ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিতে হযরত ইমাম মাহদী (আ.)

0 545
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গত নয়ই জুলাই ইরানের শিক্ষাবিদ, ছাত্র ও মাহদীবাদ বা হযরত ইমাম মাহদী-(আ.) সংক্রান্ত বিষয়ে তৎপর কর্মীদের এক সমাবেশে কিছু বক্তব্য ও মতামত রেখেছেন। তিনি মাহদীবাদকে নব্যুওয়তের মতই ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক বলে মনে করেন। তার মতে, নবী-রসূলদের মিশন ও হযরত ইমাম মাহদী-(আ.)’র মিশন অভিন্ন। ন্যায়বিচার এবং খোদার দেয়া মানবীয় সমস্ত ক্ষমতা ও প্রতিভার ভিত্তিতে একত্ববাদের বিশ্ব গড়ে তোলাই তাঁদের অভিন্ন লক্ষ্য।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল ও নবী। তাঁর পবিত্র বংশধর বা আহলে বাইতও মানবজাতির মধ্যে সর্বোত্তম, সবচেয়ে পবিত্র, আলোকিত ও নিষ্পাপ ব্যক্তিত্ব। তাঁরা হচ্ছেন জ্ঞান, সততা ও সব ধরনের মহৎ গুণাবলীর খনি এবং প্রদীপ্ত সূর্যের মতই গোটা মানবজাতির জন্য পথের দিশা বা আলোক বিকিরণকারী। মহানবী (সাঃ)’র পবিত্র আহলে বাইতেরই অন্যতম এবং সর্বশেষ নক্ষত্র হলেন হযরত ইমাম মাহদী (আ.)। মহান আল্লাহর নির্দেশিত নিষ্পাপ নেতৃত্বের অত্যুজ্জ্বল স্বাক্ষর এ ইমাম মানুষের জন্য বর্তমানেও সব ধরনের কল্যাণের এক অনন্য ফল্গুধারা।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.) না থাকলে নবী-রসূলদের সমস্ত পরিশ্রম, আহ্বান ও অবদান পন্ডশ্রমে পরিণত হবে। আর এ জন্যই মানবজাতির সর্বশেষ এই নেতা বা ত্রাণকর্তার ওপর বিশ্বাস ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক বিষয় বা বৈশিষ্ট্য।

জ্ঞান, রহমত, বরকত ও মহৎ গুণাবলীসহ বিভিন্ন ধরনের কল্যাণের মাধ্যম ইমাম মাহদী (আ.) বা শেষ ত্রাণকর্তার আগমণের সুসংবাদ যুগে যুগে আর্ত-মানবতার মুক্তির আশার প্রদীপকে রেখেছে প্রজ্জ্বলিত। বিশেষ করে ধর্ম-বিশ্বাসী মানুষেরা এ ব্যাপারে দৃঢ়-বিশ্বাসী যে তিনি এসে পৃথিবীর বুক থেকে সব ধরনের জুলুম ও অবিচারের অবসান ঘটাবেন এবং সব দিক থেকে মানব-সভ্যতাকে করবেন সমৃদ্ধ। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাবের যুগ তৌহিদ বা একত্ববাদের কর্তৃত্বের যুগ। ওই যুগ হবে মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মের প্রকৃত কর্তৃত্বের যুগ এবং প্রকৃত ও পরিপূর্ণ অর্থে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার যুগ।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে, সব খোদায়ী বা ঐশী ধর্মেই শেষ ত্রাণকর্তার ধারণা রয়েছে। কিন্তু এ বাস্তবতা ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মগুলোতে কোনো না কোনোভাবে বিকৃত বা অস্পষ্ট করা হয়েছে। হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেন,” ইসলামে মাহদীবাদ খুবই স্পষ্ট এবং এটা কেবল শিয়া মুসলমানদের বিষয় নয়। হযরত ইমাম মাহদী (আ.)’র মাধ্যমে যে গোটা দুনিয়ায় ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে সব ক’টি মুসলিম মাজহাব একমত। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রে বিশ্বনবী (সাঃ) ও খ্যাতনামা বা বরণ্যে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের উদ্ধৃতি সম্বলিত বিভিন্ন মাজহাবের বর্ণনা বা রেওয়ায়েত দেখা যায়। তাই মাহদী (আ.)’র আগমন যে অনিবার্য সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। “

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে, মুসলিম মাজহাবগুলোর মধ্যে অন্যতম মাজহাব হিসেবে খ্যাত শিয়া মাজহাবে মাহদীবাদ সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। তিনি বিষয়টিকে এই মাজহাবের একটি সুবিধাজনক দিক বা অগ্রগামীতার দিক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “শিয়া মাজহাবে মাহদীবাদ অস্পষ্ট নয়, এ মাজহাবে বিষয়টি এত জটিল নয় যে মানুষের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়, বরং এর সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো স্পষ্ট, ইমাম মাহদী (আ.)’র বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা জানি, তাঁর পিতৃপুরুষ কারা তা আমরা জানি, তার পরিবার ও জন্ম প্রভৃতি সম্পর্কেও আমরা বিস্তারিতভাবে অবহিত। এসব তথ্য কেবল শিয়াদের বর্ণনাতেই সিমীত নয়, শিয়া নয় এমন সূত্রগুলো থেকেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায় এবং এতে করে এসব তথ্যের সত্যতাই প্রমাণিত হয়। তাই অন্য মাজহাবগুলোর উচিত এ বিষয়ে গুরুত্ব ও মনোযোগ দেয়া যাতে তারাও এই সুস্পষ্ট বাস্তবতা উপলবিদ্ধ করতে পারেন।”

জুলুম ও অবিচারের মূলোৎপাটনকারী নেতা বা মানবজাতির সর্বশেষ খোদায়ী ত্রাণকর্তার ধারণা পবিত্র কোরআন-সুন্নাহ ও যুক্তি-ভিত্তিক। তাই তাঁর আগমনের জন্য প্রতীক্ষা বা অপেক্ষা করা এবং আশাবাদী হওয়া জরুরি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য অপেক্ষা করা মাহদীবাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এ থেকে উৎসারিত হয়েছে ধর্ম-উপলব্ধির মৌলিক শব্দমালা এবং এ থেকেই মুসলিম উম্মাহর মৌলিক, জাতীয় ও সামাজিক তৎপরতা ইসলামের উচ্চতর লক্ষ্যগুলোর দিকে ধাবিত হয়।”

তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, “ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য অপেক্ষা বা এন্তেজার হল সদা-সতর্ক বা সজাগ থাকা তথা এক অনিবার্য বাস্তবতার জন্য অপেক্ষা করা। এই অপেক্ষার অর্থ এই ভবিষ্যত অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য অপেক্ষা বা এন্তেজার একটি জীবন্ত ও বর্তমান বা উপস্থিত বিষয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইমাম মাহদী (আ.) নামে কারো জন্ম হবে বা কেউ অস্তিত্বশীল হবেন বলে কেউ কেউ যে দাবি করে থাকেন তা ঠিক নয়। তিনি এমন একজন যাঁর অস্তিত্ব রয়েছে এবং যিনি মানুষের মাঝে উপস্থিত রয়েছেন। এমন বর্ণনা রয়েছে যে মানুষ তাঁকে দেখে থাকে এবং তিনিও মানুষকে দেখেন। তবে মানুষ তাঁকে চেনে না। কোনো কোনো বর্ণনায় ইমাম মাহদী (আ.)’র উপস্থিতিকে হযরত ইউসুফ (আ.)’র জীবনে ঘটে যাওয়া সেই সময়ের ঘটনার সাথে তুলনা করা হয়েছে যখন তিনি তাঁর ভাইদের সাথে ছিলেন ও তাদের দেখতে পেতেন। তিনি তাঁর ভাইদের কার্পেটের ওপর হাঁটতেন, কিন্তু তারা তাঁকে চিনত না।”

ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য প্রতীক্ষা দায়িত্বশীলতার সাথে সম্পর্কিত। এ প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, “যারা ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য প্রতীক্ষা করছেন তাদেরকে অবশ্যই প্রস্তুত ও সদা-সতর্ক থাকতে হবে। তাদের এটা মনে রাখতে হবে যে বড় ধরনের এক ঘটনা ঘটবে এবং সব সময় অপেক্ষমান ও সতর্ক থাকতে হবে। এটা বলা যাবে না যে ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাব ঘটতে এখনও বহু বছর বাকি, একইসাথে এটাও বলা যাবে না যে, খুব নিকট ভবিষ্যতেই তাঁর আবির্ভাব ঘটবে। তবে সব সময়ই অপেক্ষমান ও সতর্ক থাকতে হবে। যারা তাঁর আবির্ভাবের জন্য প্রহর গুণছেন তাদেরকে সব দিক থেকে এমন যোগ্যতা অর্জন করতে হবে যা ওই বিশেষ যুগের জন্য জরুরি। হযরত ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাবের যুগে মানুষ ন্যায়বিচার, সত্য, একত্ববাদ, আন্তরিকতা ও আল্লাহর আনুগত্যের জন্য অধীর হবে। তাই আমরা যারা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছি তাদেরকে অবশ্যই এসব বিষয়ে জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। অন্য কথায় সত্য মেনে নেয়া ও ন্যায়বিচারের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে, ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য প্রতীক্ষা সংক্রান্ত তৎপরতার ক্ষেত্রে গুজবে কান দেয়ার মত অগভীর ও অদূরদর্শীতাসুলভ যে কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, তা না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে ও মূল পথ থেকে বিচ্যুত হবে। এ সংক্রান্ত তৎপরতা হতে হবে যুক্তি-প্রমাণ ও সঠিক তথ্য-ভিত্তিক। এক্ষেত্রে যত বেশি সঠিক তথ্য প্রচারিত হবে শেষ ইমাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ও ভালবাসা ততই বাড়বে।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মনে করেন ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্য সত্যিকার অর্থে অপেক্ষমান ব্যক্তিরা তাঁর সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,”শেষ ইমামের জিয়ারত হিসেবে প্রচলিত বিভিন্ন জিয়ারতনামায় তাঁর সাথে আধ্যাত্মিক সংযোগমূলক বা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনমূলক যেসব কথা দেখা যায় সেসবের মধ্যে কিছু কথার বেশ ভাল দলিল-প্রমাণ রয়েছে। এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দূর থেকে ইমাম মাহদী (আ.)’র প্রতি মনোযোগ ও তাঁর সাথে আধ্যাত্মিক সংযোগ বা তাঁকে সালাম প্রদান- এসব তিনি শোনেন। ইনশাল্লাহ তিনি আমাদের এসব কথা বা নিবেদন কবুল করছেন। মহান আল্লাহ সালাম বা অভিবাদনকারীদের সালাম ও বার্তাদাতাদের বার্তা এই মহান ইমামের কাছে পৌঁছে দেন। এসব আধ্যাত্মিক-যোগাযোগ বা সংযোগ ও ভালবাসা খুবই কল্যাণময় এবং জরুরি।” (সূত্র: ইন্টারনেট)

Leave A Reply

Your email address will not be published.