কবর মেরামত ও যিয়ারত

0 1,303

আম্বিয়া,ও আউলিয়ার কবর মেরামত এবং যিয়ারত

قَالَ الذَّينَ غَلَبُوا عَلَي أَمرِهِم لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيهِم مَّسجِواً
“যারা তাদের (আসহাবে কাহাফ)সম্পর্কে জানলেন, বললেনঃ তাদের স্থানে মসজিদ  বানাব।” ( কাহাফ-২১)

وَ ابَّخِذُوا مِن مَقَامِ اِبرا هِيمَ مُصَلَّي
 এবং মাকামে ইব্রাহীমকে এবাদতগাহ করো।
(বাক্বারা -১২৫)
কবরের উপর ইমারত গড়া নিষিদ্ধ বলে যারা মনে  করে তাদের দলিল

নবী ও ওলীগণের কবরের উপর ইমারত গড়া বা সেগুলোকে মেরামত করা, এ গুলোর চারদিকে তাওয়াফ করা এবং এগুলোকে এবাদতগাহে পরিণত করার ব্যাপারে মুসলমানরা পরস্পর মতপার্থক্য করেছে। যারা এমনটি করা নিষিদ্ধ বলে মনে করে তারা যেসকল রেওয়ায়েতের মাধ্যমে যুক্তি উপস্থাপন করেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
ক) হযরত আলী (আঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে বলেন ঃ
کانَ رَسُولُ اللهِ في جِنازَةٍ فَقالَ : أيُّکم يَنطَلق إلَي المَدينَةِ فَلا يَدَعُ بِها وَ ثَناً. إلاّ کَسَرَه. وَ لا قَبراً إلاّ سَوّاه. وَ لا صُورَة إلاّ لَطًخَها ؟ فَقالَ رَجُلُ : أنَا يا رَسُولَ اللهِ : فَانطَلَقَ فَهابَ أهابَ أهلَ المَدينَةِ . فَرَجَعَ فَقلَ عَليُّ: أنَا اَنطَلِقُ يا رَسُولَ  الله؟ قالَ: فَانطَلِق. فَانطَلِق . فَانطَلَقَ ثُمَّ رَجَعَ فَقالَ: يا رَسُولَ اللهِ ! لَم اَدَع بِهَا وَ ثَنَاً إلا کَسَر تُهُوَ لا قَبراً ألاّ سَوَّ يتُه . وَ لا صُورَةً إلاّ لَطَختُها.
হযরত আলী (কাঃ) বলেছেন ঃ রাসূল (সাঃ) একটি জানাযার দাফন অনুষ্ঠানে ছিলেন যে বলেন ! তোমাদের মধ্যে কে মদীনায় যাবে এবং সেখানে তাদের সমস্ত মূর্তিগুলোকে ধবংশ করবে  এবং তাদের কবরগুলো পরিষ্কার এবং সমস্ত চেহারাগুলো (মূর্তিগুলো) ধবংশ করবে ?” এক ব্যক্তি বললেন ঃ আমি, “হে আল্লাহর রাসূল!” সে গেল এবং মদিনার মানুষকে ভয় পেয়ে ফিরে আসচলা। হযরত আলী (আঃ) বললেন ; হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি যাব কি ? বললেনঃ ‘যাও।” তিনি গেলেন ফিরে এসে বললেন! “হে আল্লাহর রাসূল! সমস্ত মূর্তি ভেঙ্গেছি, সমস্ত কবর পরিস্কার করেছি এবং সমস্ত  ছবি উল্টে দিয়েছি এবং সমস্ত ছবি উল্টে দিয়েছি।”
 এ রেওয়ায়েতটির হাদীসের কিতাবসমূহে পুনরাবুত্তি ঘটেছে এবংং আমরা এর পরিপূর্ণ বর্ণনাটি তুলে ধরেছি। [মুসনাদে আহমাদ খঃ১, পৃঃ৮৭, ৮৯,৯৬, ১১০ ১১১, ১২৮, ১৩৮, ১৩৯,১৪৫, ১৫০; এবং মুসনাদে তায়ালুসী হাদীস ৯৬ ও ১৫৫]

খ) মহানবী (সাঃ) থেকে বির্ণত হয়েছে যে বলেন ঃ
أللّهُمَّ لا تَجعَل قَبري وَ ثناً .لَعَنَ اللهُ  قومًا اتَّخَذُوا قُبُورَ أنبيائهِم مَسا جد.
প্রভু হে ! আমার কবরকে মূর্তিতে  পরিণত করোনা। মহান আল্লাহ লা’নত করুন সে দলকে যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ পরিণত করে। [মুসনাদে আহমাদ খঃ২ পৃঃ২৪৬]
 অপর এক রেওয়ায়েতে মহানবী (সাঃ) তাদের পরিচয় দিয়েছেন যারা নিজেদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে এবং বলেন ঃ
قاتَلَ اللهُ اليَهُودَ اِتَّخَذُوا قُبُور اَنِبيا ئهم مَساجِد
মহান আল্লাহ ইহুদীদেরকে হত্যা করুন; তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। [মুসনাদে আহমাদ খঃ২ , পৃঃ২৮৫]   
গ) নারীদেরকে কবর যিয়ারতে রাসূলের (সাঃ) নিষেধ থেকে যুক্তি উপস্থাপন। যেমনঃ ইবনে মাযা, তিরমিযি ও আবু দাউদ নিজ নিজ সুনানে নিজস্ব সনদ সহ আবু হোরায়রা ও হাস্সান এবং ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
أنَّ رَسُولَ الله (ص) لَعَنَ زَوّاراتِ القُبُور            
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কবর যিয়ারতকারী নারীদেরকে লা’নত করেছেন।  [সুনানে ইবনে মাযা, কিতাবুল জানায়েয, দারুল কিতাবুল আরাবিয়াহ (১৩৭২হিঃ) খঃ১, পৃঃ৫০২ হাদীস ১৫৭৬, সুনানে আবু দাউদ কিতাবুল জানায়েয খঃ৩ পৃঃ২১৮, হাদীস নং ৩২২৬; মুসনাদে আহমাদ মিশর থেকে প্রকাশিত (১৩১৩হিঃ) খঃ২ পৃঃ৩৩৭ ও ৩৫৬ এবং সুনানে তিরমিযি আবওয়াবু জানায়িয, মিশর থেকে মুদ্রিত (১৩৫০ হিঃ) খঃ২ পৃঃ২৭৬]    

প্রথম অংশের রেওয়ায়েতে সমস্যা ও খুঁত বা ক্রটি

প্রথম সমস্যা- হিজরতের পূর্বে মদীনার অবস্থা ঃ-
 মদীনার কিছু কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করার পর, সবকিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম যে কজিটি করলেন তা হলো, মোসআব ইবনে উমাইরকে নূতন মুসলমানদেরকে ঐ সময়ে বিদ্যমান ইসলাকের আহকাম শিক্ষা ছেয়ার জন্যে অতিদ্রুত তাদের নিকট পাঠালেন। কারণ, মদীনার কেবলমাত্র একদল লোক যারা মহানবীর হজ্জের জন্যে যাওয়ার পথে আকাবায় উপস্থিত হলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর সাথে গোপণে বাইয়াত করেছিলেন। ইসলাম তষনও তাদের (মদীনাবাসীর) মাঝে বিস্তৃতি লাভ করেনি। তবে রাসূল (সাঃ) তাদের নিকট হিজরত করলে ধীরে ধীরে ইসলাম বিস্তৃতি লাভ করে। হযরত আলী (আঃ) ও তিনদিন বা তার বেশী সময় পর হযরত (সাঃ)-এর দিকে রওয়ানা হলেন। মদীনায় মহানবী (সাঃ)-এর প্রবেশের ঘটনা অতি পরিচিত ও বিখ্যাত। রাসূল (সাঃ) ও বনি কোরাইযা, বনি নাজির এবং বনি কায়নুকা নামক ইহুদী গোত্রের সাথে চুক্তি করার পর মদীনায় ধীরে ধীরে নিজ শাসন প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারিত করেন।
 এখন, এইযে সূচনা ও বিস্তৃতি সম্পর্কে আমরা যা জানলাম, তাতে প্রশ্ন আসে যে, মহানবী (সাঃ) কোথা থেকে এবং কখন দাফনকার্য সম্পাদনের সময় আলী (আঃ) কে মদীনায় পাঠালেন যাতে মূর্তিগুলো ধবংশ এবং কবরগুলোকে পরিস্কার এবং চেহারাগুলোকে উল্টিয়ে দেয়া হয়?  আর তাও আবার শক্তিশালী অবস্থান ও এমন আদেশদাতা থেকে এ আদেশ যার আদেশ লংঘন করা সম্ভব নয়!? এ ছাড়া, প্রথমজনকে পাঠালে সে ভয়ে ফিরে আসে, মহানবী (সাঃ) ও অন্যরা জানাযা দাপনে ব্যস্ত থাকেন!
অতঃপর মহানবী (সাঃ) ঐ ব্যক্তির পর আলী (আঃ) কে পাঠালেন ও অনুরূপ দাফন কাজে ব্যস্ত থাকলেন! এটা কী করে সম্ভ^ব?!

দ্বিতীয় সমস্যাঃ দায়িত্ব পালনের স্থান ও কাল ঃ
 রেওয়ায়েতের ধারাবাহিকতায় এসেছে যে, ইমাম আলী (আঃ) আবুল হাইয়্যাজ আসাদীকে বলেছিলেন ঃ
اَبعَثُک فيما بَعَثَنِي رَسُولُ اللهِ (ص): أمَرَني اَن اُسَوِّيَ کُلَّ قَبرِ وَ اًطمِسَ کُلَّ صَنَمٍ.
“আমি তোমাকে এমন এক কাজের নিদেশ দিব যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে এর জন্যে নিযুক্ত করেছিলেনঃ তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যাতে আমি সমস্ত কবরগুলোকে পরিস্কার (মাটির সাথে মিশিয়ে দিই) এবং সমস্ত মূর্তি ধবংশ করি।” [মুসনাদে আহমাদ খঃ১ পৃঃ৮৯ ও ৯৬  ]
 স্পষ্টতঃই ইমাম আলী (আঃ) আবুল হাইয়্যাজ আমাদীকে কেবলমাত্র তাঁর নিজের হুকুমত ও খেলাফতকালে নিযুক্তি করেছিলেন। অতএব, তথাপি এ প্রশ্নটি উদ্ভব হয় যে, ইমাম আলী (আঃ) কর্তৃক আবুল হাইয়্যাজকে কোথায় ও কখন নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ? ইমাম আলী (আঃ)-এর খেলাফতকালে ও ইসলামের বিজয়ের পর ও পূর্ববর্তী তিন খলিফার শাসনকারের পর কিংবা এর পূর্বে ? ইমাম আলী (আঃ) আবুল হাইয়্যাজকে কোন এলাকায় বা ভূখন্ডে পাঠিয়েছিলেন যে, কবরগুলোকে ধবংশ ও পরিস্কার এবং মূর্তিগুলোকে নিশ্চিহ্ন ও মূছে ফেলবে ?!
 আলোচনার উপসংহার হলো, উভয় রেওয়ায়াতে  রাসূল (সাঃ) ও আলী (আঃ) কর্তৃক প্রদত্ত অদেশ (যদি উভয়টিই কল্যাণকর ও সঠিক হয়) ছিল এক শিরকের ভূমিতে মোশরিকদের কবর ধবংশ ও নিশ্চিহ্ন করার জন্যে। তাহলে এ আদেশের বিস্তৃতি মুসলমানদের কবরের ব্যাপারে এবং মুসলমানদের কবর ধ্বংসের আবশ্যকতা রেওয়ায়েতের কোন অংশ থেকে পাওয়া যায়?!
রেওয়ায়েতের দ্বিতীয় অংশে সমস্যাও ক্রটি

প্রথমতঃ- বনি ইসরাইলের নবীগণের কবর সম্পর্কে
 তৌরাতের পঁচিশতম অধ্যায়ের অস্তিত্ব খন্ডে একটি রেওয়ায়েত আছে যার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপঃ
ইব্রাহীম (আঃ) মৃত্যুবরণ করলেন এবং ইসহাক (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে গেফরুন বিন সুহার হিত্তা প্রান্তরের মাককিলা গুহায় কামরানের সম্মুখে সমাহিত করলেন। [তৌরাত ইবরানী, কোলদানী ও ইউনানী থেকে ফার্সীতে অনুদিত, পৃঃ৩৫  ]
 পঞ্চম অধ্যায়ে এসেছে ঃ যখন ইয়াকুব মিশরে মৃত্যুবরণ করলেন তখন তার সন্তান ইউসূফ ইউসূফ তাকে মাকফিলা গুহায় আনলেন ও তাঁর পিতা ও দাদার পাশে দাফন করলেন।
 দশম অধ্যায়ে সংখ্যাসমূহের অংশে লেখা আছেঃ হারুণ মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ভাই মূসা (আঃ) তাঁকে ‘হুর’ পাহাড়ের চূড়ায় দাফন করেছিলেন।
 চৌত্রিশতম অধ্যায়ে তাসনিয়ার খন্ডে এসেছে ঃ মূসা (আঃ) মাত্তয়াব ভূখন্ডে মৃত্যুবরণ করলেন এবং ‘জেরয়া’-তে ফাগুরের গৃহের সম্মুখে সমাহিত হন এবং কোন মানুষই আজ পর্যন্ত তার কবরের কথা জানেনা।
 ইফশার টেষ্টামেন্টর চব্বিশতম অংশে এসেছেঃ তাকে ‘আফরয়িম’ পাহাড়ে দাফন করা হয়েছিল। এবং ইউসূফ (আঃ)-এর হাড় ‘শাকিমে ’ দাফন করা হয়েছিল। দাউদ (আঃ) ও সোলায়মাণের (আঃ) দাফনের স্থান সম্পর্কে তৌরাতের কোন টেষ্টামেন্টেই উল্লেখ নেই। “কামুসে কিতাবে মোকাদ্দাস”-এর লেখক ‘সাহয়ূন-এর পরিচয় ও অনুবাদে বলেনঃ দাউদ (আঃ) ও সোলায়মান (আঃ)-এর কবর সম্পর্কে জানা যায়নি।
 মো’ জামূল বোলদানের আলখালিল শব্দের বর্ণনায় এসেছেঃ আলখালিল হলো ‘বাইতুল মোকাদ্দাসের নিকটবর্তী একদিনের সমান পথ দূরত্বে, দূর্গসমূহ, ইমারতসমূহ ও বাজার অধ্যুসিত শহর যেখানে মাটির নীচে কোন এক গুহায় ‘ইব্রাহীম খলিল’ (আঃ)-এর কবর আছে।
 সেখানে যিয়ারতগাহ ও যিয়ারতকারীদের সমাবেশস্থল ও অতিথীশালা আছে এবং ঐ স্থানকে ‘আলখালিল’ বলা  হয়। এর আসল নাম হলো ‘হিররুন’ বা ‘হিব্রী’। তৌরাতে আছে যে, খালিল (আঃ) ‘আফরুন বিন সূহার হিত্তি’ থেকে চারশ দেরহাম রূপা দিয়ে ক্রয় করেছেন এবং ‘সারাকে’ সেখানে দাফন করেছেন।
 আহলে হাদীসের একদল সে স্থানে পরিগণিত হয়। সে স্থানটি পবিত্র ও প্রাণসঞ্জীবনী। সেখানে বরকতের চিহৃ সুত: প্রকাশিত। বলা হয়, ‘এর দূর্গ সোলায়মান ইবনে দাউদ (আঃ)’ এর ইমারত থেকে।
হারভী ঃ ৫৬৭হিঃ সালে ‘বাইতুল মোকাদ্দাসে’ প্রবেশ করলাম। সেখানে ও আলখালিল শহরে আহলে হাদীসের মনীষীদের সাথে একত্র হলাম। তারা আমার জন্যে বর্ণনা করলেন যে, ৫১৩ হিজরীতে ‘মালেক বার দুয়াল’-এর সময়কালে ‘আলখালিল গড়ের এক স্থান নীচের দিকে ধ্বসে গেল। ফিরিঙ্গীদের একটি দল বাদশার অনুমতি নিয়ে এতে প্রবেশ করলেন। তারা সেখানে ইব্রাহীম (আঃ), ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকুব (আঃ)-কে পেলেন। তাদের শরীরে কাফান জ্ঞানো এবং দেয়ালের সাথে হেলান অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের মাথার উপর কাদিল ঝুলানো ছিল এবং তাঁদের  মাথা খোলাছিল। বাদশা পুনরায় তাঁদেরকে কাফনে আবৃত করলেন এবং ধ্বসে পড়া স্থান পুনরায়বন্ধ করে দিলেন।
  বলা হয় ঃ ‘সালাফীর’ নিকট পড়লামঃ আর্মেনী নামে একব্যক্তি আলখালিল যিয়ারতের ইচ্ছা করলেন এবং ঐ স্থানের  মোতায়াল্লীকে  প্রচুর হাদীয়া দিলেন এবং তার নিকট নীচে নেমে ইব্রাহীম (আঃ)-এর দেহ যিয়ারতের ব্যবস্থা করে দিতে আবেদন করলেন। জবাব দেয়া হলোঃ এখন হবে না তবে যিয়ারতকারীরা যাওয়া পর্যন্ত যদি অপেক্ষা কর তবে সে ব্যবস্থা করবো। যিয়ারতকারীরা চলে গেলে একটি পাথর সরিয়ে বাতি সাথে নিয়ে দু’জন বায়ূ বহমান একটি শুহার দিকে ৭০ ডিগ্রী পরিমাণ নীচে এলেন। গুহার ভিতর একটি মঞ্চ ছিলো যার উপর ইব্রাহীম (আঃ) শায়িত ছিলেন। তার উপর একটি সবুজ কাপড় মোড়ানো ছিল এবং প্রবাহমান বাতাস তাঁর সাদা দাঁড়ি নিয়ে খেলছিল। ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকুবও (আঃ) তাঁর পাশে ছিলেন। অতঃপর, তাকে গুহার দেয়ালের নিকট আনলেন এবং বললেন ঃ ‘সারা’ এ দেয়ালের পিছনে আছেন। দেয়ালের পিছনে তাচোতে গেলে হঠাৎ একটি শব্দ শুণা গেল ঃ ‘হারাকের নিকটবর্তী হওয়া থেকে দূরে থাক।’ (এ শব্দ শুণে) যেখান থেকে নীচে গেলেন পুনরায় সেখানে ফিরে আসলেন।  [মো’জামূল বোলদান, খঃ২, পৃঃ৪৬৮]
 ‘তারীখে ইবনে আসাকির’-এর প্রথম খন্ডে এ সম্পর্কে একটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে যার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ ঃ
৮৬ হিজররপর যখন ‘ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেকের (মৃত্যু ০৯৬হিঃ) আদেশে দামেশ্কে পূর্ণাঙ্গরূপে খনন করা হয় তখন ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়ার মস্তক একটি সন্দুকের ঝুড়িতে একটি গম্বুজের খাম্বার নীচে পাওয়া গেল। তাকে ঐ ভাবেই খাম্বাগুলোর একটির নীচে স্থান দেয়া হল। তৌরাতে ও অন্য কিতাবে বনি ইসরাঈলের অন্য কোন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং লূত, ইউশা, আয়্যূব, ওযাইর, যাকারিয়া (আঃ)-এর কবরও অজ্ঞাত। আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-কে তো মহান আল্লাহ উর্ধ্বে তুলে নিলেন।
 যা কিছু বর্ণিত হলো বনি ইসরাঈলের নবীগণের কবরের সংবাদ ছিল। আমরা না দেখেছি, না শুনেছি যে ইহুদীরা নিজ নবীদের কবরকে মূর্তিতে পরিণত করেছে। আর আমরা জানি যে, কবরকে মূর্তিতে পরিণত করা এবং একে সম্মান দেখানো ও যিয়ারত করার মধ্যে পার্থক্য আছে। কবরকে মূর্তি করা বা মূর্তি বানানোর অর্থ হলো এই যে, নামাযে কবরগুলোকে কাবার মত নিজের কেবলা বানানো।
 অতএব, এ দু’য়ের তুলনা করা হলো পরিত্যাজ্য ক্বিয়াস বা অনুমান।
দ্বিতীয়ত ঃ ইয়াহুদের মা’বাদ বা ইপসনালয় এবং বনি ইসরাঈলের ইবাদতগাহ ঃ বনি ইসনাঈলের (ইয়াহুদ)  এবাদতগাহ যাতে ‘তাবুতে আহদ’ ছিল, তার নাম ছিল ‘খিমায়ে এ জতেমা ’ (জনসমাবেশের তাবু)। তৌরাতের অভ্যুত্থান খন্ডের ২৫ থেকে ২৮ অধ্যায়ে এ গুলো তৈরীর জন্য মূসার (আঃ) উপর আল্লাহর আদেশের ধরণ এবং সমাবেশের তাবুতে আসার জন্য ২৯ ও ৩০ অধ্যায়ে বনি ইসরাঈলের উপর আল্লাহর আদেশের ধরণ-যখন তারা প্রান্তরে ছিলেন- সম্পর্কে এসেছে।
 এ খিমা বা তাবুর ছবি ‘কামুসে কিতাবে মোকাদ্দাসে’ যেভাবে এসেছে তা
নিম্নরূপঃ

 
তাবুতে আহদে

‘বনি ইসরাঈল ’ যেখানেই যেত এ ‘ তাবুত’ নিজেদের সাথে বহন করতো । যখন তারা ফিলিস্তিনে গেল তখন দাউদ (আঃ) ‘সমাবেশের তাবুর’ আকার আকৃতিতে একটি এবাদতগাহ তৈরী করলেন এবং সোলায়মান (আঃ) একে স্থাপত্য আকার দান করেন। অতঃপর ‘সমাবেশের তাবু’ ও ‘তাবুতকে’ এতে স্থান দান।
অতএব, আমরা অনুধাবন করলাম যে, ইহুদীরা যখন থেকে প্রান্তরে ছিল তখন থেকেই তাদের এবাদতের জন্য তাদের নিকট “সমাবেশের তাবু” ছিল। যখন, তারা ফিলিস্তিনে স্থানানান্তরিত হয়েছিল, তখন সোলায়মান (আঃ)  তাদের জন্যে বিশেষ এবাদতগাহ (সোলায়মানের হেইকাল) তৈরী করেছিলেন যাতে ‘এবাদতের তাবু’ ও ‘তাবুতে আহাদ’-কে স্থান দেয়া হয়েছিল। [অতএব, নবীগণের কবরকে মূর্তি করা ও এগুলোর এবাদত কোথায় হয়েছিল ?!]
 তবে, আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের প্রশ্ন ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও এ পর্যালোচনা কোনভাবেই রাসূল (সাঃ)-এর হাদীসের ব্যাপারে নয় (মহান আল্লাহ আমাদেরকে হেন কাজ থেকে রক্ষা করুন)। আমাদের আলোচনা ও পর্যালোচনা শুধুমাত্র এ হাদীসের রাবি বা বর্ণনাকারীদের ব্যাপারেÑযাদেরকে মহান আল্লাহ ভুল-ক্রটি থেকে পবিত্র করেননী।
 এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ‘কবরের ইপর ইমারত গড়া ও মেরামত করা”Ñকে ইসলাকের শরীয়ত বিরোধী বলে মনে করেন তাদের যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপনা ও এগুলোর জবাব দিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা কবরের উপর ইমারত গড়া ও মেরামতকে করা ইসালামের শরীয়ত পস্থী বলে মনে করেন তাদের যুক্তিগুলো উপস্থাপণ করবো।   

ওয়ালিগণের যারা নবীগণ কবরের উপর মসজিদ ও এবাদতগাহ
নির্মানকে বৈধ মনে করেন তাদের দলিল

আমরা ‘নবী ও সালেহীনের জন্যে অনুষ্ঠান উজ্জাপণ, কিরূপে স্থানÑকলেন উপর কল্যাণ ও অকল্যাণ বিস্তার লাভ করে ও প্রভাব ফেলে (যার মাধ্যমে এর প্রত্যেকটি বান্দাদের উপর এসেছে) তা  বর্ণনা ও পর্যালোচনা করেছি। এ আলোনোয় পুনরায় ফিরে এসে (মাহান আল্লাহর অনুমবিক্রমে) নিম্নলিখিত বিষয়গুলো এর সাথে যোগ করবো এবং বলবোঃ
প্রথমত ঃ পবিত্র কোরআনে ঃ
 নবী ও ওয়ালিগণের সমাধিস্থলে এ বাদত সঠিক বলে যারা বিশ্বাস করেন তারা বলেন ঃ মহান আল্লাহ বলেছেন ঃ
ক) وَ اَتَّخِذُوا مِن مَقامِ إبراهيمَ مُصلّي
এবং মাকামে ইব্রাহীমকে এবাদতগাহ কর
খ) قَالَ الَّذينَ غَلَبُوا عَلي أمرِهِم لَنَتَّخِذَنَّ عليهم مَسجِدًا
“যারা তাঁদের (আসহাবে কাহফ) সম্পর্কে অবগত হলো বললো ঃ তাঁদের স্থানে মসজিদ তৈরী করব।” মাকামে ইব্যাহীম (আঃ)-এর ঘটনা (২) নং সিটে “আল্লাহর নবী ও সালেহ বান্দাদের ” স্মরণে অনুষ্ঠান উজ্জাপণ সম্পর্কিত আলোচনায় বর্ণনা করেছি । সহী বোখারীতে এ সম্পর্কে যা এসেছে সংক্ষেপে তা নিম্নরূপ ঃ
 আল্লাহর ঘর নির্মাণের সময় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ)-এর কাজ ছিল ঃ ইসমাঈল (আঃ) পাথর আনতেন এবং ইব্রাহীম (আঃ) নির্মান করতেন। আর এ ভাবে দেয়াল উঢ়ুঁ হলো।
 ইসমাঈল এ পাথর [=মাকামে ইব্রাহীম] এনেছিলেন; ইব্রাহীম (আঃ) এর উপর দাঁড়ালে ইসমাঈল (আঃ) পাথর তুলে তাঁর হাতে দিতেন। আর এ ভাবেই উপরের দিকে দেয়াল উঠেছিল। ‘মাকামে ইব্রাহীম (আঃ) যাকে মহান আল্লাহ এবাদতগাহ ও নামাযের স্থান বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তা এখানেই আছে।


 
মাকামে ইব্রাহীম

 এ ষঢ়ভূজ আকৃতির কাঁচের ছোট কক্ষে একটি পাথর আছে যার উপর ইব্রাহীম (আঃ)-এর পদাচিহৃ দেখা যায়। আর মাকামে ইব্রাহীমের মানে হলো এটাই। ‘আসহাবে কাহাফ’ Ñএর কাহিনী তাফসীরে যা এসেছে তার সারসংক্ষেপ নিম্বরূপ ঃ
 ‘আসহাবে কাহাফ’ ছিলেন ‘দাকিয়ানুসের ’ দরবারের একদল যুবক যারা গোপনে মহান আল্লাহর উপর ইমান এনেছিলেন। ‘দাকিয়ানুস দিল এক বাদশা যে নিজেকে ‘রব’ বলে দাবি করেছিল। ‘আসহাবে কাহাফ’ তাদের বাদাশার নিকট থেকে পলায়ণ করেছিলেন ও একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ তাদের শ্রবণ ও দর্শণ শক্তি নিয়ে নিয়েছিলেন এবং কয়েকশ বছরের জন্য তাদেরকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করেছিলেন। অতঃপর ঘুম থেকে জাগিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের মধ্যে একজনকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য শহরে পাঠিয়েছিলেন। শহরের লোকজন তাদের নিকট অতি প্রাচীণ মুদ্রা দেখে এ রহস্য সম্পর্কে অবগত হলেন । ঐ সময় শহরের মানুষ মুমিন ছিলেন এবং ঈমান রক্ষা করার জন্যে একদশ মুবকের পলায়ণের ঘটনা তাদের জানা ছিল। ফলে তারা যখন তাঁদের স্থান জানতে পারনেন তখন গুহার দিকে রওয়ানা হলেন। এ খবরটি যখন ঐ যুবকদের নিকট পৌঁছলে যেহেতু তারা পুনরায় শহরে ফিরে যাওয়া পছন্দ করেননি সেহতু মহান আল্লাহর নিকট কামনা করলেন পুনরায় তাদেরকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে। মহান আল্লাহ পুনরায় তাদেরকে মৃত্যুর মত নিদ্রাচ্ছন্ন করলেন। নগরবাসীরা আসহাবে কাহাফের ব্যাপারে কী করবে তানিয়ে বাদানুবাদ করছিল। যারা ‘আসহাবে কাহাফ’ সম্পর্কে যারা জানলেন তারা বললেন ঃ তাদের স্থানে মসজিদ নির্মাণ করব। ৮
আলোচনার উপসংহার ঃ
 প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন যাতে আমরা ইব্রাহীম (আঃ)-পায়ের স্থানকে নামাযের স্থান করি এবং এর পিছনে মহান আল্লাহর এবাদত করি। এ কাজ কোনভাবেই র্শিক নয় বরং তা হলো এবাদতগত তৌহীদ এবং পবিত্র আল্লাহরই এবাদত।
 দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ এমন কিছু মু’মিনের সংবাদ দিয়েছেন যারা ঐ মুমিন বীরের (অর্থাৎ আসহাবে কাহাফের ) নিদ্রার স্থানে মসজিদ বানানের ব্যাপরে প্রতিজ্ঞা করেছিল যাতে সেখানে মহান আল্লাহর এবাদত ও মহান আল্লাহর জন্য সেজদা করতে পারে। তারা সকলেই মু’মিন মুশরিক  ছিলেন না! এহান আল্লাহও তাদের এ কাজের জন্যে তাদেরকে ভৎর্সনা করেননি।
এ দু’টি উদাহরণ মহান আল্লাহর কিতাব থেকে বর্ণনা করেছি। মহানবী (সাঃ)-এর সুন্নতেও এমন উদাহরণ আছে যা বর্ণনা করবো ঃ

দ্বিতীয় : রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নতে ঃ
ক) সহী মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজা, তিরমিযি ও মুয়াত্তা মালিকে বোরাইদা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন ঃ
قالَ : قالَ رَسُولُ الله (ص) نَهَيتُکُم عَن زِيارَةِ القُبُور فَزُورُوما…….
রাবি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন ঃ অমি তোমাদেরকে কবর বিয়ারকে নিষেধ করেছিলাম; এখন তাদের (কবর) যিয়ারতের জন্যে যাও—–।’ [সূনানে ইবনে মা’জা, হাদীস নং ১৫৭১]
 সুনানে আবু দাউদ এ হাদীসের শেষে এসেছে যে, فَاِنَّ في زِيَا رَتهِا تَذِ کَر ةٌ                           
কারণ কবর পরিদর্শণ করা শিক্ষামূলক। সুনানে ইবনে মা’জাতে ইবনে মাসউদের ভাষায় এসেছে ঃ
اِنَّ رَسُولَ الله (ص) قال : کُنتُ نَهَيتُکُم عَن زيارة القُبورَ فَزُوُروها فَا نَّها تُزَهِّدُ في الدّتيا و تُذَ کِّرُ فِي الآخِرَة      
নিশ্চয়ই রাসূনুল্লাহ (সাঃ) বলেন ঃ আমি স্বয়ং (ইতিপূর্বে ) তোমাদেরকে কবর যিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন এগুলোর যিয়ারতে যাও। কারণ কবর যিয়ারত, পৃথিবীতে সংয়ম ও আখারাতের স্মরণ আনয়ন করে। [সহী মুসলিম, হাদীস ৯৭৭, সুনানে নাসাঈ, খঃ৪ পৃঃ৮৯, সূনানে ইবনে মা’জা খঃ১ পৃঃ৫০০-৫০১, সুনানে তিরমিযি খঃ৪ পৃঃ২৭৪, সুনানে আবি দাউদ, হাদীস ৩২৩৫, মোয়াত্তা মালিক খঃ২ পৃঃ৪৮৫]
খ) মককা ও মদীনায় [ইসমাঈল (আঃ) থেকে সর্বশেষ নবী (সাঃ)পর্যন্ত]নবীগণ রাসূলগণ (আঃ)-এর কবরের কাহিনী নিম্নরূপঃ
১। মক্কায় ঃ কাবার সমস্ত তাওয়াফকারী সমস্ত যুগেই বাইতুল্লাহর তাওয়াফের সাথে সাথে হিজরে ইসমাঈল ও (ইসমাঈল (আঃ)-এর পাথব) তাওয়াফ করেছেন
এবং এর দেয়াল নিজের শরীর স্পর্শ করিয়ে বরকাত কামনা করেন। এটা এমন এক স্থান যেখানে ইসমাঈল (আঃ) ও তাঁর মাতা হাজার সমাহিত হয়েছে!
 সিরাতে ইবনে হিশাম (মৃত্যু ঃ ২১৮হিঃ ), তারিখে তাবারী (মৃত্যু ঃ ৩১০হিঃ), তারিখে ইবনে আছির (মৃত্যুর ৬৩০হিঃ) এবং ইবনে কাছিরে (মৃত্যুঃ৭৭৪হিঃ) একটি রেওয়ায়েত আছে যে বলেন ঃ
“ইসমাঈল (আঃ) তাঁর মা হাজারের সাথে ‘হিজরে’ শায়িত আছেন।”
 “ইসমাঈল (আঃ) ওয়াসিয়াত করেছিলেন যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে হিজরে’ তাঁর  মায়ের কবরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।”
 ইবনে সা’দ তায় ‘তাবাকাতে’ বলেন ঃ ইসমাঈল (আঃ)-এর বিশ বছর বয়সে তাঁর ‘হাজার’ নব্বই বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ইসমাঈল (আঃ)ও পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর পর মৃত্যুবরণ করেন এবং মাতা হাজারের পাশে কা’বার দক্ষিণে সমাহিত হন।
 অন্য এক রেওয়ায়েতে বলা হয় ঃ ইসমাঈলের (আঃ) কবর নাভেদানের নীচে রোকন ও বাইতুল্লাহর মাঝে অবস্থিত। [তাবাকতে ইবনে সা’দ (ইউরোপ থেকে প্রকাশিত ) খঃ১, পৃঃ২৫, সংক্ষেপে তা বর্ণনা করা হলো।]
কালায়ীর ‘আল-ইকতিফা’ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে যে (সংক্ষেপে)ঃ “হাজারও, ইসমাঈল এবং তদীয় পুত্র নাবাত হিজরে সমাহিত হয়েছে।” [‘আল ইকতিফা ফি মাগাযিল মোস্তফা ওয়াল সালাসাতুল খোলাফা, পৃঃ১১৯, তাসহীহ (হোনারী মাসা), মুদ্রনে (ঘুল কারিয়ূনান) আলজ্জাযায়ির ১৯৩১ খ্রীঃ]
 নীচের ছবিতে  হিজরে ইসমাঈল (আঃ)-কে (তাওয়াফ কারী ও নামায আদার কারীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে ঃ 


 
হিজরে ইসমাঈল নামায আদায়কারীদের > ছবি


 
হিজরে ইসমাঈল ও এর যার পাশে ছবি

 ইবনে জুরাইর তার ভ্রমন কাহিনীতে ইসমাঈল (আঃ) ও তাঁর মাতা হাজারের কবরের বর্ণনা দিয়েছেন ঃ
 হিজর প্রাঙ্গনে নাভেদানের নাচে বাইতুল্লাহিল হারামের দেয়ালের পাশে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর কবর। ঐ আলামত হলো সবুজ, মারবেল খচিত এবং মেহরাবের মত আয়াতাকার পাথর যে অন্য একটি মারবেল পাথর এর চার কিনারায় এসে সংযুক্ত হয়েছে। উভয় পাথরই বিষ্ময়কর ভাবে দর্শনীয়। ঐগুলোতে এমন ডোরা ও বিন্দু দাস আছে যে কিছুটা হলুদাভ যেন সেলাই করা ফাঁটন। এবং স্বর্ণ গলানোর পাত্রে অবশিষ্ট থাকা অুু সদৃশ। এর পার্শ্বে ইরাকীদের রোকনের নিকট তাঁর মাতা হাজেরের কবর। এর আলামত ও দেড় গজ মাপের একটি সবুজ পাথর। মানুষ হেজরের এ দু’টি স্থানে নামায আদায় করে বরকত কামনা করে এবং এটা তাদের জন্যে ন্যায়সঙ্গত। কারণ, ঐ দু’টি কবর ছিল ‘বাইতে আতিচ’ থেকে এবং দুটি পবিত্র ও সম্মানিত দেহকে ধারণ করেছে । যে সমস্ত কবরকে মহান আল্লাহ নূরানী করেছেন অগুলোর বরকতে ঐ স্থানে নামায আদায়কারী ও দোয়াকারীগনকে তিনি লাভবান করেন।
 এ দু’টি পবিত্র কবরের দূরত্ব সাত গজ। [ইবনে জুবাইর, মোহাম্মদ ইবনে যুবাইর কেনানী আন্দালোসী —৫৪০ বা ৫৩৯ হিজরীর ১০ রবিউল আউয়্যাল শুক্রবার দিবাগত রাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬২৬ হিজরীর ২৭ বা ২৯ শা’বান মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন।]
আব্দুর রহমান ইবনে জাওযী (মৃঃ৫৯৭হিঃ) নিজ কিতাব [‘মাসিরুল গারাম আলসাকিম ইলা আশরাফিল আমাকেন’ দারুল রায়িয়াত লিলনাশর, রিয়াদ, ১৪১৫হিঃ পৃঃ২১৮]

মোয়াররেফীয়ে বুযুর্গণে মাদফুন দার  হারাম” অধ্যায়ে লিখেন ঃ
 “সাফভান ইবনে আব্দুল্লাহিল জুমহী ” থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ ইবনে যুবাইর (বাইতের পার্শ্বে) একটি স্থান খনন করলেন, একটি পাথরের পৃষ্ঠ পাওয়া গেল, কোরাইশ থেকে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাইলেন। তারা কেউ এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারলেন না । ফলে আমার পিতার নিকট পাঠালেন ও তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন ঃ এটা হলো হযরত ইসমাঈলের কবর, একে স্থানান্তরিত করো না। “তিনি তাই করলেন।”
 ইবনে যুবাইর বলেনঃ এ অর্ধ বৃত্তাকার (দেয়ালটি) হলো এর ইঙ্গিত যে, যা কিছু মসজিদুল হারামের শামের রোকনে যুক্ত হয় তা হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বালিকাদের কবর।
 বর্ণিত হয়েছে যে, দাযনের স্থান হলো নভেদান (বৃষ্টির পানি নীচে নামার পাইপ) থেকে পশ্চিম দরজার মধ্যবর্তী স্থানে হিজওে ইসমাঈল বিদ্যমান।
 আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক আলফাকেহী (মৃত্যু ২৭২হিঃ) নিজ কিতাবে [‘মিন আখাবারি মাক্কাহ ফি কাদিমিল দাহর ওয়া হাদীসা’ বৈরুত থেকে প্রকাশিত ১৪১৪ হিজরী আখবারি], ‘ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যাদের কবরসমূহের পরিচিতি’ নামক অধ্যায়ে  লিখেন ঃ বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনে যুবাইর বলেনঃ এই অর্ধবৃত্ত যা শ্যামের রোকনে সংযুক্ত হয়েছে সেখানে ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যাদের কবর। এ আবি ওমর নিজের হাদীসে বলেন, রাবি, সুফিয়ান থেকে জানতে চেয়েছিলঃ এ স্থানটি কোনটি ? তিনি নিজ হাত দিয়ে পশ্চিমের রোকনের সামনাসামনি যা ইয়েমেনী রোকন ‘দারুল আজালা’র প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন। এ বিষয়টি  [মাক্কাহ পৃঃ১২৩ অনুসারে] ‘আব্দুর রাজ্জাকও তার মোসান্নাফে (খঃ৫ পৃঃ১২০) এবং ‘আযরাক্বী’ (খঃ২পৃঃ৬৬) নিজ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
 ইবনে জাওযি ‘হারাম শরীফে শায়িত মহান ব্যক্তিগন” অধ্যায়ে এবং আযরাকী “আখবারে মাক্কা”-তে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন যার সারসংক্ষপ এরূপ ঃ
 সকল নবীই যাদের উম্মত ধবংশ হতো মক্কায় আসতেন এবং মুমিনদেরকে নিজের সাথে নিয়ে এবাদত করতেন মৃত্যু পর্যন্ত; হূদ (আঃ), সালেহ (আঃ) ও শুয়াইব (আঃ) ছিলেন তাদের অর্ন্তভুক্ত।
 রোকন ও মাকামে ইব্রাহীম এবং যমযম ও হিজরে ইসমাঈলের মধ্যবর্তী স্থানে নিরানব্বইজন নবীর কবর আছে।
 আবুবকর ফকীহ মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বলেন ঃ
 এমন কোন নবী চনই যিনি নিজ গোত্র থেকে পৃথক হয়েছেন অথচ কাবায় আসেননি এবং আমৃত্যু আল্লাহর এবাদত করেননি। হুদ (আঃ) শোয়াইব (আঃ) ও সালেহ (আঃ)-এর কবর যমযম ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে। কাবায় তিনশজন নবীর কবর আছে এবং ইয়েমেনী রোকন ও রোকনে আমওয়াদের মধ্যে সত্তরজন নবীকে দাফন করা হয়েছে। [মোখতাসারু কিতাবুল বোলদান, আবুবকর ইবনে ফকীহ হামেদানী (জন্মঃ৩৪০হিঃ) তোরিল, লিদান মুদ্রিত ১৩০২পৃঃ১৭]
যা বর্ণনা করা হয়েছে তা ছিল একটি ওয়ায়াত যা মাকতাবে খোলাফা অর্থাৎ আহলে সুন্নতের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
 মাকতাবে আহলে বাইত (আঃ)-এর হাদীসের কিতাব সমূহেও এগুলোর মত রেওয়ায়েত নিম্নলিখিত রূপে এসেছে ঃ
 কুলাইনী (৩২৯ হিজরীতে যার মৃত্যু) উসূলে কাফিতে এবং সাদুক (৩৮১ হিজরীতে যার মৃত্যু) মান লা’ ইয়াহজুরুহুল ফকীহ নামক কিতাবে এলালুশ শারায়া’-তে এবং ফাইয কাশীনী (মৃত্যু (১০৮৯হি) ওয়াফিতে, মাজলিশি (মৃঃ১১১১) বিহারুল আনোয়ারে বর্ণনা করেছেন যে, (কাফির বর্ণনানুসারে)
 “ হাজের ও ইসমাঈলের কবর হিজরে আছে [ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ্ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।] অনুরূপ, বর্ণনা করেছেন যে, ‘হিজরে নবীগণের (আঃ) কবর আছে।’ কাফি, ওয়াফি ও বিহারে এসেছে ঃ
 হিজরে তৃতীয় রোকনের সীমানায় ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যারা শায়িত। [ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ্ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।] যা কিছু বর্ণনা করেছি  তা ছিল মক্কায় নবী ও ওলীগণের কবরসমূহের  খবর। পরবর্তী আলোচনায় মক্কা ভিন্ন অন্য স্থানে তাদের কবর সম্পর্কে আলোচনা করব।

আবওয়ায় মহানবী (সাঃ)-এর মায়ের কবর এবং রাসূল (সাঃ) কর্তৃক মায়ের কবর যিয়ারত

মোজামূল কিতাবের লেখক আবওয়াকে পরিচয় দিতে গিয়ে বলেনঃ আবওয়া হলো এমন এক জনপদ যা মদীনার অন্তর্ভূক্ত (মদীনার দিক থেকে) জোহ’ফা থেকে এর দূরত্ব তেইশ মাইল।
 মহানবীর (সাঃ) মাতা আমেনা বিমতে ও হাবের কবর আবওয়াতে আছে। আবওয়ায় তাঁকে দাফন করার কারণ হলো, মহানবীর (সাঃ) পিতা মদীনার দিকে গিয়েছিলেন খোরমা কোরমা আনতে। তিনি মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাব তাঁর কবর যিয়ারতের জন্যে বছরে একবার মদীনায় যেতেন। যখন রাসূল(সাঃ)-এর বয়স ছিল ছয় বছর তখন আমেনা আব্দুল মোত্তালিব ও রাসূলের (সাঃ)-এর ধাইমা উম্মে আইমানকে নিয়ে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছিলেন এবং মক্কার দিকে ফিরে আসার পথে আবওয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। [মো’জামূল বোলদান, ইয়াকুত হামাভী খঃ১, পৃঃ১০০]
 ইবনে আসাকিরের ইতিহাসে এসেছে যে, “আমেনা বিনতে ওহাব, আমাদের প্রিয় নবীর (সাঃ) মাতা তিনি আল্লাহর রাসূলকে বনি আমের গোত্রে নিজ মামাদের সাক্ষাতের জন্যে মদীনায় নিয়ে গেলেন। অতঃপর, মক্কার দিকে ফিরে আমার পথে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থান আবত্তয়ার, রাসূল (সাঃ)-এর চয় বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। [মোখতাসার তারিখুল দামেশক, ইবনে আসাকির খঃ২ পৃঃ১০০]
 ইবনে  সা’দ তার তাবাকাতে এ খবর বিস্তারিত বর্ণনার পর যে কথা বলেন তা সংক্ষেপে এরূপ,
 রাসূল (সাঃ) ওমরার জন্যে হুদায়বিয়ার পথে রওয়ানা হলেন ও আবওয়ায় পৌঁছলেন এবং মা আমেনার কবরের পাশে আসলেন, তা পরিস্কার করলেন ও এর পাশে ক্রন্দন করলেন। মুসলমানরাও রাসূল (সাঃ)-কে কাঁদতে দেখে কাঁদলেন।
 মায়ের কবরের পাশে রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের কান্নার খবর হাদীসের অন্যান্য কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে। [তাবাকাতে ইবনে সা’দ, বৈরুত থেকে প্রকাশিত (১৩৭৬াহঃ) খঃ১ পৃঃ১১৬, সুনানে নামাই কিতাবুল জানায়েয, খঃ১ পৃঃ২৬৭, সুনানে আবি দাউদ হাদীস নং৩২৩৪, সুনানে ইবনে মা’জা হাদীস ১৫০২।]

মদীনায় আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) কবর

‘তাবাকাতে ইবনে সা’দ’ ও ‘সিরেয়ে ইবনে হিশাম’-এ একটি রেওয়ায়েত আছে যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ “রাসূল (সাঃ) নিজ গৃহে ঠিক যে কক্ষে তিনি নিজ প্রাণ মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সমর্পণ করেছিলেন, সে কক্ষেই সমাধিস্থ হয়েছেন। এরপর, হযরত আবুবকর ও হযরত ওমর-এ দু’ খলিফাকে ও একে একে সেখানে কবরস্থ করা হয়। অতঃপর এ সবুজ গম্বুজ এর উপর নির্মাণ করা হয়। [তাবাকাতে ইবনে সা’দ খঃ২ পৃঃ২৯২-২৯৪, সিরায়ে ইবনে হিশাম খঃ৪, পৃঃ৩৪৩]

 সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট রাসূল (সাঃ)-এর মাযার এর ছবি

রাসূল (সাঃ)-এর কবর যিয়ারতের সত্তয়াব

‘দারে কেতানী’-ও সুনানে, তাবরানীর মো’জামে, ফাকেহীর ‘আখবারে মাক্কা’-তে নিজ নিজ সনদসহ ইবনে ওমর খেকে বর্ণিত হয়েছে যে বলেন ঃ
قالَ رَسُولَ الله (ص) : مَن حَجَّ  فَزارَ قَبري بَعدَ مَوتي کانَ کَمَن زارَني في حَياتي
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে কেউ হজ্জ করলো ও আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করলো সে যেন তার মত যে আমাকে আমার জীবদ্দশায় যিয়ারত করলো। [সুনানে কোবরায়ে বায়হাকী খঃ৫, পৃঃ২৪৬ সুনানে দারেকেতানী খঃ২ পৃঃ২৭৮। এতহাফুল সাদিিতল মুত্তাকীন, যুবাইদী খঃ৪, পৃঃ৪১৬। তুবভায়ূল গালীল, আলবাণী খঃ৪ পৃঃ৩৩৫, কানযুল উম্মাল খঃ৫,পৃঃ৭০ মাজমায়ূল ফাওয়ায়িদ, হিসামী, খঃ৪, পৃঃ২, দোররুল মানসূর, সুয়ূতি খঃ১ পৃঃ২৩৭, মো’জামূল কাবির, তাবরানী খঃ১২. পৃঃ৪০৭]
 তায়ালুমী নিজ সনদসহ হযরত ওমর থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে, বললেন: শুনলাম রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
مَن زارَ قبري اَومَن زَارَني کُنتُ لَهُ شَفيعًا اَو شَهيدًا
যে কেউ আমার কবর যিয়ারত করে (কিংবা আমাকে যিয়ারত করে) আমি তার শাফায়াতকারী (বা তার সাক্ষী) হবো। [মুসনাদে তায়ালুসী (মৃঃ২০৪হিঃ) পৃঃ১২, কানযুল উম্মাল খঃ২০ পৃঃ১৬১, মোখতাসারে তারিখে দামেস্ক খঃ২, পৃঃ৪০৬, আলমাতালিবুল আলীয়া, ইবনে হাজার পৃঃ১২৫৪, দোররুল মানসূর, সুয়ূতি খঃ১ পৃঃ২৩৭, মো’জামূল কাবির, তাবরানী, খৎ১২, পৃঃ৪১৭]

 আহলে বাইত (আঃ) ও সাহাবাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কবর যিয়ারতকারীরা

ক) রাসূল (সাঃ)-এর কবরের সর্বপ্রথম বিয়ারতকারী ছিলেন হযরত ফাতেমা (ছাঃ)
 ইবনে জাওযী নিজ সনদে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে বলেনঃ যখন রাসূল (সাঃ)-কে সমাহিত করা হলো তখন হযরত ফাতেমা (ছাঃ) কবরের নিকট আসলেন ; কিছু সময় দাঁড়ালেন, অতঃপর এক মুষ্ঠি মাটি কবর থেকে তুলে নিলেন ও চোখে মাখলেন এবং নিম্নলিখিত পংক্তিগুলো পাঠ করলেন।
ما ذا عَلي مَن شَمَّ تُر بَةً اَحمَدٍ أن لا يَثُمَّ مَدَي الزَّمانِ غَواالياً صُبَّت عَلَيَّ مَصَائِبٌ لو اَنَّها صُبَّت عَلَي اَلأ يّام عُزنَ لَيا لِيًا  
“ আহমাদের মাটির সুগন্ধ যেকরেছে আঘ্রান কি-এমন দুঃখ তার যদি দু’জাহানের মুগন্ধ না হয় আস্বাদন আমার উপর এসেছে যে মুসিবাত যদি দিবসের উপর আসতো তবে তা হয়ে যেত রাত!”
খ) আবু আইয়্যুব আনসারী, যে যিয়ারতকারী তার মুখমন্ডল রাসূল (সাঃ)-এর (কবরের) পবিত্র মাটিতে ঘর্ষণ করেছিলঃ
 ‘মাজমায়ূল যাওয়ায়িদ’-এ নিজ সনদে ‘আবু দাউদ ইবনে সালেই’ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেনঃ
একদিন মারওয়ান রাসূল (সাঃ)-এর কবরের দিকে তাকিয়ে দেখল যে এশব্যক্তি নিজ মুখসন্ডল কবরের উপর রাখলেন। বললোঃ জান, কী করে? ঐ ব্যক্তি ছিলেন রাসূলের সাহাবী আবু আয়্যুর আনসারী ; তিনি মারওয়ানের দিকে ফিরলেন এবং বললেন ঃ হ্যাঁ, [আমি জানি যে আমি কী করছি] ‘আমি রাসূল (সাঃ)-এর যিয়ারতে এসেছি, যিয়ারতে হাজার যাইনি। [মাজমায়ূল যাওয়ায়িদ, কিতাবুল খেলাফত, বৈরুত থেকে প্রকাশিত, ১৯৬৭,খঃ৫ পৃঃ২৪৫। এ রেওয়ায়েতটি অন্য এক বর্ণনায় এ কিতবের খঃ৪ পৃঃ২-এ এসেছে। অুুরূপ মুসনাদে আহমাদ, খঃ৫ পৃঃ২২৪, মুস্তাদরাকে হাকিম, খঃ৫ পৃঃ৫১৫]

আলোচনার সারসংক্ষেপ ও উপসংহার ঃ
 নবী ও ওয়ালীগণের কবর মেরামত এ গুলোর উপর ইমারত গড়া ও এবাদতগাহ বানানো হারাম বলে যারা বিশ্বাস করে তারা কিছু কিছু ওয়ায়েতকে তাদের দালিলরূপে উল্লেখ করে বলেনঃ
প্রথমত ঃ ইমাম আলী (আঃ) উলুল হাইয়াজ আসাদীকে বলেন ঃ
 আমি তোমাকে একটি কাজের দায়িত্ব দিব যার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি বললেনঃ রাসূল (সাঃ) একটি জানাযার দাফন কাজে ছিলেন, তখন বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে মদীনায় যাবে এবং মদীনার সমস্ত মূর্তি গুলোকে ধবংশ, কবরগুলোকে সমান করে দিবে (অর্থাৎ মষ্টির সাথে মিশিয়ে দিবে)ও সমস্ত চেহারাগুলোকে উল্টপালট করে দিবে? এক ব্যক্তি তা করার জনে রওয়ানা হলো, কিন্তু মদীনার মানুষের ভয়ে সে ফিরে আসলো।
 “ইমাম আলী (আঃ) রওয়ানা করলেন ও ঐ সবকিছু সম্পাদন করলেন!”
আমি বুষিনা যে, যুক্তি প্রদর্শণ কারীরা কিরূপে এ রেওয়ায়েতের সমস্যাগুলো অনুধাবণ করতে পারেননি। রাসূল (সাঃ) কি জানাযার দাফনকাজে মক্কায় ছিলেন যে প্রেরিতকে মদিনায় প্রেরণ করেছেন, আর সে ব্যর্থ হয়ে ফিওে আসলে নিজ চাচাতভাই আলী (আঃ)-কে পাঠালেন এবং তিনি সব কিছু সম্পাদন করেন; কিংবা মদীনায় ছিলেন?!
 এ জানাযার দাফনে কতটা সময় লেগেছিল, যে প্রথম ব্যক্তি যেয়ে বিফল হয়ে ফিরে আসলেন, অতঃপর, মহানবীর চাচাত ভাই আলী (আঃ) রওয়ানা হন এবং সমস্ত কবর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে, সমস্ত চেহারাগুলো উল্টে দিয়ে ও মূর্তিগুলোকে ধবংস করে ফিরে আসলেন?! এ মূর্তিগুলোর মালিক কি মুসলমানরা ছিলেন?! যদি তা-ই হয় তবে কী জন্যে তারা মূর্তীগুলো রেখেছিলেন? যদি তারা মুশরিক হয়ে থাকে তবে রাসূলের চাচাত ভাই আলী (আঃ) যাওয়ার সাথে সাথেই কিরূপে তারা আতœসমর্পণ করলো?! অপরদিকে, আবুল হাইরা প্রতি হযরত আলী (আঃ)-এর আদেশ অবশ্যই তাঁর খেলাফত কালে হবে। কারণ, একটি শহরের মানুষের জন্যে কোন আদেশ প্রদান করা কেবল মাত্র একজন শক্তিশালী কর্তৃত্বশীল প্রশাসকের পক্ষেই সম্ভব।
 সুতরাং, আলী (আঃ) থেকে এ আদেশ অবশ্যই পূর্ববর্তী খলিফাত্রয়ের খেলাফত কালান্তে প্রদত্ত হয়েছিল । এখন, আমরা জানি না যে, ঐ সময় ইসলামী ভূ-খন্ডে কোন মূর্তির অস্তিত্ব কোন স্থানে ছিল কি যা আবুল হাইয়াজ ধবংস করেছিলেন?! সত্যিকারাটেই ব্যাপারটি বোধগম্য নয় !!
দ্বিতীয়তঃ তাদের দলিলটি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে সম্পর্কিত । রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আমার কবরকে সেরূপে মূর্তি বানিও না যেভাবে ইহুদীরা তাদের কবরকে মূর্তি বানিয়েছিল আমরা বুঝিনা যে, ইহুদীরা কখন তাদের নবীদের কবরকে মূর্তি বানাল?! তারা মিশর থেকে বের হওয়ার পর যখন মাঠে-প্রান্তরে ঘুরছিল তখন তো তাদের এবাদতের জন্যে ‘সমাবেশের তাবু’ ছিল। হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর সময় তো হযরত (সাঃ) তিনি তাদের জন্যে এবাদতগাহ (হেইকালে সোলায়মান) বানিয়েছিলেন। অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবাদতের জন্যে মসজিদ বানিয়েছিলেন যা মসজিদুন্নাবী বলে পরিচিত ।
 তাদের নবীদের কবর সম্পর্কেও যেমনটি বলা হয়েছে, তাদের কিছু সাহাবীর কবর, মূলতঃ তাদের দাফনের স্থান অপরিচিত, কিছু নবীর কবর বিভিন্ন গুহুায় মাটির নীচে এবং তাদের দাফনের স্থান খুব অল্প সংখ্যকই জানতেন।
 যা মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি কবর যিয়ারতকারী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, তা অন্য অসংখ্য সহী রেওয়াতের মোকাবেলায় তুলনাই করা যায় না, যেগুলোতে মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ “আামি স্বয়ং তোমাদেরকে কবর যিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন ঐগুলোকে যিয়ারত কর।”

এগুলো ছিল কবর মেরামত ও এর উপর ইমারত, এবাদতগাহ এবং এ গুলোকে মসজিদ করাকে হারাম বলে যারা মনে করেন তাদের দলিল। কিন্তু কবর মেরামত ও এ গুলোর উপর ইমারত ও এবাদতগাহ বানানোর বৈধতায় যারা বিশ্বাসী তারা নিম্নলিখিত দলিলের মাধ্যমে যুক্তি প্রদর্শণ করেছেনঃ
প্রথমতঃ পবিত্র কোরআন,
وَاتَّخِذُو مِن مَقامِ ابراهِيَم مُصُلَّي                
মাকামে ইব্রাহীম থেকে এবাদতগাহ বানাও (বাকারা-১২৫)
قالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَي أمرِهِم لَنَتَّخِذَنَّ عَليهِم مَجَدَا
“যারা তাদের (আসহাবে কাহফ) সম্পর্কে জানলেন, তারা বললেন তাদের জায়গায় মসজিদ বানাবো।” (কাহফ-২১)
 অতএব, মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইব্রাহীম (আঃ)-এর পায়ের স্থান থেকে বাদতগাহ বানাতে।অনুরূপ, সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা আসহাবে কাহফ সম্পর্কে জানতে পেল তারা বললেনঃ তাদের ঘুমানোর জায়গায় মসজিদ বানাবো। আর এ খবরের মাধ্যমে তাদের পদক্ষেপকে অুুমোদন দিয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নতে- বলেন ঃ রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত এ বিষয়ের অনুমোদন দেয় যে, যা আল্লাহর নবী ‘ইসমাঈল (আঃ)’ তদীয় মাতা  ‘হাজের’ ও তার কন্যাদের ও হিজরে ইসমাঈলে, ও বাইতুল্লাহিল হারামে শায়িত নবীদের জন্যে সম্পাদিত হয়েছে এবং তাদের কেউ কেউ রাসূল (সাঃ)-এর পর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রকাশ্যে মানুষের চোখের সম্মুখে হচ্ছে, তার সবই বৈধ ও অনুমোদিত। কারণ, রাসূল (সাঃ) স্বয়ং ব্যক্তিগতভাবে হিজরে ইসমাঈলকে তাওয়াফ করেছেন এবং তাঁর বংশধর ও সাহাবারাও তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন এবং মুসলমানদের মহান ও পবিত্র ব্যক্তিরা আজ পর্যন্ত এ সুন্নতের উপর প্রতিষ্ঠিত ও তা করার ব্যাপারে দৃঢ়চিত্ত।
তৃতীয়তঃ রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নতে মায়ের কবর যিয়ারত এবং নিজের ক্রন্দন করা ও সাহাবদেরকে কাঁদানো; কবর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা ঃ
চতুর্থত ঃ ছাদবিশিষ্ট কক্ষের দলিল ঃ
 যে কক্ষে রাসূল (সাঃ) এবং দু’খলিফা আবু বকর ও ওমরের কবর তার উপর সবুজ গম্বুজ নির্মান করা হয়েছে যা আজও আমরা দেখছি আমাদের চোখের সম্মুখে।
পঞ্চমত ঃ রাসূল (সাঃ)তাঁর কবর যিয়ারতের জন্যে মুসলমানদেরকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন।
ষষ্ঠত ঃ রাসূল (সাঃ)-এর কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা যাহরা পিতার কবর যিয়ারত করেছিলেন এবং রাসূল(সাঃ)-এর সাহাবী আইয়্যুব আনসারী কর্তৃক রাসূল (সাঃ)-এর কবর যিয়ারত।
সুতরাং নবী, রাসূল ও ওলীগণের কবর যিয়ারত এবং তাদের কবরের উপর ইমারত গড়ে এবাদতগাহ ও মসজিদ বানানো, মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরই সুন্নত।
 অতএব, কবর ওয়ালাদের (যেমনটি বলা হয়) প্রথম নেতা হলেন হযরত মহানবী (সাঃ) এবং তাঁরপর তাঁর দেহের টুকুরা হযরত ফাতেমার পর সাহাবা ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ। অতঃপর, আমরা আহলে বাইতের ভক্তরা। আর আমাদের জন্য এ মর্যাদাটুকুই যথেষ্ট যে রাসূল (সাঃ)-এর অনুসারী হব এবং তিনিই আমাদের আদর্শ ও মোক্তাদা।
 হ্যাঁ, যদি আজও সুযোগ পাই, তবে নবী ও ওলীগণের কবরে ক্রন্দন এবং কবর মেয়ামতের রাসূল (সাঃ)Ñএর সেই সুন্নতকে অনুসরণ করতঃ সেই মহান হযরতের (সাঃ) কবর যিয়ারতকে অগ্রাধিকার দিব। আর এ কাজে সৎকর্ম সাহাবী আবু আইয়্যব আনসারীকে অনুসরণ করে রাসূল (সাঃ)Ñএর পবিত্র কবরের মাটিতে নিজ মুখমন্ডল ঘর্ষণ কবর আর তাঁর কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমার শিক্ষা গ্রহণ করে তার কবরের মাঠির গন্ধ নিব আর গাইব ঃ‘আহমাদের মাটির সুগন্ধ যে করেছে আভ্রান কি এমন দুঃখ তার যদি দু’জাহানের সুগন্ধ না হয় আস্বাদন আমার উপর এসেছে যে মুসিবাত
যদি দিবসের উপর আসতো, তবে তা হয়ে যেত রাত।”
 কিন্তু কি করব যে, চোখে কাঁটা আর কন্ঠে বিধেঁ আছে হাড় এবং নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যে ও নিশ্চয়ই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তণ করবো।

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.