিতে ৭০৫ হিজরিতে সিরিয়ার আদালত তাঁর বিরুদ্ধে মিশরে নির্বাসনের রায় দেয়। হিজরি ৭০৭ সালে তিনি কারামুক্ত হন এবং কয়েক বছর পর আবার সিরিয়ায় ফিরে আসেন এবং তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গির অনকূলে পুনরায় লেখালেখি করতে থাকেন। ৭২১ হিজরিতে আবারো তাঁকে কারাগারে আটক করা হয় এবং ৭২৮ হিজরির জিলকাদ মাসে শেষ পর্যন্ত দামেশকের কেল্লা কারাগারে মারা যান।

ইবনে তাইমিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর চিন্তাদর্শেরও প্রায় মৃত্যু ঘটে গিয়েছিল। খুব কম লোকই তাঁর চিন্তাদর্শের অনুসারী ছিল।কিন্তু পাঁচ শতাব্দি পর মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদিনামের এক লোক ইবনে তাইমিয়ার আকায়েদের ভিত্তিতে নতুন করে একটি ফের্কার জন্ম দেন।তাঁর ওই ফের্কার নাম হচ্ছে ওহাবিয়্যাতবা ওহাবি মতবাদ। এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব হিজরি ১১১৫ সালে সৌদি রবে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে তিনি ইবনে তাইমিয়ার চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন। এমন একটি মতবাদের প্রবর্তন করেন তিনি ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাগুলোর সাথে যার ব্যাপক মতপার্থক্য ছিলো। তবে তিনি তাঁর আকিদা বিশ্বাসের বিস্তারের ক্ষেত্রে নজদের শাসক মুহাম্মাদ বিন সাউদের শক্তি ও ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়েছেন। আব্দুল ওহাব পুনরায় সালাফি মতবাদের প্রচার ঘটান। তিনি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র কেন্দ্র অর্থাৎ মক্কা এবং মদিনায় তাঁর এই মতবাদ পেশ করেন এবং ভয়াবহ সংঘর্ষের মাধ্যমে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের পিতা সন্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার শৈশব থেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন, কেননা তার ছেলের কথাবার্তায় আচার আচরণে গোমরাহি বা বিচ্যুতির লক্ষণ ছিলো স্পষ্ট। আব্দুল ওহাব মুসলমানদের বেশিরভাগ আকিদা বিশ্বাসকেই ঠাট্টা মশকরা করে উড়িয়ে দিতো। মদিনায় পড়ালেখা করার সময় প্রায়ই এমন কিছু বিষয় তুলে ধরতো নির্দিষ্ট একটি আকিদার সাথে যা ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। শিক্ষকরাও তার ভবিষ্যৎ বিচ্যুতির ব্যাপারে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব মদিনাতেও ইসলামের নবির শরণাপন্ন হওয়া বা তাঁর রওজা যিয়ারত করতে আসা মানুষের সমালোচনা করতেন। জানা যায়, শৈশবে তিনি মিথ্যা নবুয়্যতের দাবিদার যেমন মুসাইলামাতুল কাজ্জাব কিংবা সাজ্জাদ, আসওয়াদ আনাসির মতো ব্যক্তিদের জীবনী পড়তেন এবং এ ব্যাপারে ভীষণ আকর্ষণ বোধ করতেন। তবে তাঁর আকিদা বিশ্বাসের ওপর সরাসরি ছাপ পড়েছে ইবনে তাইমিয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনে কাইয়্যেম জুযির মতো লোকদের।

মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব যখন তার আকিদার কারণে মদিনার লোকজনের বিরোধিতার সম্মুখিন হলেন তখন মদিনা ছেড়ে চলে গেলেন নাজদে। তারপর কিছুদিন ছিলেন বসরায়। বসরায় যখন ছিলেন তখন তিনি তাঁর আকিদা নিয়ে আবারো বাড়াবাড়ি করেন এবং বসরা থেকেও বিতাড়িত হন। ওহাব ধর্মের সরল সঠিক পথ থেকে এতো বেশি বিচ্যুত হন যে আপামর মুসলমানকে কাফের-মুশরিক বলে বেড়াতে শুরু করেন এমনকি মুসলমানদের হত্যা করাকে ওয়াজিব বলেও মন্তব্য করেন। আব্দুল ওহাব তার অসুস্থ চিন্তাধারার ভিত্তিতে এমনকি মক্কা-মদিনার মতো ইসলামের পবিত্রতম ভূখণ্ডগুলোকে পর্যন্ত দারুল কুফ্‌রএবং দারুল হার্‌ববলে অভিহিত করেন। পবিত্র এই স্থাপনাগুলোকে দখল করা এবং ধ্বংস করাকে তার অনুসারীদের ওপর ওয়াজিব বলে ঘোষণা করেন। সহিংসতা ছিল আব্দুল ওহাব এবং তার অনুসারীদের আচরণগত প্রধান বৈশিষ্ট্য। (সূত্র:ইন্টারনেট)

Leave A Reply

Your email address will not be published.